X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

দুর্নীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান ২ ধাপ অবনতি: টিআইবি

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২৮ জানুয়ারি ২০২১, ১৭:২০আপডেট : ২৮ জানুয়ারি ২০২১, ১৮:১২

দুর্নীতিতে বিশ্ব স্কোরে বাংলাদেশের অবস্থানের দুই ধাপ অবনতি হয়েছে বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে সংস্থাটি।

টিআইবির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বার্লিনভিত্তিক ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) প্রকাশিত ‘দুর্নীতির ধারণা সূচক (সিপিআই) ২০২০’-এ বাংলাদেশের স্কোর (২৬) অপরিবর্তিত থাকলেও সর্বনিম্ন থেকে গণনা অনুযায়ী, ২০১৯ সালের তুলনায় অবস্থান দুই ধাপ অবনতি হয়েছে। বৈশ্বিক গড় স্কোরের (৪৩) তুলনায় এবারও বাংলাদেশের স্কোর যেমন উল্লেখযোগ্যভাবে কম, তেমনি গতবারের (২০১৯) মতোই বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয় সর্বনিম্ন স্কোর ও অবস্থানে থাকায় দেশে দুর্নীতির ব্যাপকতা ও গভীরতা এখনও উদ্বেগজনক। কোভিড-১৯ অতিমারির প্রেক্ষাপটে যার ভয়াবহতা ও বিস্তৃতি প্রকটভাবে প্রকাশ পেয়েছে। তাই দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘শুধুই প্রতিশ্রুতি’ কিংবা ‘অস্বীকারের সংস্কৃতি’ আর ‘স্বল্প পরিসরের অভিযানের’ বাইরে গিয়ে আরও বিস্তৃত, কঠোর ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছে টিআইবি।

বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) সিপিআই ২০২০-এর বৈশ্বিক প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে অনলাইনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের অবস্থান প্রকাশ করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘সূচকে বাংলাদেশের স্কোর তৃতীয়বারের মতো অপরিবর্তিত রয়েছে। আপাতত, এটি স্বস্তিকর মনে হলেও নিম্নক্রম অনুসারে বিশ্বে প্রথম অবস্থানে থাকা সোমালিয়া এবং দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম অবস্থানে থাকা আফগানিস্তানের মতো দেশেরও স্কোর ৩ পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই বাংলাদেশের অপরিবর্তিত স্কোর নিয়ে আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই।’

তিনি বলেন, ‘২০২০ সালে ০-১০০ স্কেলে গত দুই বছরের মতোই ২৬ স্কোর পেয়েছে বাংলাদেশ। ১৮০টি দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন থেকে গণনা অনুযায়ী, ২০১৯ সালের তুলনায় ২ ধাপ অবনতি হয়ে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ১২তম। তবে সর্বোচ্চ থেকে গণনা অনুযায়ী, বাংলাদেশের অবস্থান অপরিবর্তিত থেকে ১৪৬তম। এবার একই স্কোর পেয়ে নিম্নক্রম অনুযায়ী বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথভাবে ১২তম অবস্থানে আছে উজবেকিস্তান ও সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক।’

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘বাংলাদেশের স্কোর অপরিবর্তিত থাকলেও তা বৈশ্বিক গড় ৪৩-এর চেয়ে অনেক কম এবং দক্ষিণ এশিয়ার ৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এখনও দ্বিতীয় সর্বনিম্ন। আর এশিয়া প্যাসিফিকের ৩১টি দেশের মধ্যে অবস্থান চতুর্থ সর্বনিম্ন, যা বিব্রতকর ও হতাশাব্যঞ্জক। আমাদের আরও ভালো করার সামর্থ্য ছিল, যদি রাজনৈতিক শুদ্ধাচারের মাধ্যমে সুশাসন নিশ্চিত করা যেতো। ক্ষেত্র বিশেষে দুর্নীতির ঘটনা অস্বীকার কিংবা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা না করে, অবস্থান ও পরিচয় নির্বিশেষে আইনের কঠোর প্রয়োগ যদি হতো, তাহলে আমাদের স্কোর ও অবস্থানের আরও উন্নতি হতে পারতো।’

তিনি বলেন, ‘‘কোভিড-১৯ অতিমারির সংকটময় মুহূর্তে দেশের স্বাস্থ্য খাতে প্রকটভাবে প্রকাশিত দুর্নীতিও আমাদের অবস্থানের আরও উন্নতিতে অন্তরায় হয়েছে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা’র ঘোষণা সর্বোচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রকাশ হলেও এর প্রয়োগে ঘাটতি আছে। বাস্তবে তা ঘোষণাতেই আটকে আছে। বিশেষ করে এই ঘোষণা বাস্তবায়নের দায়িত্ব ও ক্ষমতাপ্রাপ্ত মহল ও প্রতিষ্ঠানগুলোতে দুর্নীতির যোগসাজশ, সহায়ক ও সুবিধাভোগীদের প্রভাবের কারণে অগ্রগতি অর্জনের সুযোগ নষ্ট হচ্ছে।”

টিআইবির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ২০২০ সালের সিপিআই অনুযায়ী, ৮৮ স্কোর পেয়ে এবারও যৌথভাবে সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকার শীর্ষে অবস্থান করছে ডেনমার্ক ও নিউজিল্যান্ড। ৮৫ স্কোর পেয়ে তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ফিনল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, সুইডেন ও সুইজারল্যান্ড এবং ৮৪ স্কোর পেয়ে তালিকার তৃতীয় স্থানে রয়েছে নরওয়ে। আর সর্বনিম্ন ১২ স্কোর পেয়ে যৌথভাবে তালিকার সর্বনিম্নে অবস্থান করছে দক্ষিণ সুদান ও সোমালিয়া। ১৪ স্কোর পেয়ে তালিকার নিম্নক্রম অনুযায়ী দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে সিরিয়া এবং ১৫ স্কোর পেয়ে তৃতীয় সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছে ইয়েমেন ও ভেনেজুয়েলা।

টিআইবি জানায়, এবারের সিপিআই অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ৬৮ স্কোর নিয়ে সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ ভুটান। সর্বোচ্চ থেকে গণনা অনুযায়ী, এক ধাপ এগিয়ে সূচকে দেশটির অবস্থান ২৪। আর দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয় স্থানে আছে মালদ্বীপ। আগের অবস্থান থেকে বড় ধরনের উল্লম্ফন দিয়ে গতবারের তুলনায় দেশটির স্কোর ১৪ পয়েন্ট বেড়ে ৪৩ হয়েছে এবং ৫৫ ধাপ এগিয়ে উঠে এসেছে ৭৫তম অবস্থানে। তালিকায় দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর মধ্যে তৃতীয় অবস্থানে নেমে আসা ভারতের স্কোর ১ কমে হয়েছে ৪০ এবং অবস্থান ৬ ধাপ নেমে হয়েছে ৮৬। এরপরে শ্রীলঙ্কা গতবারের সমান ৩৮ স্কোর অর্জন করলেও ১ ধাপ পিছিয়ে ৯৪তম অবস্থানে রয়েছে। এরপর রয়েছে নেপাল, দেশটি গতবারের চেয়ে ১ কম পেয়ে ৩৩ স্কোর অর্জন করেছে এবং সর্বোচ্চ থেকে গণনা অনুযায়ী, ৪ ধাপ পিছিয়ে ১১৭তম অবস্থানে রয়েছে। ১ স্কোর কম পেয়ে ৩১ স্কোর নিয়ে ৪ ধাপ পিছিয়ে ১২৪তম অবস্থানে নেমে গিয়েছে পাকিস্তান। আর তৃতীয়বারের মতো ২৬ স্কোর নিয়ে গতবারের মতোই ১৪৬তম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের পরে ২০১৯ এর চেয়ে  ৩ স্কোর বেশি পেয়ে ও ৮ ধাপ এগিয়ে  সিপিআই ২০২০ সূচকে সর্বোচ্চ থেকে গণনা অনুযায়ী, ১৬৫তম অবস্থানে উঠে এসেছে আফগানিস্তান। অর্থাৎ সর্বনিম্ন থেকে গণনা অনুযায়ী, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় যথাক্রমে প্রথম ও দ্বিতীয় সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছে। বাংলাদেশ সিপিআই সূচক অনুযায়ী, ২০১২ সাল থেকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে অষ্টমবারের মতো এবারও দ্বিতীয় সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, সিপিআই সম্পর্কে যথাযথ ধারণার অভাবে অনেক সময় ‘বাংলাদেশ দুর্নীতিগ্রস্ত বা বাংলাদেশের অধিবাসীরা সবাই দুর্নীতি করে’ এ ধরনের ভুল ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়। যদিও দুর্নীতি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও দারিদ্র্য দূরীকরণ, সর্বোপরি টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনের পথে কঠিনতম অন্তরায়। তথাপি বাস্তবে দেশের আপামর জনগণ দুর্নীতিগ্রস্ত নয়। তারা দুর্নীতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ও ভুক্তভোগী মাত্র। ক্ষমতাবানদের দুর্নীতি এবং তা প্রতিরোধে দেশের নেতৃত্ব ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যর্থতার কারণে দেশ বা জনগণকে কোনোভাবেই দুর্নীতিগ্রস্ত বলা যাবে না।

সিপিআই সূচকে দুর্নীতির ধারণার মাত্রাকে ০-১০০ এর স্কেলে নির্ধারণ করা হয়। ‘০’ স্কোরকে দুর্নীতির কারণে সর্বোচ্চ ক্ষতিগ্রস্ত এবং ‘১০০’ স্কোরকে দুর্নীতির কারণে সবচেয়ে কম ক্ষতিগ্রস্ত বা সর্বাধিক সুশাসিত বলে ধারণা করা হয়। যে দেশগুলো সূচকে অন্তর্ভুক্ত নয়, তাদের সম্পর্কে এ সূচকে কোনও মন্তব্য করা হয় না। সূচকে অন্তর্ভুক্ত কোনও দেশই এখনও পর্যন্ত সিপিআই-এ শতভাগ স্কোর পায়নি। অর্থাৎ, দুর্নীতির ব্যাপকতা সর্বনিম্ন এমন দেশগুলোতেও কম মাত্রায় হলেও দুর্নীতি বিরাজ করে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সিপিআই নির্ণয়ে টিআইবি কোনও ভূমিকা পালন করে না। এমনকি টিআইবি’র গবেষণা থেকে প্রাপ্ত কোনও তথ্য বা বিশ্লেষণ সিপিআই-এ পাঠানো হয় না। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের টিআই চ্যাপ্টারের মতো টিআইবিও দুর্নীতির ধারণা সূচক দেশীয় পর্যায়ে প্রকাশ করে মাত্র। সিপিআই ২০২০-এর তথ্যসূত্র হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জন্য সর্বমোট ১৩টি জরিপ ব্যবহার করা হলেও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে গতবারের মতো ৮টি জরিপ ব্যবহৃত হয়েছে। জরিপগুলো হলো— বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি পলিসি অ্যান্ড ইনস্টিটিউশনাল অ্যাসেসমেন্ট, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম এক্সিকিউটিভ ওপিনিয়ন সার্ভে, গ্লোবাল ইনসাইট কান্ট্রি রিস্ক রেটিংস, বার্টেলসম্যান ফাউন্ডেশন ট্রান্সফরমেশন ইনডেক্স, ওয়ার্ল্ড জাস্টিস প্রজেক্ট রুল অব ল ইনডেক্স, পলিটিক্যাল রিস্ক সার্ভিসেস ইন্টারন্যাশনাল কান্ট্রি রিস্ক গাইড, ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট কান্ট্রি রিস্ক রেটিংস এবং ভ্যারাইটিস অব ডেমোক্র্যাসি প্রজেক্ট ডেটাসেট-এর রিপোর্ট।

আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান কর্তৃক পরিচালিত সর্বনিম্ন ৩টি ও সর্বোচ্চ ১০টি (অঞ্চল ও দেশভেদে জরিপের লভ্যতার ওপর নির্ভর করে) জরিপের সমন্বিত ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে ২০২০ সালের সিপিআই প্রণীত হয়েছে। জরিপগুলোতে মূলত ব্যবসায়ী, বিনিয়োগকারী, সংশ্লিষ্ট খাতের গবেষক ও বিশ্লেষকদের ধারণার প্রতিফলন ঘটে থাকে। সিপিআই অনুযায়ী, দুর্নীতির সংজ্ঞা হচ্ছে—ব্যক্তিগত সুবিধা বা লাভের জন্য ‘সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার’। সিপিআই নির্ণয়কালে জরিপের তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সর্বোচ্চ মান এবং বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা হয় বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

/জেইউ/এপিএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
রুশ বিদ্যুৎকেন্দ্রে ইউক্রেনের হামলা, ৫০টি ড্রোন ভূপাতিতের দাবি মস্কোর
রুশ বিদ্যুৎকেন্দ্রে ইউক্রেনের হামলা, ৫০টি ড্রোন ভূপাতিতের দাবি মস্কোর
বিয়েবাড়ির খাসির মাংস খেয়ে ১৬ জন হাসপাতালে
বিয়েবাড়ির খাসির মাংস খেয়ে ১৬ জন হাসপাতালে
সরকারি প্রতিষ্ঠানে একাধিক পদে চাকরি
সরকারি প্রতিষ্ঠানে একাধিক পদে চাকরি
এখনই হচ্ছে না হকির শিরোপা নিষ্পত্তি, তাহলে কবে?
এখনই হচ্ছে না হকির শিরোপা নিষ্পত্তি, তাহলে কবে?
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি