X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

অগোছালো বই উৎসব

তুষার আবদুল্লাহ
০৭ জানুয়ারি ২০১৭, ১৩:১৪আপডেট : ০৭ জানুয়ারি ২০১৭, ১৩:২০

তুষার আবদুল্লাহ উৎসবের অর্থ কী? এটা জানার বায়না ধরে বসে আছি বছরের প্রথম দিন থেকে। লোকে লোকে জানতে চাইছি উৎসব বলতে আমরা কী বুঝবো? আমার প্রশ্ন শুনেও অনেকে ভিমড়ি খাচ্ছেন। কেউ কেউ সংশয়ে পড়ে যাচ্ছেন, উৎসবের সংজ্ঞা বদলে গেলো কিনা। বদলে যেতেও পারে। এদেশে, সমাজে রাতে-দিনে কত কিছুতো বদলে যেতে দেখি। সেই বদলানোতে কার কী আসলো-গেলো তার পরোয়া কেউ করছে না, করে না। পরোয়া করে না বলেই যখন তখন ইচ্ছে মতো স্কুলের পাঠ্যবইও পাল্টে দেওয়া যাচ্ছে। কে কোন শ্রেণির বই পাল্টে দিলো সেই জবাবদিহিতাও বুঝি ফুরিয়ে গেছে। তাই জ্ঞান সমৃদ্ধ বইকে এখন তথ্য ভান্ডারে রূপ দেওয়া হচ্ছে।
শিশু-কিশোররা কেবল নিয়ম -নীতি, কিছু পরিসংখ্যান মনে রাখবে। পরীক্ষার খাতায় গিয়ে টিক চিহ্ন দিয়ে সেগুলো মনে আছে কিনা তার প্রমাণ দিয়ে আসবে। সৃজনশীলতার নামেও তারা নিয়ম-নীতিগুলো মুখস্থ কতটা রাখতে পারলো তারই পরীক্ষা দিয়ে আসছে। ফলে এক জানুয়ারি দেশজুড়ে তাদের হাতে যে বই তুলে দেওয়া হচ্ছে, তার সৌরভ নেওয়ার জন্য কোনও আকুলতা নেই। নিয়ম রক্ষার জন্য, স্কুলের নির্দেশনা মানতেই শিক্ষার্থীরা যাচ্ছে, বই হাতে নিচ্ছে। কিন্তু সেই বইয়ের কোনও ছড়া, কবিতা বা গল্পের জন্য তাদের ব্যাকুলতা নেই। সেটা হোক বাংলা অথবা ইংরেজি। বিজ্ঞান, ভূগোল বা ইতিহাস নিয়েও শিক্ষার্থীদের মধ্যে কৌতুহল থাকার কথা। কিন্তু আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা সেই কৌতুহলের আলোটা নিভিয়ে দিয়েছে। শিক্ষার্থীদের টেবিল থেকে পাঠ্যবই সরিয়ে দিয়ে সেখানে গাইড বই সাজিয়ে রাখা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা পাঠ্য বইয়ের প্রচ্ছদের সঙ্গে পরিচিত নয়, বইয়ের ভেতরের পাতাগুলো তাদের কাছে বছর শেষেও অপরিচিত রয়ে যাচ্ছে। শুধু কি শিক্ষার্থী শিক্ষকরাও যে ক্লাসে এবং প্রশ্নপত্র-উত্তরপত্রের জন্য গাইড বই আঁকড়েই আছেন।
তারপরও যে শিক্ষার্থীরা পাঠ্যবই খুলে বসতে চায়, খুলে বসছে, তাদের শেখা বা আনন্দ দেওয়ার জন্য কি আয়োজন আছে সেখানে? এবারের পাঠ্যবইয়ের ভুল নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম প্রথমদিন থেকেই সরব। সনাতন গণমাধ্যমও ত্রুটিগুলো তুলে ধরেছে। পাঠ্যবই দেখে বুঝার উপায় নেই, এই বই সকল ধর্ম শিক্ষার্থীদের জন্য রচিত বা তৈরি কিনা। সকল ধর্মের শিক্ষার্থীদের জন্যই আলাদা ধর্মবই আছে। বাংলা পাঠ্যবইতে ধর্মশিক্ষার আবহ দেওয়ার প্রয়োজন ছিল না। পাঠ্যবইয়ের ত্রুটি তদন্তে কমিটি হয়েছে। কমিটি যাচাই-বাছাই করে কী রিপোর্ট দেবে, তা জানার আগ্রহ নেই। এজন্যই নেই- পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের সঙ্গে যারা জড়িত থাকেন কমিটিতে, সেই কমিটির নেতা এবং সদস্যদের কেউ কেউ পুরো প্রক্রিয়াতেই অনুপস্থিত থাকেন। তাদের উপস্থিতি থাকে শুধু চেক গ্রহণে। আসলে মূল কাজটা হয়ে যায় নানা সংস্থা বা প্রভাবের পরামর্শ ক্রমেই। ফলে পাঠ্যবইতে ভুল রয়ে গেল কিনা তা দেখার ফুরসত নেই। জলদি করে বই ছাপাটাই লক্ষ্য হয়ে ওঠে।

সরকার বা রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে একদিনে সকল শিক্ষার্থীর হাতে বই তুলে দেওয়ার যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে স্কুলে স্কুলে যে আয়োজন, তা প্রকৃত অর্থেই উৎসবের মেজাজ পেতে পারতো। এখন বাহ্যিকভাবে দেখে মনে হতে পারে পুরো দেশতো সত্যিই বই উৎসবে মেতে আছেই। কিন্তু বইয়ের ভেতর এত ভুল, বইয়ের ভেতর থেকে আনন্দ পাঠের আয়োজনগুলো হারিয়ে যেতে থাকলে, তাদের গাইড বই পড়ার তাড়া থাকলে এই বই নিয়ে তারা কী করে উৎসবে মেতে উঠবে? মন খারাপের কথা জানি শিক্ষকদেরও। সারা বছর তারা যাদের পাঠদান করেন, নতুন বই সেই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়ার সুযোগ পান না বেশির ভাগ শিক্ষকই। ওই উৎসবটিও দখল করে নেন রাজনৈতিক নেতারা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করতে তাদের হাতে বই তুলে দেন। এটা উৎসবকে আরও রঙিন করে। শিক্ষামন্ত্রীও এই দায়িত্বটি পালন করতে পারেন। কিন্তু জেলা, উপজেলা, ইউনিয়নের রাজনৈতিক নেতারা কেন এই দায়িত্ব নেবেন? শুরুতেই উৎসবের সংজ্ঞা জানার বায়না ধরেছিলাম এজন্য যে, বই উৎসব নিয়ে সারাদেশের যে অভিজ্ঞতা, তা শেষ পর্যন্ত স্কুলে-ঘরের পড়ার টেবিলে আনন্দ পৌঁছে দেয় না। গণমাধ্যমে যা দেখা যায়, তা ছবি তোলার আয়োজনের অংশ মাত্র। প্রত্যাশা থাকবে, আগামী জানুয়ারির পহেলা দিন সুরভিত, আনন্দঠাসা বই হাতে পেতে ব্যাকুল হবে শিক্ষার্থীরা। সেই আনন্দের আলো পড়ার টেবিলে এসে পৌঁছাবে। সেই আলো দেখার প্রস্তুতি নির্মোহ এবং দায়িত্বশীলভাবে এখন থেকেই শুরু করতে হবে।

লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
পানিতে ডুবে ভাইবোনসহ ৩ শিশুর মৃত্যু
পানিতে ডুবে ভাইবোনসহ ৩ শিশুর মৃত্যু
‘এমপি হতে ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা খরচ হয়েছে, এটা তুলবো, এটুকু অন্যায় করবো-ই’
‘এমপি হতে ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা খরচ হয়েছে, এটা তুলবো, এটুকু অন্যায় করবো-ই’
ইডি হেফাজতে আরও ৪ দিন কেজরিওয়াল
ইডি হেফাজতে আরও ৪ দিন কেজরিওয়াল
ভাইস চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে নারী উন্নয়ন ফোরামের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ
ভাইস চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে নারী উন্নয়ন ফোরামের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ