X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

পাঠকের প্রস্তুতি এবং বইমেলা

তুষার আবদুল্লাহ
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৪:০৬আপডেট : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৪:১৫

তুষার আবদুল্লাহ বইমেলায় প্রতিদিন যাওয়া হচ্ছে না। বিরতি দিয়ে যাচ্ছি। যেদিন যাচ্ছি সেদিন বই কেনা উপলক্ষ থাকছে না। বই কেনার দিকে মনোযোগ দেব আরও পরে। আপাতত পাঠকদের অনুসরণ করছি। দল বেঁধে পাঠক বা দর্শনার্থীরা মেলায় আসছেন। শুধু যে পাঠক আসছেন তা নয়। দর্শনার্থীরাও আসছেন। অন্য আর দশটি মেলা ঘুরে দেখার মানুষ যেমন আছে, তেমনি বইমেলা ঘুরে দেখতেও আসেন অনেকে বই কেনা তাদের উদ্দেশ্য নয়। স্টলের সামনে দাঁড়াচ্ছেন বইয়ের মলাট বা প্রচ্ছদ দেখে আবার সরে চলে যাচ্ছেন। তবে একেবারেই খালি হাতে ফিরছেন না। পরিচিত লেখক বা তারকামুখ দেখলে তাদের সঙ্গে সেলফি তুলে নিচ্ছেন। বইয়ের স্টল পেছনে রেখেও সেলফি তোলা হচ্ছে।
পাঠকরা আসছেন যারা, তাদের পিছু নিয়েছি বেশ কয়েক দফা। দলবদ্ধ পাঠক পরিবার এবং বন্ধু বেষ্টিত হয়ে আসে। বন্ধু গোষ্ঠীর বেশিরভাগই কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া। একাধিক এমন দলের পিছু নিয়ে মাত্র একটি দলকে দেখেছি তারা প্রস্তুতি নিয়ে মেলায় এসেছে। কোন কোন বিষয়ের বই এবছর সংগ্রহ করবে তার একটা পরিকল্পনা আছে। কোন কোন লেখক সম্পর্কেও তাদের জানার আগ্রহ আছে। গত তিন, পাঁচ বছরে একজন লেখক উপন্যাস, প্রবন্ধ বা গল্পে কতদূর এগুলো সেটা তারা জানতে চান। জনপ্রিয় ধারার বই ও লেখক এদের মূল গন্তব্য নয়। তবে জনপ্রিয়ধারার লেখকদের পরিণতি সম্পর্কেও এদের পর্যবেক্ষণ আছে। অন্য বন্ধু গোষ্ঠীরা জনপ্রিয়ধারা বা কয়েকজন লেখকের মধ্যেই তার পাঠ সীমিত রাখছে। উপন্যাস নির্ভর তাদের পাঠ। প্রবন্ধ, ইতিহাস, গল্পের দিকে প্রতি আগ্রহ নেই। এদের একটি অংশ কোনও পূর্ব পরিকল্পনা নিয়ে বইয়ের স্টলের সামনে দাঁড়াচ্ছেন না। যে স্টলে গিয়ে যা ভালো লাগছে বা নজরে আসছে তাই কিনে নিচ্ছেন। তবে এদের বেশির ভাগই উপন্যাসের বাইরে চাকরি বা তথ্য সহায়ক বই কিনছেন বেশি।
সপরিবারে আসছেন যারা। তাদের হাতে বা ভাবনায় ফর্দ আছে কমই। বইমেলাকে কেউ কেউ  বাণিজ্যমেলার আদলে দেখছেন। সেটাও অনুমিত হলো। একটা বাজেট আছে বাচ্চাকে বই কিনে দেওয়ার। সেই বাজেটে সন্তানের হাতে কী বই তুলে দেওয়া হবে, তানিয়ে ভাবনা বা পূর্ব প্রস্তুতি নেই। টেলিভিশনের চলমান সিরিয়াল, কার্টুনের বই তুলে দিয়ে বাজেট শেষ। কল্পকাহিনী বা ভূতের বই কিনে দিয়ে ভাবছেন সন্তানকে বেশ বই কিনে দেওয়া হলো। কেউ কেউ তারকা বা জনপ্রিয় লেখকের বই তুলে দিয়ে ভাবছেন দায়িত্ব পালন করা হলো। কিন্তু বিবেচনায় রাখছেন না সন্তানকে তথ্যের ভেতর ডুবিয়ে দিচ্ছেন নাকি জ্ঞানের আলোর নিচে রাখছেন। খুব কম পরিবারকেই দেখা গেল সন্তানদের হাতে পৃথিবীর ইতিহাস, বাংলাদেশের ইতিহাস, মানুষের ইতিহাস, প্রকৃতি ও সংস্কৃতি বিষয়ক বই তুলে দিচ্ছেন। স্কুল-কলেজ থেকে শিক্ষকরা আসছেন পাঠাগারের জন্য বই কিনতে, তারাও এই প্রবণতার বাইরে যেতে পারছেন না। বাজার চলতি বই নিয়েই ফিরছেন তারা।

বইমেলার সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে পাঠকের প্রস্তুতি ও রুচির যে পরিচয় পেয়েছি, তার গত বইমেলার চেয়ে অবনতি হয়েছে। কমেছে জ্ঞানমুখি পাঠকের উপস্থিতি। আমাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক চর্চায় বই বিমুখতাকে প্ররোচিত করা হয়। আমাদের শিক্ষা ও কর্মের বাজার জ্ঞানের বদলে তথ্যমুখি। বইমেলা বা বইয়ের বিপণনে এখন মওসুমি লেখক ও প্রকাশকদের দাপট। তারাই এখন মেলার সামন্তপ্রভু। কোনও প্রকাশকই এখন আর জোর গলায় বলতে পারবেন না, তারা সৃজনশীল বইয়ের পৃষ্ঠপোষক। বারোয়ারী স্বস্তা বই, বাণিজ্যিক লেখকই এখন তাদের মূলধন। বই কেন্দ্রিক এই আবহাওয়াতে কোনোভাবেই পাঠক প্রস্তুতের সহায়ক নয়। তাই বইমেলাতে বইয়ের পাতা উল্টানোর শব্দের বদলে সেলফির ফ্ল্যাশ জ্বলে ওঠার শব্দটিই প্রকট হয়ে উঠছে।

কিন্তু তারপরও আমি মোটেও আশাহত নই। কারণ দেখছি ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা এসে ঠিকই বইয়ের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। আমার স্বপ্নকে আরও উসকে দেয়, যখন দেখি বাবা-মায়ের পছন্দের বাইরেও মজার, আনন্দের বই অনেকটা জোর করেই তারা কিনে নিচ্ছে। এসব বইয়ের আবার অনেকটা মেলা মাঠেই পড়ে নিচ্ছে তারা। পাঠকের এই প্রস্তুতির প্রতি ভরসা রাখতে চাই আমি।

লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ভ্যাটেই মিলবে রাজস্ব, অথচ ভ্যাট বাড়াতে অনীহা
ভ্যাটেই মিলবে রাজস্ব, অথচ ভ্যাট বাড়াতে অনীহা
বাংলাদেশে দক্ষতা উন্নয়নে বিনিয়োগের ফল দৃশ্যমান হচ্ছে
গ্লোবাল স্কিলস ফোরামে বক্তারাবাংলাদেশে দক্ষতা উন্নয়নে বিনিয়োগের ফল দৃশ্যমান হচ্ছে
ভারতের লোকসভা নির্বাচনে দ্বিতীয় দফার ভোট কাল
ভারতের লোকসভা নির্বাচনে দ্বিতীয় দফার ভোট কাল
তীব্র গরমে পানি চাইতে চাইতেই ট্রাফিক পুলিশের মৃত্যু
তীব্র গরমে পানি চাইতে চাইতেই ট্রাফিক পুলিশের মৃত্যু
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ