X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

টিএসসি ভাঙা বন্ধে জনমত গড়বে স্থপতি ও সচেতন সমাজ

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১৯ জানুয়ারি ২০২১, ২৩:২৫আপডেট : ১৯ জানুয়ারি ২০২১, ২৩:২৯

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) যেন ভেঙে ফেলা না হয়, সেই লক্ষ্যে জনমত গড়ে তুলবে বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট এবং সচেতন সমাজ। টিএসসি ভেঙে ফেলা যৌক্তিক হবে কিনা, তা জানতে অনলাইন জরিপসহ সচেতনতা গড়ে তুলতে কাজ করছে তারা। পাশাপাশি এর বিকল্প কী হতে পারে, সেটি নিয়েও কাজ করছেন স্থপতিরা।

তারা মনে করেন, ঐতিহ্যবাহী এই ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রটি ভেঙে ফেললে হারিয়ে যাবে অর্ধ শতাব্দীর গৌরবের ইতিহাস। বিলীন হবে উজ্জ্বল আর সংগ্রামী অতীতের অমরগাঁথা। তারা বলছেন, এটি আমাদের অনেক ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করছে, যার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে স্বাধীনতার ইতিহাস।

মঙ্গলবার (১৯ জানুয়ারি) এ বিষয়ে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের অধ্যাপক এবং চেয়ারপারসন জয়নাব ফারুকি আলী বলেন, ‘আমরা জনমত গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বুদ্ধিজীবী,চিত্রশিল্পী,সাহিত্যিক,সংগীতশিল্পী,সাংবাদিক, ছাত্রসমাজ এবং আরও অনেকেই এতে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘স্থপতিদের একটি টিম কাজ করছে একটি প্রস্তাবনা ও পরিকল্পনা তৈরি করতে। সেটি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করা সম্ভব। প্রস্তাবে থাকছে টিএসসি না ভেঙে এবং এর সামগ্রিক পরিবেশ রক্ষা করে নতুনভাবে কী করা যায়।’

জয়নাব ফারুকি আলী জানান, একটি স্থানিক নকশার প্রস্তাবনা ও সুপারিশ তৈরি করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চান স্থপতিরা। বাংলা ট্রিবিউন এবং ঢাকা ট্রিবিউনের যৌথ উদ্যোগে এ বিষয়ে একটি অনলাইন জরিপের ব্যবস্থা শুরু হয়েছে। সেখান থেকে জানা যাবে— ঐতিহ্য সংরক্ষণ সম্পর্কে এ দেশের মানুষের ধারণা কেমন। টিএসসি যে এদেশের ঐতিহ্য বা ইতিহাসের অপরিহার্য অঙ্গ, সেই জনসচেতনতা তৈরি করতে এই জরিপ সক্ষম হবে।

বিশিষ্ট কথা সাহিত্যিক এবং শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘টিএসসি শুধু একটি জায়গা নয়, এটি একটি ইতিহাস। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যত সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, তার একেবারে মূল ভূমি হচ্ছে টিএসসি। স্বাধীনতার পর আমাদের নব নাট্য আন্দোলন হলো— সেটি টিএসসিকেন্দ্রিক। টিএসসি’র দীর্ঘ ইতিহাস হচ্ছে একটি অনুপ্রেরণার ইতিহাস। দ্বিতীয়ত, আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসের অনেক বড় ভূমিকা আছে। ১৯৭১ সালের ১ মার্চ যখন জাতীয় সংসদে ইয়াহিয়া খান ঘোষণা দিলো— পাকিস্তানের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির অধিবেশন ঢাকায় হবে না, তখন এই টিএসসি থেকে ক্ষোভে ছাত্ররা বেরিয়ে রাস্তায় নেমেছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তখন পূর্বাণী হোটেলে দলীয় একটি অনুষ্ঠানে ছিলেন। এখান থেকে আমরা সেখানে গিয়েছিলাম। আমি নিজেও ছিলাম সেখানে।’

তিনি আরও বলেন,‘সংস্কৃতি একটি সময়ের মানসিক চিত্র তুলে ধরে। একইসঙ্গে সংস্কৃতি বিভিন্ন সময়ের ডকুমেন্ট, যার মধ্যে লুকিয়ে থাকে সেই সময়কার প্রতিচ্ছবি। টিএসসি হচ্ছে সেরকম একটা ডকুমেন্ট— একটা সময়ের, রাজনীতির ও ইতিহাসের। এটাকে ভেঙে ফেলা মানে ওই সময়, ইতিহাস, সংস্কৃতিকে অস্বীকার করা। আমরা উন্নয়নের বিরোধী না। মেট্রোরেল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর দিয়ে চলে গেল, অথচ এটি শাহবাগ থেকে রমনা দিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটের সামনে দিয়ে যেতে পারতো। তা না করে নিয়ে আসা হলো টিএসসি দিয়ে, যাতে করে আমাদের যেখানে মঙ্গল শোভাযাত্রা হয়, সেই রাস্তা বন্ধ হয়ে গেল। তারপর দেখা যাবে, মঙ্গল শোভাযাত্রার ঐতিহ্যটি হারিয়ে যাচ্ছে। উন্নয়ন করতে হবে সংস্কৃতিকে সম্মান জানিয়ে। আমার কাছে মনে হচ্ছে, আমরা উন্নয়নের নামে শুধু কনস্ট্রাকশন করছি। উন্নয়ন হচ্ছে মানুষের মৌলিক জীবনের বিকাশ ঘটানো।’ 

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের চেয়ারপারসন এবং ঢাবির সাবেক শিক্ষার্থী অধ্যাপক ফিরদৌস আজিম বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়, এটি সাধারণ একটি বোধের বিষয়। একটি সুন্দর স্থাপনা যেখানে আমাদের মতো শিক্ষার্থীরা পড়েছে, আমাদের ইতিহাসের সঙ্গে যুক্ত টিএসসি। আজও এত ভালো একটি পরিবেশ সেখানে বিরাজ করছে। সেখানে বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক কার্যক্রম হচ্ছে, সবই তো টিএসসিকেন্দ্রিক। কেন যে বিশ্ববিদ্যালয় অথরিটি এটি ভাঙতে চাচ্ছে, আজ অবধি আমি বুঝতে পারিনি। এখন পোলিংয়ের মাধ্যমে জানা যাবে যে, এটি মুষ্টিমেয় মানুষ চাচ্ছে, না বেশিরভাগই চায়। আমি চাইবো এটি যেন  ভাঙা না হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিল্ডিংয়ের সঙ্গে একটি ইতিহাস, স্মৃতি এবং সংস্কৃতি জড়িত থাকে। এটিকে ভাঙার আমি কোনও যুক্তি দেখছি না।’

/এসও/এপিএইচ/      
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!
মন্ত্রীর অপেক্ষায় তরমুজ বিক্রিতে দেরি, ক্ষুব্ধ ক্রেতারা
মন্ত্রীর অপেক্ষায় তরমুজ বিক্রিতে দেরি, ক্ষুব্ধ ক্রেতারা