জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ বার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে রাঙামাটিতে গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জন্য নির্মিত হচ্ছে পাকা ঘর। ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে ঘর নির্মাণ। আগামী ২৩ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের অন্যান্য জেলার সঙ্গে একযোগে হস্তান্তর করা হবে আশ্রয়ণ প্রকল্পের এসব ঘরের চাবি। রাঙামাটির ১০ উপজেলায় ৭৩৬টি ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে, যার প্রথম ধাপে ২৬৮টি ঘরের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে।
দুর্গম পাহাড়ি গ্রামে বসবাস করেন হাজারো মানুষ। এসব মানুষের অনেকেরই জায়গা থাকলেও জোটে না ঘর। আবার কোনোভাবে ঘর নির্মাণ করলেও ঝড়-বৃষ্টি কিংবা অন্য কোনও দুর্যোগে ঘর হারিয়ে এসব মানুষকে আশ্রয় নিতে হয় অন্য কারও বাড়িতে। এভাবে জীবনের চক্রাকারে পরিচালিত হচ্ছে পাহাড়ের সাধারণ মানুষ।
আর এসব ভূমিহীন ও ঘরহীন মানুষের মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দেওয়ার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ‘আশ্রয়ণের অধিকার, শেখ হাসিনার উপহার’ এই স্লোগানে মুজিববর্ষ উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন স্থানের মতো রাঙামাটিতেও নির্মাণ করা হচ্ছে গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জন্য পাকা ঘর।
প্রকল্পের আওতায় রাঙামাটিতে ইতোমধ্যে ২৬৮টি পরিবারের জন্য পাকা ঘর তৈরি করা হয়েছে। দুই রুমের পাকা টিনশেডের ঘরের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এক লাল ৭১ হাজার টাকা। পাহাড়ি অঞ্চলে যোগাযোগ অসুবিধার জন্য পরিবহন খরচ বেশি হওয়ায় এই টাকা দিয়ে ঘর নির্মাণে বেগ পেতে হলেও ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে প্রথম ধাপের ঘর নির্মাণ। আর ঘর পেয়ে সন্তুষ্টির কথা জানালেন উপকারভোগীরা।
রাঙামাটি সাপছড়ি ইউনিয়নের কলাবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা মঙ্গল দেবী চাকমা ও সুমন চাকমা বলেন, আগে বৃষ্টি এলে ঘরের চাল থেকে বৃষ্টি পড়তো এবং কষ্টে দিন যাপন করতে হতো। এখন প্রধানমন্ত্রী আমাদের ঘর উপহার দিচ্ছেন, সেজন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।
একই গ্রামের ষাটোর্ধ্ব মল্লিকা দেবী বলেন, খুব কষ্টে আমরা দুই বুড়া-বুড়ি বসবাস করি। প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনাকে আশির্বাদ করি, আমাদের মতো যাদের ঘর নাই সবার ঘর করে দেওয়ার জন্য।
রাঙামাটি লংগদু উপজেলার কালাপাকুজ্জ্যা গ্রামের বাসিন্দা মো. আব্দুর রহিম বলেন, দিনমজুরি করে সংসার চালাতে কষ্ট হয়। সেখানে পাকা বাড়ি স্বপ্নেও চিন্তা করতে পারিনি।
সাপছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের ৭নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার কিনা মোহন চাকমা বলেন, আমার গ্রামের প্রায় সবাই কৃষিজীবি সাধারণ মানুষ। যারা ঘর পেয়েছে তাদের সারাজীবন চেষ্টা করেও পাকা বাসায় থাকার মতো সামর্থ্য নেই। প্রধানমন্ত্রীর এমন উদ্যোগে কৃতজ্ঞতা জানান এলাকার জনপ্রতিনিধি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাইনুল আবেদীন বলেন, লংগদু উপজেলায় দুই ধাপে মোট ৪৫টি ঘর নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে ৩৪টি ঘরের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। পর্যায়ক্রমে উপজেলার সব গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবার এ সুবিধার আওতায় আসবেন।
রাঙামাটি সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার ফাতেমা তুজ জোহরা উপমা জানান, দুর্গম অঞ্চল হওয়ায় ঘর নির্মাণের উপকরণ পৌঁছাতে সময় লাগলেও স্থানীয় মেম্বার, কার্বারি ও স্থানীয় সবার সহযোগিতায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঘর প্রস্তুত করা সম্ভব হয়েছে।
রাঙামাটির জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন দেশের প্রতিটি গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারের জন্য বাসস্থান। এই স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর অধীনে জেলায় ৭৩৬ ঘরের বরাদ্দ পাওয়া গেছে। প্রথম পর্যায়ে ২৬৮ ঘর নির্মাণ শেষ হয়েছে। আগামী ২৩ জানুয়ারি উপকারভোগীদের হাতে ঘরের চাবি প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনের পরপরই বুঝিয়ে দেওয়া হবে।
আরও পড়ুন- ঘর পাচ্ছেন ৭০ হাজার ভূমিহীন: শনিবার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী