X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

কালোজিরা ও মধু হইতে সাবধান!

শান্তনু চৌধুরী
০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৫:৪৭আপডেট : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৯:২২

শান্তনু চৌধুরী শিরোনাম দেখে একটু অবাক হওয়ারই কথা। কারণ সবসময় সবাই শুনে এসেছেন কালোজিরা ও মধুর গুণ। বিশেষ করে আমাদের মতো যৌন আকাঙ্ক্ষা অবদমিত দেশে ‘দ্বিগুণ শক্তিবর্ধক’ হিসেবে এ দু’টির তুলনা নেই বলেই বিজ্ঞাপনে প্রচারিত হয়। আর এ দু’টির গুণ নিয়ে লেখা মূলত জীবনধারা টাইপের কোনও কলামে যেতে পারে, মুক্তবুদ্ধি চর্চার কলামে নয়। সে কারণেই অবাক হওয়ারই কথা। কালোজিরার উপকারের কথা বলে শেষ করা যাবে না।  অনেকে দেখি সকাল-বিকাল দু’বেলা নিয়ম করে কালোজিরা খান। আবার মধুরও গুণের শেষ নেই। গুগল জানাচ্ছে, ‘দৈহিক ও যৌনশক্তি বৃদ্ধির জন্য মধু গরম দুধের সঙ্গে পান করলে খুবই ভালো ফল পাওয়া যায়। প্রতিদিন কালোজিরা মধু দিয়ে চিবিয়ে খেলে বা দৈনিক দুই চামচ আদার রস মধু দিয়ে খেলে প্রচুর পরিমাণে যৌনশক্তি বৃদ্ধি পায়।’যদিও খাঁটি মধু পাওয়া দুঃসাধ্য বটে। অনেকে দাবি করেন, বাগান থেকে খাঁটি মধু এনেছেন। কিন্তু সবার লোভ এমন, মৌয়াল নাকি মধু সংগ্রহ করে বন পেরিয়ে লোকালয়ে পৌঁছানোর আগেই মধুতে ভেজাল মিশিয়ে দেওয়া হয়। এরপরও কালোজিরা আর মধুর ব্যবসা জমজমাট।
তবে সাম্প্রতিক খবরগুলো বলছে, এই দু’টি জিনিসই আতঙ্কের কারণ হিসেবে দেখা দিয়েছে। সারাদেশে গুমোট জঙ্গি আতঙ্ক রয়েছে। এর মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে মারাও গেছে অনেকে। কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বা পুলিশপ্রধান যতই বলুক, ‘জঙ্গি নিয়ন্ত্রণে’ তারা কিন্তু ছারপোকার মতো বংশবিস্তার করেই যাচ্ছে। নিত্য-নতুন ভিন্ন কৌশল নিচ্ছে তারা। সম্প্রতি খবর হলো, মুঠোফোনে বা সরাসরি যোগাযোগের ক্ষেত্রে যেহেতু সমস্যা রয়েছে, সেক্ষেত্রে কালোজিরা আর মধু ব্যবসায়ী সেজে চলছে যোগাযোগ ও দাওয়াতি কার্যক্রম। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর হাতে আটক অনেকে পুলিশকে জানিয়েছে এ তথ্য। খবরটি আপাতত ছোট মনে হলেও উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। কারণ জঙ্গিদের নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন করা যাচ্ছে না। গুলশানের হলি আর্টিজানের মতো হামলার আগেও জঙ্গিরা নিয়ন্ত্রণে ছিল বলে বলা হয়েছিল কিন্তু ওরা ভেতরে ভেতরে এসে কিন্তু নিজেদের উদ্দেশ্য হাসিল করে ফেলেছে। যে আতঙ্ক তারা সৃষ্টি করতে চেয়েছিল তা কিন্তু এখনও রয়েছে জনমনে। এর মানে, জঙ্গিরা প্রতিনিয়ত নিত্যনতুন কৌশল নিচ্ছে। তাই এখনোই সাবধান হতে হবে। শুধুমাত্র ভাড়াটিয়ার তথ্য দিয়ে এগুনো যাবে বলে মনে হচ্ছে না। কারণ টিভিতে দেওয়া বিজ্ঞাপনের মতো এমনও অনেক বাড়িওয়ালা রয়েছেন, যারা ‘ছয় মাসের ভাড়া অ্যাডভান্স’ দিলে যে কাউকে বাড়িভাড়া দিতে পারেন।
এর মধ্যে আরও একটি খবর সংবাদ মাধ্যমগুলোতে এসেছে। ময়মনসিংহের একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতর্কিত লিফলেট বিতরণ। এটি অবশ্য নতুন নয়। মফস্বল এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো লক্ষ্য করে জঙ্গিরা অনেকটাই সক্রিয়। বছর পাঁচেক আগে চট্টগ্রামের মুসলিম হাই স্কুলে ছাত্রশিবিরের এ ধরনের লিফলেট বিতরণকে কেন্দ্র করে সারাদেশে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল। ময়মনসিংহে যে লিফলেট বিতরণ হচ্ছিল তার শিরোনাম দেখে ধারণা হতে পারে এগুলো সাধারণ ধর্মীয় লিফলেট। আমার জানা মতে, সাধারণ ধর্মীয় লিফলেট বিতরণে কোনও বাধা নেই।
জঙ্গিবাদ ও ধর্মীয় উগ্রতার ক্ষেত্রে নারীদের ব্যবহার অবশ্য নতুন নয়। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেটা বাড়ছে বলেই মনে হয়। ঢাকার আশকোনা এলাকায় জঙ্গি আস্তানা বলে যেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান চালিয়েছিল সেখানে আত্মঘাতী বোমা হামলায় মারা যায় এক নারী জঙ্গি। এটি প্রায় ১০ বছর পর কোনও নারীর প্রত্যক্ষভাবে জঙ্গি হামলার সঙ্গে জড়িয়ে আত্মঘাতী হওয়ার ঘটনা। তার মানে লিফলেট বিতরণ দিয়ে শুরু করে নারী জঙ্গিরা ধীরে-ধীরে আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে।
বাংলাদেশে প্রথম আত্মঘাতী জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে ২০০৫ সালে। সেবছর ১৪ নভেম্বর ঝালকাঠিতে আদালতের কাছে বিচারকদের ওপর, ২৯ নভেম্বর গাজীপুর ও চট্টগ্রামের আদালত প্রাঙ্গণে এবং ৮ ডিসেম্বর নেত্রকোনায় উদীচী কার্যালয়ের সামনে। জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) ১৭ আগস্ট সারাদেশের ৬৩টি জেলায় একযোগে বোমা হামলা চালায়। এসব হামলায় দু’জন বিচারকসহ কমপক্ষে ৩৪ জন মারা যান। ২০০৬ সালের ১৩ মার্চ জেএমবি নেতা মোল্লা ওমরকে আটকের উদ্দেশ্যে অভিযানের সময় দুই সন্তান নিয়ে ওমরের স্ত্রী সাইদা নাঈম সুমাইয়া আত্মঘাতী হয়। এটা বাংলাদেশের হিসাব। কিন্তু আন্তজার্তিকভাবেও জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো নিজেদের স্বার্থে নারীদের বেছে নিচ্ছে। সেটা কখনও দাসী হিসেবে বিক্রির জন্য, কখনও নিজেদের ভোগের জন্য আবার কখনও তরুণদের আকৃষ্ট করতে বা সর্বশেষ যোদ্ধা হিসেবে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ১৯৮৫ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সারাবিশ্বে ২২০টির বেশি হামলা চালিয়েছিল নারী আত্মঘাতীরা। এর মধ্যে ৭৫টি শ্রীলঙ্কায়, ৬৭টি ইসরায়েল ও ফিলিস্তানে, ৪৭টি রাশিয়া ও চেচনিয়ায়। সবচেয়ে বেশি ঘটছে পশ্চিম আফ্রিকায়। তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালের মাঝামাঝি থেকে ২০১৬ সালের ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১২৩টি হামলা চালান নারীরা। এর মধ্যে বেশিরভাগই ঘটে নাইজেরিয়ায় বোকো হারামের হয়ে।
আমাদের দেশের পুরুষের চেয়ে নারীদের ধর্মীয় চেতনা ও মূল্যবোধ কিছুটা বেশিই। তারা ঘরে বাইরে শান্তিপ্রিয়-সুন্দর জীবন যাপন করতে পছন্দ করেন। সে কারণে ধর্মীয় বিধান মেনে তারা শান্তি খুঁজেন। সেটা খারাপ কিছু হয়তো নয়। কোনও ধর্মই অশান্তি আর উগ্রতার কথা বলে না। কিন্তু ব্যক্তি দুর্বলতার ফাঁক দিয়ে যদি উগ্র চেতনা বাসা বাঁধে, তাহলেই সেটা সমাজের জন্য বিপদ ডেকে আনে। কারণ এখন গোঁড়ামি আর পোশাকে সীমাবদ্ধ নেই। পোশাকে আধুনিক হলেও বাসা বাঁধতে পারে ধর্মীয় উগ্রতা। অন্তত হলি আর্টিজানে হামলা চালানো জঙ্গিরা সেই সাক্ষ্য দেয়। কাজেই সচেতনার ফাঁক গলে কালোজিরা আর মধু বিক্রির ছলে যাতে জঙ্গি কার্যক্রম না চলে সে বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি দিতে হবে।
লেখক : সাংবাদিক ও সাহিত্যিক

 

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ডিভোর্স দেওয়ায় স্ত্রীকে কুপিয়ে নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন স্বামী
ডিভোর্স দেওয়ায় স্ত্রীকে কুপিয়ে নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন স্বামী
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ