X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচন কমিশন এবং নির্বাচন বর্জনেই কি সমাধান?

ড. প্রণব কুমার পান্ডে
০৩ জুলাই ২০২২, ১৭:৩৭আপডেট : ০৩ জুলাই ২০২২, ১৭:৩৭
বাংলাদেশের রাজনীতির একটি বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে নির্বাচন বর্জন। নির্বাচন বর্জনের সংস্কৃতির অনুশীলন হয়ে এসেছে অনাদিকাল থেকে। সরকারে যেতে না পারলেই এই নির্বাচন বর্জনের সংস্কৃতি অনুশীলন করা হয়। গত কয়েক বছর ধরে নির্বাচন বর্জনের পাশাপাশি বিরোধী দল নির্বাচন কমিশনকে বর্জন করছে। পাঁচ বছর পর যখন নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়টি জাতির সামনে উপস্থাপিত হয়, তখনই বিরোধী দলগুলো নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য যাদের নিয়েই নির্বাচন কমিশন গঠিত হোক না কেন সেই কমিশনকে বর্জন করে। বিরোধী দলের তরফ থেকে বলা হয় সরকারি দলের সমর্থকদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে, যাতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরকারি দল নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ম্যানিপুলেট করে পুনরায় ক্ষমতায় আসতে পারে।

গত কয়েক বছর ধরে নির্বাচন কমিশন গঠিত হয় রাষ্ট্রপতি কর্তৃক গঠিত সার্চ কমিটির মাধ্যমে। কমিটিতে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির সফল ব্যক্তিবর্গ অন্তর্ভুক্ত থাকেন। সেই কমিটি রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ এবং অন্যান্য শ্রেণি ও পেশার মানুষের সঙ্গে বৈঠক করে একটি তালিকা মহামান্য রাষ্ট্রপতির সামনে উপস্থাপন করেন। মহামান্য রাষ্ট্রপতি তাদের মধ্যে থেকে নির্বাচন কমিশন গঠন করেন। এখানেও বিরোধী দলের আপত্তি। কারণ, তাদের ধারণা যাদের নিয়ে সার্চ কমিটি গঠিত হচ্ছে তারা সবাই সরকারি দলের সমর্থক। এই ধরনের অমূলক ধারণার ওপর নির্ভর করে তারা যে সমস্ত আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে তা একদিকে যেমন নিজেদের দলের অস্তিত্বের জন্য হুমকি হচ্ছে,  ঠিক তেমনি গণতন্ত্র সুসংহত করার ক্ষেত্রে একটি প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করেছে।

আমাদের সকলের একটি বিষয় মাথায় রাখা দরকার যে নিরপেক্ষতা একটি আপেক্ষিক বিষয়, যা ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে। একজন মানুষ একটি রাজনৈতিক দলের সমর্থক হতে পারেন, কিন্তু তার কার্যক্রমের মাধ্যমে তিনি কতটুকু নিরপেক্ষ তা প্রমাণিত হয়। আমাদের মনে রাখতে হবে, একজন ব্যক্তির রাজনৈতিক স্বাধীনতা থাকলেও তার কার্যক্ষেত্রের গ্রহণযোগ্যতাও গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া আমাদের সমাজে রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করে না এমন নিরপেক্ষ মানুষ খুঁজে পাওয়া খুবই কঠিন। ফলে বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে যাদের সবচেয়ে বেশি নিরপেক্ষ মনে হয়, তাদের নিয়েই মহামান্য রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটি গঠন করেন। কারণ, সর্বজন গ্রহণযোগ্য মানুষ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন।

যাদের নিয়ে বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে তারা প্রত্যেকেই অপেক্ষাকৃতভাবে ক্লিন ইমেজের। তারা প্রত্যেকেই কর্মক্ষেত্রে সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। অতএব, আমাদের সকলের উচিত যতক্ষণ না পর্যন্ত এই ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত নির্বাচন কমিশন সমালোচনামূলকভাবে সরকারের পক্ষাবলম্বন করে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ না করছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের আস্থায় নিয়ে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিকরণের জন্য সহায়তা করা।

দায়িত্ব নেওয়ার পরই প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিভিন্ন ফোরামে বলেছেন যে শুধু নির্বাচন কমিশনের পক্ষে অংশগ্রহণমূলক এবং সুষ্ঠু নির্বাচন জাতিকে উপহার দেওয়া সম্ভব নয়। এটি করতে হলে সরকারি দল, বিরোধী দল, সুশীল সমাজ ও ভোটারসহ নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন অনুঘটকদের সহায়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে যে কেন বিরোধী দলের সহযোগিতা নির্বাচন কমিশনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ? এর প্রশ্নের সহজ উত্তর হলো, রাজনীতিতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে রাজনৈতিক দল। সরকারি দলের পাশাপাশি যদি বিরোধী দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে, তবে সেই নির্বাচন কখনও অংশগ্রহণমূলক হবে না। আবার যদি বিরোধী দল ইচ্ছাকৃত নির্বাচন বর্জনের সংস্কৃতি অনুশীলন করতে থাকে, তবে সেই ক্ষেত্রে নির্বাচন বর্জন হতে থাকলেও গণতন্ত্র থেমে থাকবে না। এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সকলের উচিত নির্বাচন কমিশনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে তাদের সহায়তা করা।

ইতোমধ্যে আমরা লক্ষ করেছি নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করা হচ্ছে। সেই বৈঠকে বিএনপিসহ বিরোধী জোটের সকল দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন্তু বিএনপিসহ পাঁচটি রাজনৈতিক দল সেই বৈঠকে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এখান থেকে একটি বিষয় পরিষ্কার, বিএনপি প্রথম দিন থেকেই এই কমিশনকে আস্থায় নিতে পারেনি। আর এই কারণেই তারা নির্বাচন কমিশনের কোনও কাজে সহায়তা করে না। তবে তাদের জন্য গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বন্ধ রাখার অবকাশ গণতন্ত্রে নেই। তাছাড়া এখন পর্যন্ত এই কমিশনের অধীনে যে সকল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, তার প্রত্যেকটি নির্বাচন ছিল অংশগ্রহণমূলক। অতএব, এই কমিশনকে আস্থায় না নিয়ে শুধু বিরোধিতার কারণে কমিশনের বিরোধিতা করা কোনও গঠনমূলক রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব নয়।

নির্বাচন কমিশনের প্রতি অনাস্থা জানানোর সঙ্গে সঙ্গে বিরোধীদলের পক্ষ থেকে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম)-এর প্রতি অনাস্থা জানানো হয়েছে। সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হলো, বিরোধী জোটের পক্ষ থেকে সুস্পষ্টভাবে কোনও যুক্তিপূর্ণ কারণ না দেখিয়েই বলা হচ্ছে ইভিএমে ভোট অনুষ্ঠিত হলে শুধু নৌকার প্রতীকে ভোট পড়বে। বর্তমান বাস্তবতায় একুশ শতকে এসে এই ধরনের অযৌক্তিক বক্তব্য জাতিকে হতাশ করেছে। বিএনপি একটি রাজনৈতিক দল, যারা বিভিন্ন সময় বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিল। সুতরাং জাতি প্রত্যাশা করে যে তাদের দলের নেতাকর্মী ও বিশেষজ্ঞদের ইভিএম সম্পর্কিত ধারণা থাকবে। যদি তাদের ইভিএম সম্পর্কে সম্যক ধারণা না থাকে তাহলে ইভিএম-এর খুঁটিনাটি বিষয় পরীক্ষা করার জন্য তারা বিশেষজ্ঞদের সহায়তা নিতে পারে।

কিন্তু নির্বাচন কমিশনের ডাকে সাড়া না দিয়ে ইভিএম-এর ব্যবহার কিংবা এর সাথে যুক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে কোনও ধরনের ধারণা না রেখে শুধু বিরোধিতার খাতিরে ইভিএম-এর বিরোধিতা করার মধ্যে কোনও গৌরব নেই। পৃথিবীতে বিভিন্ন দেশে ইভিএম-এর মাধ্যমে ভোটাধিকার প্রয়োগ করে থাকেন জনগণ। এখানে একটি বিষয় উল্লেখ্য যে বাংলাদেশের জনগণের জন্য ইভিএম হয়তো একটি নতুন পদ্ধতি। কিন্তু আমাদের মাথায় রাখতে হবে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে আমাদের নতুন টেকনোলজির সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে হবে। আর এটি করতে হলে কোনও না কোনও সময় আমাদের কাগজের ব্যালটের পরিবর্তে ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে ভোট প্রদান করতে হবে। দেশ আজ ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত হয়েছে। ফলে একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমরা যদি পিছিয়ে থাকি তাহলে দেশের সার্বিক উন্নয়ন ব্যাহত হতে পারে। এই অবস্থায় সবচেয়ে হতাশাজনক অবস্থান নিয়েছে বিরোধী রাজনৈতিক দল। কারণ, তারা নিজেদের ভুলগুলো উপলব্ধি না করে এবং কোনও রকম যুক্তি উপস্থাপন না করে নির্বাচন কমিশনের প্রত্যেক কাজের বিরোধিতা করছে।

নির্বাচন কমিশনকে বর্জনের পাশাপাশি বিরোধী জোটের ধারাবাহিকভাবে নির্বাচন বয়কটের সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক, যা তারা ইতোমধ্যে উপলব্ধি করতে পেরেছেন বলে জাতি বিশ্বাস করে;  বিশেষ করে গত ১০ বছর নির্বাচন বয়কট করে হঠাৎ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার ফলে তারা কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছে। তাদের একটি বিষয় উপলব্ধি করা প্রয়োজন যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নির্বাচন হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি, যার মাধ্যমে জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে এবং তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করে। বিএনপি দেশের একটি বড় রাজনৈতিক দল। প্রান্তিক জনগোষ্ঠী পর্যন্ত তাদের সাংগঠনিক দক্ষতা থাকবার কথা।

কিন্তু দিনের পর দিন নির্বাচন থেকে এবং জনগণের কাছ থেকে তারা দূরে থাকার ফলে এই দলটির জনসমর্থন শূন্যের কোঠায় দাঁড়িয়েছে, যার প্রমাণ আমরা বহুবার পেয়েছি। এমনকি তারা তাদের নেত্রীর মুক্তির আন্দোলনে জনসমর্থন আদায় করতে ব্যর্থ হয়েছে। কোনও ধরনের আন্দোলনে জনগণকে মাঠে নামাতে না পারার অর্থ হচ্ছে জনগণ তাদের প্রতি আস্থা হারিয়েছে। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় যদি জনগণকে আস্থায় নিতে হয় তাহলে তাদের সামনে একটি স্বপ্ন উপস্থাপন করতে হয়, যে স্বপ্নের মাধ্যমে জনগণ তাদের প্রতি অনুরক্ত হতে পারে। সেই কাজটি না করে দিনের পর দিন নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি একদিকে যেমন সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে, ঠিক তেমনি রাজনীতির আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হচ্ছে।

বাংলাদেশের ভোটারদের এবং জনগণের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। অতএব, বিরোধিতার খাতিরে সরকারের বিরোধিতা করে জনগণকে আকৃষ্ট করা সম্ভব নয়। কোনটি ভালো এবং কোনটি মন্দ এবং কোন সরকার জনবান্ধব সরকার তা জনগণ এখন খুব ভালোভাবেই বোঝে। অতএব, নির্বাচন কমিশন এবং নির্বাচন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে সরকারের সমালোচনা করার মাধ্যমে বিএনপির ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন বাস্তবে কখনোই সফল হবে না। এতে একদিকে যেমন সাংগঠনিকভাবে দলটি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, ঠিক তেমনি দেশে বিরোধী দলের রাজনীতি দুর্বল হয়ে পড়ছে।

সংসদীয় শাসন ব্যবস্থায় শক্তিশালী বিরোধী দল খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমরা বিভিন্ন দেশে বিশেষত ইউকেতে দেখেছি বিরোধীদল কীভাবে ছায়া মন্ত্রিসভার মাধ্যমে সরকারি দলের কাজের ওপর নজরদারি করে। একই রকমভাবে একটি শক্তিশালী বিরোধী দল সরকারের গঠনমূলক সমালোচনার মাধ্যমে সরকারকে তার ভুল শুধরাতে সহায়তা করে।

এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক আকার ধারণ করে। কিন্তু বাংলাদেশের বিরোধী রাজনৈতিক জোট যৌক্তিক দাবি ছাড়াই নির্বাচন কমিশন এবং নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে নিজেদের সরিয়ে রেখে এবং বিরোধিতার খাতিরে সবসময় সরকারের সকল কাজের বিরোধিতা করার ফলে নিজেদের অবস্থা দুর্বল করে ফেলেছে। তাদের এই দুরবস্থার সবচেয়ে বড় সুফল বয়ে এনেছে বর্তমান সরকারি দল আওয়ামী লীগের জন্য। ফলে, বিরোধীদলকে বুঝতে হবে নির্বাচন কমিশন এবং নির্বাচন বর্জনের মাধ্যমে তাদের সমস্যার সমাধান হবে না। রাজনীতিতে নিজেদের অবস্থান সুসংহত করতে এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চলমান রাখতে নির্বাচন কমিশনকে আস্থায় নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথ সুগম করা উচিত। কারণ, শুধু নির্বাচনের মাধ্যমেই সরকার গঠন করা সম্ভব।

লেখক: অধ্যাপক, লোক-প্রশাসন বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
 
 
/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ