X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

যারা মাস্ক পরছেন না, এই লেখা তাদের জন্য

মো. জাকির হোসেন
১০ মে ২০২১, ১২:১৯আপডেট : ১০ মে ২০২১, ১২:১৯

মো. জাকির হোসেন কবি জীবনানন্দ দাশ-এর সুচেতনা কবিতার একটি লাইন ‘পৃথিবীর গভীর গভীরতর অসুখ এখন’। করোনা নামে এক অতি ক্ষুদ্র নৃশংস ভাইরাসের কবলে পড়ে সত্যিই বিশ্ব আজ মহাবিপদে। মানবতা কাঁদছে পৃথিবীর এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত অবধি। করোনা শুধু মানুষের শ্বাসযন্ত্রই ছিন্নভিন্ন করছে না, অর্থনীতির হৃৎপিণ্ডে ভয়াল থাবা বসিয়েছে। যে মানুষটির একসময় কাজ ছিল, আয় ছিল, সুন্দর সাজানো সংসার ছিল করোনার থাবায় কাজ হারিয়ে তিনি এখন পথের ভিখারি। শিক্ষা ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। ভয়াবহ এক মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে করোনা। অক্সিজেনের অভাবে প্রিয়জন ‘জবাই করা পশু’র মতো ছটফট করে মৃত্যুবরণ করছে। করোনা আক্রান্ত স্বামীকে নিয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরেও হাসপাতালের বেড, অক্সিজেন কিছুই জোগাড় করতে পারেননি স্ত্রী। শেষ চেষ্টা হিসেবে তাই করোনার ভয়কে তুচ্ছ করে স্বামীর মুখে নিজের মুখ লাগিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস চালু রাখার চেষ্টা করেন স্ত্রী। এত কিছু করেও স্বামীকে বাঁচানো যায়নি। স্ত্রীর কোলেই মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়েন স্বামী। এ দৃশ্য চোখে দেখা যায় না। হৃদয় দুমড়েমুচড়ে যায়। নির্বিকার করোনা তবুও বারবার রুপ পাল্টায়। আরও ভয়ংকর হয়ে ওঠে। করোনা আক্রান্ত বিশালসংখ্যক রোগীই এখন উপসর্গহীন। শরীরে ভাইরাস বাসা বাঁধলেও রোগের লক্ষণ ফুটে ওঠে না। রোগের লক্ষণ থাকে না বলে এদের চিহ্নিত করাও কঠিন। ফলে এরা নিজের অজান্তেই অন্যের মধ্যে রোগ ছড়িয়ে দিচ্ছে। আপনি বুঝতেও পারবেন না, পাশের মানুষটা উপসর্গহীন করোনার বাহক হয়ে আপনার সর্বনাশ ঘটাচ্ছে। ইউনিসেফের মতে প্রতিবেশী ‘ভারতে আগ্নেয়গিরির রূপ নিয়েছে করোনাভাইরাস’। স্তব্ধ হয়ে পড়েছে জীবনের জয়গান, মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে ভারতের অনেক স্থান। করোনার  ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট বাংলাদেশে শনাক্ত হয়েছে।

ইতিমধ্যে নেপালে ভয়ংকরভাবে ছড়িয়ে পড়েছে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট। ভেঙে পড়েছে নেপালের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। ভারতীয় ডাক্তাররা বলছেন, করোনার নতুন মিউটেশন সরাসরি এখন ফুসফুসে আক্রমণ করছে। জ্বর কিংবা কাশির মতো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। শুধু শরীরে ব্যথা, দুর্বলতা, অরুচি ইত্যাদি লক্ষণ প্রকাশ পাচ্ছে। রোগী স্বাভাবিক অবস্থা থেকে স্বল্প সময়ের মধ্যেই জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে চলে যাচ্ছে। করোনা থেকে সেরে ওঠার পরও নিস্তার নেই। ভুগতে হচ্ছে নানা জটিলতায়। দেখা দিচ্ছে নতুন সব রোগ। সম্প্রতি তালিকায় যোগ হয়েছে ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাস’ ওরফে কালো ছত্রাক। ভারতের দিল্লিসহ বেশ কিছু শহরের হাসপাতালে ইতোমধ্যে এই রোগে আক্রান্ত অনেকে ভর্তি হয়েছেন হাসপাতালে। মারাও গেছেন অনেকে। ইন্ডিয়া ডট কম-এর খবরে জানা গেলো, এইসব রোগীদের কমবেশি অনেকে তাদের দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছে। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রোগী মারা গেছে। করোনার ভারতীয় স্ট্রেনের দাপটের মধ্যে এবার শ্রীলংকাতেও আরও শক্তিশালী একটি স্ট্রেইন শনাক্ত হয়েছে। শ্রীলঙ্কার শ্রী জয়াবর্ধনপুর ইউনিভার্সিটির ইমিউনোলজি অ্যান্ড মলিকিউলার সায়েন্সেস বিভাগের প্রধান নীলিকা মালাভিগে জানান, বার বার মিউটেশন হওয়া এই স্ট্রেইনটি প্রায় ঘণ্টাখানেক বায়ুবাহিত অবস্থায় থাকতে পারে এবং এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। বাংলাদেশে দ্বিতীয় ঢেউ কিছুটা স্তিমিত হয়ে আসলেও বেপরোয়া ঈদ শপিং, ভয়ংকর ঈদযাত্রা ও করোনার ভারতীয় ধরন শনাক্ত হওয়ায় নতুন করে শংকার সৃষ্টি হয়েছে। সংক্রমণ ব্যাপক বৃদ্ধি মানেই মৃত্যু বেড়ে যাওয়া, সীমিত সামর্থের স্বাস্থ্যখাত নিয়ে দুশ্চিন্তা এবং অর্থনীতি ও জীবিকাখেকো লকডাউনের খড়গ নেমে আসা। আর ভেঙে পড়া শিক্ষা ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার অনিশ্চয়তার অন্ধকারে ডুবে যাওয়া।

করোনার করালগ্রাস থেকে বাঁচতে খুব বেশি বিকল্প এখনও আমাদের সামনে নেই। যেসব টিকা আবিষ্কার হয়েছে তার কার্যকারিতা ৭০-৯৫ শতাংশ। কিছু টিকা আবার রুপান্তরিত করোনার সাথে পেরে ওঠছে না। ভারত মহাসাগরের বিচ্ছিন্ন ছোট দ্বীপদেশ সিশেলসের ৬০ শতাংশের বেশি জনগোষ্ঠীকে টিকা দেওয়া হয়েছে। ইসরায়েল ও যুক্তরাজ্যের চেয়েও সিশেলসে বেশি মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় সিশেলসে টিকা দেওয়ার হার প্রায় দ্বিগুণ। গত সপ্তাহ থেকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে সিশেলসের অর্জন অনেকটাই ম্লান হয়ে পড়ে। চলতি সপ্তাহে দেশটিতে করোনা সংক্রমণের হার ৫০ শতাংশের কাছে। দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে জানা যায়, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার সংক্রমণ বাড়ায় টিকার কার্যকারিতা নিয়ে তাঁরা নতুন করে ভাবছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন একবার টিকা নিলেই হবে না। এটি ফ্লু গোত্রের বিধায় নির্ধারিত বিরতিতে বারবার নিতে হবে। রাষ্ট্রসমূহ পারস্পরিক বন্ধনে আবদ্ধ। মানুষের চলাচল আন্তঃরাষ্ট্রীয় বিধায় কোনও রাষ্ট্র এককভাবে টিকাদান সম্পন্ন করলেই চলবে না। বিশ্বের ৭৯০ কোটি মানুষের সিংহভাগের টিকাদান নিশ্চিত করতে হবে। অনেকেই বলছেন করোনা সহজে যাচ্ছে না। বার বার ফিরে আসবে। টিকার পাশাপশি তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা করোনা প্রতিরোধে অন্যতম কার্যকর বিকল্প হিসাবে সাধারণ ঐকমত্য রয়েছে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে। এসব স্বাস্থ্যবিধির মধ্যে অন্যতম হলো ঘরের বাইরে গেলে যথাযথভাবে মাস্ক পরিধান করা। আমাদের দেশে চলমান লকডাউন থেকে বেরিয়ে আসতে কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি গত ৩০ এপ্রিল যে ১০ দফা এক্সিট প্ল্যানের পরামর্শ দিয়েছেন তার প্রথম সুপারিশই হলো অবশ্যই মুখে মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে হবে। মাস্ক ছাড়া বাইরে বেরোলে করোনায় সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে বেড়ে যায়। সঠিকভাবে মাস্ক পরিধান করলে নিজে সংক্রমিত হওয়া ও অন্যকে সংক্রমিত করার সম্ভাবনা অনেকগুণ কমে যায়। কিছু বিশেষজ্ঞের মতে করোনাক্রান্ত ব্যক্তি মাস্ক না পরলে তার সংস্পর্শে আসা সুস্থ ব্যক্তির করোনা সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি ৯০ শতাংশ। অন্যদিকে আক্রান্ত ও অনাক্রান্ত উভয়ে মাস্ক পরলে সংক্রমণের হার মাত্র ১.৫ শতাংশ। মাস্ক পরা অবস্থায় সুস্থ ব্যক্তি করোনা সংক্রমিতের কাছে গেলেও সুস্থ ব্যক্তির শরীরে যে পরিমাণ ভাইরাস ঢুকতে পারে, তা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ওই ব্যক্তিকে কাবু করার ক্ষমতা রাখে না। চীনে সংক্রমণ শূন্যের কোটায় গেলেও এখনও ৮০ শতাংশ মানুষ মাস্ক পরে তবেই ঘরের বাইরে বেরোচ্ছে। আমাদের দেশে পুলিশ বা অন্যের ভয়ে মানুষ মাস্ক ‘সঙ্গে রাখছেন’ কিন্তু পরিধান করছেন কদাচিৎ। ‘সঙ্গে রাখছেন’ বলতে অনেকেরই মাস্ক ঝুলছে থুতনিতে। কারও আবার নাকের নিচে। অনেকেরই আবার মাস্ক থাকছে কিংবা পকেটে। কারো মাস্ক দেখা যায় একপাশ থেকে খোলা। কারো কান থেকে ঝোলা। সবার মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে সরকার কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন। মাস্ক না পরে বা অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি না মেনে বাইরে চলাচল করলে কোনও ব্যক্তিকে সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ড বা এক লাখ টাকা জরিমানা করা যাবে মর্মে  স্বাস্থ্য অধিদফতর গত বছরের ৬ মে একটি নির্দেশনা জারি করে। এছাড়াও ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ নির্দেশনা জারি করে বলা হয়েছে সরকারি-বেসরকারি কোনও অফিসেই মাস্ক ছাড়া কেউ ঢুকতে পারবে না, কোনও সেবাও পাবে না। এত কিছুর পরেও মাস্ক না পরে বাইরে চলাচল অপরাধমূলক কাজ। সমাজের প্রতি দায়িত্বশীলতার নিরিখে অত্যন্ত দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ। সকল ধর্ম মানুষের কল্যাণের কথা বলে। একে অপরের প্রতি দায়িত্বশীলতা ও মানবিকতার কথা বলে। তাই মাস্ক না পরে অন্যকে সংক্রমিত করা নিশ্চিতভাবেই অধর্মের কাজ। বুখারি, মুসলিমসহ প্রায় ৬০টির উপরে হাদিসের কিতাবে পাওয়া যায়, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যার জিহ্বা ও হাত থেকে মুসলমানগণ নিরাপদ থাকে সে ব্যক্তিই প্রকৃত মুসলিম। আর যাকে মানুষ তাদের জান ও মালের জন্য নিরাপদ মনে করে সে-ই প্রকৃত মুমিন’। (তিরমিযী,২৫৫১; নাসাঈ, ৪৯০৯) অন্য হাদিসে মুসলমানের পরিবর্তে মানুষ শব্দটি এসেছে (সহীহ ইবনে হিব্বান)। তার মানে কথা কিংবা কাজের দ্বারা মানুষকে কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। যার মধ্যে এই বৈশিষ্ট্য নেই, তার ঈমান অপূর্ণ। মাস্ক না পরে কোনও ব্যক্তি কাউকে সংক্রমিত করলে সংক্রমিত ব্যক্তি বা ব্যক্তিগণ যে কষ্টভোগ করেন ও চিকিৎসায় যে অর্থ ব্যয় করেন সে জন্য মাস্ক না পরা ব্যক্তি সংক্রমিতদের অনিরাপদ করা ও কষ্ট দেওয়ার কারণে ধর্ম ও নৈতিকতার বিচারে দায়ী হবেন না কী? আর আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে মাস্ক না পরা সংক্রমণ ছড়ানো ব্যক্তি কী পরোক্ষ ঘাতক হিসাবে পরিগণিত হবেন না? নিজের, অপরের তথা রাষ্ট্রের বিপদ জেনেও আমাদের দেশের মানুষ কেন মাস্ক পরে না তার জন্য মোটা দাগে কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করা যেতে পারে –

এক. মাস্ক পরার গুরুত্ব অনুধাবন করে না। তাই চরম অবহেলা বা উদাসীনতা মাস্ক পরিধানের প্রতি।

দুই. আইনের প্রতি মানুষ শ্রদ্ধাশীল নয়।

তিন. রাষ্ট্র ও মানুষের প্রতি মমত্ববোধের অভাব।

চার. মাস্ক পরা কিছুটা অস্বস্তিকর ও কষ্টকর।

পাঁচ. ইসলাম ধর্মের অপব্যাখ্যা করে অনেকে মাস্ক না পরার পক্ষে বলে, ‘আমাদের করোনা ধরবে না। আমরা আল্লাহ উপর ভরসা করি’। কেউ আবার বলে তকদিরে থাকলে করোনা হবে, মাস্ক পরে কী হবে? এগুলো চরম হঠকারিতা ও নিজের সাথে প্রতারণা। হঠকারিতা এজন্য যে, আল্লাহ তা’আলা নিজেই বলেছেন, “আর অবশ্যই আমি তোমাদের পরীক্ষা করবো কিছু ভয়, ক্ষুধা, সম্পদ ও জীবনের ক্ষতির মাধ্যমে এবং ফল-ফসলাদি বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে ধৈর্যশীলদের জন্য রয়েছে সুসংবাদ।” (সুরা বাকারা: ১৫৫) আল্লাহর উপর ভরসার সাথে সচেতনতা ইসলামের অন্যতম শিক্ষা। আনাস ইবনে মালিক (রা.) বর্ণনা করেছেন, এক ব্যক্তি রাসুল (সা.) কে জিজ্ঞেস করল, ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি কীভাবে আল্লাহর ওপর ভরসা (তাওয়াক্কুল) করবো? আমার উষ্ট্রীটি ছেড়ে দিয়ে, না বেঁধে রেখে?’ রাসুল (সা.) বললেন, প্রথমে তোমার উষ্ট্রী বাঁধ, এরপর আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল কর।’(তিরমিযী, ২৫১৭) জীবদ্দশাতেই আল্লাহ তা’য়ালার তরফ থেকে যাদেরকে জান্নাতের সুসংবাদ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে আবু উবাইদাহ (রা.) ছিলেন তাদের অন্যতম। একজন মানুষের আল্লাহর ওপর ভরসা ও আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা ও  কত উঁচু পর্যায়ের হলে জীবদ্দশাতেই জান্নাতের সার্টিফিকেট পেয়ে যান তা বলার অপেক্ষা রাখে না। অথচ আল্লাহ তা’য়ালার অতি প্রিয় এই বান্দা আবু উবাইদাহ (রা.) মহামারি প্লেগে আক্রান্ত হয়ে শাহাদাতবরণ করেন। সংক্রামক রোগ থেকে সাবধানতার বিষয়ে হাদিসে বলা হয়েছে, ‘কুষ্ঠরোগী থেকে এমনভাবে পলায়ন করো, যেমন তুমি বাঘ থেকে পলায়ন করে থাকো।’(বুখারি, ১৭৬৭) সংক্রামক রোগের ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্বের সচেতনতা বিষয়ে হাদিসে বর্ণিত আছে, ‘তোমরা কুষ্ঠরোগীদের বারবার দেখতে যেয়ো না, আর তাদের সঙ্গে যখন কথা বলবে তখন তাদের এবং তোমাদের মাঝখানে একটি বর্শার পরিমাণ দূরত্ব থাকা উচিত। (মুসনাদে আহমাদ, ৫৮১)সাকিফ গোত্রের একটি প্রতিনিধিদল রাসুল (সা.)-এর কাছে উপস্থিত হয়। তাদের মধ্যে একজন কুষ্ঠরোগী ছিল। সে রাসুল (সা.)-এর হাতে হাত দিয়ে বাইআত (আনুগত্য প্রকাশ) গ্রহণ করতে চেয়েছিল। রাসুল (সা.) তার হাতে হাত না মিলিয়ে বলেন, ‘আমি তোমাকে (স্পর্শ না করেই) বাইআত করালাম, অতএব তুমি চলে যাও।’ (মুসলিম, ২২৩১) মাস্ক না পরে আল্লাহর উপর ভরসার বক্তব্য প্রতারণামূলক এ জন্য যে, যিনি মাস্ক না পরার যুক্তি হিসাবে আল্লাহর উপর ভরসার কথা বলছেন তাকে যদি আল্লাহর উপর ভরসা করে আগুন ঝাঁপ দিতে বলা হয়, আমি নিশ্চিত তিনি ঝাঁপ দিবেন না। আর তাকদিরে থাকলে করোনা হবে এরুপ যুক্তি উপস্থাপনও ইসলামসম্মত নয়। আবু বকর ইবন আবিদ আবু উছমান (রা.) থেকে বর্ণিত। একদা হযরত ঈসা (আ.) এক পাহাড়ের ওপরে নামাজ আদায় করছিলেন। এমন সময় তার নিকট ইবলিস এসে বলল, আপনি কি এই দাবি করে থাকেন যে, প্রতিটি বিষয়ই তার পুর্ব নির্ধারিত তাকদির অনুযায়ী সংঘটিত হয়? ঈসা (আ.) বললেন, হ্যাঁ। ইবলিস বলল, তাহলে আপনি এ পাহাড় থেকে লাফ দিয়ে  নিচে পড়ুন এবং বলুন যে, এটাই আমার তাকদিরে ছিল। ঈসা (আ.) বললেন, ওহে অভিশপ্ত শয়তান! আল্লাহ তাঁর বান্দাকে পরীক্ষা করতে পারেন, কিন্তু বান্দারা কখনও আল্লাহকে পরীক্ষা করতে পারে না। (আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, দ্বিতীয় খণ্ড) আল্লাহা তা’য়ালা আমাদের বোধশক্তি দিয়েছেন। আমরা কী করবো না করবো এবং তার ভালো-মন্দের পার্থক্য নিরূপণের সামর্থ্য আল্লাহ তায়ালা আমাদের দিয়ে দিয়েছেন। তাকদিরের যুক্তি দেওয়া ব্যক্তিটি করোনাক্রান্ত হয়ে বিপন্ন হলে কিন্তু ভাগ্যের ওপর ভরসা করে বসে থাকবে না, বরং জীবন বাঁচাতে সাধ্যমত চেষ্টা করবে।

করোনার এই সংকটকালে ওইসব স্বার্থপর মানুষদের চিনে রাখুন যারা সামান্য ব্যক্তিগত অস্বাচ্ছন্দ্য বা কষ্টের কারণে কিংবা ধর্মের দোহাই দিয়ে রাষ্ট্রের বিপদের সময় মাস্ক-প্রতিরোধ নিয়ে রাষ্ট্রের পাশে দাঁড়ায়নি। মানবতার সংকটের সময়ে করোনার বিস্তার রোধে সহযোগিতার হাত বাড়ায়নি। বিপর্যস্ত অর্থনীতি ও শিক্ষা ব্যবস্থার পুনরুদ্ধারে করোনাকালকে সীমিত করতে ভ্যাকসিনসম মাস্ক পরিধান করে দায়িত্বশীল আচরণ করেনি। রাষ্ট্রের প্রতি ভালোবাসায় যাদের এমন অবহেলা, মানবতার প্রতি যাদের এমন মমত্বহীনতা আপনিও মাস্ক না পরে তাদের কাতারে শামিল হবেন, না করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে মাস্ক পরে রাষ্ট্রের পাশে থেকে নিজেকে, দেশের মানুষকে ও রাষ্ট্রকে বাঁচাতে এগিয়ে আসবেন? নিরাপদ মাস্ক যথাযথভাবে পরিধান করুন। নিজে বাঁচুন, দেশ ও দেশের মানুষকে বাঁচতে সহায়তা করুন।

লেখক: অধ্যাপক, আইন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

ই-মেইল: [email protected]

 

/এসএএস/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
বাসের পেছনের অংশ খোয়া যাচ্ছে কেন?
বাসের পেছনের অংশ খোয়া যাচ্ছে কেন?
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ