X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

আড়ানীতে নৌকার ২ সমর্থককে কুপিয়ে জখম

রাজশাহী প্রতিনিধি
১৫ জানুয়ারি ২০২১, ২১:১২আপডেট : ১৫ জানুয়ারি ২০২১, ২১:১২

রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী পৌর নির্বাচনে আবারও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শহীদুজ্জামান শাহীদের দুই সমর্থককে বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) রাতে কুপিয়ে জখম করা হয়। আহতদের রাতেই রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাদের একজনকে আইসিইউতে নেওয়া হয়েছে।

আহত ব্যক্তিরা হলেন আড়ানী পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রহমান (৪৫) ও তার ভাগ্নে আরিফ হোসেন (৩০)। তাদের অভিযোগ বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান মেয়র মুক্তার আলীর সমর্থকেরা তাদের ওপরে হামলা করেছে।

রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে বজলুর রহমানকে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী শহীদুজ্জামানের কাছ থেকে কেন্দ্র খরচের টাকা নিয়ে আমি ও আমার ভাগ্নে আরিফ বাড়ি ফিরছিলাম। আরিফকে বাড়ি পৌঁছে দিতে যাচ্ছিলাম। নুরনগর গ্রামের কদমতলা থেকে পশ্চিমে ২০০ গজ আসতেই দেখতে পাই স্থানীয় নাসির উদ্দিনের ছেলে আশিক আহম্মেদ, বিদ্রোহী প্রার্থী মুক্তার আলীর ছেলে রাজু আহম্মেদ, সেকেন্দার আলীর ছেলে সজল হোসেন, সুলতান আলীর ছেলে শরীফ হোসেনসহ মুখ বাঁধা আরও ৫/৬ জন। মুক্তার আলীর ছেলের হাতে চাইনিজ কুড়াল, আশিকের হাতে বড় ছুরি ছিল। তারা সেখানে কি করছে জানতে চাইলে আশিক বড় আকারের ছুরি ঢুকিয়ে দেয়। এ সময় আমি পড়ে যাই। মুক্তার আলীর ছেলে এসে পায়ের ওপরে চারটি কোপ দেয়। মুখ বাধা লোকেরা এসে উপর্যুপরি আমার পিঠের ওপরে চাপাতি দিয়ে কোপাতে থাকে। আমি মারা গেছি ভেবে বালুর মধ্যে ফেলে চলে যায় তারা। পরে হাসপাতালে এসে জানতে পারি আমার ভাগ্নের পেটে আশিক ছুরি চালিয়ে দিয়েছে। ভাগ্নের নাড়িভুড়ি সব বেরিয়ে গেছে।

বজলুর রহমান আরও বলেন, ঘটনার পরে লোক মারফত জানতে পারি বিদ্রোহী প্রার্থী মুক্তার তাকে হত্যা করার জন্য আশিকের সঙ্গে ১০ লাখ টাকার চুক্তি করেছিলেন।

এ বিষয়ে আরিফের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তাকে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়েছে।

তার মামাতো বোন আঁখি খাতুন বলেন, আরিফ একজন সিএনজি চালক। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। তার নাড়িভুড়ি বের হয়ে গেছে। সে বাঁচবে কিনা তার নিশ্চয়তা নেই।

এ বিষয়ে বাঘা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম বলেন, হামলার শিকার ও হামলাকারীরা পরস্পরের আত্মীয়। যারা আহত হয়েছেন, তারা নৌকার সমর্থক। আর যারা হামলা করেছে তারা বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থক। নৌকার প্রার্থীকে ফোন করে তিনি এইটুকু জানতে পেরেছেন। এখনও থানায় কোনও অভিযোগ করা হয়নি। মৌখিকভাবে খবর পেয়ে হামলাকারীদের বাড়িতে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। বাড়িতে তাদের পাওয়া যায়নি।

এদিকে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত উত্তেজনার খবর পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় আড়ানী বাজারের প্রায় অর্ধশতাধিক দোকানে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়েছে। এতে প্রায় ৫০-৬০ লাখ টাকার ক্ষতির শিকার হয়েছেন বলে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ। সংঘর্ষের পর থেকে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পৌর বাজারের ১২ শ’ ব্যবসায়ী আতঙ্কে দোকানপাট খুলতে পারেননি।

স্থানীয়ভাবে জানা গেছে, আড়ানী বাজারে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। বাজারে তেমন লোকজন নাই। আতঙ্কে সাধারণ মানুষ বাজারে আসছেন না। শুধু আওয়ামী লীগের দুপক্ষের লোকজন দুইদিকে অবস্থান নিয়ে আছেন। ফলে বাজারের মাঝখানে একেবারে ফাঁকা অবস্থায় বিরাজ করছে। দোকানপাট ভাঙচুর করার পর সেই দোকানগুলোর মালামাল এবং আসবাবপত্র দোকানের ভেতরে, বাইরে ও রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে।

নৌকার মেয়র প্রার্থী শহীদুজ্জামান শাহীদ বলেন, আমার নির্বাচনি পথসভা শেষেই বর্তমান মেয়র মুক্তার আলীর কর্মী-সমর্থকরা অতর্কিত হামলা চালিয়ে নির্বাচনি অফিসসহ দোকানপাট ভাঙচুর চালাতে থাকে। এসময় বাধা দিতে গেলে মুক্তারের লোকজন আমার কর্মী-সমর্থকদের ওপর ধারালো অস্ত্র, লাঠি-সোঠা, পিস্তল ও ককটেল নিয়ে হামলা করে। হামলায় অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন। মুক্তার এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে চলেছে।

আড়ানীতে নৌকার ২ সমর্থককে কুপিয়ে জখম অন্যদিকে মুক্তার আলী অভিযোগ করে বলেন, শাহীদের লোকজনই আগে আমার কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা চালিয়ে আমার নির্বাচনি অফিস ভাঙচুর করে। আমার জয় নিশ্চিত জেনে আমার ভাবমূর্তি নষ্ট করে নির্বাচনি পরিবেশ খারাপ করছে।

উল্লেখ্য, বুধবার উপজেলার আড়ানী পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী শহীদুজ্জামান শাহীদ গণসংযোগ শেষে আড়ানী বাজারের তালতলায় পথসভায় করছিলেন। এ সময় বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান মেয়র মুক্তার আলী ও তার সমর্থকরা ১৫/২০ জন অতর্কিভাবে হামলা চালায়। পরে তারা মসজিদের মাইক ব্যবহার করে লোকজনকে ডেকে মুক্তার আলীসহ তার দল নিয়ে নৌকার প্রার্থীর দুটি অফিস ভাঙচুর, পাঁচটি মোটরসাইকেল, শতাধিক দোকান ভাঙচুর করে লুটপাট করে নিয়ে যায়। দফায় দফায় গুলি ও বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটায়। এই ঘটনায় নৌকার নির্বাচন কমিটির আহ্বায়ক আবদুল মতিন মতি বাদী হয়ে মুক্তার আলীকে প্রধান আসামি করে ৫০ জনে নাম উল্লেখ করে ৫০০/৬০০ জনের নামে মামলা বিস্ফোরণ আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ঘটনায় মিলন নামের একজনকে গ্রেফতার করা হয়।

 

/টিটি/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী