X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

ধর্মীয় রাজনীতি বন্ধ করুন

নাদীম কাদির
০১ আগস্ট ২০১৬, ১১:৫৫আপডেট : ০১ আগস্ট ২০১৬, ১৭:০১

Nadeem Qadirজামায়াত নামক দলটি নিষিদ্ধ হওয়ার পথে, বিশেষত এর সদস্যদের মধ্যে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়ার পর থেকেই এ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
সম্প্রতি লন্ডনের হাউজ অব কমন্সে আমার একটি নাটক দেখার সুযোগ হয়েছে। সেই গল্পটি আজ আপনাদের না বলে পারছি না। জামায়াতের ইইউ মুখপাত্র ব্যারিস্টার আবু বকর মোল্লা ফ্লোর পেয়ে একটি ইস্যু উত্থাপন করেন যার বিরোধিতা করেন মন্ত্রী তারানা হালিম। তিনি ক্ষমতাসীন দলের এমপি ও চেয়ারম্যান অ্যান মাইনকে বলেন, তিনি যদি জানতেন জামায়াত যোগ দেবে তবে তিনি এই সেমিনারে আসতেন না, এবং এমন হলে ভবিষ্যতেও আসবেন না।
মাইন যখন মোল্লাকে বের হয়ে যেতে অনুরোধ করেন, তখন উপস্থিত আওয়ামী লীগ সদস্যরা ‘জঙ্গি’ ‘জঙ্গি’ আওয়াজ তোলেন। কিন্তু তিনি তা অস্বীকার করে নিজের বিবৃতি দেওয়া অব্যহত রাখেন। শেষ পর্যন্ত মাইন পুলিশ ডেকে মোল্লাকে বহিষ্কার করতে বাধ্য হন।
আওয়ামী লীগ কর্মীদের উল্লাসের মধ্যে দিয়ে সেমিনার আবারও চলতে থাকে। সে ছিল এক মহা আনন্দের সময়, এই দৃশ্য প্রত্যক্ষ করতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। এভাবে সমাজও যদি জামায়াতকে এভাবে শিক্ষা দিতো!
যুদ্ধাপরাধীদের এই দল ‘অপরাধী সংগঠন’ হিসেবে ইতোমধ্যেই পরিচিত। ধর্মকে রাজনীতিতে নিয়ে আসা ও জঙ্গিবাদের সঙ্গে যুক্ত করার দায়ও এদেরই।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পর সকল ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করেছিলেন। সেনা শাসক জিয়াউর রহমান মূলধারার ও প্রগতিশীল শক্তির সমর্থন পেতে ব্যর্থ হয়ে পাকিস্তানপন্থী জামায়াতকে জীবন দান করেন।
খালেদা জিয়া দুই জামায়াত নেতাকে মন্ত্রিসভায় স্থান দিয়ে জামায়াতকে দেন এক নতুন মাত্রা, ওই দুই নেতা পরে বিচারে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে শাস্তিও পেয়েছেন।
এরপর থেকেই জামায়াত সমগ্র রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের উদ্দেশ্যে কাজ করতে শুরু করে। সে সময়েই ইসলাম ও জিহাদের পতাকা নিচে স্থানীয় জঙ্গি দলগুলো গড়ে উঠতে শুরু করে। এক জামায়াত নেতা ২০০২ সালে আমার কাছে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন- ২০১২ সালের মধ্যে তারা বাংলাদেশের শাসনক্ষমতা পুরোপুরি দখল করে ফেলতে সক্ষম হবেন।
বাংলাদেশ সরকার আদালতের রায়ের জন্য অপেক্ষা করছে। জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হবে কিনা, সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য ওই রায়টি হওয়া জরুরি। তবে বিএনপি চাইছে, তারা জামায়াতের সঙ্গ ছাড়ার প্রশ্নে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেই যেন সরকার জামায়াতকে নিষিদ্ধ করে। এর অর্থ হলো জামায়াত নিষিদ্ধ হওয়ার পক্ষে বড় রকমের ঐক্যমত্য সৃষ্টি হয়েছে। জামায়াত নিষিদ্ধ হলে সঙ্গে অন্যান্য ধর্মভিত্তিক সংগঠন নিষিদ্ধ হওয়ার পথ প্রশস্ত হবে।
ধর্মভিত্তিক সংগঠনগুলোই মৌলবাদ ও অন্যান্য ধর্মের প্রতি অসহিষ্ণুতা তৈরি করেছে। যার অর্থ আমাদের ১৯৭৫ পূর্ববর্তী বাংলাদেশে ফিরে যেতে হবে। এই পরিবর্তন আসতে হবে আইনিভাবে নিষিদ্ধ হওয়ার আগেই।

শুরু করতে হবে স্কুল থেকে, যেখানে ধর্মশিক্ষার একটিমাত্র লক্ষ্য থাকবে, আর তা হচ্ছে- ধর্ম একটি জীবনদর্শন যা অন্য ধর্মকে সম্মান করতে শেখায় এবং সৃষ্টিকর্তা শেখান ভালোবাসা ও দয়া, সহিংসতা নয়।

এরপর আসে মাদ্রাসা। পাঠ্যক্রম গুরুত্বের সঙ্গে নজরদারিতে এনে সকল জেলা কর্মকর্তাদের পর্যবেক্ষণের অধীনে নিয়ে আসতে হবে। জেলা কর্মকর্তারা নিজ নিজ এলাকায় এই পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব নেবেন এবং শিক্ষকদের অতীত ইতিহাস খুঁজে বের করবেন।

সকল মসজিদে প্রতিদিন আজানের আগে কোরআন থেকে এমন সব আয়াত তেলাওয়াত করতে হবে যা থেকে ইসলামের প্রকৃত বার্তা প্রচার হয়।

এখন এটা স্পষ্ট যে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও জঙ্গি তৈরির ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে, সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সম্পূর্ণ তালিকা প্রস্তুত করতে হবে, আচরণ পর্যবেক্ষণ করতে হবে, প্রয়োজনে মনোবিজ্ঞানী নিয়োগ করতে হবে।

ঢাকার নটর ডেম কলেজে আমাদের গাইডেন্স ডিরেক্টর হিসেবে একজন ক্যাথলিক পাদ্রী ছিলেন, ডিরেক্টর অব গাইডেন্স বা ডিওজি, আমরা এই ইনিশিয়াল নিয়ে হাসাহাসি করতাম। কিন্তু তিনি আমাদের খুব সাহায্য করতেন

আমাদের এক শিক্ষক ছিলেন যিনি সেন্ট জোসেফ স্কুল থেকে আসা ছাত্রদের পছন্দ করতেন না, কাজেই আমি তার ক্লাস পালাতাম।

ডিওজি একবার লক্ষ্য করলেন আমি ওই শিক্ষকের ক্লাসে যাই না, তিনি আমার সঙ্গে বন্ধুত্ব করলেন। আমি তাকে নিজের, নিজের পরিবারের কথা বললাম। আমার শহীদ পিতার গল্প করলাম, নিজের সমস্যা, স্কুলের সমস্যা, ওই শিক্ষকের সমস্যা - সবই বললাম। তিনি আমার বিষয়ে ওই শিক্ষকদের সঙ্গে কথাও বললেন। আমাকে তার ক্লাসে পাঠালেন। 

একদিন ওই শিক্ষক আমার দিকে চকও ছুড়ে মেরেছিলেন, কারণ আমার ছিল লম্বা চুল।

আমি ডিওজিকে জানালাম, ডিওজি আমাকে আনুষ্ঠানিকভাবে ওই ক্লাস থেকে প্রত্যাহার করে নিলেন, কারণ কলেজে এমন কোনও নিয়ম ছিল না যে চুল লম্বা রাখা যাবে না। আমাকে জীববিজ্ঞানের পরীক্ষাগারে পাঠালেন ডিওজি, সেখানেই আমার জীবন বদলে গেল।

চলুন বাংলাদেশকে বদলে ফেলি
লেখক: সাংবাদিকতায় জাতিসংঘের ড্যাগ হ্যামারসোল্ড স্কলার এবং লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার।

আরও খবর: ভাড়া দেওয়ার আগে মেস মেম্বারদের সঠিক পরিচয় জেনে নিতে হবে: মেস সংঘের মহাসচিব

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
মার্কিন মানবাধিকার প্রতিবেদনে ভিত্তিহীন তথ্য রয়েছে
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিমার্কিন মানবাধিকার প্রতিবেদনে ভিত্তিহীন তথ্য রয়েছে
পার্বত্য এলাকার উন্নয়নে হাজার কোটি টাকার কাজ চলছে: প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল
পার্বত্য এলাকার উন্নয়নে হাজার কোটি টাকার কাজ চলছে: প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল
‘আশ্রয়ণ’: গ্রামীণ বসতি রূপান্তরের প্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয়
‘আশ্রয়ণ’: গ্রামীণ বসতি রূপান্তরের প্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয়
ছক্কা মেরেও আউট হলেন মুশফিক !
ছক্কা মেরেও আউট হলেন মুশফিক !
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ