X
মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪
৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্লিজ, ছাত্রলীগকে চাকরি দিন!

শান্তনু চৌধুরী
০৯ মে ২০১৭, ১৩:১৭আপডেট : ০৯ মে ২০১৭, ১৩:১৯

শান্তনু চৌধুরী গ্রামে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলছে। কয়েকজন ছেলে এসে একজনকে পরিচয় করিয়ে দিলেন। জানালেন, তিনি এলাকার ছাত্রলীগ নেতা। হাত বাড়িয়ে দিলেন। সৌজন্যতা দেখালাম। পরে ‘চামচা’ গোছের একজন আমাদের এক বন্ধুকে বললো, ‘ভাইকে এক প্যাকেট সিগারেট কিনে দেন!’ ‘ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর’ বন্ধুটি সতর্ক করলেন। পরে পরিচয় জেনে ছেলেগুলো সটকে পড়লো। এই হচ্ছে হাইব্রিড ছাত্রলীগের বর্তমান অবস্থা। অলক্ষ্যে বিভিন্ন জায়গায় যোগ্যতা ছাড়াও তারা নানা সুযোগ-সুবিধা আদায় করছে, চাকরি বাগিয়ে নিচ্ছে। প্রশাসনেও ঢুকছে ছাত্রলীগ পরিচয়ে। কেউ কেউ সরকারি চাকরিতে যোগ দেওয়ার পরও প্রকাশ্যে দলীয় পরিচয় দিয়ে বেড়াচ্ছে। সরকার অগ্রাধিকার দিচ্ছে কিন্তু এখন অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে তারা প্রকাশ্যেই দাবি করছে, তাদের চাকরি দিতে হবে। নইলে রক্ষা নেই। চাকরির দাবিতে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ কে এম নূর-উন-নবীকে অবরুদ্ধ করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তেরো ঘণ্টা পর তিনি মুক্ত হন।
কিছুদিন আগে সংবাদের শিরোনাম হলো, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বিশেষ কর্মকর্তার’ পদ তৈরি করে এবং নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই ছাত্রলীগের ১২ জন নেতাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।’ এবং এদের বিশেষ যোগ্যতা ‘এরা ছাত্রলীগ করে’। এর আগেও এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন শত শত নিয়োগ হয়েছে শুধু ‘ছাত্রলীগ করে’ এই যোগ্যতায়। প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো বারবার ‘প্রশাসনে রাজনীতিকরণ’ চলছে বলে আওয়াজ তুললেও এখন হয়তো ছাত্রলীগ চাচ্ছে লিখিতভাবে তাদের ‘অন্যায়’ অধিকার। তো তারা সেটা চাইতেই পারেন। অতীতে দেশের স্বার্থে ছাত্রলীগের অবদান রয়েছে। এখনো অবদান আছে। এই যেমন এখন রাজনৈতিক মাঠ ঠাণ্ডা। এর মাঝে আলোচনায় ছাত্রলীগের নানা অপকর্ম। এরা আছে বলেই না রাজনীতির কিছু আলাদা খবর পাওয়া যায়! নইলেতো সেই ‘অমুক বলেছেন, তমুক বলেছেন’ টাইপের সংবাদ-ই। সেক্ষেত্রে ছাত্রলীগের অবদান কম নয়। 

প্রতি মাসেই কোথাও না কোথাও অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ছাত্রলীগ, যুবলীগ বা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী খুন হচ্ছে। এসবের শিকার হচ্ছেন অনেক সাধারণ মানুষও। চোরাকারবারি, মাদক ব্যবসায়ী, ভূমিদস্যু, অস্ত্র ব্যবসা, টেন্ডারবাজি, নিয়োগ বাণিজ্য, অপহরণ থেকে নানা খারাপ কাজে ওঠে আসছে ছাত্রলীগের নাম। গেলো কয়েক মাসের নমুনা দিলে বোঝা যাবে বিষয়টা। ক্যান্টিনে খেতে বসা নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের দুটি পক্ষের সংঘর্ষে সাতজন আহত হয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বহিষ্কৃত এক ছাত্রলীগ নেতাকে পরীক্ষায় বসার সুযোগ দেওয়ার দাবিকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের একাংশের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এতে আহত হন বেশ কয়েকজন। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্সে করে মদ বহনের সময় ছাত্রলীগের দুই কর্মী ও চালককে আটক করে পুলিশ। জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি বাতিলের আন্দোলনে ট্রেনে ভাঙচুর ও চালককে মারধরের ঘটনা ঘটে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ করায় ছাত্রলীগ কর্মীদের হাতে মারধরের শিকার হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি ফজলে রাব্বি। চট্টগ্রামের বর্তমান মেয়র ও সাবেক মেয়রের দ্বন্দ্বের জেরে আউটার স্টেডিয়ামে ছাত্রলীগ বনাম পুলিশের সংঘর্ষ চলার দিনেই নিজ দলের কর্মীদের হাতে খুন হন যুবলীগের আরেক কর্মী। একই দিন রাতে কুমিল্লায় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত হন দুজন। আহত কমপক্ষে ১০ জন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাসে ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ছাত্রলীগের চার কর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করে। এমন উদাহরণ অনেক দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু কেন এমনটা হচ্ছে। এটার কারণ ছাত্রলীগ বুঝতে পারছে তারা অপরাধ করে কোনও না কোনোভাবে পার পেয়ে যাবে। অথবা গুরু অপরাধে লঘু দণ্ড হবে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও ছাত্রলীগের সমালোচনা করেছেন। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তাদের ‘খারাপ সংবাদের শিরোনাম’ না হওয়ার জন্য বারবার সাবধান করে দিচ্ছেন। কিছু চোরে না শুনে ধর্মের কাহিনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় আমাদের পরিচিত, বন্ধু বা স্বজনদের অনেকে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। তখনও যে খারাপ কিছু ছিল না তা নয়, পাশাপাশি প্রতিপক্ষ ছাত্র সংগঠন বা ছাত্রদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোনও দাবিতে আন্দোলনও দেখা গেছে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে ‘টেন্ডার’ পাওয়ার দাবি, চাকরি পাওয়ার দাবিতে সংঘর্ষ বা সন্ত্রাস। কিছুদিন আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন সব ‘লীগের’ নাম নিয়ে অলোচনা উঠলো, যা খোদ মূল আওয়ামী লীগও জানে কিনা সন্দেহ। এই যে বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ অঙ্গ, সহযোগী ও নাম না জানা ভূঁইফোড় লীগের মধ্যে সংঘর্ষ তার পেছনে কিন্তু স্বার্থের বিরোধ। আদর্শগত কোনও বিরোধ নেই। এর সুযোগটা নিচ্ছে বাইরের লোকজন। তারা ছাত্রলীগের সাথে মিশে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। তবে এটাও ঠিক যে, এখনতো কোথাও আর ছাত্রলীগের প্রতিপক্ষ নেই। তাদের প্রতিপক্ষ তারা নিজেই। অথবা নিজ দলের অন্য কোনো সংগঠন। ছাত্রদলতো থেকেও নেই, ছাত্রশিবির গোপনে। ছাত্র ইউনিয়ন বা ছাত্রফ্রন্ট শিক্ষার্থীদের স্বার্থে মাঠে নামলেও হালে পানি পায় না। ছাত্রলীগের অবস্থা এখন এমন, ‘খেলোয়াড় চলে গেছে খেলবে কার সাথে’। তাই অগত্যা নিজেরা-নিজেরাই ‘পাওয়ার  প্র্যাকটিস’। কিন্তু এর ফলে যে শক্তি ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। যে অতীতের গৌরবের কথা বলে ছাত্রলীগের ‘বর্ষিয়ান’ নেতারা মাঠ গরম করেন সেই অতীততো পুনরুদ্ধার হচ্ছে না। বরং ছাত্রলীগকে যদি দেখার কেউ না থাকে তবে তারা ইতিহাসের অতলে হারিয়ে যাবে। সেই সময় চট্টগ্রামে বলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এক সময়ের ছাত্রলীগ নেতা ওবায়দুল কাদেরর কথাই হয়তো সত্য হবে। ‘ক্ষমতা হারালে পালানোর পথ পাবেন না’।  

লেখক : সাংবাদিক ও সাহিত্যিক  

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
আইপিএল থেকে অনির্দিষ্টকালের বিরতি নিয়েছেন ম্যাক্সওয়েল!
আইপিএল থেকে অনির্দিষ্টকালের বিরতি নিয়েছেন ম্যাক্সওয়েল!
ঘরে বসে আয়ের প্রলোভন: সবাই সব জেনেও ‘চুপ’
ঘরে বসে আয়ের প্রলোভন: সবাই সব জেনেও ‘চুপ’
রাশিয়ায় বন্যা, শত শত ঘরবাড়ি প্লাবিত
রাশিয়ায় বন্যা, শত শত ঘরবাড়ি প্লাবিত
ময়মনসিংহে দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ২ যাত্রী নিহত
ময়মনসিংহে দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ২ যাত্রী নিহত
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ