X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

সন্তান চায় একটুখানি সময়

ফারহানা মান্নান
০১ জানুয়ারি ২০১৭, ১২:৩৩আপডেট : ০১ জানুয়ারি ২০১৭, ১২:৩৬

ফারহানা মান্নান নারী ও পুরুষের সমান অধিকারের প্রশ্নে একজন নারী যখন কর্মজীবী হয় তখন আসলে আর বিস্ময় প্রকাশের কোনও অবকাশ থাকে না! একুশ শতকের নারী ও পুরুষ উভয়ই চাকরি করবে এইতো স্বাভাবিক। কিন্তু শঙ্কা থেকে যায় একটা বিষয়েই যে, সন্তানের কী হবে? কার কাছে থাকবে? কার কাছ থেকে শিখবে?
সাধারণত বাবা-মা যখন উভয়ই কর্মজীবী হন তখন দাদী, নানী বা গৃহকর্মীর ওপরে সন্তানের দায়িত্ব বর্তায়। অফিসের সময়টায় বাবা বা বিশেষ করে মা নানাভাবে সন্তানের খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করেন। সন্তান হয়তো গৃহে নিজের পরিচিতজনের সংস্পর্শে নিরাপদে থাকে। কিন্তু নিরাপত্তা অনেকখানি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলেও সবটা নয় কারণ শেখার জায়গাটাতে শূন্যতা রয়েই যায়। আর আমাদের দেশে বিদেশের মতো কোনও ডে-কেয়ার সেন্টারও নেই যেখানে নিশ্চিন্তে সন্তানকে রাখা যায়। আর থাকলেও উচ্চবিত্ত পাড়ায় কিছু আছে যা অনেক সময়ই মধ্যবিত্তের নাগালের মধ্যে পড়ে না।  সুবিধাবঞ্চিতের জন্য এনজিও সংস্থাগুলো কিছু ডে-কেয়ার সেন্টার যদিও খুলেছে তবে সেখানে মধ্যবিত্ত তাদের সন্তানকে রাখতে স্বস্তিবোধ করেন না (এক্ষেত্রে হয়তো শ্রেণি বৈষম্যের কারণগুলো চলে আসতে পারে)। গুটি কয়েক সরকারি ও বেসরকারি অফিস বা প্রতিষ্ঠান বাদে আর কোথাও এমন সেবার তেমন কোনও ব্যবস্থা নেই। তাহলে উপায়?
প্রাথমিক উপায় হচ্ছে মধ্যবিত্তের জন্য ডে-কেয়ার সেন্টার খোলা যা থাকবে একেবারেই তাদের নাগালের মধ্যে। কিন্তু এখানে মনে রাখতে হবে ডে-কেয়ার সেন্টারগুলো কেবলমাত্র বাচ্চাকেই রাখে কিন্তু বাচ্চার শিখন-শেখানোর দায়িত্বগুলো নেয় না। কিন্তু একটা সন্তানের জন্য জানা, শেখা আর বোঝার কাজটাও জরুরি। আমাদের দেশে মধ্যবিত্তের নাগালের মধ্যে এমন সেন্টার এখনও স্বপ্ন। এখন তাহলে আমাদের দ্বিতীয় উপায়ের কথাই ভাবতে হবে। দ্বিতীয় উপায়টা হচ্ছে বাবা-মাকেই উদ্দ্যোগী হয়ে যেটুকু সময় তারা পান তার মধ্যেই সন্তানকে শেখানো।

শেখানোর জন্য প্রয়োজনীয় সময় অভিভাবককে দিতেই হবে। সকালে ঘুম থেকে ওঠে মায়েরা সাধারণত বাবাদের চাইতে বেশি ব্যস্ত থাকেন কারণ সংসার সামলে তবে বের হওয়ার প্রশ্ন আসে। কাজেই সকালের কিছুটা সময় বাবা সন্তানকে দিতে পারেন। সন্তান খুব ছোট হলে তাকে কোলে নিয়ে আদর করতে করতেই কথা বলতে পারেন। সন্তান যদি স্কুলে পড়ে তবে পত্রিকার শিরোনাম নিয়েই স্কুলের জন্য তৈরি হতে হতে কথা হতে পারে। স্কুলে পৌঁছে দেওয়ার সময়টায় সন্তানের ক্লাসরুমের সহপাঠী ও স্কুলের আর সকলের সম্পর্কে আলাপ করা যেতে পারে।

সাধারণত বাবা-মা বাড়ি ফেরার আগেই সন্তান স্কুল থেকে আগে বাড়ি ফিরে আসে। এ সময়টার জন্য সন্তানকে কিছু সৃজনশীল কাজ দেওয়া যেতে পারে। ইউটিউব দেখে কাগজ বা অন্যান্য ম্যাটিরিয়েল দিয়ে কিছু বানানো। একটা গল্পের বই পড়ে শেষ করা বা ক্লাসরুমের পড়া তৈরি করা। বাড়ি ফিরে হাতের কাজ করতে করতেই সন্তানকে দেওয়া কাজগুলোর খবর নিতে হবে। রাতের খাবার টেবিলে সারাদিনের চাকরির অভিজ্ঞতা সন্তানের সাথে শেয়ার করা এবং একই সাথে সন্তানের স্কুলের নানা ঘটনা সম্পর্কে খোঁজ খবর নেওয়াও শেখার ক্ষেত্রে একটা গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। স্কুলের অন্তত একজন ক্লাস শিক্ষকের সঙ্গে সু-সম্পর্ক রাখা যাতে করে নিয়মিত সন্তানের ক্লাস পারফরমেন্স সম্পর্কে খোঁজ খবর নেওয়া সম্ভব হয়। রাতের খাবারের পর অন্তত পক্ষে ঘণ্টা খানেক থেকে ঘণ্টা দুয়েক সময় সন্তানের জন্য বরাদ্দ রাখতেই হবে। রাতে শোবার আগে প্রতিদিন গল্প পড়ে শোনানো চাই। কবিতাও হতে পারে। হতে পারে কমিকস বা মজার কিছু। রাতে শোবার আগে সময়টা সন্তানের সঙ্গে একান্তভাবেই কাটানো দরকার।

আসলে সবার আগে মোবাইলে গেমস খেলা ও টেলিভিশন দেখাটা নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। শিশুর ৩ বছর বয়সের আগে মোবাইলে গেমস খেলতে দেওয়াই উচিৎ নয়! আর টেলিভিশনের ক্ষেত্রে রেস্ট্রিকশন দিয়ে রাখতে পারেন। আজকাল স্মার্ট টেলিভিশন ও সফটওয়্যার বাজারে বেশ জনপ্রিয়। প্রয়োজনে টেলিভিশন দেখার জন্য টাইম লিমিট দিয়ে দিন। এখন সন্তান যদি বাড়িতে গৃহকর্মীর কাছে থাকে তাহলে টেলিভিশন দেখাটা নিয়ন্ত্রণে আনাটা বেশ মুশকিলই হয়। সেক্ষেত্রে সলিউশন একটাই রেস্ট্রিকশন দিয়ে রাখা এবং একই সঙ্গে সন্তান ও গৃহকর্মীকে শিখন-শেখানোর কাজে নিয়োজিত করা। যেমন দুজনে মিলে কিছু তৈরি করা বা অন্তত চেষ্টা করা। সেক্ষেত্রে একটু বেশি বেতন দিয়েই গৃহকর্মী নিয়োগ দিতে হবে। এছাড়া সন্তানের নিরাপত্তার জন্য ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ব্যবস্থাও করা যেতে পারে।

আসলে কাজটা করতে হবে পরিস্থিতি বুঝে। তবে সপ্তাহের পাঁচ দিনের সৃজনশীল কাজের জন্য সন্তানকে উপহার হিসেবে কোথাও ঘুরতে নিয়ে যেতে পারেন। আমার মনে আছে শৈশবে মায়ের সঙ্গে একবার আত্মীয়দের সঙ্গে দল বেঁধে কক্সবাজার গিয়েছিলাম। মা সারা রাস্তা আমাকে প্রতিটি মুহূর্ত কাগজে নোট করতে বলেছিলেন। ফিরে এসে একটা রচনাও লিখেছিলাম। বাবা তখন বিদেশে। সে রচনা তখন বাবাকে বিদেশে পাঠানো হয়েছিলো। আমাদের অভিভাবকগণ এ ধরনের কাজগুলোও তাদের সন্তানদের দিয়ে করাতে পারেন।

আসলে আমাদের বাবা-মায়েরা অনেকেই বেশ সৃজনশীল কিন্তু বেশিরভাগ সময় জীবিকার চাপে সন্তানকে দেওয়ার মতো কোয়ালিটি মুহূর্ত দিতে পারেন না। আসলে নিজের স্বার্থেই সময় বের করতে হবে। কারণ সন্তানতো আপনার! এদের নিয়েই হবে আপনার ভবিষ্যৎ। দেখা যাবে হয়তো এই সময়ের অভাবেই সন্তান আপনার কাছ থেকে অনেক দূরে সরে গেলো। মনে রাখবেন সন্তানকে শাসনে রাখবেন কিন্তু অকারণ গালমন্দ বা মারধোর নয়! সন্তানকে বন্ধু ভাবতে দিন। বন্ধু হোন। সকল কাজের মধ্যেও একটু সময় আপনার সন্তানকে দিন।

লেখক: শিক্ষা বিষয়ক গবেষক

[email protected]

  

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস আর নেই
জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস আর নেই
পথের পাশের বাহারি শরবতে স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটা?
পথের পাশের বাহারি শরবতে স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটা?
মন্ত্রণালয়ে সভা করে ধানের দাম নির্ধারণ করা হবে: কৃষিমন্ত্রী
মন্ত্রণালয়ে সভা করে ধানের দাম নির্ধারণ করা হবে: কৃষিমন্ত্রী
জোভানের নতজানু বার্তা: আমার ওপর কষ্ট রাখবেন না
জোভানের নতজানু বার্তা: আমার ওপর কষ্ট রাখবেন না
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ