X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

মার্কিন নির্বাচন: ট্রাম্পকে পরাজিত করতে পারেন ট্রাম্পই

বখতিয়ার উদ্দীন চৌধুরী
১২ মে ২০১৬, ১২:৫৩আপডেট : ১২ মে ২০১৬, ১৭:১৭

বখতিয়ার উদ্দীন চৌধুরী একে একে মাঠ ছেড়ে সবাই চলে গেছেন। এখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পই নিশ্চিত করতে যাচ্ছেন তার প্রার্থিতা। ইন্ডিয়ানায় জয় লাভের পর তার শেষ প্রতিদ্বন্দ্বী টেড ক্রুজ নীরবে প্রস্থান করেছেন। ইন্ডিয়ানায় হিলারি জেতেননি, ডেমোক্রেট দলের স্যান্ডারস জিতেছেন। প্রথমে মনে হয়েছিল ডেমোক্রেট দলের হিলারি অপ্রতিদ্বন্দ্বী কিন্তু দুঃখী মানুষের কথা বলে, সাম্যবাদের কথা বলে স্যান্ডারস ইন্ডিয়ানা পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছেছেন। মনোনয়ন প্রতিযোগিতা থেকে তিনি এখনও সরে দাঁড়াননি। সম্ভবত ওবামা নিরপেক্ষ থাকলে হিলারি তলিয়ে যেতেন। ওবামার সমর্থনের কারণে কালোরা জোটবদ্ধভাবে হিলারিকে সমর্থন করছেন। শেষ পর্যন্ত স্যান্ডারস ডেমোক্রেট দলের মনোনয়ন পাবেন না, সুপার ডেলিগেট নামের দলের কর্তা ব্যক্তিদের সমর্থন হিলারির প্রতি। কিন্তু স্যান্ডারস খুবই সফলতার সঙ্গে একটা মিশনের দ্বার উৎঘাটন করেছেন যে, আমেরিকান সমাজ যে রোগে আক্রান্ত হয়েছে সে রোগের প্রতিষেধক হচ্ছে—সাম্যবাদ।
ডালাস ডকট্রিন-এর প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল সাম্যবাদকে ধ্বংস করতে হবে। গত ছয় দশকব্যাপী আমেরিকা এ নিয়েই ব্যস্ত ছিল। সোভিয়েত পতনের পর আমেরিকার আনন্দের সীমা ছিল না। এতদিন সাম্যবাদ বললে আমেরিকার মানুষ মনে করত কী নোংরা শব্দ নিয়ে লোকটা মাতামাতি করছে! কিন্তু বার্নি স্যান্ডারস শান্তভাবে আমেরিকার মানুষকে বুঝাতে পেরেছেন, যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যবোধের সঙ্গে সাম্যবাদের কোনও মৌলিক বিরোধ নেই। মানুষের ভাত, কাপড়, শিক্ষা, চিকিৎসার কথাতো কেউ অস্বীকার করতে পারে না। বরং এখন বৈষম্য যেভাবে বেড়েছে, ক্ষমতা যেভাবে মুষ্টিমেয় লোকের হাতে পুঞ্জিভূত হয়েছে, সেটাই আমেরিকার মূল্যবোধের পরিপন্থী। স্যান্ডারসের পেছনে ডেমোক্রেট দলের তৃণমূল পর্যায়ের কর্মীরা প্রচুর পরিমাণে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে জড়ো হয়েছেন।

আরও পড়তে পারেন: মুসলিমদের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রশ্নে ট্রাম্পের সুর বদল!

স্যান্ডারসের কাছে প্রচুর অর্থ নেই। ওয়াল স্ট্রিট তার ধারেকাছেও নেই। কর্মীদের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থনেই তিনি এতদূর আসতে পেরেছেন। আমেরিকার মূল সমস্যা নিয়ে কথা বলায় অভাবী মানুষগুলো তার সঙ্গে এসে জড়ো হয়েছে। স্যান্ডারস হিসাব কষে দেখিয়েছেন ধনবাদের নামে আমেরিকার সব ধন-সম্পদ ১ শতাংশের শূন্য দশমিক ১ শতাংশ মানুষের কব্জায় চলে গেছে।
জুনিয়র বুশ একটা কর্মসূচি চালু করেছিলেন, ‘সবার জন্য বাড়ি’, ব্যাংক অকাতরে ঋণ দিয়েছিল। মানুষ বাড়িঘরও করেছে প্রচুর। এখন বাড়িওয়ালারা কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে না পারায় বাড়িগুলো নিলামে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। কোনও কোনও জায়গায় নিলাম খরিদের লোকও পাওয়া যাচ্ছে না। আমেরিকা ঋণে জর্জরিত হয়ে গেছে। এখন আমেরিকার একটা নবজাতক নাকি ৩৫ লাখ ডলার ঋণের বোঝা নিয়ে জন্ম নিচ্ছে। আমেরিকার ইতিহাসে এটি এক ভয়াবহ অবস্থা।
হিলারি বলুন ট্রাম্প বলুন সবাই ওয়াল স্ট্রিট-এর চাঁদা নিয়ে খুব ফূর্তিতে নির্বাচনি প্রচারণা চালাচ্ছেন। মৌলিক প্রয়োজনের প্রতি কারও কোনও কথা নেই। ধনীদের স্বার্থের বিপরীতে কোনও কথা ট্রাম্প, হিলারি কেউ বলবেন না। ওয়াল স্ট্রিট বেজার হলে নির্বাচন করা মুশকিল হবে। অবশ্য একমাত্র প্রার্থী স্যান্ডারস বারবার বলেছেন ওয়াল স্ট্রিট- এর প্রতি তার কোনও দায়বদ্ধতা নেই।

ট্রাম্প রিপাবলিকান দলের এখন একক প্রার্থী তার প্রতিদ্বন্দ্বী আর কেউ নেই। তার প্রার্থিতা নিয়ে চূড়ান্ত মতভেদ রয়েছে। বুশ পরিবার তাকে সমর্থন করছেন না। প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকারও তাকে সমর্থন করছেন না। অবশ্য অনেক শক্তিশালী নেতাও তার পক্ষে রয়েছেন। চূড়ান্ত বিজয়ের পর কাউকেও দল কখনও মনোনয়ন দিতে অস্বীকার করেছে এরূপ কোনও নজির নেই। সুতরাং দলীয় পর্যায়ে মতভেদ নিরসন করে মনে হয় ট্রাম্পই রিপাবলিকান পার্টির মনোনয়ন পাবেন।

আরও পড়তে পারেন: সাইবার নিরাপত্তার দায় এড়াতে ব্যাংকে ব্যাংকে সুইফটের চিঠি

ট্রাম্প সম্পর্কে রিপাবলিকান দলের রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলেছেন, বিগত ইতিহাসে কেউ রিপাবলিকান দলকে তৃণমূল পর্যায়ে এত দৃঢ়ভাবে ঐক্যবদ্ধ ও সক্রিয় করতে পারেননি, ট্রাম্প যা পেয়েছেন। তারা বলেছেন মানুষকে আক্রমণ করা থেকে ট্রাম্প মুখ সামলালে ট্রাম্পকে পরাজিত করা কঠিন হবে। মনোনয়ন চূড়ান্ত করার সময় এসব দলীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের বিশ্লেষণকে খুবই গুরুত্বসহ মূল্যায়ন করা হয়। বিশেষজ্ঞরা আরও বলেছেন ল্যাটিন অভিবাসীদের রাগ থামাতে যদি ট্রাম্প তার প্রতিদ্বন্দ্বী মারকো রুবিওকে রানিং ম্যাট করতে পারেন তবে ট্রাম্প-এর পক্ষে জিতে যাওয়া খুবই সহজ হবে। রুবিও স্পেনিশ ভাষায় কথা বলতে পারেন। বর্তমানে তিনি ফ্লোরিডার সিনেটর। অবশ্য তিনি রাগ হয়ে বলেছেন, তিনি রানিং ম্যাট হবেন না। দল বললে নিশ্চয়ই তিনি হবেন।

শেষ পর্যন্ত আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে রিপাবলিকানের ট্রাম্প এবং ডেমোক্রেটের হিলারি ক্লিনটনই থাকবেন এবং তাদের মাঝেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। ট্রাম্প তৃণমূল পর্যায়ে তার কর্মীকে ঐক্যবদ্ধ এবং সক্রিয় করতে পেরেছেন কিন্তু হিলারি তার কর্মীকে সক্রিয় ও জড়ো করতে ট্রাম্পের মতো সফল হননি। হিলারি সিলেব্রিটি প্রার্থী হলেও আমেরিকানরা মনে করে যে হিলারি একরোখা ও কাঠখোট্টা। হিলারি একজন মহিলা। আমেরিকানরা কখনও কোনও মহিলাকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করেননি। মূল প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু হলে এসব কথা বাতাসে ঘুরে বেড়াবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন ট্রাম্প তার দলীয় মনোনয়নটা সব মহলের সমর্থন পুষ্ট করতে পারলে ট্রাম্পকে পরাজিত করা কঠিন হবে। তারা এতদূর বলেছেন ট্রাম্পই নাকি শুধু ট্রাম্পকে পরাজিত করতে পারেন।

লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও কলাম লেখক

[email protected]

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ইউক্রেন ইস্যুতে পুতিন-রামাফোসার ফোনালাপ
ইউক্রেন ইস্যুতে পুতিন-রামাফোসার ফোনালাপ
ভিসা-পাসপোর্ট হারিয়ে প্রবাসী অজ্ঞান, ৯৯৯-এ কলে উদ্ধার
ভিসা-পাসপোর্ট হারিয়ে প্রবাসী অজ্ঞান, ৯৯৯-এ কলে উদ্ধার
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
উত্তর কোরিয়া সফর করলেন রুশ গোয়েন্দা প্রধান
উত্তর কোরিয়া সফর করলেন রুশ গোয়েন্দা প্রধান
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ