X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

রাজনীতিতে নিপাতনে সিদ্ধ সন্ধি

এরশাদুল আলম প্রিন্স
০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৭:৫৮আপডেট : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৮:০০

এরশাদুল আলম প্রিন্স বাংলা ব্যাকরণে সন্ধি একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ছাত্রজীবনে কারক, বিভক্তি, সন্ধি, সমাস, লিঙ্গ, ক্রিয়া ও ধাতু বিদ্যা শিখতে গিয়ে বাংলা ভাষা আর ঠিকমতো শেখা হয়নি। এই বঙ্গ-ছাত্রসমাজের এখনও বুঝি একই হাল! ভাষার কথা থাক। মূলত চলমান রাজনীতির হাল-হকিকত দেখেই ব্যাকরণের কথা মনে হলো। আমাদের রাজনীতিতে শুধু আজ নয়, সবকালেই বিভক্তি বিরাজ করেছে। স্বাধীনতার পর থেকে যে বিভক্তি শুরু হয়েছে, সেই বিভক্তি আজও শেষ হয়নি। রাজনৈতিক এ বিভক্তির প্রেক্ষাপট যা-ই হোক, অনেকেই মনে করেন, জাসদের মাধ্যমেই দেশে রাজনৈতিক বিভক্তির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস! সে জাসদ অচিরেই কয়েক টুকরা হয়ে গেছে। হালে তা আরও বেড়েছে। সম্প্রতি এই জাসদেরই একটি অংশ যুক্তফ্রন্ট গঠন করে একটি জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছে। শুনেছি ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হয়, কারণ মানুষ ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয় না। ভবিষ্যতে এই যুক্তফ্রন্ট কয় টুকরা হয় সেটিই দেখার বিষয়।
রাজনীতিতে যেমন বিভক্তি আছে, সন্ধিও আছে। রাজনীতিতে বিভক্তি থাকাই স্বাভাবিক। এটি গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। বিভক্তি না থাকলে সেখানে গণতন্ত্র টেকে না; জন্ম নেয় স্বৈরাচার, একনায়কতন্ত্র। কিন্তু বিভক্তিরও একটি নৈতিক অবস্থান ও মানদণ্ড থাকা জরুরি। জাতীয় স্বার্থের বাউন্ডারির মধ্যেই সবাইকে রাজনৈতিক খেলা খেলতে হয়। রাজনীতির মূল লক্ষ্য ক্ষমতা একথা ঠিক; কিন্তু জাতীয় স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে গদিই সব–এমন রাজনীতি মহাবিপর্যয় ডেকে আনে। এ বিপর্যয় শুধু দেশের নয়, দলেরও। কথায় আছে—‘নগর পুড়িলে দেবালয় কি এড়ায়?’

সম্প্রতি রাজনীতিতে বিভক্তির চেয়ে সন্ধি প্রক্রিয়া নিয়েই বেশি কথা হচ্ছে। এক্ষেত্রে মনে রাখা দরকার, অতিরিক্ত বিভক্তি যেমন ধ্বংসের কারণ, তেমনি না জেনে বুঝে যার-তার সঙ্গে সন্ধি বা মিলনে ভালো কিছু পয়দা নাও হতে পারে। বরং তা মহা ধ্বংসের কারণ হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে। বিএনপি জামায়াতের সঙ্গে জোট করে তাদের ক্ষমতার ভাগীদার করেছে, তাদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা তুলে দিয়েছে। কলঙ্কের এ বোঝা বিএনপি লাঘব করবে কীভাবে? জামায়াত ও তাদের সহযোগী সংগঠনের খপ্পরে পড়েই হাওয়া ভবন থেকে আরেকটি ১৫ আগস্ট কিংবা  ঘটানোর চেষ্টা করা হয়। এজন্যই বিভ্রান্ত দল ও মতের সঙ্গে ঐক্য করার চেয়ে বিভক্তির রাজনীতি করাও ভালো। এতে দেশ বাঁচে, দলও টিকে যায়।

নির্বাচন ঘিরে ঐক্য গঠনের যে প্রচেষ্টা দেখা যাচ্ছে, তার সবচেয় বড় ভয় এখানেই। প্রথম কথা হচ্ছে, রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে রাজনৈতিক সন্ধি হতেই পারে। কিন্তু সে সন্ধি বিচ্ছেদ করলে যদি বিরাজনীতিকরণ প্রক্রিয়া দৃশ্যমান হয়, তা কারও জন্যই শুভ হবে না। দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে, এই ঐক্য প্রক্রিয়ার নৈতিক ও আদর্শিক ভিত্তিটি জনগণের কাছে স্পষ্ট করা জরুরি। প্রথম প্রশ্নটির জবাব সময়ই বলে দেবে, কিন্তু জনগণের কাছে দ্বিতীয় প্রশ্নটিতে এখনই নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করা প্রয়োজন।

দেশের রাজনীতি মূলত দু’টি ধারায় বিভক্ত। একটি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ও আরেকটি আওয়ামী বিরোধী বা বিএনপিকেন্দ্রিক জোট। এর মাঝে আরেকটি তৃতীয় শক্তি গঠনের চেষ্টা বহুদিন ধরেই চলছিল। কিন্তু আজ পর্যন্ত এ তৃতীয় শক্তির দৃশ্যমান কোনও অবয়ব আমরা দেখিনি। তৃতীয় শক্তি শব্দযুগল মূলত ১/১১-এর সময়েই বেশি শোনা গিয়েছিল। ১/১১-এর সরকার চেয়েছিল বিরাজনীতিকরণ প্রক্রিয়া চালু করে দেশে রাজনৈতিক শূন্যতা সৃষ্টি করে সেখানে এই তৃতীয় শক্তিকে পুনর্বাসন করতে। কিন্তু নানা কারণেই তা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। এর অন্যতম একটি কারণ হয়তো এই যে, বাংলাদেশের মতো একটি গণতান্ত্রিক চেতনাসম্পন্ন নাগরিক গোষ্ঠীকে দীর্ঘকাল অগণতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্যে বন্দি করে রাখা যাবে না—এই বোধ থেকেই কুশীলবরা পিছু হটেছিলেন।

সম্প্রতি যুক্তফ্রন্ট নাম নিয়ে তৃতীয় শক্তির যে জন্মচেষ্টা আমরা দেখতে পাচ্ছি, তা একটি গণতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্যেই হচ্ছে। এ ফ্রন্ট আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একটি বৃহত্তর ঐক্য গড়ার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। এ ঐক্য-প্রয়াসকে সবাই ইতিবাচকভাবেই নিয়েছেন। এমনকি প্রধানমন্ত্রীও এই ঐক্যকে বা জোটকে স্বাগত জানিয়েছেন। তার দল আওয়ামী লীগও স্বাগত জানিয়েছে। যদিও যারা এই ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে আছেন পরবর্তী সময়ে তাদের ব্যাপারে উষ্মা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী।

যুক্তফ্রন্ট জাতীয় ঐক্যের কথা বলছে। কিন্তু জাতীয় ঐক্য গঠন ও বাস্তবায়নে নব গঠিত যুক্তফ্রন্ট কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে? প্রথম কথা হলো, এ রকম একটি জাতীয় ঐক্য গঠন করতে হলে জনগণের বড় একটি অংশের ম্যান্ডেট প্রয়োজন। কিন্তু সে ম্যান্ডেট ঐক্য প্রচেষ্টার সঙ্গে জড়িত কারোই নেই। কিন্তু তার চেয়েও বড় ও দ্বিতীয় প্রশ্ন হচ্ছে, এ ঐক্যের মূল এজেন্ডা কী? কী মূলনীতির ভিত্তিতে এ ঐক্য পরিচালিত হবে, তা এখনও নির্ধারিত হয়নি। যদিও এ প্রশ্নের এক ধরনের কৌশলী ও অস্পষ্ট উত্তর আমরা পেয়েছি ড. কামাল হোসের কাছ থেকে যা আসলে তাদের ঐক্যের মূল ভিত্তিকে স্পষ্ট করে না। একটি দৈনিক পত্রিকার সঙ্গে সাক্ষাৎকারে ড. কামাল হোসেন ইয়াহিয়া খান ও কিসিঞ্জাসের একটি কথোপকথনের কথা উল্লেখ করেন যেখানে ইয়াহিয়া খান কিসিঞ্জারকে বলেছেন, ‘আমি তো ভেবেছিলাম, বাঙালিরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারবে না। বাঙালিরা পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়াই করে বিভক্ত থাকবে।’ এরপর ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘আজকের প্রেক্ষাপটে এটা আমাদের নিজেদেরই স্মরণ করিয়ে দেওয়া সমীচীন মনে করি।’ ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়া ভালো, কিন্তু একাত্তরের প্রেক্ষাপট আর আজকের প্রেক্ষাপট এক নয়—এ কথা অবশ্যই তার জানা আছে। একাত্তরের লড়াই ও ঐক্যের ভিত্তি ছিল বাঙালি জাতীয়তাবাদ আর এ লড়াইকে তরান্বিত করেছিল দু’টি পৃথক জাতিসত্তার চেতনা। কিন্তু আজ কার বিরুদ্ধে কার লড়াই আর কার সঙ্গে কার ঐক্য? ঐক্য ও বিভক্তির নৈতিক ভিত্তি স্পষ্ট করেই জনগণের কাছে ভোটের আবেদন করা উচিত। তবে একথা সত্যি, দেশের বৃহত্তর স্বার্থে জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। সে কারণেই নবগঠিত যুক্তফ্রন্টের জাতীয় ঐক্যের মূল ভিত্তি ও এজেন্ডা পরিষ্কার করা জরুরি। তখনই জনগণ সিদ্ধান্ত নিতে পারবে যে, এটি কী প্রকৃত পক্ষেই জাতীয় ঐক্য, নির্বাচনি জোট, নাকি শুধুই ফাঁকা বুলি।

আপাততদৃষ্টিতে এটিকে একটি আওয়ামীবিরোধী রাজনৈতিক জোট হিসেবে দেখাই ভালো। মাহমুদুর রহমান মান্না অবশ্য সে রকমই বলেছেন। কারণ, জাতীয় ঐক্য গঠন করার মতো জনগণের ম্যান্ডেট ও রাজনৈতিক শক্তি ও সমর্থন যে তাদের নেই, সেটি তারাও জানেন। তাই বিএনপিকে তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত করার জন্য একটি চেষ্টা তারা করছেন। ফলে, এটিকে জাতীয় ঐক্য বা যুক্তফ্রন্ট না বলে আগামী নির্বাচনকেন্দ্রিক একটি রাজনৈতিক ফ্রন্ট বা মোর্চা বলাই ভালো। 

মাহমুদুর রহমান মান্না স্বীকার করেছেন যে, এটিকে জাতীয় ঐক্য না বলে এক ধরনের রাজনৈতিক ঐক্য বলাই ভালো। আওয়ামী লীগকে ছাড়া যে জাতীয় ঐক্য সম্ভব না, তা তিনি স্বীকার করেছেন। এটিই স্বাভাবিক। কারণ, দেশের একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে জাতীয় ঐক্য হতে পারে না। আর রাজনীতিতে বর্তমানে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এমন এক জায়গায় এসে পৌঁছেছে, সেখানে তাদের একই মঞ্চে এনে জাতীয় ঐক্য তৈরি করা প্রায় অসম্ভব। গত একদশকে বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা করার ফলে এ রাস্তা প্রায় বন্ধই বলা যেতে পারে। জাতীয় ঐক্য গঠন করার জন্য দলগুলোর মাঝে নিম্নতম রাজনৈতিক ঐক্য বা মিল থাকা জরুরি। কিন্তু হিংসা, বিদ্বেষ, বিষোদগার ও বিয়োগের রাজনীতিতে রাজনৈতিক ঐক্যই যেখানে সম্ভব না সেখানে জাতীয় ঐক্য কীভাবে সম্ভব?

ড. কামাল হোসেন অবশ্য দলের ঐক্যের চেয়ে জনগণের ঐক্যের ওপর বেশি জোর দিয়েছেন। কিন্তু জনগণ তো আজ দীর্ঘ একটি রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে কোনও না কোনও দলে বিভক্ত। তবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে বিভক্ত জনগণ কিসের আশায় ঐক্যজোটে যোগ দেবে? সে জন্যই দলের ঐক্য ছাড়া ড. কামাল হোসেনের ফর্মুলানুযায়ী শুধু জনগণের ঐক্য দিয়ে জাতীয় ঐক্য সম্ভব নয়। আর জনগণের ঐক্য একটি বিমূর্ত বিষয়।তাই মাহমুদুর রহমান মান্না এটিকে যে বৃহত্তর গণতান্ত্রিক ঐক্য বলেছেন, সেটিই বেশি যুক্তিসঙ্গত।

গণতন্ত্রের প্রশ্নে অনেক দলকেই ঐক্যবদ্ধ করা যায়। স্বাধীনতার পরে আমরা আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির শাসন দেখেছি। কিন্তু নবগঠিত যুক্তফ্রন্ট তথা গণফোরাম বিএনপির সঙ্গে জোট বাঁধতে চায়। সে লক্ষ্যে তারা আলোচনাও করছে। কিন্তু কেন আওয়ামী লীগের সঙ্গে এ গণতান্ত্রিক ঐক্য নয়? ড. কামাল হোসেন ও মান্না দু’জনই এক সময় নৌকার যাত্রী ছিলেন। সেই হিসেবে সুযোগ পেলেতো আবার সেই নৌকায়ই ওঠার কথা। কিন্তু তারা নৌকায় না উঠে ধানের শীষ কাঁধে নিতে চান কেন? তবে শর্ত দিয়েছেন, লাঙল ও দাড়িপাল্লার সঙ্গে কোনও ঐক্য নয়। স্বৈরাচার ও রাজাকারের বিরুদ্ধে এ অবস্থান ইতিবাচক। তবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের আওয়ামী লীগের সঙ্গে সন্ধি না করে রাজাকারের পুনর্বাসনকারী বিএনপির সঙ্গে কেন ঐক্য গড়তে চান, তা পরিষ্কার নয়। হতে পারে, একদশকে সরকারের আচরণের ফলে তারা বিএনপিকেই বেছে নিয়েছেন। বি. চৌধুরীকে বিএনপি বঙ্গভবন থেকে বের করে দিয়েছিল। সে বিবেচনায়ও তিনি আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট বেঁধে বিএনপিকে একটা শিক্ষা দিতে পারতেন। কিন্তু বিকল্প ধারা সেদিকে না গিয়ে বিকল্প পথেই গণভবনে পুনঃপ্রবেশের চেষ্টা করছে।   

তবে, জাতীয় ঐক্য বলি আর গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ঐক্য বলি, পুরো প্রক্রিয়াটিই মূলত নির্বাচনকে ঘিরে। কাজেই নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে ততই নির্বাচনকেন্দ্রিক কিছু বাস্তব বিষয় সামনে চলে আসবে। এর মধ্যে প্রথম হলো, একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হবে কিনা এবং দ্বিতীয় হলো সে সুষ্ঠু নির্বাচনে এই তৃতীয় পক্ষ যার সঙ্গে ঐক্য গঠন করুক না কেন, সেই পক্ষের বিজয়ের পেছনে তারা কোনও ফ্যাক্টর হিসেবে ভূমিকা রাখতে রাখতে পারবে কিনা, সেটি দৃশ্যমান হবে নির্বাচনের ফলের ওপর। কিন্তু তারও আগে আছে নির্বাচনে আসন ভাগাভাগির প্রশ্ন। এই যুক্তফ্রন্ট ও গণফোরাম নিজেদের মাঝে ও বৃহৎশক্তি বিএনপির সঙ্গে শেষ পর্যন্ত আসন ভাগাভাগির প্রশ্নে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। আসন ভাগাভাগি তথা পদ-পদবির প্রশ্নটি সুরাহা হলে বুঝতে হবে তারা প্রাথমিক ফাঁড়াটি কাটিয়ে ফেলেছেন। আর সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়ার পরেও যদি তৃতীয় পক্ষ সমর্থিত জোট পরাজিত হয়, তবে ভবিষ্যতে তৃতীয় শক্তি নাম নিয়ে বা এই আদলে বেড়ে ওঠা হবে সুদূর পরাহত।

ঐক্যজোট চাইছে, সব ক্ষেত্রে ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা করতে। তারা প্রধানমন্ত্রীর একক ক্ষমতার অবসান চান। সেই সঙ্গে সংসদ, রাষ্ট্রপতি ও বিরোধী দলের মধ্যেও ক্ষমতার ভারসাম্য চান। এটি খুবই জরুরি। কিন্তু এটি করতে হলে ক্ষমতায় আসা জরুরি। ক্ষমতায় এসেই ক্ষমতার ভারসাম্য করার অধিকার ও ক্ষমতা পাওয়া যায়। ক্ষমতার বাইরে থেকে শুধু বক্তব্য দেওয়া যায়। নব্বইয়ের স্বৈরাচার পতনের জন্য দুই দলই ‘বগল বাজাতে’ পারে। কিন্তু রাজনীতিতে নব্বই গত হয়েছে প্রায় তিন দশক। কিন্তু সংসদ আজও আগের অবস্থাতেই আছে।

ক্ষমতার ভারসাম্য তৈরি করতে হলে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোয় পরিবর্তন আনতে হবে। সেখানে ক্ষমতার ভারসাম্য তৈরি করতে হবে। সব সাংবিধানিক পদ ও প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি প্রশাসন ও দলের মাঝে সমানতালে এই ভারসাম্য সৃষ্টি করতে হবে ও বিদ্যমান ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতার ভিত্তিকে ভেঙে ফেলতে হবে। সেটি করার জন্য রাজনৈতিক ঐক্য লাগবে। সমালোচনা থাকতে পারে, কিন্তু বড় দুই দলকে বাদ দিয়ে একতরফা এই পরিবর্তনের লক্ষ্য স্বপ্নই থেকে যাবে। সবাইকে আস্থায় নিয়েই ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। কিন্তু সেটি না করে শুধু ক্ষমতার অংশীদার হওয়ার জন্য কোনও একটি পক্ষের পালে বাতাস দিলে তা রাজনীতিতে সুবাতাস বয়ে আনবে না।

শেষ কথা হলো, রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। কখন কার সঙ্গে সন্ধি বা বিভক্তি হবে, তা সময়ই বলে দেবে। ব্যাকরণে যে সব সন্ধি কোনও নিয়মানুসারে হয় না, তাকে নিপাতনে সিদ্ধ সন্ধি বলে। আমাদের রাজনীতির ব্যাকরণও হয়েছে আজ সে রকম।

লেখক: আইনজীবী ও কলামিস্ট

/এসএএস/এমএনএইচ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
বিএনপির বিরুদ্ধে কোনও রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী
বিএনপির বিরুদ্ধে কোনও রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী
চুয়াডাঙ্গায় মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা, হিট অ্যালার্ট জারি
চুয়াডাঙ্গায় মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা, হিট অ্যালার্ট জারি
জিমি নেই, তারপরও খেলতে নামছে মোহামেডান
জিমি নেই, তারপরও খেলতে নামছে মোহামেডান
বায়ার্নের কোচ হওয়া থেকে এক ধাপ দূরে জিদান
বায়ার্নের কোচ হওয়া থেকে এক ধাপ দূরে জিদান
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ