X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

করবিনের সাইকেল আর আরিয়ানার গান

বাধন অধিকারী
১১ জুন ২০১৭, ১২:১৫আপডেট : ১২ জুন ২০১৭, ১৪:১৩

বাধন অধিকারী নিত্যসঙ্গী এক সাইকেল, সুইসাইড নোটখ্যাত এক পুরনো দলিল আর বুকের গভীরে থাকা বিদ্রোহ-সততা আর মানবিক অঙ্গীকার। এইতো লেবার নেতা জেরেমি করবিনের সঙ্গী। তাই দিয়ে তিনি কী ভীষণ বদলের সম্ভাবনা হাজির করলেন একটি সমাজে। যারা পরিসংখ্যানে ব্রিটিশ নির্বাচনের ফলাফলকে বুঝতে চাইছেন,  বিনীতভাবে বলছি; তারা কিছুই বুঝতে পারছেন না। নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে কনজারভেটিভ পার্টি, হারিয়েছে পূর্ববতী নির্বাচনে পাওয়া আসন। বিপরীতে লেবার পার্টি অনেকগুলো আসন বেশি পেয়েছে। এইসব হিসাব-নিকাশের বাইরে বড় সত্যটি লুকিয়ে আছে অন্যখানে। সেই সত্য হলো, পুরাতন পচা নব্য উদারবাদী বাজার ব্যবস্থার বিপরীতে বিদ্বেষ-বিভক্তির সংরক্ষণশীল জাত্যাভিমানের রাজনীতিই একমাত্র পথ নয়। পথটা অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্রের (পার্টিসিপেটরি ডেমোক্র্যাসি)। সেই পথে গাড়িহীন একজন স্বাপ্নিক সাইকেলে চড়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে গেছেন।
নির্বাচনের ঠিক ১২ দিন আগে দুই দফায় জঙ্গি তাণ্ডবে রক্তাক্ত হয়েছে যুক্তরাজ্য। ম্যানচেস্টার আর লন্ডনের সেই হামলার পর থেকে থেরেসা মে জোরসে বলতে শুরু করেছেন মুসলমান সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে। বিদ্বেষের সূত্রে ভোট জিততে চেয়েছেন তিনি। ফেরি করেছেন আতঙ্ক। দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে শেষ কয়েকদিনের নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি বারংবার দেখিয়ে গেছেন জঙ্গি জুজুর ভয়। প্রচারণার শেষ মুহূর্তে তিনি সরাসরি ‘মুসলিম জঙ্গিবাদ’ শব্দটি ব্যবহার করে বিভক্তির বীজ পুঁতে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন, দরকারে মানবাধিকারের তোয়াক্কা না করে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তির বন্দোবস্ত করার মতো ঘৃণাবাদী অবস্থান নিয়েছেন।
বিপরীতে করবিন মূলধারার ব্রিটিশ রাজনীতির প্রথম এবং একমাত্র শীর্ষ নেতা, যিনি প্রকাশ্যে বলতে পেরেছেন সুস্পষ্ট উচ্চারণে: জঙ্গিবাদ তাদের নিজেদের বিদেশনীতির ফলাফল। দমনপীড়ন দিয়ে একে রোখা যাবে না। ভয়ঙ্কর মিথ্যে অজুহাতে সংঘটিত ইরাক যুদ্ধ পরবর্তী গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অবশেষ থেকে জন্ম নেওয়া আইএস-এর সঙ্গে সংলাপের প্রস্তাব দিতেও দ্বিধা করেননি তিনি। ইসলামোফোবিয়ার ভীতির বিপরীতে তিনি দেশের মানুষকে বুঝতে বলেছেন কোন বঞ্চনার বোধ একজন মানুষকে জঙ্গি করে তোলে।

এবার নব্য উদারবাদী যুগপর্বে পাশ্চাত্য ইতিহাসের এক অনন্য নির্বাচনি ইশতেহার রচনা করেছিল লেবার পার্টি।  বিদ্যুৎ ও জ্বালানি শিল্পের অংশবিশেষ জাতীয়করণ, শিক্ষা ব্যয় কমানো,  সামাজিক সুরক্ষায় ব্যয় বৃদ্ধি, ট্রেড ইউনিয়ন জোরদার, অভিবাসনকে ইতিবাচক ও বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা এবং খুবই বিদ্রোহী অবস্থান থেকে শীর্ষ ধনীদের আয়কার বাড়ানোর মতো পদক্ষেপ ঘোষণা করেছিলেন করবিন। বলেছিলেন, থেরেসা মে ভীতির ইশতেহার দেবেন, তার ভীতির বিরুদ্ধে লেবার ইশতেহার।

জিতে গেছেন করবিন। থেরেসার ইসলামফোবিয়া কাজে আসেনি। শেষ ক’দিনের প্রচারণায় করবিনবিরোধী পাশ্চাত্য মিডিয়া তাদের যাবতীয় পক্ষপাতমূলক নির্লজ্জতা সত্ত্বেও জরিপে বলতে বাধ্য হয়েছে করবিন জনপ্রিয় হচ্ছেন ক্রমাগত। নির্বাচনি ফলাফলেও তার আভাস পাওয়া গেছে। নিজ আসনে তিনি বিজয়ী হয়েছেন রেকর্ড ব্যবধান নিয়ে। আর নির্বাচনে ভোট দেওয়ার হার যে ১০ শতাংশ বেড়েছে, এরা সবাই করবিনকেই ভোট দিতে এসেছিলেন। রাজনীতিবিমুখ তরুণরা তাদের অংশগ্রহণমূলক চেতনাকে শান দিতে চেয়েছে করবিনের সঙ্গী হয়ে। এই তরুণরাই তো নতুন ব্রিটিশ ইতিহাস রচনা করবে।

ইসলামফোবিয়া আর ব্রিটিশ জাত্যাভিমানের সূত্রে বিভক্তির রাজনীতি ফেরি করে ভোট জিততে চাওয়া কনজারভেটিভরা অনেকগুলো আসন কেবল নয়, একক সংখ্যাগরিষ্ঠতাও হারিয়েছেন। পরিসংখ্যানের গভীরে গিয়ে খুঁজে দেখলেই আমাদের বুঝতে হয়, নব্য উদারবাদের ব্যয়সঙ্কোচন নীতি, জনসেবামূলক খাতকে ক্রমাগত সঙ্কুচিত করে ফেলার কতিপয়তন্ত্র প্রত্যাখ্যাত হয়েছে এর মধ্য দিয়ে। এদিকে ক্ষমতালোভী রাজনীতির বিপরীতে প্রেম-মনুষ্যত্ব আর সবার অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের পথে সাইকেল নিয়ে ছুটে ছুটে করবিন বাড়িয়েছেন লেবার পার্টির ১৭টি আসন। এই জয়ের ভেতরে একটা পরিবর্তনের প্রশ্ন লুকিয়ে রয়েছে।

তাইতো নির্বাচনের পরিপূর্ণ ফলাফল ঘোষণার আগেই করবিনের মন্তব্য, প্রধানমন্ত্রীর এখন ‘চলে যাওয়া’ উচিত। এই নির্বাচন ডাকা হয়েছিল সরকারকে নতুন ম্যান্ডেট দেওয়ার জন্য। ‘ম্যান্ডেট তিনি পেয়েছেন, হারানো আসন, হারানো ভোট, হারানো কর্তৃত্বে। এবার তার চলে যাওয়া উচিত। আসতে দেওয়া উচিত এমন এক সরকার, যা সব মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে।’

কে ওই মিষ্টি হাসির স্বল্পভাষী ৬৬ বছর বয়সী মানুষটি? যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনের দুই কর্মী; শিক্ষক মা আর প্রকৌশলী বাবার যৌথতার সৃজন তিনি। সম্ভবত ৩বার বিয়ে করেছিলেন করবিন, টেকেনি একটিও; রাজনৈতিক কারণেই।। স্নায়ুযুদ্ধ যুগের কমিউনিজমের জুজুর অবশেষ যে জনগোষ্ঠীর যৌথ অবচেনতায়, সেই পশ্চিমাদের কাছে মিডিয়া করবিনকে কট্টর বামপন্থী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়। তবে প্রকৃতপক্ষে তিনি পুরনো লিবারালিজম-দর্শনের মানুষ; যে দর্শন নাগরিকের জীবনে রাষ্ট্রের ভূমিকা সংকুচিত রাখা এবং একইসঙ্গে সামাজিক চুক্তির অংশ হিসেবে তার অধিকার ও সুরক্ষার প্রশ্নটিকে বিবেচনায় নেওয়ার দায়বদ্ধতা স্বীকার করত। পাশ্চাত্যের কাছে তিনি বিতর্কিত ইস্যুর সমর্থক। দলের বিরুদ্ধে বারবার ভোট দিয়ে তিনি বিদ্রোহী।  ইস্যুগুলো  কিন্তু প্যালেস্টাইনের জাতি মুক্তির আন্দোলনের মতো ইস্যু, কিংবা যুদ্ধবিরোধিতার প্রশ্ন। ’

শ্রমিক ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে তার রাজনীতি শুরু, ১৯৭৪ সালে লেবার পার্টির পক্ষ থেকে উত্তর লন্ডনের হ্যারিংগে কাউন্সিলের নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৮৩ তে লন্ডনের ইজলিংটন এলাকা থেকে লেবার পার্টির হয়ে প্রথম এমপি নির্বাচিত হন করবিন। তখন থেকে বারবারই তিনি সেখানকার এমপি। তারপর কতোগুলো বছর কেটে গেছে। অভিজাত-তন্ত্রের লেবার রাজনীতিতে তিনি ততদিনে পরবাসী যেন।

২০১৫ সালে তার স্বপ্নের মতো উত্থান। পার্টির বামপন্থী অংশ তাকে নামিয়ে দেয় নেতৃত্বের লড়াইয়ে। পুরনো লেবার রাজনীতির ধারায় দলকে ফেরাতে চান তিনি। দলকে মুক্ত করতে চান নব্য উদারবাদের বিষধারী অভিজাতদের হাত থেকে। কোনও ভেল্কিবাজি নয়, সত্যিকারের জনইস্যু, আর পার্টির তৃণমূলে নিরঙ্কুশ গণতন্ত্রের দর্শনে অন্তহীন বিশ্বাস তার যাদুকরী শক্তি। এই শক্তির কারণেই অখ্যাত মানুষটি হয়ে ওঠেন দলের শীর্ষ নেতা। পার্টির ওপরের তলার লোকজন তাকে ভয় পায়, ঘৃণাও করে, জোটবদ্ধ হয়ে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে। করবিন এসব কেয়ারই করেন না। ব্রেক্সিট গণভোট পরবর্তী সময়ে দেখেছি, দলীয় অভিজাততন্ত্রের বিরুদ্ধে করবিনের শক্তির জায়গাটা কতো বড়। বিশ্লেষকরা বলে যাচ্ছেন  তিনি হারবেন। আইন-আদালত দিয়ে নতুন সদস্য নেওয়া বন্ধ করা হচ্ছে। অথচ করবিন সব উতরে জিতে গিয়েছিলেন দলীয় নেত্তত্বের লড়াইয়ে। সে সময় স্রেফ করবিন যেন নেতা থাকেন, সেই কারণে লাখ লাখ তরুণকে লেবার পার্টিতে  যোগ দিতে দেখেছি। ভোট দিয়ে যেন তাকে নেতা রাখা যায়।

করবিন মানে তাই সত্যিকারের গণতন্ত্র। সমাজের নিচু তলার মানুষের গণতন্ত্র। যথার্থ গণতন্ত্র। করপোরেট মিডিয়া দিয়ে করবিনের পুরা বাস্তবতা বোঝা যাবে না। কেননা, তাকে আড়াল করতে মিডিয়ার জুরি নেই। কেবল মিডিয়া কেন, গোটা আধিপত্যবাদী সমাজ ব্যবস্থাই করবিনে বিপক্ষে। ব্রিটিশ নির্বাচনের কাভারেজ করতে গিয়ে তাকে ইতিবাচকভাবে খুঁজে পেতে রীতিমতো হিমশিম, খেতে হয়েছে। তা সত্ত্বেও করবিন বিজয়ী। কেননা তিনি প্রধানমন্ত্রী হতে আসেননি। এসেছেন ব্রিটিশ রাজনীতিতে নতুন দিনের ডাক হয়ে। ডাকটি  ‘এমন একটি সরকারের যা সব নাগরিকের প্রতিনিধিত্ব করে’ । এ হলো এক পুরনো আদর্শের দুর্দান্ত রাজনৈতিক পুনরুত্থান-এর প্রশ্ন।  

করবিনের উত্থানের আগ পর্যন্ত তরুণ প্রজন্মের আমরা যে লেবার পার্টিকে দেখেছি, তা ৭০ দশকে জনমানুষের কথা বলতো। গণতন্ত্র বলতে দলের ভেতরে-বাইরে শ্রমিক শ্রেণির নীতি প্রণয়ন আর সিদ্ধান্ত গ্রহণ বুঝত তারা। ১৯৭৯ সালের পার্লামেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে ওই রাজনৈতিক দর্শনকে বিস্তৃত করে দীর্ঘ এক রাজনৈতিক ইশতেহার প্রকাশ করে তারা। তবে নির্বাচনে পরাজয়ের পর ওই ইশতেহারই ‘ইতিহাসের দীর্ঘতম সুইসাইড নোট’ আখ্যা পায়।

মুক্তবাজারের মতো করেই, রাজনীতি ও অর্থনীতির দর্শন হিসেবে সংরক্ষণ জাতীয়তাবাদও খুবই সীমাবদ্ধ আর ভীষণ আগ্রাসী। অপরের প্রতি বিদ্বেষই তার শক্তি। থেরেসা মে সেই দর্শন থেকেই অভিবাসী আর মুসলমানকে টার্গেট করেছেন। যাবতীয় দায় ইইউ-এর ওপর চাপিয়েছেন। বিপরীতে করবিন সাইকেল চালিয়ে নিরন্তর ছুটে গেছেন জনমানুষের কাছে। তার হৃদয়ে ইতিহাসের কথিত সেই দীর্ঘতম সুইসাইড নোট! করবিন যেন সবাইকে বলে চলেছেন, সুইসাইড নোট নয়, এ হলো এক পুনরুত্থানের দলিল! এই দলিল  নিচু তলার মানুষের সামাজিক সুরক্ষা, শিক্ষাসহ মৌলিক অধিকারের প্রশ্ন এবং শ্রমজীবী মানুষের অধিকারের প্রশ্নকে সামনে নিয়ে আসবে। এবারের লেবার ইশতেহার সেই দলিলই ছিল। সাইকেল চালিয়ে ছুটে চলা করবিন সমর্থ হয়েছেন, সেই দলিলের পুনরুত্থান-আকাঙ্ক্ষা জাগিয়ে তুলতে।

সংবাদকর্মীর স্মৃতি ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে সিরিয়ার ব্রিটিশ বোমা হামলা প্রস্তাব নিয়ে করবিন-ক্যামেরন বিতর্ক মনে করিয়ে দিলো। নিজ দলেও অধিকাংশের এই হামলায় সমর্থন, তবু করবিন ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বলে উঠলেন, সিরিয়ায় এমন মানুষ অবশিষ্ট নেই, যারা কোনওভাবে পশ্চিমা শক্তির বোমা হামলার শিকার হয়নি। হাজার হাজার নিরীহ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। অথচ আইএসকে কিছুই করা যায়নি। বোমা হামলা করে কোথাও শান্তি আনা যাবে না। অস্ত্র ও রসদ সরবরাহ বন্ধ করে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খুঁজতে হবে।

করবিনের অবস্থান নিরাপত্তাগত কৌশলের দিক থেকেও কিন্তু যথার্থ। আদতে বদলে গেছে সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার কৌশল। বদলে গেছে এর ধরন-ধারণ। হামলার জন্য খুব জটিল কিংবা বড় পরিকল্পনার দরকার পড়ছে না। দরকার পড়ছে না ব্যাপক গণবিধ্বংসী কোনও ভারী অস্ত্রেরও।  যতো ছোটখাট জঙ্গিবাদী পদক্ষেপই নেওয়া হোক না কেন, কোনও না কোনও মাত্রায় তা সফলতা পাচ্ছে। কয়েক মাস আগে দুই ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এবং ইন্ডিপেনডেন্ট-এর পৃথক দুই বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, জঙ্গিবাদী হামলা ঠেকাতে গেলে কেবল নিরাপত্তা প্রশ্নটি নিয়ে ভাবলে চলবে না। 

তাহলে জঙ্গিবাদ ঠেকাব কী দিয়ে। ঠেকাব বঞ্চনা আর বিদ্বেষের উৎস সন্ধান করে। মধ্যপ্রাচ্যে ব্রিটেন-আমেরিকা-ফ্রান্সের হস্তক্ষেপের বাস্তবতাই জঙ্গি বানায়। মানুষের কান্না আগুন হয়ে জ্বললে তা সন্ত্রাসবাদ হয়। বঞ্চনার বিপরীতে তা বিদ্বেষ হয়ে হাজির হয়ে। তাই ঘৃণা বিদ্বেষ ঠেকাতে হবে ভালোবাসা দিয়ে। প্রেম দিয়ে।

ব্রিটেনে মার্কিন শিল্পী আরিয়ানা গ্রান্ডে সেই কাজটিই করেছেন। তিনি মনে করেন, গানই হবে সেই সম্মিলন আর ভালোবাসার উপলক্ষ্য। ভয় যেন মানুষে মানুষে বিভেদের দেওয়াল তুলতে না পারে, সেজন্যই সঙ্গীতকে হাতিয়ার করতে বলেন তিনি। গাইতে বলেন প্রাণ খুলে। তার ভাষ্যে সঙ্গীত হলো সেই বাস্তবতা, যা ভিন্ন-বিভিন্ন-বিচিত্র মানুষকে এক ছাতার তলায় নিয়ে আসতে পারে।

২২ মে সোমবার রাত ১০টা ৩৫ মিনিটে ম্যানচেস্টারে আরিয়ানার কনসার্ট আক্রান্ত হয়েছিল অশুভ শক্তির দ্বারা। কনসার্টে চালানো হামলায় ২২ জন জীবনের ওপারে চলে যান। খোলা চিঠিতে আরিয়ানা ম্যানচেস্টারবাসী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, আবারও গান নিয়েই সাহসী মানুষদের ওই শহরে ফিরবেন তিনি।  ‘আমরা সহিংসতাকে রুখবো সম্মিলিত হয়ে; পরস্পরের প্রতি সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে। সহিংসতার বিপরীতে আমাদের জবাব হবে, পরস্পরকে আরও বেশি করে ভালোবাসা।’ খোলা চিঠিতে লিখেছেন আরিয়ানা। লিখেছেন, ‘এখন আরও জোরালোভাবে প্রাণ উজাড় করে গাইতে হবে আমাদের। আগের চেয়েও আরও বেশি পারস্পরিক মমত্ববোধ নিয়ে, আগের চেয়েও সাহসী মানুষের শহর ম্যানচেস্টারে আমি  আবারও ফিরব। মার্কিন শিল্পীর অঙ্গীকার, কোনওভাবেই তাই গান থামবে না। 

ভয় পাননি আরিয়ানা। প্রতিশ্রুতি রেখেছেন তিনি। সহশিল্পীদের নিয়ে ওয়ান লাভ ম্যানচেস্টার চ্যারিটি কনসার্ট আয়োজন করে ম্যানচেস্টার হামলায় নিহত ও আহতদের জন্য ১৩ মিলিয়ন ডলার তহবিল সংগ্রহ করেছেন। ভীতি উপেক্ষা করে এসেছিলেন ৫০ হাজার মানুষ। কনসার্টে আরিয়ানা ছাড়াও ছিলেন, কানাডিয়ান পপ গায়ক জাস্টিন বিবার, মার্কিন গায়িকা কেটি পেরি, ব্রিটিশ রকস্টার গোল্ডপ্লে, ব্রিটিশ গায়ক, গীতিকার ও অভিনেতা রুবি উইলিয়াম এবং লিয়াম গালঘের। এদিন এক অনন্য সম্মিলন ঘটেছিল কনসার্টে উপস্থিত মানুষের। পুলিশ নিরাপত্তারক্ষী স্বাস্থ্যকর্মী আর সাধারণেরা পরস্পরের হাতে হাত রেখে নেচেছে গেয়েছে। কেবল আমার মতো ক্ষুদ্র মানুষের নয়, খোদ ব্রিটেনের বিশ্লেষকরাও মনে করেন, থেরেসা মে যে জঙ্গি হামলা থেকে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে পারেননি, তার নেপথ্যে উত্তাল ভূমিকা আরিয়ানার গানের। আমি নিজেও অনলাইনে সেদিনের কনসার্টটি উপভোগ করেছি। এর শক্তির দিকটি কতো বড়, তা উপলব্ধি করেছি। এখানেই মিলে যান করবিন-আরিয়ানা। তাদের মিলনবিন্দু আধিপত্যহীন সমতামূলক এক গণতান্ত্রিক সমাজের স্বপ্ন। একজন সাইকেলে, অন্যজন সুরে; একই সেই স্বপ্ন-পথযাত্রী।

লেখক: ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক ইন চার্জ, বাংলা ট্রিবিউন

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
গরমে বেড়েছে অসুখ, ধারণক্ষমতার তিন গুণ বেশি রোগী হাসপাতালে
ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগরমে বেড়েছে অসুখ, ধারণক্ষমতার তিন গুণ বেশি রোগী হাসপাতালে
টিভিতে আজকের খেলা (১৯ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (১৯ এপ্রিল, ২০২৪)
মিয়ানমার থেকে চোরাই পথে আসা ৫ টন কফি পাউডার জব্দ
মিয়ানমার থেকে চোরাই পথে আসা ৫ টন কফি পাউডার জব্দ
শিশুকে পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগে ৪ কিশোর সংশোধনাগারে
শিশুকে পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগে ৪ কিশোর সংশোধনাগারে
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ