X
মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪
৫ চৈত্র ১৪৩০

বিদ্রোহীদের নিয়ে বাড়ছে উত্তেজনা, শঙ্কায় সাধারণ ভোটাররা

হুমায়ুন মাসুদ, চট্টগ্রাম
১৮ জানুয়ারি ২০২১, ১০:২৯আপডেট : ১৮ জানুয়ারি ২০২১, ১০:২৯

সিটি নির্বাচনে দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থী মানেই নির্বাচনে অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে ঘিরে সহিংসতার আশঙ্কা। এই আশঙ্কা এখন সত্যি হয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ মেয়র পদে একক প্রার্থী বাছাইয়ে সফলতা দেখালেও কাউন্সিলর প্রার্থী বাছাইয়ে সফল হতে পারেনি। ফলে প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডে দলীয় বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। এতে যতটা না সমস্যা, তারচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে এলাকায় প্রচার চালানোর সময় প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা। আর তাতেই দুই পক্ষ মুখোমুখি হলে পরস্পরকে হুমকি-ধমকি, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া এবং এক পক্ষ আরেক পক্ষকে বিদ্রুপ করার ঘটনা ঘটছে। অস্ত্র নিয়ে তেড়ে আসারর ঘটনাও ঘটছে। আর এতেই দুইপক্ষে সৃষ্টি হচ্ছে উত্তেজনা এবং সংঘর্ষ সৃষ্টির পরিবেশ।

মহানগরীতে সিটি নির্বাচনকে ঘিরে সহিংসতার আশঙ্কা তুলে ধরা হয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিবেদনেও। তবে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, সম্ভাব্য সব স্থানে তারা নজরদারি বাড়িয়েছেন। নির্বাচনকে ঘিরে যে কোনও ধরনের সংঘাত ও সহিংসতা ঘটলে কাউকে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না।

চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে এক কাউন্সিলর প্রার্থীর প্রচারণা

এদিকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, পুলিশ যেমনই বলুক না কেন বাস্তবে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী এবং বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে বাড়ছে দ্বন্দ্ব সংঘাত। যেই সংঘাতে ইতোমধ্যে এক কর্মী সমর্থকের মৃত্যুও হয়েছে। গত মঙ্গলবার নগরীর ২৮ নম্বর পাঠানটুলি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাহাদুর ও বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক কাউন্সিলর আব্দুল কাদেরের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষে আজগর আলী নামের এক ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এর আগেও এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নিহত হন আরেক যুবক।

এদিকে, খুব শিগগির এই বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিয়ন্ত্রণে আনা না গেলে নির্বাচনে আরও বেশি সহিংসতা ও হতাহতের ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন নগরীর বাসিন্দারা। বিভিন্ন ওয়ার্ডের স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যেসব ওয়ার্ডে বিদ্রোহী প্রার্থী আছেন সেখানেই সরকারি দলের প্রার্থীর সঙ্গে বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের নির্বাচনি সহিংসতা ঘটার আশঙ্কা থাকছেন। প্রচারণার সময় জনগণের সামনে সুবোধ সেজে থাকাটাও একটা চ্যালেঞ্জ, তাই ভালোমানুষি রূপ ধরে রাখতে হলেও সবাই সবাইকে তুচ্ছ বিষয়ে ছাড় দিচ্ছেন। তবে  নির্বাচনের দিনে সবার যেহেতু জয়টাই মুখ্য, তাই সেদিন রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়তে পারেন দুই প্রার্থীর অনুসারীরা।

চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে এক প্রার্থীর প্রচারণা

তবে নির্বাচন কমিশন থেকে বলা হয়েছে তারা সব ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। সুষ্ঠু, সুন্দর, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন উপহার দিতে মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন এমন দাবি করেছে নির্বাচন কমিশন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টরা।

রিটার্নিং অফিসার চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম নগরীর বাসিন্দাদের আমরা সুষ্ঠু, সুন্দর এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ একটি নির্বাচন উপহার দিতে চাই। সেই লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। নির্বাচনকে ঘিরে সহিংসতার যে ঘটনা ঘটছে সেই বিষয়ে আমরা কঠোর নজরদারি করছি। প্রতিটি ওয়ার্ডে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে কাজ করছি।’

সিটি করপোরেশনের ৪১ ওয়ার্ডের মধ্যে ৩৪টিতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ও দলের বিদ্রোহী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে ১৩টি ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলররা দলীয় মনোনয়ন পাননি। সেখানে শুধু একজন বিদ্রোহী প্রার্থী ১৩ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেন হিরণ তার মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন। বাকি ১২টি ওয়ার্ডে মুখোমুখি অবস্থানে আছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক কাউন্সিলররা।

দলীয় ও বিদ্রোহী প্রার্থীর বিরোধে ইতোমধ্যে নগরীর দুইটি ওয়ার্ডে দুইজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে একজন গত মঙ্গলবার রাতে ২৮ নম্বর পাঠানটুলী ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাহাদুর ও বিদ্রোহী প্রার্থী আব্দুল কাদেরের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত হন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আজগর আলী বাবুল। বাবুল দলীয় প্রার্থী নজরুল ইসলামের পক্ষে ওইদিন প্রচারণায় অংশ নিয়েছিলেন।

এর আগে প্রথম দফা প্রচারণার সময় গত বছরের ১৮ মার্চ দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ডে দুই প্রার্থীর রেষারেষিতে জাহিদ তানভির নামের এক যুবক খুন হন। জাহিদ তানভির সাবেক কাউন্সিলর বিদ্রোহী প্রার্থী মোরশেদ আকতারের সমর্থক বলে পরিচিত ছিলেন। এ ঘটনায় দলীয় প্রার্থী মো. ইসমাইল হোসেনের অনুসারীদের দায়ী করেছেন মোরশেদ আকতার চৌধুরী।

এই ১২টি ওয়ার্ডসহ নগরীর ১ নম্বর পাহাড়তলি, ২ নম্বর জালালাবাদ, ৪ নম্বর চান্দগাঁও, ৯ নম্বর পাহাড়তলি, ১০ নম্বর কাট্টলি, ১২ নম্বর সরাইপাড়া, ১৪ নম্বর লালখানবাজার, ২৩ নম্বর পাঠানটুলি, ২৭ নম্বর উত্তর হালিশহর, ২৮ নম্বর মোগলটুলি, ৩০ নম্বর পূর্ব মাদারবাড়ি, ৩১ নম্বর আলকরণ, ৩৩ নম্বর ফিরিঙ্গীবাজার, ৩৪ নম্বর পাথরঘাটা ওয়ার্ড সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে নগর জুড়ে আলোচিত হচ্ছে। স্থানীয় জনগণ জানিয়েছে, নির্বাচনে এসব ওয়ার্ডে সহিংসতা বাড়তে পারে। তাই এলাকার সাধারণ মানুষ শঙ্কিত।

এ সম্পর্কে জানতে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীর নির্বাচনি পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়ক আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সংসদ সদস্য মোশাররফ হোসেনকে একাধিকবার ফোন করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি।

মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনও মোবাইল কল রিসিভ করেননি। এ বিষয়ে জানতে তার দুটি মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কলা করা হলে তিনি মোবাইল রিসিভ করেননি।

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বলেছেন, দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন তাদের বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়েছে। নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে শুক্রবার তিনি চট্টগ্রাম আসেন। এদিন সকালে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীর প্রধান নির্বাচনি কার্যালয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।

আহমদ হোসেন বলেন, মনোনয়ন চেয়ে যারা আবেদন করেছিলেন প্রত্যেকেই দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে দল সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করার অঙ্গীকার করেছেন। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন তাদের বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়েছে। পাশাপাশি যারা বিদ্রোহীদের পৃষ্ঠপোষকতা করছেন তাদের ব্যাপারেও কঠোর সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর বলেছেন, নির্বাচনে সহিংসতা সৃষ্টিকারীদের বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না।

এদিকে রবিবার নগরীর দামপাড়া পুলিশ লাইনে সিএমপি কমিশনারের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে  চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর বলেছেন, বহিরাগত কিংবা স্থানীয় যারাই চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতা সৃষ্টি করবে তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। আমরা নগরীতে পুলিশি কর্মকাণ্ডের ব্যাপ্তি বাড়িয়ে দিয়েছি। পুলিশি টহল, চেকপোস্ট- এগুলো বাড়িয়ে দিয়েছি। যেসব কর্মকাণ্ড আমাদের নির্বাচনকে সহিংস করতে পারে, সেগুলো প্রতিরোধ করার জন্য আমরা আগাম পদক্ষেপ নিয়েছি।

সালেহ মোহাম্মদ তানভীর বলেন, একটি ঘটনা ঘটেছে, আমরা কঠোর পদক্ষেপ নিতে বিন্দুমাত্র সময় নেইনি। কাজের মাধ্যমে আমরা আমাদের শক্ত অবস্থান প্রমাণ করবো।

নির্বাচনে ৯ হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হবে জানিয়ে সিএমপি কমিশনার বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন থেকে আমরা একটা গাইডলাইন পাবো। পুলিশের কিছু ফোর্স কেন্দ্রভিত্তিক থাকবে। পাশাপাশি আমরা ওয়ার্ড ও থানাভিত্তিক মোবাইল টিম রাখবো। ডিবি, কাউন্টার টেরোরিজম টিম, সোয়াত টিম টহলে থাকবে। এরপর কোন কেন্দ্রে কত আনসার থাকবে সেটা নির্বাচন কমিশন নির্ধারণ করবে।

/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
নিজ বাড়ির সামনে ছাত্রলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা
নিজ বাড়ির সামনে ছাত্রলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা
কয়রায় সুইডেনের প্রিন্সেস ক্রাউন ভিক্টোরিয়া
কয়রায় সুইডেনের প্রিন্সেস ক্রাউন ভিক্টোরিয়া
দিন দিন নাবিকদের সঙ্গে কঠোর আচরণ করছে দস্যুরা
দিন দিন নাবিকদের সঙ্গে কঠোর আচরণ করছে দস্যুরা
হলমার্কের দুর্নীতির এক মামলার রায় আজ
হলমার্কের দুর্নীতির এক মামলার রায় আজ
সর্বাধিক পঠিত
লিটনের বাদ পড়া নিয়ে যা বললেন হাথুরুসিংহে
লিটনের বাদ পড়া নিয়ে যা বললেন হাথুরুসিংহে
পদ্মার গ্রাহকরা এক্সিম ব্যাংক থেকে আমানত তুলতে পারবেন
একীভূত হলো দুই ব্যাংকপদ্মার গ্রাহকরা এক্সিম ব্যাংক থেকে আমানত তুলতে পারবেন
সুইডেনের রাজকন্যার জন্য দুটি হেলিপ্যাড নির্মাণ, ৫০০ স্থানে থাকবে পুলিশ
সুইডেনের রাজকন্যার জন্য দুটি হেলিপ্যাড নির্মাণ, ৫০০ স্থানে থাকবে পুলিশ
সঞ্চয়ী হিসাবের অর্ধকোটি টাকা লোপাট করে আত্মগোপনে পোস্ট মাস্টার
সঞ্চয়ী হিসাবের অর্ধকোটি টাকা লোপাট করে আত্মগোপনে পোস্ট মাস্টার
‘সরলতার প্রতিমা’ খ্যাত গায়ক খালিদ আর নেই
‘সরলতার প্রতিমা’ খ্যাত গায়ক খালিদ আর নেই