X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

টিকা নিয়ে যত সব ঠোকাঠুকি

আবদুল মান্নান
২৮ জানুয়ারি ২০২১, ১৬:৩৩আপডেট : ২৮ জানুয়ারি ২০২১, ১৬:৩৯

আবদুল মান্নান বাংলাদেশে এখন তেমন কোনও রাজনীতি নেই। কারণ, দেশে কার্যকর কোনও বিরোধী দল নেই। দেশের অন্যতম বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর অনেকটা স্বেচ্ছায় কোয়ারেন্টিনে। মাঝে মধ্যে দলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রিজভী আহম্মদ দাঁত-মুখ ‘খিঁচিয়ে’ অদ্ভুত সব তথ্য দিয়ে সাংবাদিকদের সামনে হাজির হন দলের নয়াপল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকেও মাঝে মধ্যে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দেখা যায়। তবে তিনি বর্তমানে অনেকটা প্রেসক্লাবমুখী। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আইনের দৃষ্টিতে পলাতক। লন্ডন থেকে স্কাইপের মাধ্যমে দলের সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেন। ইতোমধ্যে তিনি সেই দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন। দলের চেয়ারপারসন বেগম জিয়া এখন কারাগারে। প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী আদেশে তিনি এখন নিজ বাসায় এই সাজা ভোগ করছেন। এর বাইরে আছে কিছু ওয়ানম্যান পার্টির নেতা, যারা লোকাল ট্রেনের এক্সট্রা বগির মতো নিজেদের বিএনপি’র সাথে যুক্ত করে মাঝে মধ্যে হুমকি দেন আওয়ামী লীগকে কালই বিদায় করতে হবে। একজন আবার ২০২১ সাল পর্যন্ত সময় নিয়েছেন। এদের সঙ্গে আছেন কিছু সৌখিন বামপন্থী। এদের একজন আবার তিন মেয়াদে শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রীর আমলে দেশের সার্বিক উন্নয়ন হয়েছে তার প্রশংসা করতে গিয়ে নিজ দল থেকে সাময়িকভাবে পদ হারিয়েছেন। তিনি একসময় এই দলের প্রধানের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ভারতে সিপিএম’র সিনিয়র নেতা সোমনাথ চ্যাটার্জি ২০০৪ সালে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারের সময় লোকসভার স্পিকার নির্বাচিত হন। তখন বিজেপি লোকসভায় অন্যতম বিরোধী দল। একসময় তারা ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে সংসদে অনাস্থা প্রস্তাব আনে। সিপিএম এই প্রস্তাব সমর্থন করে। লোকসভায় এই প্রস্তাবে ভোটাভুটির সময় সিপিএম সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়। সৌমনাথ চ্যাটার্জি যেহেতু স্পিকারের দায়িত্বে আছেন সেহেতু তিনি ভোটদানে বিরত থাকেন। এ কারণেই দল তাকে বহিষ্কার করে। বামপন্থীদের নীতি হচ্ছে সরকার যাই করুক তাদের তা বিরোধিতা করতেই হবে। ভালো কিছু যদি হয়েও যায় সেই সম্পর্কে কোনও কথা বলা যাবে না। বাংলাদেশের বামপন্থীদের নীতিও অনেকটা একই রকম।

কোনও কিছুতেই যখন বর্তমান সরকারকে টলানো যাচ্ছে না তখন নতুন কৌশল হিসেবে সরকার বিরোধীরা আন্দোলনের সাথে যুক্ত হয়েছিল একটি অভিজাত হোটেলে জামায়াতসহ সরকারের একসময়ের চাকরিরত সেনা ও বেসামরিক পর্যায়ের কয়েকজন কর্মকর্তাকে নিয়ে চিকেন কর্নস্যুপ আর চিলি চিকেন খেয়ে সরকারের পতনের জন্য হাত তুলে দোয়া করার মতো কর্মসূচি। সেই ভোজসভা কাম দোয়া মাহফিলে একজন আবার কোনও রাখঢাক না করেই বলে ফেললেন তিনি যদি জানতেন দেশের অবস্থা এমন হবে তাহলে একাত্তরে তিনি মুক্তিযুদ্ধে না গিয়ে রাজাকার হতেন। গত পঞ্চাশ বছরে বাংলাদেশে এমন একটা নাদান উক্তি কেউ করেছেন বলে মনে পড়ে না।

এমন যখন রাজনীতির অবস্থা তখন হঠাৎ রাজনীতির মাঠ গরম করতে এসে গেলো যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় উদ্ভাবিত করোনাভাইরাসের টিকা, যার পেটেন্ট তারা সেই দেশের বিখ্যাত ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাস্ট্রাজেনেকাকে বিক্রি করেছে। অ্যাস্ট্রাজেনেকার সদর দফতর ব্রিটেনে হলেও এটি একটি ব্রিটিশ-সুইডিশ বহুজাতিক কোম্পানি। প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ১৯৯৯ সালে। অ্যাস্ট্রাজেনেকা তাদের ভারতীয় এজেন্ট পুনাতে অবস্থিত বিশ্বের সেরা টিকা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান সেরাম ইনস্টিটিউটকে এই অঞ্চলের জন্য এই টিকা প্রস্তুত করার অনুমতি দিয়েছে। সেরাম ইনস্টিটিউট বিশ্বের বৃহত্তম টিকা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান। ১৯৬৬ সালে একজন পার্সি উদ্যোক্তা সাইরাস পুনেওয়ালা এই প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। বিশ্বের মোট চাহিদার ৬০ শতাংশ টিকা তৈরি হয় ভারতে। দেশটি ১৬ প্রকার টিকা উৎপাদন করে, যা যুক্তরাষ্ট্রসহ ১২৩টি দেশে রফতানি করা হয়। কোভিড-১৯ অতিমারি যখন ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে চীনে আঘাত করলো তখন কেউ ধারণা করতে পারেনি এটি কত ভয়াবহ হতে পারে। জানুয়ারি মাসে যখন এই ভয়াবহ রোগ চীনের সীমান্ত অতিক্রম করে ইউরোপে প্রবেশ করলো, তখন এই রোগটির ভয়াবহতা বোঝা গেলো। তখনও কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এই রোগকে তেমন কোনও গুরুত্ব দেয়নি, যার খেসারত বর্তমানে দিচ্ছে তারা। এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে এই অতিমারিতে মোট চার লক্ষ পঁচিশ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

বাংলাদেশে এই রোগটির প্রথম প্রবেশ ঘটে মার্চ মাসে, বলা হয় ইতালি ফেরত কিছু যাত্রীর মাধ্যমে। সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য দ্রুত প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। প্রথম দিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা স্বাস্থ্য অধিদফতর কিছুটা অদক্ষতার পরিচয় দিলেও বিভিন্ন মহল হতে নানা ধরনের সমালোচনার মুখে পরিস্থিতি সামাল দিতে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করে তারা। রোগটা যখন প্রায় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলো তখন ইউরোপ আমেরিকার বিভিন্ন দেশের গবেষণা প্রতিষ্ঠানে শুরু হলো এই রোগের টিকা আবিষ্কার করার প্রচেষ্টা। এই প্রচেষ্টায় সবার আগে সফল হলো ব্রিটেনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় টিকা আবিষ্কার করে কিন্তু তারা তা তৈরি করবে না। তৈরি করবে কোনও একটি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান। তারা বেছে নিলো টিকা বানাতে বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত প্রতিষ্ঠানের একটি অ্যাস্ট্রাজেনেকাকে। এক কথায় তাদের কাছে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় পেটেন্ট বিক্রি করেছে, হতে পারে তার মূল্য কয়েক মিলিয়ন ডলার। তখনই অ্যাস্ট্রাজেনেকা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এই টিকা প্রস্তুত করার জন্য বেছে নিলো ভারতের পুনায় অবস্থিত সেরাম ইনস্টিটিউটকে। এই দুটি প্রতিষ্ঠানই বেসরকারি। ততদিনে ভারতও ধুঁকছে এই অতিমারিতে। বস্তুতপক্ষে সারা বিশ্ব তখন সম্পূর্ণভাবে অচল। এরইমধ্যে গবেষণা শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ফাইজার, যারা কিনা বিশ্বের এক নম্বর ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান। তারা কিন্তু তাদের এই গবেষণা যুক্তরাষ্ট্রে করেনি, করেছে জার্মানিতে। কেউ এ নিয়ে কোনও প্রশ্ন তোলেনি। এসব জিনিস বুঝতে হলে বুঝতে হবে বিশ্বায়ন কাকে বলে। লক্ষ টাকা দামের আইফোন যুক্তরাষ্ট্রের ব্র্যান্ড। তা বর্তমানে সংযোজন করা হয় চীন, ভারত, ব্রাজিল ও অন্যান্য কোনও দেশে। এই যে এত বড় বোয়িং এয়ার ক্রাফট, তার গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ, স্টিলের সমান্তরাল বারের প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ভারতের টাটা স্টিল। কেউ বলে না বোয়িং ভারতে তৈরি। বিশ্বের অনেক নামিদামি গাড়ি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান তাদের গাড়ির ভেতরের তাপ নিরোধক ইন্সোলেটর বানায় বাংলাদেশের পাট দিয়ে। বর্তমান বিশ্বের বাজারে কোনও পণ্যে লেখা থাকে না মেইড ইন অমুক দেশ। থাকে শুধু কোম্পানির লোগো।

তামাদি মতলববাজ পণ্ডিত আর রাজনীতিবিদরা বলতে শুরু করলো বাংলাদেশ ভারতীয় টিকা কেন আনলো? ফাইজারেরটা কেন নয়? এরা বুঝতে চাইলো না ফাইজারের টিকা মাইনাস ৬০ হতে ৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে রাখতে হয়, যা বাংলাদেশে কেন, এশিয়ার অনেক দেশেই সম্ভব নয়। সেই তুলনায় অক্সফোর্ডের টিকা দুই হতে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সংরক্ষণ করলে চলবে, যার সক্ষমতা বাংলাদেশের রয়েছে।

সব ঠিক আছে, তবে এটি আনার দায়িত্ব সরকার বেক্সিমকোকে কেন দিলো? এরা জানে না এই দায়িত্ব দেওয়ার সাথে সরকারের কোনও সম্পর্ক নেই। বেক্সিমকো সেরাম ইনস্টিটিউটের বাংলাদেশের এজেন্ট। তাদের সব ধরনের ওষুধ সংরক্ষণ ও পরিবহনের সুবিধা রয়েছে। এরা এই তথ্যটা সম্ভবত জানে না বাংলাদেশ থেকে দুটি প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের এফডিএ’র সব কঠিন মানদণ্ড মেনে সেই দেশে ওষুধ রফতানি করে। একটি বেক্সিমকো আর দ্বিতীয়টি স্কয়ার। এটি তারা পেরেছে ২০১৬ সাল থেকে। এশিয়ার খুব কম দেশই এই সুবিধা পেয়েছে। বাংলাদেশ ওষুধ শিল্পে প্রায় শতভাগ স্বয়ংসম্পূর্ণ। শুধু অ্যান্টি-ক্যানসার ড্রাগ, হরমোনাল ড্রাগ বা ইনসুলিনের মতো কিছু ওষুধ এখনও বাইরে থেকে আমদানি করে থাকে। বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১৭০টি দেশে ওষুধ রফতানি হয়ে থাকে। বাংলাদেশের ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান তাদের কাঁচামাল আমদানি করে ভারত আর চীন থেকে।

বিএনপি’র কিছু নেতা ও তাদের তাঁবেদার বুদ্ধিজীবী ও পেশাজীবী নিত্যদিন গণমাধ্যমের সামনে এসে টিকা নিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেই যাচ্ছেন। তবে একটা স্বস্তির বিষয় হচ্ছে, এ পর্যন্ত গণস্বাস্থ্যের ডা. জাফরুল্লাহ ছাড়া বিএনপি ঘেঁষা কোনও চিকিৎসক বা গবেষক এই গণবিরোধী কাজটি করেননি। আর একটি স্বস্তির বিষয় হচ্ছে, বর্তমানে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বক্তব্য বিবৃতি মানুষ তেমন একটা গুরুত্ব দেন না। তিনি বিভিন্ন সময় দায়িত্বহীন নানা কথা বলে নিজেই নিজের অবস্থান নষ্ট করেছেন। টিকা নিয়ে কে কত দায়িত্বজ্ঞানহীন কথা বলতে পারেন তার জন্য এক ধরনের প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেলো। তাদের সঙ্গে আবার যোগ দিলেন বাংলাদেশে ইদানীংকালে আবির্ভূত হওয়া একশ্রেণির অর্ধশিক্ষিত ‘কাটমোল্লা’। একজন আবিষ্কার করলেন এই টিকা নিলে পুরুষ মেয়ে হয়ে যাবে। আবার টিকা হারাম না হালাল তা নিয়ে চললো বাহাস। এটি শুরু ব্রিটেনে, তারপর গেলো ইন্দোনেশিয়ায় এবং এরপর এলো বাংলাদেশে। বাংলাদেশ যে দুর্যোগ মোকাবিলায় একটি রোল মডেল তা তারা আর একবার প্রমাণ করলো এই অতিমারি মোকাবিলায় ভারতের আগে সিরাম ইনস্টিটিউটে প্রস্তুত করা অক্সফোর্ডের টিকা বুকিং দিয়ে। এর জন্য প্রধানমন্ত্রী অর্থমন্ত্রীকে এক হাজার কোটি টাকা আগেই পৃথক করে রাখতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। টিকার দাম নিয়ে ক’দিন ধরে চললো নানা অসত্য বাগবিতণ্ডা। রিজভী আহম্মদ বলেন, এই টিকা এলে তা ভিআইপিরা সব শেষ করে দেবে। ক’দিন পর তিনি আবিষ্কার করলেন এই টিকা দিয়ে সরকার ষড়যন্ত্র করছে বিএনপি’র সকল নেতাকর্মীকে মেরে ফেলতে। মির্জা ফখরুল আবিষ্কার করলেন, ব্রিটেনে যদি রানি টিকার প্রথম ডোজ নিয়ে এই টিকা কর্মসূচি উদ্বোধন করতে পারেন তাহলে শেখ হাসিনা কেন নয়? এই আজব তথ্য একমাত্র তার পক্ষেই দেওয়া সম্ভব। এরা বুঝতে পারেন না টিকা দেওয়াটা সম্পূর্ণভাবে নিজের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে। আপনি নেবেন কিনা তা আপনি ঠিক করবেন।

ভারত উপহার হিসেবে সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে কিনে বিশ লক্ষ ডোজ টিকা প্রথমেই বাংলাদেশকে উপহার দিয়েছে। তারপর বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থে কেনা পঞ্চাশ লক্ষ ডোজের প্রথম চালানটি এসে পৌঁছেছে গত মঙ্গলবার। বুধবার প্রধানমন্ত্রী এই টিকা প্রদান কর্মসূচি উদ্বোধন করেন ভার্চুয়ালি। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে উদ্বোধনী পর্বে বিভিন্ন পেশার পাঁচ জন স্বেচ্ছায় টিকা নেন। তারপর বাকি সময়ে আরও ২৪ জনকে এই টিকা দেওয়া হয়। প্রথম যিনি টিকা নেন তিনি একই হাসপাতালের একজন সেবিকা, রুনু ভেরোনিকা কস্তা। এই পাঁচ জনকে অভিনন্দন । ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে সারা দেশে এই টিকাদান কর্মসূচি চালু হবে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ টিকা প্রয়োগকারী দেশ হিসেবে বিশ্বে ৫৪তম দেশ হিসেবে নিজেদের স্থান করে নিলো। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের পর বাংলাদেশ এখন দ্বিতীয় দেশ, যারা টিকা পাচ্ছে বা পাবে। এর কৃতিত্ব তো সরকারকে দিতেই হয় আর তার জন্য তো একজনকে আওয়ামী লীগের বা শেখ হাসিনার সমর্থক হওয়ার প্রয়োজন নেই। সারা ইউরোপে এখন অক্সফোর্ডের টিকার জন্য হাহাকার শুরু হয়েছে। কারণ, তাদের চাহিদার তুলনায় জোগান কম। অ্যাস্ট্রাজেনেকা বলেছে তারা অর্ডার দিয়েছে দেরিতে।

যুক্তরাষ্ট্রে এখন পর্যন্ত পুরা সংকটই তাদের আয়ত্তের বাইরে। হাসপাতালগুলো বলছে তাদের কোনও সিট আর খালি নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশ স্বাস্থ্য সেবাদানকারী দেশ হিসাবে ৮৫তম আর কোভিড-১৯ মোকাবিলায় ২০তম। দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম। যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপের সব দেশ বাংলাদেশের অনেক নিচে অবস্থান করছে। এই হিসাব বা র‌্যাংকিং বাংলাদেশ বা আওয়ামী লীগ করেনি।

টিকা আসবে কি আসবে না, আসলে তা কি ‘গোমূত্র’ হবে না ‘গঙ্গার পানি’, এটি কি হালাল টিকা না হারাম, এই টিকা নিলে সোয়াব হবে না পাপ, ফাইজার থেকে টিকা না নিয়ে ভারত থেকে কেন টিকা নিলো সরকার, এই টিকা প্রথমে প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া হোক, টিকা নিয়ে এমন সব বাহাস আর ঠোকাঠুকি আরও হয়তো কিছু দিন চলবে। এরপর হয়তো অন্য কোনও কারণে কিছু লোকের মৃত্যু হবে, যেমনটি হয় প্রতিদিন। তারপর শুরু হবে বলা ‘বলেছিলাম না এই টিকা নিলে মৃত্যু নির্ঘাত’ মাতম। তারপর ওয়ান ম্যান পার্টির কেউ একজন হুংকার ছাড়বেন এই মুহূর্তে সরকারের পদত্যাগ চাই। তাদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। তারা যে বেঁচে আছেন তা জানান দিতে হবে তো। তারা হয় এসব ব্যাপারে নিজেরা সম্পূর্ণ অজ্ঞ বা দেশের সব মানুষকে গণ্ডমূর্খ মনে করেন। অথবা জেনে শুনেই মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেন। আল্লাহ তাদের হেদায়েত দান করুন। সফল হোক বাংলাদেশের এই টিকাদান কর্মসূচি।

লেখক: বিশ্লেষক ও গবেষক

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
চাটমোহরে ঐতিহ্যবাহী ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু
চাটমোহরে ঐতিহ্যবাহী ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু
রাজশাহীতে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হলো বিভাগীয় সর্বজনীন পেনশন মেলা
রাজশাহীতে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হলো বিভাগীয় সর্বজনীন পেনশন মেলা
রুবেলকে শোকজ দিলো উপজেলা আ’লীগ, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ পলকের
নাটোরে উপজেলা নির্বাচনরুবেলকে শোকজ দিলো উপজেলা আ’লীগ, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ পলকের
এমপি দোলনের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ, সাংবাদিক আহত
এমপি দোলনের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ, সাংবাদিক আহত
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ