X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘সিজার’ অনিবার্য, সার্জন হবেন কে?

তুষার আবদুল্লাহ
০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১২:৫৬আপডেট : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১৩:০৪

তুষার আবদুল্লাহ আপনি কারও অমঙ্গল চাচ্ছেন? তার প্রমাণ পাওয়া যাবে যখন কাউকে আপনি চিকিৎসকের কাছে বা হাসপাতালে পাঠাচ্ছেন। কারণ চিকিৎসকের কাছে বা হাসপাতালে যাওয়ার পর তিনি মানসিকভাবে বিভ্রান্তির ভেতর পড়ে যাবেন। তার মানসিক ভারসাম্য বিঘ্নিত হবে এবং সর্বোচ্চ অমঙ্গল মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। অমঙ্গল ঘটাতে কেন আমরা চিকিৎসক বা হাসপাতালের কথা কলছি? কারণ একজন চিকিৎসক তার সামনে উপস্থিত রোগী মরণাপন্ন হলেও, তাকে চিকিৎসা দেওয়ার আগে হিসেব করে নেন, এই রোগী বা তার আত্মীয়দের কাছ থেকে সর্বোচ্চ কত পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নেওয়া সম্ভব।
প্রয়োজনে মৃত রোগীকে জীবিত আছে বলে আইসিইউতে রেখে টাকা শুষে নেওয়া হচ্ছে। আপনার সন্তান স্বাভাবিকভাবে পৃথিবীর আলো দেখতে চাইলেও, অপ্রয়োজনে তাকে অস্ত্রপচারের মাধ্যমে প্রসব করানো হচ্ছে। এমনকি অদক্ষ চিকিৎসক ‘সিজার’ করতে গিয়ে আপনার সন্তানকে হত্যা করতে পারেন। শুক্রবারই মাতুয়াইলের একটি ক্লিনিকে এমন ঘটনা ঘটার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আপনি প্রতিবাদ করবেন সেই দুঃসাহস আপনার হবে না। কারণ যারা ক্লিনিক-হাসপাতালের ব্যবসা পেতে বসেছেন, তারা এলাকা বা সমাজে প্রভাবশালী বলে দাবিদার। কোনভাবে প্রাণে বেঁচে আসা ছাড়া আপনার কাছে কোনও বিকল্প থাকবে না।
এই অভিযোগগুলো যে শুধু বেসরকারি ক্লিনিক-হাসাপাতালের বিরুদ্ধে। কিছু অদক্ষ চিকিৎসকের বিরুদ্ধে তা নয়। সরকারি-বেসরকারি তারকা খচিত যেকোনও হাসপাতালেও একই চিত্র। আপনি কোনও একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে পারবেন না। একজন আপনাকে মৃত্যুর প্রায় দিনক্ষণ ঠিক করে দিচ্ছেন, অন্যজন বলছেন- যে রোগের কথা বলা হচ্ছে, সেই রোগ আপনার চৌহুদ্দির মধ্যে নেই। একজন চিকিৎসক যে ওষুধ ও পরীক্ষা দিচ্ছেন, অন্যজনের কাছে তা ধোপে টিকছে না। এর সঙ্গে আছে যথাযথ চিকিৎসকের কাছ পর্যন্ত পৌঁছা। পরিচয়, প্রভাব না থাকলে বিশেষজ্ঞ বা রোগ নির্ণয়ের জন্য যথাযথ যিনি তার কাছে পৌঁছানো সম্ভব হয়ে ওঠে না। পরিচয় ও প্রভাব যুক্ত হয়ে হাসপাতালে না গেলে আপনাকে নিয়ে ‘খেলা’ শুরু হয়ে যাবে। অপ্রয়োজনেই আপনাকে আইসিউ’তে ভরে দেওয়া হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত না দেউলিয়া হচ্ছেন ততক্ষণ আপনাকে শুষে নেওয়ার লড়াই চলবেই। টাকা ঢেলে দিয়েও যে আপনি নিশ্চিন্তে সঠিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারছেন, সেই নিশ্চয়তাও আপনাকে দিতে পারবে না কেউ।

চিকিৎসার সঙ্গে কবে কোন কালে ‘সেবা’ শব্দটি যুক্ত হয়েছিল, তা এখনও খসে পড়েনি। সেবা শব্দের আড়ালেই চলছে বাণিজ্য। এই বাণিজ্যতে চিকিৎসাখাতের ওপর-নিচ সকলেই জড়িত। কারণ জড়িত বলেই অদৃশ্য নির্দেশ হাসপাতালের নামে ‘মেশিনপত্র’ কেনা হচ্ছে! কেনা ওই মেশিন-সরঞ্জাম কখনও হাসপাতালের দুয়ার পর্যন্ত এসে পৌঁছেনি। আসলে কেনা হয় বা হয়েছে কিনা তাও প্রশ্নবিদ্ধ। জেলা-উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসকতো রাখা সম্ভব হচ্ছেই না। রাজধানীর সরকারি বা বিশেষায়িত হাসপাতালের চিকিৎসকদের তথাকথিত সেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন আপনি। কারণ তারা নিজ হাসপাতালের চেয়ে ক্লিনিকে ঘুরে ‘ছুটা’ চিকিৎসক বা পরামর্শকের কাজ করতেই ব্যস্ত থাকছেন। আপনার জন্য সবচেয়ে দুঃখ ও আতঙ্কজনক সংবাদ হচ্ছে দেশে যে হাসপাতালগুলো সাধারণ মানুষের সেবা দিতেই প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল, সেই হাসপাতালগুলোই এখন চিকিৎসার বাণিজ্যিক কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। সাধারণ অভিজাত হাসপাতালের সঙ্গে এদের কোনও তফাৎ নেই।

রাষ্ট্রের স্বাস্থ্যখাত প্রকৃত অর্থে গোষ্ঠী বা সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে। স্বাস্থ্যখাতের রাজনীতিকরণও এই গোষ্ঠীকে অধিক প্রণোদনা দিয়ে যাচ্ছে। স্বাস্থ্যখাতে পুঁজির যে বিনিয়োগ হচ্ছে, সেখানে ওষুধ উৎপাদক ও হাসপাতাল ব্যবসায়ীদের হাতের পুতুল হয়ে খেলার সামগ্রীতে পরিণত হয়েছেন আমাদের চিকিৎসকরা। পুঁজিকে আরও সুষম করার জন্যই ব্যবহার করা হচ্ছে আপনার আমার মতো সাধারণ রোগীদের। একথা স্বীকার করতেই হয় এই অরাজক অবস্থার মধ্যে থেকেও কতিপয় চিকিৎসক বাণিজ্য নয়, আপনাকে প্রকৃত সেবাই দিচ্ছেন, দিতে চাচ্ছেন। কিন্তু সিন্ডিকেটের বেড়াজাল পড়ে তিনি সেই শতভাগ সেবা দিতে পারছেন না। এই সংখ্যালঘুতে পরিণত হওয়া চিকিৎসকের দেখা যে আপনি পাবেন, সেই গ্যারান্টিই দিচ্ছে কে? রাষ্ট্রতো আপনাকে সেই নিশ্চয়তা দিতে পারছে না। যদি রাষ্ট্রের কোনও কালে সেই ইচ্ছা জাগেও, তবে তা প্রয়োগের জন্য স্বাস্থ্যখাতের ‘সিজার’ অনিবার্য। অবশ্য সেই ‘সিজার’টিও দক্ষ নেতৃত্বে হওয়া প্রয়োজন!

লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি

আরও খবর: রক্তদান: সময়টা প্রয়োজন দাতা-গ্রহীতার জীবন রক্ষার্থেই

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
দাবদাহে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের তরল খাদ্য দিচ্ছে ডিএমপি
দাবদাহে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের তরল খাদ্য দিচ্ছে ডিএমপি
জাপানি ছবির দৃশ্য নিয়ে কানের অফিসিয়াল পোস্টার
কান উৎসব ২০২৪জাপানি ছবির দৃশ্য নিয়ে কানের অফিসিয়াল পোস্টার
ড্যান্ডি সেবন থেকে পথশিশুদের বাঁচাবে কারা?
ড্যান্ডি সেবন থেকে পথশিশুদের বাঁচাবে কারা?
লখনউর কাছে হারলো চেন্নাই
লখনউর কাছে হারলো চেন্নাই
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ