X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

সাম্প্রদায়িকতা ও মনোজগৎ

স্বদেশ রায়
২২ অক্টোবর ২০২১, ১৮:০৪আপডেট : ২২ অক্টোবর ২০২১, ২২:৫২
স্বদেশ রায় আলেকজান্ডারকে তার বাবা ছোটবেলায় যেমন যুদ্ধবিদ্যা শেখার ব্যবস্থা করেছিলেন তেমনই তার মনোজগৎ গড়ে তোলার জন্যে এরিস্টটলের মতো শিক্ষকের কাছেও তাঁর শিক্ষার ব্যবস্থা করেছিলেন। আজ থেকে প্রায় আড়াই হাজার বছর আগের একটি সভ্যতায় মনোজগৎ গড়ে তোলার গুরুত্ব ছিল অনেক বেশি। আর এরিস্টটল কখনোই আলেকজান্ডারের মনোজগৎ কোনও অন্ধ বিশ্বাস দিয়ে গড়ে তোলেননি। তিনি বাস্তবতা ও প্রকৃতির আচরণ থেকে আলেকজান্ডার যাতে শিক্ষা নিতে পারে সে চেষ্টাই করেছিলেন। উদার এবং অসম্ভবকে জয় করার একটি মনোজগৎ তাঁর ভেতর তৈরি করার চেষ্টা করেছিলেন।

এখন যেমন ধর্ম, বর্ণ, গোত্রের ভেদবুদ্ধি ও নানান সংকীর্ণতা মানুষের মনোজগৎকে সংকীর্ণ করে; অতীতের ওই সভ্যতাগুলোতেও দেখা যায়, নানান কুসংস্কার সমাজ ও মানুষের মনকে সংকীর্ণ করতো। আর এর বিপরীতেই ছিল উদার চিন্তার একটি যাত্রা। আবার ইতিহাসে এর পরের সময়ে দেখা যায়, ধর্মীয় সংকীর্ণতা ও ধর্মের একাধিপত্য বা ধর্মের নামে রাষ্ট্র ও সমাজকে বেঁধে ফেলার এক ভয়াবহ যুগ। এর আগে নানান কুসংস্কারে রাষ্ট্র ও সমাজকে যতটা না আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধতে পেরেছিল, তার থেকে অনেক বেশি আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলে ধর্মের একাধিপত্য। বাস্তবে রাজতন্ত্রের বদলে পুরোহিততন্ত্র ও চার্চতন্ত্রই তখন চালু হয়। ধর্মীয় নেতা পেছনে থাকলেও তারাই রাজাকে বা রাষ্ট্র ও সমাজকে নিয়ন্ত্রণ করতে থাকে। সেই নিয়ন্ত্রণের বাঁধন এতই শক্ত হয় যে ধর্মের তথাকথিত বিধানের বলে রাষ্ট্র নরহত্যার যেমন একক অধিকার পায়, তেমনি নারীকে বেঁধে ফেলা হয় নানান শেকলে। যে নারীর হাত ধরে গৃহসভ্যতা ও কৃষিসভ্যতার জন্ম সেই নারীকে পরাধীনও অসহায় করে সমাজকে একটি অন্ধকার যুগে নিয়ে যাওয়া হয়। যা থেকে আজও  সমাজ বের হয়ে আসতে পারেনি। ধর্ম সাম্প্রদায়িকতার নামে আমরা মাঝে মাঝে পৃথিবীর নানান দেশে ধর্মীয় হামলা, মানুষের ওপর হামলা ও সম্পদ দখলের নগ্নতা দেখি। কিন্তু প্রতিদিন ধর্মের নামে নারী’র ওপরে যে আঘাত এখনও পৃথিবীর নানান রাষ্ট্রে ও সমাজে করা হচ্ছে, তা আমরা সঠিক দেখতে পাই না। কারণ, এটা আমাদের সহজাত হয়ে গেছে। আমরা এই অন্ধকারকে স্বাভাবিক অন্ধকার মনে করি বা বুঝতেই পারি না এটা অন্ধকার। যেমন, যে রাতকানা রোগে ভোগে তার চোখে রাতের আকাশ তারাহীন। কিন্তু সে সেটা বোঝে না।

রাষ্ট্র ও সমাজের ওপর ধর্মের নামে এই ছোবলকে বাঁচানোর জন্যে পনের শতকে ইউরোপের অনেক বুদ্ধিনায়করা আন্দোলন শুরু করেন। তাদের এই আন্দোলনের ফলে তখন পাশ্চাত্যের দেশগুলো ধর্মকে রাষ্ট্র থেকে অনেকটা আলাদা করা শুরু করে। কিন্তু শতভাগ তারা এখনও করতে পারেনি। গণতন্ত্রের অন্যতম জন্মভূমি ব্রিটেনে ব্লাসফেমি আইন তুলে দেওয়া হয়েছে ২০০৮ সালে। আর প্রকৃতপক্ষে এটা নর্দান আয়ারল্যান্ড ছাড়া সর্বত্র তাদের কমন ল’ থেকে বাদ যায় ২০২১-এর মার্চে।  তবে শুধু পার্থক্য ছিল আধুনিক যুগে এসে তারা পাকিস্তানের মতো হয়তো কথায় কথায় এই ব্লাসফেমি আইন ব্যবহার করতো না। রাষ্ট্র পরিচালকদের শিক্ষাদীক্ষা কিছুটা হলেও তাদের সংযত করে রেখেছে এ ক্ষেত্রে। তারপরেও ক্যামেরুনের মতো তরুণ নেতাও চার্চ শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন। তিনিও বোঝেননি, শিক্ষাকে হতে হয় ইহজাগতিক ও আধুনিক। এই ইহজাগতিক ও আধুনিক শিক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণের দায় ব্যক্তির নিজের। এ দায়ভার যখনই আধুনিক রাষ্ট্র নিজ হাতে তুলে নেয় তখনই বৈপরীত্য দেখা যায়। এবং ক্যামেরুনকে কিন্তু তার ফল ভোগ করতে হয়েছে। তার সমাজ পরোক্ষভাবে উগ্র হয়েছে। যে উগ্রতার কারণে তাকে ব্রেক্সিটে হারতে হয়েছে। ক্যামেরুন ব্রেক্সিটের পক্ষের জয়ে নিশ্চিত ছিলেন বলেই তিনি ব্রেক্সিটের পক্ষে-বিপক্ষে গণভোট দিয়েছিলেন। তিনি জানতেন না তার সমাজে এখন উগ্রবাদীরা সংখ্যায় বেশি। যেকোনও উগ্রবাদ, তাই সে উগ্র জাতীয়তাবাদ হোক না, সেটাও কিন্তু ভয়াবহ এক সাম্প্রদায়িকতা। পৃথিবীতে এই উগ্র জাতীয়তাবাদের নামেও কম ধ্বংসযজ্ঞ, কম নরহত্যা হয়নি। পার্থক্য শুধু এখানে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা থেকে মানবতাবাদে পৌঁছাতে একটি রাষ্ট্র বা সমাজকে যে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়, উগ্র জাতীয়তাবাদ থেকে মানবতাবাদে পৌঁছাতে তার থেকে সামান্য কিছু কম পথ পাড়ি দিলে হয়তো চলে।

এ কারণে যেকোনও আধুনিক রাষ্ট্রকে প্রথমেই তার শিক্ষাকে আধুনিক করতে হয়। সেখানে কোনোভাবে ধর্মীয় শিক্ষার যোগ থাকলে চলে না। যে রাষ্ট্র তার শিক্ষা ব্যবস্থায় ধর্মীয় শিক্ষা রাখে ওই রাষ্ট্রকে পশ্চাৎপদ রাষ্ট্র হিসেবেই ধরতে হবে। ওই রাষ্ট্রকে আর যাই হোক আধুনিক রাষ্ট্র বলা যাবে না। কারণ, শিক্ষা সম্পূর্ণরূপে ইহজাগতিক ও আধুনিক বিষয়। এর সঙ্গে ধর্মের কোনও সম্পর্ক নেই। এমনকি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আমেরিকা থেকে শুরু করে অনেক দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু কিছু শিক্ষার ভেতর দিয়ে যে অবৈধ পুঁজি সৃষ্টি বা সম্পদ দখলের একটা তাড়না শুরু হয়েছে, এটাও কিন্তু শিক্ষার অঙ্গ নয়। কারণ, অবৈধ সম্পদ দখল ও দখলের তাড়নাও একটি রাষ্ট্র ও সমাজকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। ধর্মীয় উগ্রতা যেমন মানুষের মানবতা ধ্বংস করে তাকে রাষ্ট্রের ও সমাজের ক্ষতিকর কাজের দিকে ঠেলে দেয়, এই অবৈধ সম্পদ দখলের মানসিকতাও রাষ্ট্র ও সমাজকে সমান ক্ষতি করে। এবং একটা অদ্ভুত যোগাযোগ এখানে দেখা যায়, কোনও সমাজে উগ্র ধর্মীয়বাদ যেমন অবৈধ সম্পদ দখলের দিকে ছুটিয়ে নিয়ে যায় মানুষের মানসিকতাকে বা সেই সুযোগ করে দেয়, উগ্র-জাতীয়তাবাদও একই কাজ করে। ধর্মীয় মৌলবাদে যেমন রাষ্ট্রীয় ও সমাজের সম্পদ দখলের একটা তাড়না আছে, উগ্র জাতীয়তাবাদেও সেই একই বিষয় দেখা যায়। উগ্র ধর্মীয় মৌলবাদে যেমন মানুষের সহজাত নৈতিকতা নষ্ট করে, অন্যের মানসিকতার ওপর, অন্যের সম্পদের ওপর অবৈধ দখলদারিত্ব সৃষ্টি করার একটা তাড়না দেখা যায়, উগ্র জাতীয়তাবাদেও তেমনই। পার্থক্য শুধু উগ্র ধর্মীয় মৌলবাদের বয়স দুই হাজার বছরের বেশি, তার শেকড় অনেক গভীরে আর উগ্র জাতীয়তাবাদের বয়স কয়েকশ’ বছর ছুঁতে চলেছে, তার শেকড় অতটা গভীরে নয়।

পনের শতকের পর থেকে ধীরে ধীরে রাষ্ট্র ও সমাজ থেকে ধর্মকে অনেকটা দূরে ঠেলে দিতে পেরেছিল পাশ্চাত্যের দেশগুলো। কিন্তু গত একশ’ বছরে সেখানেও উগ্র জাতীয়তাবাদের নামে প্রচ্ছন্নভাবে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা ও বর্ণ সাম্প্রদায়িকতা বাড়ছে। যেমন, আমেরিকায় ট্রাম্পের বিজয়ের কারণ শুধু ডেমোক্র্যাটদের দুর্বল প্রার্থীই ছিল না, ধর্মীয় ও বর্ণ সাম্প্রদায়িকতাও কাজ করেছিল। যদিও ওবামা বলেছিলেন, তিনি ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হলে ট্রাম্প জিততে পারতো না। তবে তারপরেও বাস্তবতা হলো, ট্রাম্প যে ভোট পান ওই ভোটের একটি অংশে কিন্তু এই ধর্ম ও বর্ণ সাম্প্রদায়িকতার ভোট ছিল। সেখানে সামনে আনা হয়েছিল উগ্র জাতীয়তাবাদকে। এবং সেটা এখনও আমেরিকায় আছে। এমনিভাবে পাশ্চাত্যের অধিকাংশ দেশগুলোর রাজনীতি লক্ষ করলে দেখা যাবে, সেখানে একটা ধর্ম ও বর্ণ সাম্প্রদায়িকতার ভোট জন্ম নিচ্ছে প্রতিদিন। আর এশিয়া ও আফ্রিকার পশ্চাৎপদ দেশগুলোতে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা অনেক বেশি উগ্রভাবে বাড়ছে।

এই ধর্ম, বর্ণ ও গোষ্ঠী সাম্প্রদায়িকতা জন্ম নেয় মানুষের ভেতর যে সহজাত ভালো গুণগুলো অর্থাৎ উদারতা, সহমর্মিতা, সহযোগিতা, পবিত্রতা ও নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা এগুলো নষ্ট হওয়ার ফলে। মানুষের সমাজের ও চরিত্রের বিবর্তনের ইতিহাস বলে, মানুষ সহজাতভাবে তার এই ভালো গুণগুলো নিয়ে সংঘবদ্ধ হতে শিখেছে। এবং সংঘবদ্ধ মানুষ তাদের এই ভালো গুণগুলো দিয়েই সমাজ থেকে, মানুষের মন থেকে ব্যক্তিকেন্দ্রিক স্বার্থপরতা ও অন্ধত্বকে পরাজিত করেই এগিয়েছে। আবার পাশাপাশি মানুষের সমাজের চলার পথে দেখা যায়, স্বার্থপর হিপোক্রেটরা তাদের প্রতারণা দিয়ে মানুষের এই সহজাত ভালো গুণগুলো নষ্ট করে চলেছে। মানুষের ভেতর যে সহজাতভাবে ফুলের মধু আহরণের একটা গুণ থাকে, এটা ওই স্বার্থপর হিপোক্রেটরা নষ্ট করে দিচ্ছে। মানুষের ভেতর পশুত্ব জাগাচ্ছে।

মানুষের ভেতর যারা স্বার্থপর হিপোক্রেট তারা এই কাজটি করছে মোটা দাগে দুটো বিষয়কে আশ্রয় করে।

এক. ‘ধর্ম’, দুই, ‘রাজনীতি’। এবং এখানে এই ‘ধর্ম’ ও ‘রাজনীতির’ এক অদ্ভুত মিল দেখা যায়। এই ‘ধর্ম’ ও ‘রাজনীতি’ বর্তমানের এ সময়ে মানুষকে মানুষ না রেখে ভোটারে পরিণত করার বা রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করার ক্যাডারে পরিণত করার যন্ত্র বানানোর চেষ্টা করছে প্রতি মুহূর্তে। যে কারণে তারা রাষ্ট্র, সমাজ ও মানুষের ভেতরকার ভালো গুণগুলো নষ্ট হওয়ার সবকিছুকে উৎসাহিত করছে পৃথিবীর নানান ভূখণ্ডে। তারা সমাজে আধুনিক শিক্ষার বদলে অজ্ঞতাকে, মূঢ়তাকে উৎসাহিত করছে। সমাজে যোগ্যতার অর্জনের বিপরীতে অবৈধ দখলকে উৎসাহিত করছে। রাষ্ট্র ও সমাজে নিয়মতান্ত্রিকতার বদলে এক ধরনের স্বেচ্ছাচারিতাকে প্রশ্রয় দিচ্ছে। রাষ্ট্র ও সমাজের জ্ঞান বিস্তারের প্রতিটি অঙ্গকে মূঢ়দের হাতে তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করছে। এবং সাধারণ মানুষ যাতে রাষ্ট্র ও মূঢ়চিন্তার দাস হয় সেদিকেই তারা রাষ্ট্র ও সমাজকে নিয়ে যাচ্ছে। রাষ্ট্রীয় ও ধর্মীয় নেতাদের একটি বড় অংশ আধুনিক মানুষগোষ্ঠী তৈরি হওয়ার বদলে এক ধরনের মানসিক প্রতিবন্দ্বী দাসগোষ্ঠী বা সমাজ সৃষ্টির কাজ করছে। তাদের চেষ্টার উদ্দেশ্য হলো রাষ্ট্র ও সমাজের আধুনিক ও উদার চিন্তার মানুষগোষ্ঠীর বিপরীতে এই দাসগোষ্ঠীর সংখ্যা বাড়ানো। যে কারণে সমাজের একটি বড় অংশে উদার চিন্তা ও বিজ্ঞানভিত্তিক চিন্তা প্রবেশের সব পথ তারা বন্ধ করতে সমর্থ হচ্ছে। ধর্ম ও রাজনীতির নানান কৌশলে তারা সমাজের বহুমুখী চিন্তাকে নষ্ট করছে।

কোনও রাষ্ট্রে ও সমাজে যখন এই চিন্তা চেতনায় দাসশ্রেণি গড়ে ওঠা শুরু হয় তখন ওই সমাজের মানুষ শুধু পেছন দিকে হাঁটতে শুরু করে না, সমাজের সব ধরনের সভ্যতা ও শৃঙ্খলাও ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ে। এমন একটি সময়ে রাষ্ট্র ও সমাজ পরিচালনা খুবই কঠিন। কারণ, তখন অবচেতনভাবেও অনেক দায়িত্বশীল মানুষের মনোজগতের শুভ গুণগুলো নষ্ট হওয়া শুরু হয়ে যায়। রাষ্ট্র ও সমাজের নানান অঙ্গে এই দাসরাই বসে যায়। তারা সব সময়ই নানানভাবে মূঢ়তাকে সাহায্য করে। রাষ্ট্র ও সমাজকে পেছন দিকে ঠেলতে শুরু করে। তখন অতি সহজে রাষ্ট্র ও সমাজে যেকোনও ধরনের উগ্রবাদীরা সামনে চলে আসতে থাকে। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় এটা ছোঁয়াচে। কখনোই কোনও নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে সীমাবদ্ধ থাকে না।

এ মুহূর্তে গোটা পৃথিবীতে কম-বেশি নানান ধরনের উগ্রতা দেখা যাচ্ছে। আরও ছোট পরিসরে নিয়ে এলে দেখা যাবে, দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর অধিকাংশ দেশে ধর্মীয় উগ্রতা। দক্ষিণ এশিয়ার আটটি দেশের ভেতর আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ভারত, শ্রীলংকা ও বাংলাদেশে বেশি ও কম আকারে হলেও ধর্মীয় উগ্রতার ‘লাঠি’ দেখা যাচ্ছে। যা রাষ্ট্র ও সমাজের মানুষকে ধীরে ধীরে ধর্মীয় উগ্রতার দাস বানানোর চেষ্টা করছে। আবার রাজনীতিরও বড় অংশ ওই উগ্রতাকে ব্যবহার করে মানুষকে ‘দাস-ভোটার’ বানানোর চেষ্টা করছে। আর এর কুফলগুলো মাঝে মাঝেই এই দেশগুলোতে দেখা যাচ্ছে। এই দেশগুলোতে রাষ্ট্রকে নিয়ন্ত্রণ করবে যে রাজনীতি ওই রাজনীতি থেকে উদারনীতি, পবিত্রতা, সহনশীলতা, বহুত্বকে গ্রহণ করার ক্ষমতা বিদায় নিয়ে সেখানে উগ্রতা, মূঢ়তার দাসতন্ত্র স্থান নিচ্ছে ধীরে ধীরে।

আর এ অবস্থার কুফল হয়তো দুই একটা জায়গায় মোটা দাগে দেখা যায়। কিন্তু বাস্তবে এর কুফল অনেক গভীরে। এর কুফলে প্রতি মুহূর্তে রাষ্ট্র ও সমাজ অযোগ্য ও মূঢ়দের হাতে চলে যায়। সমাজের নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠে আধুনিকতার বদলে পশ্চাৎপদ চিন্তাচেতনা। একটা বিরাট অংশ মানুষ ভুলে যায় তার একটি মনোজগৎ আছে। যা তাকে প্রতি মুহূর্তে বিকশিত করতে হয়। এবং এই বিকাশ হবার ভেতর দিয়েই মানব সমাজ ও প্রগতি এগিয়ে চলে। মানুষের মনোজগৎ বিকশিত না হলে কখনোই কোনও রাষ্ট্র ও সমাজের কোনও স্তরেই শৃঙ্খলা আনা যায় না। ধীরে ধীরে ওই রাষ্ট্র ও সমাজের সব অর্জন নষ্ট হতে থাকে। কারণ, মানুষের  আধুনিক শিক্ষা, মানুষের উন্নত মনোজগৎই রাষ্ট্র ও সমাজের সব উন্নয়নকে ধরে রাখে এবং সামনে এগিয়ে নিয়ে যায়। পৃথিবী থেকে ডাইনোসররা হারিয়ে গেছে খাদ্যাভাবে, বিপরীতে মানুষের বহু সভ্যতা, বহু অর্জন নষ্ট হয়েছে মনোজগৎ ধ্বংস হওয়ার ফলে।       

লেখক: রাষ্ট্রীয় পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
এরদোয়ানের যুক্তরাষ্ট্র সফর, যা জানা গেলো
এরদোয়ানের যুক্তরাষ্ট্র সফর, যা জানা গেলো
যুক্তরাষ্ট্রের টি-টোয়েন্টি দলে নিউজিল্যান্ডের সাবেক অলরাউন্ডার
যুক্তরাষ্ট্রের টি-টোয়েন্টি দলে নিউজিল্যান্ডের সাবেক অলরাউন্ডার
‘আ.লীগকে বর্জন করলেই অন্য পণ্য বর্জনের প্রয়োজন হয় না’
‘আ.লীগকে বর্জন করলেই অন্য পণ্য বর্জনের প্রয়োজন হয় না’
বিজিএপিএমইএ’র নির্বাচনের প্যানেল ঘোষণা, শাহরিয়ার নতুন প্যানেল নেতা
বিজিএপিএমইএ’র নির্বাচনের প্যানেল ঘোষণা, শাহরিয়ার নতুন প্যানেল নেতা
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ