X
বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪
৫ বৈশাখ ১৪৩১

পাকিস্তান: বিচার বিভাগের শক্তিও একে-৪৭?

মাসুদা ভাট্টি
২৯ জুলাই ২০১৭, ১৭:৫৯আপডেট : ২৯ জুলাই ২০১৭, ১৮:৩৫

মাসুদা ভাট্টি পাকিস্তানের তিন তিন বারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ আবারও দেশটির সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পর পদত্যাগ করেছেন। পাকিস্তানের ৭০ বছরের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত কোনও নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীই তার মেয়াদ পূরণ করতে সক্ষম হননি, এবারও তার ব্যতিক্রম হলো না। আগামী বছরের নির্বাচনের আগে দেশটির গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সম্পূর্ণভাবে নাজেহাল করে দেওয়ার যে পাঁয়তারা নওয়াজের ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই শুরু হয়েছিল, তা একটি বিশেষ অন্তে পৌঁছারই ইঙ্গিত দিচ্ছে আদালতের এই রায়। ইতোমধ্যেই নওয়াজ শরিফ পদত্যাগ করেছেন এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা নির্বাচন করে তার ভাই শাহবাজ শরিফ বা অন্য কাউকে প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগ দেওয়া হবে, কিন্তু তাতে শেষ রক্ষা অর্থাৎ পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক-প্রক্রিয়া টিকবে কিনা, তা নিয়ে সর্বত্রই প্রশ্ন উঠেছে। কেন এই প্রশ্ন উঠেছে, তা একটু বিস্তারিত আলোচনার দাবি রাখে।
শুরুতেই বলে রাখা ভালো—নওয়াজ শরিফ ধোয়া তুলসি পাতাটি নন। ২০১৬ সালে প্রকাশিত পানামা পেপার্সে তার ও তার পরিবারের সদস্যদের নাম উঠে আসে; যাতে বলা হয়, বিদেশে তাদের বিপুল পরিমাণে অবৈধ অর্থ রয়েছে, যা কর ফাঁকি দিয়ে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি পাকিস্তানের মতো দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন রাষ্ট্রের জন্য খুব বড় কোনও বিষয় নয়। ধারণা করা যায় যে, পাকিস্তানের অদৃশ্য ও নির্বাচিত সরকারের চেয়েও ক্ষমতাধর সেনা বাহিনীর সঙ্গে নওয়াজ শরিফ যদি ‘ভাঁজ দিয়ে’ চলতেন, তাহলে এই অভিযোগ এতদিনে তামাদি হয়ে যেত। কিন্তু নওয়াজ শরিফকে এর আগেও বিপুল জনপ্রিয়তা নিয়ে নির্বাচিত হয়ে আসার পর আদালতের নির্দেশে ক্ষমতাচ্যুত করা হয় এবং সে সুযোগটি গ্রহণ করে পাকিস্তানের সেনা বাহিনী দেশটির ক্ষমতা দখল করে। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে পাকিস্তানের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর ক্ষেত্রেও। তাকেও আদালতের নির্দেশেই ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। এরও আগে বেনজির ভুট্টোর বাবা জুলফিকার আলি ভুট্টোকে সামরিক আদালতে বিচার করে প্রাণদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। পরে সেই বিচার নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিশনের রিপোর্ট থেকে জানা যায়, ভুট্টোর বিচার প্রক্রিয়া কোনোভাবেই আইনসঙ্গত ছিল না। কিন্তু তাতে কোনোই অসুবিধা হয়নি, পাকিস্তান রাষ্ট্রটি এসব অনাচার নিয়েই টিকে আছে।
উল্লিখিত অতীত অভিজ্ঞতার আলোকেই এখন এ প্রশ্ন জোরেশোরে উত্থাপিত হচ্ছে যে, নওয়াজকে তো সরানো হলো, এরপর তাহলে রাষ্ট্র ক্ষমতা কার হাতে যাচ্ছে? সরাসরি সেনা বাহিনী ক্ষমতা নেবে? নাকি সেনা বাহিনী শক্তিশালী ছায়া হয়ে একটি ‘কায়া সরকার’ পরিচালনা করবে? মজার ব্যাপার হলো, পাকিস্তানে নির্বাচিত সরকারের বাইরে তিনটি শক্তিশালী পক্ষ রয়েছে। এক. সেনা বাহিনী, দুই. বিচার বিভাগ ও তিন. পাকিস্তানের উগ্র ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো এবং শেষোক্ত দু’টি পক্ষই প্রথম পক্ষ অর্থাৎ সেনাবাহিনীর আজ্ঞাবহ দাসানুদাস। এবার যখন নওয়াজ শরিফের বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, সেখানে যে যৌথ ইনভেস্টিগেশন টিম গঠন করা হয়েছে সেখানে মূল নেতৃত্বে আসলে ছিলেন সেনা বাহিনীর শক্তিশালী গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। যারা নওয়াজের বিরুদ্ধে কেবল ব্যক্তিগত নয় প্রথাগত শত্রুতাও পোষণ করেন। এবারও যে রায়ে নওয়াজকে ক্ষমতাচ্যুত করা হলো, তাতে সরাসরি তাকে দুর্নীতিবাজ প্রমাণ করা সম্ভব হয়নি। বরং পারভেজ মোশাররফের সেনা শাসনকালে সংবিধানে যে পরিবর্তন আনা হয়েছিল, তাতে ৬২ ও ৬৩ ধারায় সরকার পরিচালনাকারীদের শরিয়াভিত্তিক ‘সাদিক’ (সৎ) ও ‘আমিন’ (পূর্ণাঙ্গ মুসলিম) থাকার নির্দেশনা সংযোজিত হয় এবং নওয়াজ শরিফের ক্ষেত্রে এই দু’টি শর্ত ভঙ্গের অভিযোগ এনেই তাকে প্রধানমন্ত্রী থাকার অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। আরও মজার ব্যাপার হলো, সংবিধানে যখন এই আইন সংযোজিত হয়, তখন সুপ্রিম কোর্ট থেকেই এর তীব্র সমালোচনা করা হয় একে ‘ভেগ’ বা মূল্যহীন বলে উল্লেখ করা হয়। অথচ এই আইনেই আবার দেশটির সর্বোচ্চ আদালত নওয়াজ শরিফকে সাজাও দিলেন, যা দেশটির বিচার বিভাগকে পুরোপুরি প্রশ্নবিদ্ধ করে তুললো বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। কারণ, নওয়াজের বিরুদ্ধে এই রায় যে সেনা বাহিনীর নির্দেশেই দেওয়া হয়েছে, সেটা এখন আর কোনও গোপন বিষয় নয়। পাকিস্তানের প্রতিটি সেনাশাসনই আদালত দ্বারা বৈধতা পেয়েছে এবং সেনা বাহিনী যখনই গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করতে চেয়েছে, তখনই তারা মূলত আদালতকেই ব্যবহার করেছে। এমনকি নওয়াজ শরিফকে যখন এর আগের বার ক্ষমতাচ্যুত করা হয়, তখনও তার পক্ষে আদালতের যে সব বিচারপতি দাঁড়িয়েছিলেন, তাদের প্রত্যেককে সেনা সরকার অবৈধভাবে আদালত থেকে সরিয়ে দিয়েছিল। নওয়াজ শরিফ ক্ষমতায় ফিরে সেই সব বিচারপতিকে আদালতে পুনঃনিয়োগ দিয়েছিলেন। এখন আবার তাদের দুর্দিন শুরু হলো বলে সংবাদ মাধ্যমগুলোর তথ্য থেকে জানা যায়।

প্রশ্ন হলো, এবার নওয়াজের বিরুদ্ধে সেনা বাহিনীর ক্ষিপ্ত হওয়ার মূল কারণটি আসলে কোথায়? এই প্রশ্নের সরাসরি কোনও উত্তর নেই। সবাই ধারণা থেকে এর ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। তবে একেবারে প্রাথমিক ধারণাটি হচ্ছে, পাকিস্তানের কোনও নির্বাচিত সরকারকেই দেশটির সেনাবাহিনী তার মেয়াদ পূরণ করতে দেবে না। তাই নির্বাচনের মাত্র একবছর বাকি থাকতেই বার বার সর্বোচ্চ জনপ্রিয়তা নিয়ে ক্ষমতায় আসা নওয়াজ শরিফকেও মেয়াদ পূরণ করতে দেওয়া হবে না। এটি একটি ব্যাখ্যা হতে পারে। কিন্তু দ্বিতীয় প্রধান ইস্যুটি আসলে উপমহাদেশের শান্তির জন্য অত্যন্ত জরুরি। একথা কারোরই অজানা নয় যে, পাকিস্তান ধর্মভিত্তিক সন্ত্রাসবাদের সূতিকাগার। দীর্ঘ সত্তর বছরের ইতিহাসে পাকিস্তান উপমহাদেশকে কেবল অশান্তই করেছে, কোনোভাবে এই দেশটির পক্ষ থেকে এই ভূখণ্ডে শান্তি প্রতিষ্ঠান কোনও উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। উপরন্তু দেশটির উগ্র ধর্মাশ্রয়ী রাজনৈতিক নেতারা দেশটির সেনা বাহিনীর সঙ্গে যোগসাজশে আফগান সীমান্তে অস্থিরতাসহ প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে স্থায়ী শত্রুতার জন্য সরাসরি দায়ী। এমনকি বাংলাদেশেও অগণতান্ত্রিক শক্তির পৃষ্ঠপোষকতায় পাকিস্তানি সেনা বাহিনী ও তাদের গোয়েন্দা সংস্থা বরাবরই অংশ নিয়ে থাকে। এমনকি এদেশের ধর্মভিত্তিক উগ্রবাদী শক্তিকে অস্ত্র ও অর্থ দিয়ে সহযোগিতারও অভিযোগ রয়েছে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। বাংলাদেশে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতাসীন হলেই এদেশের ভূখণ্ডকে ভারতবিরোধিতার স্বার্থে পাকিস্তানি সেনা গোয়েন্দাদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। একইসঙ্গে এদেশে তখন ধর্মাশ্রয়ী মৌলবাদী শক্তিটিও অস্ত্র, অর্থ ও ক্ষমতায় শক্তিশালী হয়ে ওঠে। কিন্তু নওয়াজ শরিফ ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে এমনকি এর আগেও পাকিস্তানে যখনই নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় এসেছে, তখনই উপমহাদেশ একটু হলেও শান্ত থাকে, ধর্মাশ্রয়ী উগ্রবাদের আওয়াজ একটু হলেও দমিত থাকতে দেখা যায়।

বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যেহেতু শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় সেহেতু এখানে পাকিস্তানি সেনাচক্রটি তাদের ক্ষমতা প্রদর্শনে ব্যর্থ হচ্ছে বার বার, সে কারণে শেখ হাসিনার সরকার তাদের টার্গেট হয়ে রয়েছে। পাকিস্তানের অভ্যন্তরে নওয়াজ শরিফ প্রাদেশিক সরকারগুলোকে একটু হলেও ক্ষমতাবান করে তাদের হাত দিয়ে দেশটির মৌলবাদী শক্তিকে দমন করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছিলেন। তিনি কতটা সফল হয়েছিলেন তা আসলে বলা মুশকিল কিন্তু বাহ্যত নওয়াজ-সরকার পাকিস্তানকে একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্রের তকমা থেকে মুক্ত করার চেষ্টা করছিল। চীনের সঙ্গে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হয়ে নওয়াজ সরকার পাকিস্তানের অর্থনীতিকেও সুদৃঢ় করায় প্রয়াসী ছিল। সর্বোপরি ভারতের সঙ্গে চির বৈরিতার অবস্থান থেকে সরে এসে দু’দেশের মধ্যেকার সম্পর্কোন্নয়নে নওয়াজ-সরকার একটু হলেও এগিয়েছিল। এসবের কোনও কিছুই পাকিস্তানের সেনা বাহিনীর কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল না। কারণ তাতে তাদের ক্ষমতাকে খর্ব করা ছাড়াও গণতান্ত্রিক সরকারকে জনগণের সামনে শক্তিশালী করে তোলার সম্ভাবনা তৈরি হয়। ফলে নওয়াজ-সরকারের সঙ্গে সেনা বাহিনীর দূরত্ব বাড়তে শুরু করেছিল একেবারে প্রথম থেকেই এবং এখন তো প্রমাণিত হলো, এই দূরত্বযুদ্ধে আসলে সেনা বাহিনীরই জয় হলো। যেমনটি হয়েছিল বেনজির ভুট্টোকেও আদালতের নির্দেশে ক্ষমতাচ্যুত করার মাধ্যমে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিপুল বিজয় নিয়ে নওয়াজ শরিফের ক্ষমতায় ফিরে আসার সম্ভাবনাকেও যে এই রায়ের মাধ্যমে শেষ করে দেওয়া হলো, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। এরপর পাকিস্তানের জন্য দু’টি সম্ভাবনাই খোলা রইলো, এক. সরাসরি সেনা শাসন অথবা দুই. সেনা-সমর্থিত রাজনৈতিক সরকার। যে জন্য সাবেক ক্রিকেটার ইমরান খান ও  আরও কয়েকটি ইসলামপন্থী দল তো শেরওয়ানি পরেই রয়েছে, ডাকলেই তারা পাকিস্তানের গভর্নর হাউসে চলে যাবেন শপথ পড়ার জন্য।

আগেই বলেছি যে, নওয়াজ শরিফ নির্দোষ নন। কিন্তু তাকে সরানোর প্রক্রিয়াটিও যে ভয়ঙ্করভাবে প্রশ্নবিদ্ধ, সেটাও চরম এক সত্য। কিন্তু নওয়াজকে সরানোর ফলে পাকিস্তানের মতো দেশের বিচার ব্যবস্থার প্রশংসায় বাংলাদেশের অনেক বোদ্ধাই মুখে ফেনা তুলে ফেলছেন। কে জানে, হয়তো এখানেও কেউ কেউ স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন কোনও অদল-বদলের! তাদের উদ্দেশ্যে একটি কথাই বলতে চাই, একটু ধীরে বন্ধু একটু ধীরে। সাদা চোখে যা সাদা দেখায় তা যে কাদায় চুবিয়ে আনা পাকিস্তান সেটি বার বার প্রমাণ করেছে। বাংলাদেশের ইতিহাস ৯০-এর পরে আসলে বদলে গেছে, এখন আর ক্ষমতালোভীদের পক্ষেও অঘটন ঘটিয়ে পার পাওয়ার সুযোগ আগের মতো নেই। পাকিস্তানকে উদাহরণ হিসেবে না টেনে সত্যিকার অর্থে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে যে সব দেশ শক্তিশালী করেছে তাদের দিকে বরং তাকাই আমরা। আদালতের পেছনে একে-৪৭ বা কালাশনিকভ নিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতাচ্যুত করা বিচার বিভাগকে শক্তিশালী করার উদাহরণ হতে পারে না, এটা বুঝলেই বাকিটুকু বুঝতে অসুবিধে হওয়ার কথা নয়। অপেক্ষা করুন, নওয়াজের বিদায় নতুন কোনও মোশাররফ বা জিয়াউল হককে ডেকে আনে কিনা, সে পর্যন্ত গ্যালারিতে দর্শক হিসেবে থেকেই দেখা যাক না হয়।

লেখক: সাংবাদিক কথাসাহিত্যিক

[email protected]

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
মানব ও সুপারি পাচারের অভিযোগে ভারতে শুল্ক কর্মকর্তা গ্রেফতার 
মানব ও সুপারি পাচারের অভিযোগে ভারতে শুল্ক কর্মকর্তা গ্রেফতার 
ভুয়া পরিচয়ে ভারতে বসবাস বাংলাদেশির, ৪ বছরের কারাদণ্ড
ভুয়া পরিচয়ে ভারতে বসবাস বাংলাদেশির, ৪ বছরের কারাদণ্ড
৫ কোটি টাকা নিয়ে ব্যবস্থাপক নিখোঁজ, পূবালী ব্যাংকের ৮ কর্মকর্তাকে বদলি
৫ কোটি টাকা নিয়ে ব্যবস্থাপক নিখোঁজ, পূবালী ব্যাংকের ৮ কর্মকর্তাকে বদলি
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ