X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

পণ্ডিতমশাইদের বড় প্রয়োজন

মাহমুদুর রহমান
০৮ জানুয়ারি ২০১৬, ১৩:২৯আপডেট : ১৩ জানুয়ারি ২০১৬, ১৫:৫০

মাহমুদুর রহমান সাধারণ কাপড়ের ধুতি, বগলতলে বই, মাথার উপর ছাতা। এই তো ছিল পণ্ডিতমশাইদের চিত্র। জীবনের সাধারণ মঙ্গল আলিঙ্গন করে তাদের জীবন চলত। আত্মতৃপ্তি আসতো বছর শেষে ছাত্রদের পরীক্ষায় পারদর্শিতার প্রকাশে। সামান্য বেতন-ভাতায় এবং সেভাবেই নিরামিষভোগী জীবনে ছিলেন তারা সন্তষ্ট। প্রলোভন তাদের চিন্তাধারাকে কখনই প্রভাবান্বিত করতে পারেনি। তাই তাদের জ্ঞানবুদ্ধি ছিল সামাজিক শ্রদ্ধার উৎস।
সময়ের চাকার নির্লিপ্ত চলা বয়ে আনল পরিবর্তন। উচ্চাভিলাষের সঙ্গে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ অবধারিতভাবে কলুষিত করল সেই অমায়িক অস্তিত্ব। শিক্ষায় ধস ছিল মাত্র সময়ের ব্যপার। শিক্ষার মান যতই নিম্নমুখী হলো, শিক্ষকদের মান ততটাই। William Blake Innocence and Experience নিয়ে যে কবিতা লিখেছিলেন, এ যেন তার বাস্তব প্রতিফলন। অভিজ্ঞতার কাছে নিরীহতার সম্মুখ পরাজয়। তবে পরাজয় পণ্ডিত মশাইদের নয়, হেরেছে সমাজ এবং ব্যক্তি। শিক্ষা হয়েছে টাকার কাছে বন্দি পণ্য। হৃষ্টেপিষ্টে এমনই বাঁধা যে বাঁধন ফাঁসের মতো প্রাণস্পন্দনকে গলা টিপে ধরেছে। রমরমা প্রাইভেট কোচিং, তাও ১০০ ভাগ জিপিএ ৫-এর নিশ্চয়তাসহ। পরীক্ষার পূর্বে, ভর্তির আগেই এ ধরনের আশ্বাস একমাত্র সৃষ্টিকর্তা ছাড়া কী ভাবে দেখা হয় তা বোধগম্য নয়। পিতা-মাতার বিশ্বাস যে অটুট তা বলা বাহুল্য। এত সেই BPL ও IPL T/20 খেলার মতো হয়ে যাচ্ছে।
নিবেদিত প্রাণ কিছু শিক্ষক আছেন বিধায় রক্ষে। নইল GPA5 এবং GPA Star এক ভিড়ের মধ্যে মানিক/সোনা মেধাবী কিছু খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। সেইসঙ্গে কোচিং বঞ্চিত মফস্বলের বাড়তি সংখ্যক মেধাবী বেরিয়ে আসছে। সেই মেধাবীদের হারাতে হচ্ছে বিদেশ বিভুইয়ের চকচকে আকর্ষণে। রয়ে যাচ্ছে মধ্যম মেধাবীরা। কিন্তু তাদের মেধার তফাৎ এতটাই যে ভবিষ্যতের দিকে আশা নিয়ে তাকানো কঠিন।
ধর্ম ও বিজ্ঞান শিক্ষার রোষাণলে পড়ে মূল মানুষ গড়ার শিক্ষা কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। বোধশক্তি আর মনুষত্ব্য আজ কাঙ্গালের মতো দৈন্যদশার কাছে আটকে আছে।
সরকারি চাকুরেদের বেতন-ভাতা বেড়েছে এটা সুখকর কথা। কিন্তু মানুষ তৈরির কারিগরদের অনশন করতে দেখলে ভেতরটা কেঁদে ওঠে। তাদের আন্দলনে কেন নামতে হয়? তাদের মূল চাহিদা কখনও পূরণ হতে দেখিনি যদিওবা শিক্ষকের ঘরেই গর্বিত জন্ম এই প্রতিবেদকের। তাদের ভাঙতে দেখিনি।
পণ্ডিত মশাইদের ফিরে পাওয়া যাবে না, তবে অবসরে যাওয়া বহু শিক্ষক শৃঙ্খল জীবন যাপন করায় এখনও কর্মঠ। তাদের ফিরিয়ে আনতে হবে, শিক্ষক এবং প্রশিক্ষক করে। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো তাদেরকে বয়স সীমার বাইরেও সুস্থতার ভিত্তিতে নিয়োগ বাড়াতে হবে। প্রয়োজনে প্রযুক্তিতে তারা পিছিয়ে থাকলে সহযোগীর ব্যবস্থা রাখতে হবে। তারা শেখার সুযোগ এবং তাগিদ বুঝলেই স্বভাবশিলিতভাবে নতুনকে আলিঙ্গন করে নেবে। মানুষ তৈরির কারিগরদের দেখে রাখতে হবে, কারণ দেশের ভবিষ্যত তাদেরই হাতে। তাদের যথাস্থান বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে, প্রেসক্লাব বা শহীদ মিনারের সামনে অনশনরত অবস্থান কারও কাম্য নয়।

 

লেখক: কমিউনিকেশন বিশেষজ্ঞ

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। বাংলা ট্রিবিউন-এর সম্পাদকীয় নীতি/মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য বাংলা ট্রিবিউন কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না 

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
বেচাকেনা জমজমাট, কম দামে ভালো পাঞ্জাবিতে আগ্রহ ক্রেতাদের
বেচাকেনা জমজমাট, কম দামে ভালো পাঞ্জাবিতে আগ্রহ ক্রেতাদের
‘মাঝেমধ্যে ভাবি, আইপিএল কি আদৌ ক্রিকেট’
‘মাঝেমধ্যে ভাবি, আইপিএল কি আদৌ ক্রিকেট’
ঈদে আরিয়ানের একমাত্র নির্মাণ ‘তখন যখন’
ঈদে আরিয়ানের একমাত্র নির্মাণ ‘তখন যখন’
করোনার পর মাধ্যমিকে ১০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী কমেছে
করোনার পর মাধ্যমিকে ১০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী কমেছে
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ