X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

ট্রাম্প-গণমাধ্যম যুদ্ধ

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
২৫ জানুয়ারি ২০১৭, ১২:৩৬আপডেট : ২৫ জানুয়ারি ২০১৭, ১২:৪০

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা মার্কিন গণমাধ্যমের সঙ্গে কোনও প্রেসিডেন্টের এমন বৈরী সম্পর্ক এর আগে কখনও দেখা যায়নি। দেড় বছর আগে থাকতে যে যুদ্ধ শুরু হয়েছিল, মাত্র একদিনের মধ্যে সেই লড়াইকে আরও তীব্রতর করলেন নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। অত্যন্ত চাঁচাছেলা ভাষায় সাংবাদিকদের তিনি সবচেয়ে ‘অসৎ’ বলে গালি দিয়েছেন। সিআইএ’র সদর দফতরে গিয়ে তিনি গণমাধ্যম আর সাংবাদিকদেরই আক্রমণের জন্য বেছে নিলেন।
তার বিরুদ্ধে যে নারী সমাবেশ আর মিছিল হয়েছে তাতে খোদ আমেরিকাতেই যোগ দিয়েছিল ১২ লাখ নারী। আর বিশ্ব জুড়ে প্রায় ৩০ লাখ। ট্রাম্প ক্ষুব্ধ হয়েছেন, কারণ মিডিয়া তার শপথ ও দায়িত্ব গ্রহণ অনুষ্ঠানকে প্রায় ‘নন-ইভেন্ট’ হিসেবে ট্রিটমেন্ট দিয়েছে। তার শপথে মানুষের উপস্থিতির চেয়ে বিক্ষোভে বেশি লোক সমাগম হয়েছে, মিডিয়ার এই অংকের হিসেব মানতে নারাজ তিনি। মিডিয়া নাকি ইচ্ছা করেই বেছে বেছে ফাঁকা জায়গাগুলো দেখিয়েছে, এমন অভিযোগ করেছেন হোয়াইট হাউস কর্মকর্তারা। 
মার্কিন গণমাধ্যম বিশ্লেষকরা বলছেন গণমাধ্যমের সঙ্গে এক যুদ্ধ লিপ্ত হয়েছেন নতুন প্রেসিডেন্ট, যা স্মরণকালে আর দেখা যায়নি। মিডিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ভালো ছিল না বলে যদি কোনও প্রসিডেন্টের নাম আসে, তবে সবাই স্মরণ করে নিক্সনকে। সেই ওয়াটারগেট কেলেংকারী। এরপর থেকে আর কোনও প্রেসিডেন্টের সাথে এই অবস্থায় দেখা যায়নি গণমাধ্যমকে। ট্রাম্প বলেছেন, ‘জেনে রাখবেন পৃথিবীর সবচেয়ে অসৎ প্রজাতির নাম সাংবাদিক, আমি ওদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ নেমেছি’। শপথ নেওয়ার পরদিন (সিআইএ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সভায় গোয়েন্দাদের প্রতি তার নির্দেশনা, বা কেমন করে এ সংস্থার সঙ্গে তিনি সম্পর্ক বাড়াবেন, সেসব নিয়ে বক্তব্য প্রত্যাশা করা হচ্ছিল। কিন্তু ১৫ মিনিটের বক্তব্যের ৯ মিনিটই তিনি গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের নিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের চিফ অব স্টাফ রেইনস প্রিবাস বলেছেন, ‘সর্বশক্তি দিয়ে’ গণমাধ্যমগুলোকে মোকাবিলা করবে হোয়াইট হাউস।

এই যুদ্ধ কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় দেখার বিষয় এখন। ট্রাম্প মনে করেন গণমাধ্যম তাকে পছন্দ করে না। হোয়াইট হাউজের সঙ্গে মিডিয়ার এই আস্থার সংকট চলতে থাকলে তিনি কাজ করবেন কিভাবে একথাও ভাবছে সবাই। এটা শুরু হয়েছে মূলত তার নির্বাচনি প্রচারের সময় থেকেই। কিন্তু একথাওতো ঠিক যে এমন বৈরীতার কথা উচ্চারিত হলেও, মিডিয়া তাকে বিষদভাবে কভার করেছে। অন্য যেকোনও রিপাবলিকার প্রার্থীর চেয়ে সবচেয়ে বেশি কভারেজ তিনি পেয়েছেন, এমনকি হিলারির চেয়েও কোনও কোনও ক্ষেত্রে বেশি পেয়েছেন।

তার কিছু উক্তি, কিছু আচরণের জন্য তার একটা ক্লাউন ভাবমূর্তি প্রচার করেছে মিডিয়া। মিডিয়ার বড় কর্তাদের ধারণাই হয়তো ছিল না ট্রাম্প জয়লাভ করবে। যখন কিছুটা আঁচ করা গেলো ট্রাম্প আসলে জয়ের পথে এবং এক পর্যায়ে জিতেও গেলেন তিনি, তখন মার্কিন গণমাধ্যমতো বটেই, পৃথিবীর নানা প্রান্তের গণমাধ্যম ও সাংবাদিকরাই তাদের অস্বস্তি প্রকাশ করেছে। ট্রাম্প মিডিয়ার সেই অস্বস্তি বুঝতে পেরে এখন ক্ষমতায় বসে তাদের এক হাত নিচ্ছেন।

ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে মিডিয়ার বরাবরাই উষ্ণ সম্পর্ক। যদি পুরো নির্বাচনি দৌড় লক্ষ্য করা যায় তাহলে দেখতে পাওয়া যায় ট্রাম্প একজন প্রার্থী হিসেবে কখনোই মিডিয়াকে কাছে টানেননি। তুলনামূলকভাবে কম কথা বলেছেন সাংবাদিকদের সঙ্গে। কাছে টানার চেষ্টাও ছিলনা তার। নিজেকে সেভাবে মেলে ধরেননি, একটা অস্বচ্ছতা সবসময়ই ছিল। সংবাদ সম্মেলন করেছেন হাতে গোনা কয়েকটি। প্রেসিডেন্ট কভার করে যেসব সাংবাদিক, তাদের তিনি কোনও প্রবেশাধিকার দেননি। নিকট অতীতে ফিরে গেলে দেখা যায়, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে ঠিক করার পর থেকেই মার্কিন গণমাধ্যমকে কাছে টেনে নিয়েছিলেন জর্জ ডব্লিউ বুশ। যেকোওন অনুষ্ঠানে বুশ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতেন আগ বাড়িয়ে।  

ট্রাম্পের মধ্যে সেরকম ব্যক্তিত্ব কখনোই দেখা যায়নি। ট্রাম্প সাংবাদিকদের দেখতে পারেন না এটা প্রকাশিতই ছিল। কিন্তু দেশের প্রধান ব্যক্তি হিসেবে শপথ নিয়ে এমন আক্রমণ করবেন সেটা কেউ প্রত্যাশা করেনি। পরিস্থিতি এখন এমন - কোনও পক্ষই কাউকে ছেড়ে কথা বলছে না। ট্রাম্পের এই বক্তব্যের পর থেকে সিএনএনসহ মার্কিন মিডিয়া, এমনকি অন্যান্য দেশেও মিডিয়া এখন ট্রাম্প বিরোধী খবর প্রচারে ব্যস্ত। 

প্রশ্ন এখন - এই যে যুদ্ধ এতে কে জিতবে শেষ পর্যন্ত? আমেরিকার যে প্রশাসনিক কাঠামো, তাতে প্রেসিডেন্টের অনেক ক্ষমতা। তার হাতে রয়েছে অনেক ধরনের আইন যা তিনি প্রয়োগ করতে পারেন। তারপরও বলা যাচ্ছে না যে ট্রাম্পই জয়লাভ করবেন। মার্কিন গণমাধ্যমের ক্ষমতাও সেদেশে  অনেক। গণমাধ্যমের ন্যূনতম সমর্থন ছাড়া আমেরিকা চালানো প্রেসিডেন্টের জন্য এক প্রকার অসম্ভব। যদি ট্রাম্প সফল প্রেসিডেন্ট হতে চান, যদি চান আট বছর থাকতে তাহলে গণমাধ্যমের সঙ্গে দূরত্ব কমাতেই হবে তাকে। সুদীর্ঘ সময় ধরে মার্কিন গণতন্ত্রে গণমাধ্যমের প্রতি মানুষের যে বিশ্বাস আর আস্থা তা আকস্মিকভাবে তিনি দূর করতে পারবেন না।  

গণমাধ্যমের নিজের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ সময়টি। নির্বাচনে আমেরিকার বড় বড় গণমাধ্যম যেভাবে ট্রাম্পকে কভার করেছে তার ধরন নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। প্রায় সব গণমাধ্যম জিতিয়েই দিয়েছিলেন হিলারি ক্লিনটনকে। কিন্তু সবাইকে হতবাক করে দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট৬ নির্বাচন জিতলেন অরাজনৈতিক ব্যক্তি ডোনাল্ড ট্রাম্প, শুরু থেকেই যাকে কোনও আমলে নিতে চায়নি মূল ধারার পত্রিকা ও টেলিভিশন। এসব বড় বড় মিডিয়া হাউস, যারা নিজেদের মূল ধারার গণমাধ্যম বলে দাবি করে, তারা মানুষকে আসলে বুঝতে পারেনি। বিতর্ক উঠেছে নির্বাচনি খবর প্রচারের ধরন নিয়েও। মানুষ ও সমাজ থেকে বড় গণমাধ্যমের বিচ্ছিন্নতার কথাও উচ্চারিত হচ্ছে। এসবকে গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে গণমাধ্যমকেই। সাধারণ মানুষ ট্রাম্পকে আসলে ভোট দেয়নি, দিয়েছে সিস্টেমের বিরুদ্ধে, যে সিস্টেম তাকে বরাবর অবজ্ঞা করেছে। মার্কিন গণমাধ্যমের জন্য যুদ্ধটা কেবল ট্রাম্পের সঙ্গে নয়, নিজেদের আস্থা আর বিশ্বাস ফিরিয়ে আনার এক নতুন লড়াইও বটে।

লেখক: পরিচালক বার্তা, একাত্তর টিভি

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ইরাকি ঘাঁটিতে হামলায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার যুক্তরাষ্ট্রের
ইরাকি ঘাঁটিতে হামলায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার যুক্তরাষ্ট্রের
উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ও আওয়ামী লীগ সভাপতির সাহসী পদক্ষেপ
উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ও আওয়ামী লীগ সভাপতির সাহসী পদক্ষেপ
‘তীব্র গরমে’ চু্য়াডাঙ্গা ও পাবনায় ২ জনের মৃত্যু
‘তীব্র গরমে’ চু্য়াডাঙ্গা ও পাবনায় ২ জনের মৃত্যু
ডাগআউট থেকে রিভিউ নিতে বলায় ডেভিড, পোলার্ডের শাস্তি
ডাগআউট থেকে রিভিউ নিতে বলায় ডেভিড, পোলার্ডের শাস্তি
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ