X
বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪
৫ বৈশাখ ১৪৩১

অ্যাঙ্গেলা মেরকেলই পরবর্তী চ্যান্সেলর

দাউদ হায়দার
১৮ জুলাই ২০১৭, ১৭:১৯আপডেট : ৩০ জুলাই ২০১৭, ১৪:০৮

দাউদ হায়দার কে বলবে এখন গ্রীষ্মকাল। রীতিমত শীতের কামড়। গায়ে সুয়েটার-জাম্পার-কোট। রোদের দেখা নেই, আকাশ গোমড়া, মেঘের তাণ্ডব, বিরামহীন বৃষ্টি।
গত মাসের ২৩ ও ৩০ (জুন)-এ দিনভর বৃষ্টিতে বার্লিনের বহু প্রশস্ত সড়ক যেন নদী, এত্ত বাহ্য। পাতাল রেলেও জল থৈ থৈ। পাতাল রেল বন্ধ। বাস, ট্রামও।
আবহাওয়া অফিসের খবরে বলা হয়েছে গত ১০৭ বছরে নাকি এরকম বৃষ্টিপাত হয়নি, জনজীবন কাহিল করেনি।
আবহাওয়ার বিপর্যয়ে পর্যটন-ব্যবসা লাটে উঠেছে, পর্যটকের ভীড় নাই বললেই চলে। হোটেলের ভাড়া অর্ধেক কমিয়েও খদ্দের জুটছে না। ‘সামার ফেস্টিভাল’ বিশেষত পার্কে, খোলা চত্বরে এমনকি বড় বড় হলেও (প্রেক্ষাগৃহে) শ্রোতা, দর্শক নেই। ফুটবলের মাঠও প্রায় ফাঁকা। লোকে বলছে, ‘আকাশ ফুটো হয়ে গেছে, আমরা ঘরবন্দি। পিঁপে পিঁপে বিয়ার গিলছি’।
এদিকে সরকারের গ্রীষ্মকালীন ছুটি ঘোষিত। রাজনৈতিক নেতানেত্রী, মন্ত্রী, কর্মী (সরকারি-বেসরকারি), ইউরোপসহ নানা দেশে ছুটিকাটাতে পাড়ি দিয়েছে, দিচ্ছে। স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ মাসাধিক।
এই বছরের ‘সামার’ সরগম হওয়ার কথা। বদলে নিস্তেজ। একটি টিভি চ্যানেলে টকশোয়ে শুনলাম, একজন বক্তা রসিকতা করে বলছিলেন, ‘সব দোষ বৃষ্টির, রাজনৈতিক নেতাকুল, আমজনতা ঠাণ্ডা হয়ে গেছে, ভোট নিয়ে উত্তেজনা নেই।’
মিথ্যে বলেননি। হাতে আর অল্প সময়, সেপ্টেম্বরের ২৪ তারিখে জার্মান সংসদ তথা জাতীয়ও নির্বাচন। অথচ কোথাও নির্বাচনি সভাসমাবেশ নেই, দলীয় মিটিং নেই, এমনকি নেই রাস্তাঘাটে-পার্কে একটি পোস্টাও। দলীয় প্রার্থীরাও কারোর বাড়ি কলিংবেল টিপছেন না। ভোটের জন্য আকুতিমিনতি, ধর্না দিচ্ছেন না। এরকম কখনও দেখিনি। নির্বাচন নিয়ে কি জনগণের অনীহা? রাজনীতিতে অনাস্থা?? শতকরা ৬৮.০৯ ভাগ তরুণ- তরুণী রাজনীতি, নির্বাচনে বিমুখ। ৪১.০৩ ভাগ বয়স্ক-বয়স্কা বলেছেন, ‘ভোট দিয়ে আমাদের ভাগ্য ওলোট পালোট হবে না’।  ৮.০৭ ভাগ বলেছেন, ভোট দেব কিনা এখনও ভাবিনি। তার মানে ভোট দাতার সংখ্যা মাত্র ৫০ ভাগ। ডী টাৎস্ দৈনিকের জরিপে ভোটার সংখ্যা আরও কম। আশঙ্কা ৪৬ থেকে ৪৮ ভাগ। ড্যের টাগেসস্পিগেলের হিসাবে ৫১ থেকে ৫৩। মিউনিখের জ্যুড ডয়েচেৎসাইটুভ বলেছে চুয়ান্নর বেশি। সরকারের দ্বিতীয় টিভি চ্যানেল ‘জেড ডি এফ’ জানাচ্ছে ৫৫.০৪ ভাগ ভোটার অংশ নেবে। এর মধ্যে, এবারই, নব্য ভোটারের সংখ্যা (তরুণ-তরুণী) অধিকমাত্রায়। তুলনায় বয়স্করা কম।

ষোলোটি রাজ্যে একমাসব্যাপী জরিপ চালিয়ে এই তথ্য পেয়েছে জেড ডি এফ। মজার ঘটনা, সব জরিপেই বলা হচ্ছে, বার্লিনে ৩০ ভাগও ভোট পড়বে না, এই প্রজন্মের ভোটার বুথে যাবে না। কারণ চমকপ্রদ। ঠিক ২৪ তারিখেই (সেপ্টেম্বর), ভোটের দিনে, বার্লিনে ইন্টারন্যাশনাল ম্যারাথন। সকাল দশটা থেকে সন্ধ্যা  ছয়টা পর্যন্ত। এই সময়কালেই ভোট। এই সময়কালেই ম্যারাথন। বার্লিন ম্যারাথনেই বেশি মশগুল, ভোটের চেয়ে। জাতীয় ভোটের দিনেই কেন বার্লিন সিনেটের ক্রিড়া দফতর এই ম্যারাথনের আয়োজন করেছে, বিপুল তর্ক রাজনৈতিক মহলে। সি ডি ইউ (ক্রিস্টিয়ান ডেমক্রেটিক ইউনিয়ন) এবং এফ ডি পি (ফ্রি ডেমোক্রেটিক পার্টি) সরাসরি দোষারোপ করছে এস পি ডি (সোশালিস্ট ডেমক্রেটিক পার্টি), গ্রিন পার্টি, লিংকে পার্টাই (বাম দল)-কে।

এস পি ডি (সোশালিস্ট ডেমক্রেটক পার্টি), গ্রিন পার্টি, লিংকে বার্লিনে ক্ষমতাসীন (কোয়ালিশনে)। চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল সি ডি ইউ বলছে, নির্বাচনে এসপিডি-দের ভরাডুবি জেনেই বার্লিনে এস পি ডি-রা ২৪ সেপ্টেম্বর, নির্বাচনের দিনে ম্যারাথনের আয়োজন করেছে।

বার্লিনে সিনেটের ক্রিড়া মন্ত্রণালয়ের সাফ জবাব, ফালতু অভিযোগ। প্রতিবছর সেপ্টেম্বরের শেষ রবিবারে ম্যারাথন অনুষ্ঠিত। এবছর একই তারিখে নির্বাচন। কেন ম্যারাথনের তারিখ পাল্টাবে? তর্ক চলছে। সিনেট অনড়।

অ্যাঙ্গেলা মেরকেল এখন গ্রীষ্মের ছুটিতে। বার্লিন নিয়ে হেলদোল নেই, পাতলা চুলে বিলি কেটে মাথা খামচান না। বিলক্ষণ জানেন, বার্লিনে সি ডি ইউ’র কদর কম, ভোটে গো-হারা। এস পি ডি, গ্রিন, লিংকে (মূলত কমিউনিস্ট) পার্টি মজবুত, দাপুটে। বার্লিন, ক্লান্তেনবুর্গ- রাজ্য, তুরিঙ্গেন, মেকলেনবুর্গ হাতছাড়া হলেও ১৬ টি রাজ্যের ১২ টি তার দখলে। সবচেয়ে বড় রাজ্য বাভারিয়া, বাডেন- ভুরটেম্বার্গ মুঠোয়। সঙ্গে বশংবদ সি এস ইউ (ক্রিস্টিয়ান সোসালিস্ট ইউনিয়ন), সিস্টার পার্টি প্রয়োজনে ‘লড়কে লেঙ্গে ডয়েচল্যান্ড’।

ঠিক যে, এখন পর্যন্ত জরিপে, চ্যান্সেলর পদপ্রার্থী হিসেবে অ্যাঙ্গেলা মেরকেল এস পি ডি’র চ্যান্সেলর পদে প্রতিযোগীর মার্টিন সুলসজ্- এর চেয়ে ১২ পার্সেন্ট এগিয়ে।

চারমাস আগেও এই ব্যবধান কম ছিল (৩৪-৩২), হঠাৎ-ই এই পরিবর্তন। এস পি ডি’র রাজনৈতিক ‘ছ্যাবলামো’, ‘খেয়োখেয়ি’, ঝগড়া ক্রমশ প্রকাশ্য, ভোটাররা ক্ষিপ্ত। মুখ ঘোরাচ্ছে।

মার্টিন সুলসজ্ ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্ট (২০১২-২০১৭), বহুমান্য, দারুণ সফল। পদত্যাগের পরে এস পি ডি’র চেয়ারম্যান হয়ে, চ্যান্সেলর প্রতিযোগিতার প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে প্রশ্নবিদ্ধ।

নির্বাচনের আগে (১৬ জুলাই) ১০ দফা রাজভোগ (ইনসেনটিভ) ঘোষণা করেছেন, ৩৪ বিলিয়ন ইউরোর প্রজেক্ট ( তরুণদের চাকরিসহ সুযোগ সুবিধা, সোসাল রিফর্ম, বেকার ও বয়স্কদের নতুন ভাতাসহ) খুব যে ‘খাবে’ মনে হয় না।

ভোটাররা দেখছে,  উদ্বাস্তুর হাজার সমস্যা সত্ত্বেও এঙ্গেলা মরকেলের  অর্থনৈতিক উন্নতি ভালো। গত বছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি বেশি। রিফিউজিদের (উদ্বাস্তু) দিয়ে কাজ করিয়ে অর্থনৈতিক উন্নতি!-  তাহলে কেন এঙ্গেলা বরবাদ?- না।  

বারো বছর তিনি চ্যান্সেলর। ২৪ সেপ্টেম্বর নির্বাচনে আবারও নির্বাচিত হবেন, আলামত স্পষ্ট। এবং তিনিই হবেন রেকর্ডধারি চ্যান্সেলর, ১৬ বছর। যতই বৃষ্টি হোক, পথঘাট ভেসে যাক, পর্যটক আসুক না আসুক, গ্রীষ্মকালীন উৎসবে ভাটা পড়ুক, ২৪ সেপ্টেম্বর জার্মান জাতীয় নির্বাচনে অ্যাঙ্গেলা মেরকেলকেই বেছে নেবে। তিনিই নাকি ‘ ইউরোপের জাতীয়-নেত্রী। আমেরিকার প্রতিদ্বন্দ্বী।'

-      বৃষ্টির ঘনঘটা বেড়ে যাচ্ছে।

লেখক: কবি ও সাংবাদিক

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
গরু অথবা মাংস আমদানির বিকল্প কী?
গরু অথবা মাংস আমদানির বিকল্প কী?
ক্রিমিয়ায় রুশ ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংসের দাবি ইউক্রেনের
ক্রিমিয়ায় রুশ ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংসের দাবি ইউক্রেনের
প্রাণিসম্পদ উন্নয়নে বেসরকারি খাতকে উদ্যোক্তা হিসেবে দেখতে চান প্রধানমন্ত্রী
প্রাণিসম্পদ উন্নয়নে বেসরকারি খাতকে উদ্যোক্তা হিসেবে দেখতে চান প্রধানমন্ত্রী
গরমে হাসপাতালে বাড়ছে ডায়রিয়া রোগী
গরমে হাসপাতালে বাড়ছে ডায়রিয়া রোগী
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ