X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

ক্ষমার শুরু কোথায়?

মাহমুদুর রহমান
০৪ মার্চ ২০১৬, ১২:০০আপডেট : ০৪ মার্চ ২০১৬, ১২:০২






মাহমুদুর রহমান প্রতিশোধের চূড়ায় বসে ক্ষমা চোখে পড়ার কথা নয়। টগবগে অনুভূতির উত্তাপের কাছে শীতলতা প্রতিযোগিতায় হার মানে। জিঘাংসা এমনই যে বোধশক্তিকে গ্রাস করে, বুদ্ধিদ্বীপ্ত চিন্তা-চেতনাকে পদদলিত করে। হয়তো এই কারণে প্রতিটি ধর্মে, প্রায় সকল সংস্কৃতিতে ধৈর্যের ওপর জোর দেওয়া হয়। আর আধুনিক জীবনযাত্রার সংক্ষুব্ধদের জন্য আইনি ব্যবস্থা চালু রয়েছে। এর মূলে রয়েছে সেই অন্তর্নিহিত বিশ্বাস যে পেশি শক্তি নয়, বুদ্ধিচর্চা দিয়ে অন্যায়কে মোকাবিলা করা।

বিচারিক দীর্ঘসূত্রতা এবং অনেক ক্ষেত্রে, অন্যায়ের ব্যক্তিগত যন্ত্রণা এতই পীড়াদায়ক যে ইচ্ছার প্রবলতা অপেক্ষাকে পিছু হটিয়ে দেয়। তাছাড়া আইনি প্রক্রিয়ার ফাঁক-ফোকর গলিয়ে অপরাধী পার পেয়ে যাওয়াটাও একটি অপ্রিয় সত্যি। সময় মতো তাকে আইনের হাতে তুলে দেওয়ার ব্যাপারটিও রয়েছে। প্রতিশোধ আর ক্ষমার টানা-পোড়নের অন্য রূপ পাওয়া যায় Eric Lomax নামে এক ব্রিটিশ প্রকৌশলীর জীবন কাহিনীতে, দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে। জাপানিদের হাতে মিয়ানমারে বন্দী থাকাকালীন তার ওপর চালানো হয় অবর্ণনীয় নির্যাতন। Lomax তার জীবনের এই অধ্যায় নিজের কাছে লুকিয়ে রেখেছিলেন বহু বছর। এবং বিভীষিকাময়ী স্মৃতি তার মনে জ্বলন্ত ক্ষত হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার পথে অন্তরায় হয়ে থাকে। The Railway Man শিরোনামে ছায়াছবিতে Lomax এর মানসিক মুক্তির বর্ণনা করা হয়েছে। তার স্ত্রী এবং সঙ্গি যোদ্ধাদের অনুপ্রেরণায় Lomax ফিরে যান Takashi-এর খোঁজে, যে নির্যাতন চলা সময়ে অনুবাদকের কাজ করেছিলেন, কিন্তু তার নির্যাতন লাঘবে আঙুল পর্যন্ত তুলেননি। Lomax চেয়েছেন গ্লানি, পরাজয়ের বেড়াজাল থেকে বেড়িয়ে Takashi’র শাস্তি, প্রতিশোধ। কারণ, Takashi নিজেকে যুদ্ধাপরাধের বিচার থেকে বেঁচে ছিলেন তার অনুবাদক হওয়ার কারণে। নির্দোষ Lomax এর সত্য স্বীকারোক্তির সঠিক উপস্থাপন না করে যে গর্হিত অন্যায় করেছিলেন, তার কোন বিচারই হয় নি।
দুজনে মুখামুখি হন। Lomax পারলেন না নিজ হাতে প্রতিশোধ নিতে। প্রতিশোধের যে আগুন তার অন্তরে পুড়ছিলো এত গুলো বছর, তার অবয়ব যেন বদলে যায়। লেলিহান শিখা জ্বললেও স্ফুলিঙ্গ পরিবর্তিত হয়ে শীতল আক্রোশে রূপ নেয়। Takashi নিজেও অপরাধবোধে কাতরাচ্ছিলেন। যেন Lomax এর অপেক্ষায় ছিলেন তিনি ।
Lomax স্পষ্টই জানিয়ে দিলেন, ক্ষমা তিনি করেছেন তবে তার নির্যাতন তিনি কখনওই ভুলবেন না। পরবর্তিতে দুজনার মধ্যে স্থাপিত হয় এমনই বন্ধুত্ব যা চলে তাদের জীবদ্দশা জুড়ে।
কে এই Eric Lomax? কোথায় বা তিনি পেলেন মহানুভবতার শক্তি, যার মাধ্যমে প্রতিশোধের চূড়া থেকে নেমে তিনি আলিঙ্গন করলেন ক্ষমা? কিভাবে ক্ষমা থেকে বন্ধুত্ব গড়ে উঠল তার সাথে এমন ধিকৃত আচরণকারীর? কোনও প্রশ্নের জবাব পাওয়া যাবে না, কারণ দুজনেই পরপারে। চরমতার বাইরেও অনুভূতি আছে। ক্ষমার মহত্ব নিয়ে না ভাবলেও এর মাধ্যমে Lomax কিছু একটা খুঁজে পেয়েছেন, যা প্রতিশোধের চাইতেও অর্থবহ। মূলত: স্ত্রীর নিভাজ ভালোবাসা তার জীবনে বয়ে আনে অন্য শক্তি। জয় হলো হৃদয়ের নিভৃতিতে লুকিয়ে থাকা ক্ষমার মহত্ব। পরাজিত হলো মনের মধ্যে পুষে রাখা প্রতিশোধ। প্রমাণিত হলো আবারও শেক্সপিয়ারের সেই মহত বাণী।
Mercy is twice blessed. It blesseth he who gives and he who receives.

লেখক: কমিউনেকেশন বিশেষজ্ঞ

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ডিভোর্স দেওয়ায় স্ত্রীকে কুপিয়ে নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন স্বামী
ডিভোর্স দেওয়ায় স্ত্রীকে কুপিয়ে নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন স্বামী
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ