বরগুনা পৌরসভা নির্বাচনে জগ প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান মেয়র মো. শাহাদাত হোসেনের স্ত্রী হেনারা বেগম প্রচারণায় নেমে হামলার শিকার হয়েছেন। প্রথমে তিনিসহ তার দুই সহকর্মী ইভামনি (২০) ও তামান্না লাবনী র (২৪) ওপরে ডিম ছুঁড়ে হামলা করা হয়। পরে তাদের ডিমের খাঁচা দিয়ে পিটিয়ে আহত করে অজ্ঞাত এক যুবক। এতে ইভা ও লাবনী আহত হয়েছেন। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। রবিবার (২৪ জানুয়ারি) বেলা সোয়া দুইটার দিকে শহরের সদর সড়কের প্রেসক্লাব গলিতে এ ঘটনা ঘটে।
মেয়রের স্ত্রীর অভিযোগ নির্বাচনি প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর অজ্ঞাত এক ক্যাডার এ ঘটনা ঘটিয়েছে। এছাড়াও শহরের বিভিন্ন স্থানে প্রচারণায় থাকা জগ প্রতীকের প্রচার মাইক ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর কর্মী সমর্থকদের বিরুদ্ধে।
হামলার শিকার স্বতন্ত্র প্রার্থীর স্ত্রী হেনারা বেগম জানান, প্রতিদিনের তিনি তার স্বামী স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান পৌর মেয়র মো. শাহাদাত হোসেনের পক্ষে প্রচারণার জন্য পৌরসুপার মার্কেটের ব্যবসায়ীদের কাছে যান। এসময় তার বোনের দুই মেয়ে ইভামনি ও তামান্না লাবনীসহ আরও কয়েকজন নারী সমর্থক সঙ্গে ছিলেন। প্রেসক্লাব গলিতে প্রচারণার সময় মুখে রুমাল বাধা অজ্ঞাত এক যুবক তাদের লক্ষ উপর্যপুরি ডিম ছুড়তে থাকে। ঘটনারা আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে যান তিনি। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওই যুবক ডিমের খাঁচা দিয়ে তিনজনকেই পিটিয়ে আহত করে। একপর্যায়ে সেখানে জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি যুবায়ের আদনান অনিক ও তানভীর হোসাইন সেখানে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি যুবায়ের আদনান অনিক বলেন, আমি ঘটনাস্থল থেকে যাওয়ার সময় জটলা দেখতে পাই, পরে সেখানে গিয়ে জানতে পারি, মেয়রের স্ত্রীসহ অন্যদের ওপর কেউ ডিম ছুড়েছে। প্রাথমিকভাবে আমি পরিস্থিতি সামাল দিয়ে পুলিশকে খবর দেই।
খবর পেয়ে বরগুনার পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মফিজুরর রহমান, সদর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তারিকুল ইসলাম, পরিদর্শক শহিদুল ইসলামসহ পুলিশ কর্মকর্তা ঘটাস্থলে উপস্থিত হন।
প্রত্যক্ষদর্শী একজন ব্যবসায়ী শহীদুল ইসলাম জানান, মেয়রের স্ত্রীসহ অন্যরা ব্যবসায়ীদের মাঝে লিফলেট বিতরণ করছিলেন। হঠাৎ ওই যুবক হাতে খাঁচাভর্তি ডিম নিয়ে এসে ছুড়ে মারতে থাকে। এসময় মেয়রের স্ত্রীর সাথে থাকা দুজন তরুণী ওই যুবকের গেঞ্জি ধরে আটকাতে চেষ্টা করলে ডিমের খাঁচা দিয়ে তাদের পিটিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়।
মেয়র ও স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহাদাত হোসেনের স্ত্রী হেনারা বেগম অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগ প্রার্থী কামরুল আহসান মহারাজের সমর্থকরা এ হামলা চালিয়েছে। আমরা পৌরবাসীর কাছে এর বিচার দিলাম। আগামী ৩০ জানুয়ারি ভোটাররা ভোটের মাধ্যমে এর জবাব দেবেন।
স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহাদাত হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ প্রার্থীর টার্গেট আমি, প্রচারণার শুরু থেকেই হামলার ভয়ে আমি বাসায় অবরুদ্ধ, আমার পরিবারেরও নিরাপত্তা নেই, নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়াটাই আমার অপরাধ। আমার স্ত্রীসহ স্বজনদের ওপর এমন হামলার আমি বিচার প্রার্থনা করি। এবিষয়ে আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
তিনি আরও বলেন, শহরের মাদ্রাসা সড়ক ও ব্রাঞ্চ রোড এলাকায় জগ প্রতীকের প্রচার করার সময় প্রচার মাইক ভাঙচুর করেছে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর কর্মী সমর্থকরা।
আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা মার্কার প্রার্থী অ্যাডভোকেট কামরুল আহসান মহারাজ বলেন, শাহাদাত হোসেন দলের বাইরে গিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন, তিনি পৌরমার্কেটকে কুক্ষিগত করে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা আদায় করেছেন। ব্যবসায়ীরা তার দুর্নীতির কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে জগ প্রতীকের প্রচারকারীদের লাঞ্চিত করে থাকতে পারে। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগ বা আমার সমর্থকদের কেউ জড়িত নয়।
বরগুনা সদর সার্কেলের পুলিশ সুপার মফিজুরর রহমান বলেন, ঘটনাটি শোনার সঙ্গে সঙ্গে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। ঘটনা যারা ঘটিয়েছে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। প্রত্যেক প্রার্থী যাতে নিরাপদে প্রচারণা চালিয়ে যেতে পারেন সে জন্য যা যা ব্যবস্থা নেওয়ার পুলিশ সে ব্যবস্থা নিয়েছে। অভিযোগ পেলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেবো।