X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

সড়ক যেন গলি, যানজটে জীবন

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
৩০ মার্চ ২০২২, ১৫:৩৮আপডেট : ৩০ মার্চ ২০২২, ১৫:৩৮
সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা খোদ সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবার কথা বললেন ঢাকার যানজট নিয়ে। বললেন, বাংলাদেশের উন্নয়নের সঙ্গে রাজধানীর বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি ‘বেমানান’। কিন্তু সমাধানের যে পথ তিনি বাতলে দিয়েছেন, সেটাও কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে সন্দেহ আছে। ওবায়দুল কাদের বলেছেন, রাজধানীর যানজট নিরসনে সাবওয়ে (পাতাল রেল) নির্মাণের কোনও বিকল্প নেই। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে সাবওয়ে নির্মাণ করা গেলে ঢাকার কর্মজীবী মানুষের অর্ধেক সাবওয়ে ব্যবহার করতে পারবেন।

একের পর এক প্রকল্পের নামে আসলে ঢাকার গতিকেই স্তব্ধ করে রাখা হয়েছে একযুগেরও বেশি সময় ধরে। ঢাকার পথগুলো যেন গলি, অল্প কিছু ‘বিশিষ্ট’ সড়ক বাদে কোথাও গাড়ি চলার পথ নেই। ঢাকাবাসী এখন রাতে ঘুমাতে যায় দুঃস্বপ্ন নিয়ে যে তার আগামীকাল সকালে প্রাণটা যাবে যানজটে। ক্ষুদ্র চাকরিজীবীকে ভাবতে হয় চাকরিটা থাকবে তো? হাসপাতালগামী মানুষ চিন্তা করে, তার রোগীকে ঠিকমতো হাসপাতালে নেওয়া যাবে তো? বাঁচানো যাবে তো? শিক্ষার্থী আর তাদের অভিভাবকদের ভাবতে হয়, পরীক্ষা হলে, ক্লাসরুমে যাওয়া যাবে তো? আমি নিজের অভিজ্ঞতায় বলতে পারি, আমাকে সারাক্ষণ হিসাব করে চলতে হয়, কখন কোন রাস্তায় গেলে কতক্ষণে গন্তব্যে যাওয়া যাবে। এত পাটিগণিত ছাত্রজীবনেও করিনি।

কোথায় নেই যানজট? প্রধান প্রধান সড়কের মধ্যে মিরপুর থেকে সদরঘাট, উত্তরা থেকে সায়দাবাদ –যানজট সমস্যা নিত্য দিনের হয়ে উঠেছে। অসংখ্য প্রাইভেটকার, গায়ের ছাল ওঠা বাস, সংখ্যাহীন মোটরসাইকেল, রিকশা, ভ্যান, টেম্পু, সিএনজি দিনভর বর্ণিল করে রাখে ঢাকার সব পথ। ট্রাফিক সিস্টেমের বালাই নেই, এরমধ্যে আছে উন্নয়ন কাজের নামে বিশাল বিশাল ধ্বংসযজ্ঞ। খুঁড়ে রাখার কারণে বড় বড় গর্ত, খানা-খন্দক, যেখানে ইট, বালি সিমেন্ট, রডের স্তূপ, সড়কের পাশের ফুটপাত দখল করে রাজনৈতিক দলের অফিস, হকার, যেখানে সেখানে টেম্পু স্ট্যান্ড, রিকশা স্ট্যান্ড, বাস স্ট্যান্ড। ফলে সড়ক সংকুচিত হয়ে যানজট লেগেই থাকে। প্রধান সড়কের পাশাপাশি এলাকাভিত্তিক যেসব ফিডার রোড আছে, সেখানেও একই সমস্যা। প্রায় সব রাস্তার দু’পাশে নির্মাণ সামগ্রী ফেলে রাখা। ব্যবসা আর দখলের কারণে ফুটপাথ দিয়ে চলার পরিস্থিতি নেই। তার ওপরে রাস্তার ওপরেই চলছে পার্কিং। যার জন্য দুর্ঘটনাও ঘটছে নিয়মিত। ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক সমাবেশ আর অসংখ্য ভিআইপি মুভমেন্টের কারণে সড়ক বন্ধ রাখার কথা নাই বা বললাম।

একটা নৈরাজ্যের চিত্র সর্বত্র। একটা সময় ছিল, অফিস শুরুর সময় এবং অফিস ছুটির সময় যানজট হতো। এখন সারা দিনই সড়কে জট। কিছু দিন আগেও মানুষ পরিকল্পনা করতো দিনে অন্তত একটি কাজ শেষ করা যাবে। এখন একটিও করা যায় না। কারও বাসা যদি মিরপুর বা উত্তরা হয়, আর কাজ থাকে মতিঝিলে বা পুরনো ঢাকায়, তাহলে তাকে আগের দিন এসে সে এলাকার কোনও হোটেলে উঠতে হবে পরদিন কাজটি সমাপ্ত করার জন্য।  

একটি আধুনিক নগরীতে মোট আয়তনের ২০ থেকে ২৫ ভাগ রাস্তা বা সড়ক থাকা প্রয়োজন। কিন্তু ঢাকায় আছে মাত্র সাত থেকে আটভাগ। আর সেটুকুও এখন উন্নয়ন কাজের কারণে প্রায় বন্ধ। ঢাকায় ১৫ ভাগ মানুষ দখল করে আছে মোট সড়কের ৭০ ভাগ। স্ট্র্যাটেজিক ট্রান্সপোর্ট প্ল্যান বা এসটিপির হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে ঢাকায় ১৫ ভাগ যাত্রী প্রাইভেট গাড়িতে যাতায়াত করে। এই প্রাইভেটকারের দখলে থাকে ৭০ ভাগেরও বেশি রাস্তা। বাকি ৮৫ ভাগ যাত্রী অন্য কোনও ধরনের গণপরিবহন ব্যবহার করে। অর্থাৎ তারা গণপরিবহন সড়কের মাত্র ৩০ ভাগ এলাকা ব্যবহারের সুযোগ পায়।

মোটা দাগে যে সমস্যাগুলো আন্তরিকতার সঙ্গে সমাধান করা যায় তার একটি হলো ব্যস্ত সড়কে পার্কিং বন্ধ করা। দ্বিতীয়ত ভিভিআইপি অর্থাৎ রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী ছাড়া বাকি সব ভিআইপিদের জন্য রোড প্রটোকল উঠিয়ে দেওয়া। ঢাকা শহরের ভেতর দিয়ে রেল লাইন যাওয়ার ফলে ১৭টি পয়েন্টে রাস্তা বন্ধ করে ট্রেন যাওয়ার ব্যবস্থা করায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। এসব পয়েন্টে দিনে অসংখ্যবার যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হয়। এ নিয়ে জরুরি ভাবনা দরকার। এই শহরে একই রাস্তায় দ্রুতগামী যানবাহন আর ধীরগতির যানবাহন চলাচল করে, তাও আবার একসঙ্গে। একই সড়কে বাস-মিনিবাস, রিকশা, ঠেলাগাড়ি, ভ্যান, এমনকি ঘোড়ার গাড়িও চলে। ঢাকায় এখনও নিবন্ধিত রিকশার সংখ্যা প্রায় ১২ লাখ। কিন্তু বাস্তবে ২০ লাখ প্যাডেল চালিত রিকশা চলাচল করে এই শহরে। ফলে যানবাহনের গতি যায় কমে। অনেকেই মানবিকতার কথা বলবে, বিকল্প কর্মসংস্থানের কথা বলবে কিন্তু আমি মনে করি রিকশা উঠিয়ে দেওয়ার কোনও বিকল্প এই  শহরে নেই। তেমনি হকারসহ রাজনৈতিক স্থাপনা উচ্ছেদ করে ফুটপাতের মালিকানা পথচারীদের কাছে ফিরিয়ে দিলে যানজট তাৎক্ষণিকভাবে কমবে।

যানজট ঢাকাবাসীর জীবনের গতিই শুধু ধীর করে দেয়নি, এর কারণে বিপুল পরিমাণ অর্থনৈতিক ক্ষতিও হচ্ছে। ক্ষতি হচ্ছে স্বাস্থ্য এবং মানসিক স্বাস্থ্যের। যানজট সমস্যা মেটাতে বছর পর বছর বৈঠক হয়, প্রকল্প হয়, অর্থ ব্যয় হয়। সমস্যার একচুলও পরিবর্তন হয় না। ঢাকায় দুটি সিটি করপোরেশন আছে। আছে সচিবালয়ভিত্তিক কেন্দ্রীয় প্রশাসনও। এখন থেকেই তারা গুরুত্ব দিয়ে এ সমস্যার দিকে না দেখলে আগামী দিনে রাস্তাতেই হয়তো কাটবে মানুষের দিনরাত।

লেখক: সাংবাদিক 
/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
৭ বছর পর নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি
৭ বছর পর নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’
জেফারকে সিনেমায় নিয়েছে ফারুকীপুত্র ইলহাম!
জেফারকে সিনেমায় নিয়েছে ফারুকীপুত্র ইলহাম!
‘জুনের মধ্যে ১০ হাজার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ সম্পন্ন হবে’
‘জুনের মধ্যে ১০ হাজার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ সম্পন্ন হবে’
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ