X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

তবুও সু চি’র কাছে একটি প্রার্থনা!

রেজানুর রহমান
১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৫:৪২আপডেট : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৫:৪৮

রেজানুর রহমান আয়নায় নিজেকে বার বার দেখছি আর নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করছি– অং সান সু চি কে?
উত্তর– অং সান সু চি মিয়ানমারের শান্তিকামী মানুষের অবিসংবাদিত নেত্রী।
প্রশ্ন– তিনি কি শুধুই মিয়ানমারের শান্তিকামী মানুষের নেত্রী?
উত্তর– না। তিনি গোটা বিশ্বের শান্তিকামী মানুষের নেত্রী। শান্তিকামী মানুষের প্রেরণার উৎস। সেজন্য তাকে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।
এখন কি সু চিকে বিশ্বের শান্তিকামী মানুষের নেত্রী বলা যায়?
এবার উত্তর এলো না।

নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে। কারণ বিশ্বের শান্তিকামী মানুষের নেত্রী হিসেবে অং সান সু চিকে আমি দারুন পছন্দ করি। মিয়ানমারের সামরিক জান্তা যে সময় তার ওপর বার বার অন্যায় আচরণ করছিলো সে সময়গুলোতে তার একজন ভক্ত হিসেবে খুব কষ্ট পেতাম। কতবার যে সৃষ্টিকর্তার কাছে তার জন্য প্রার্থনা করেছি। যে দিন মিয়ানমার তার ওপর সামরিক জান্তার সকল অবরোধ, অন্যায় আচরণের সমাপ্তি ঘটলো, সু চি নিজের দেশে অবাধে কথা বলার স্বাধীনতা পেলেন, অবাধে রাজনীতি করার সুযোগ পেলেন, সেদিন ঢাকায় বসে বন্ধুদের মিষ্টি খাইয়েছিলাম। আহ! কী শান্তি! বলে বোঝানো যাবে না।

সেই অং সান সু চির ছবির দিকে তাকাতেও এখন ঘৃণা বোধ করি। আমার রুমের দেয়ালে সু চির একটি ছবি ছিল। গোপনে সেটি সরিয়ে ফেলেছি। তখন বেশ কষ্ট হচ্ছিলো। বার বার নিজেকে প্রশ্ন করছিলাম– সু চি কেন এতো বদলে গেলেন! মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি রাজনীতি করেন। অথচ তারই দেশে নির্বিচারে নিরীহ মানুষ খুন হচ্ছে, নিরীহ মানুষকে প্রকাশ্যে জবাই করে সেই দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে, নারীরা ধর্ষিত হচ্ছে, প্রাণ বাঁচাতে মানুষ ছুটে যাচ্ছে পাশের দেশে। কী নির্দয়, নিষ্ঠুর আচরণ করা হচ্ছে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের সঙ্গে। অথচ সু চি নিশ্চুপ। এক সময় যে সামরিক জান্তা তাকে প্রায় অবরুদ্ধ করে রেখেছিল তাদেরই সঙ্গে সুর মিলিয়ে বিশ্ব মিডিয়ায় সু চি বলছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যা প্রকাশ করা হচ্ছে তা বাস্তব চিত্র নয়। তাহলে বাস্তব চিত্রটা কী? আরাকান রাজ্য থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ প্রাণভয়ে পায়ে হেঁটে, নদী সাঁতরে পাশের দেশ বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিচ্ছে কেন? সুখে থাকলে মানুষ কি এভাবে নিজের দেশ থেকে পালায়? বাংলাদেশের প্রচার মাধ্যমসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রচার মাধ্যমে আরাকান রাজ্য থেকে অসহায় রোহিঙ্গাদের পাশের দেশ বাংলাদেশে ছুটে আসার দৃশ্য দেখানো হচ্ছে প্রতিদিন। অশীতিপর বৃদ্ধ অথবা বৃদ্ধাকে ঘাড়ে উঠিয়ে নিয়ে নদী সাঁতরে আসছে অনেকে। সন্তান সম্ভাবা নারীর অসহায় মুখের দিকে তাকানো যায় না। আর কোমলমতি শিশুদের ভীতসন্ত্রস্ত চেহারা দেখে বুক ফেটে কান্না আসে। এরা সু চির দেশে অসহায় মানুষ প্রাণ বাঁচানোর জন্য ছুটে এসেছে বাংলাদেশে। অথচ শান্তিকামী মানুষের প্রিয় নেত্রী সু চি নির্বিকার। তিনি কোনও কথা বলছেন না। বরং তিনি বিরক্ত!

বাংলাদেশের একটি টিভি চ্যানেলের খবরে দেখলাম বার্মার গুচিদং এলাকা থেকে কেটানা ১৫ দিন পায়ে হেঁটে, নদী সাঁতরে বাংলাদেশে এসে ঢুকেছে একটি অসহায় রোহিঙ্গা পরিবার। তাদেরই একজন সদস্য কাঁদতে কাঁদতে পরিস্থিতির করুণ বর্ণনা দিচ্ছিলো এভাবে– হঠাৎই তাদের গ্রামের প্রায় ৪শ ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হলো। সঙ্গে সঙ্গে শুরু হলো রোহিঙ্গা নিধন পর্ব। গুলি করে, জবাই করে রোহিঙ্গাদেরকে হত্যা করতে শুরু করলো সেখানকার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পরিবারটির কয়েকজন সদস্য জীবন বাঁচাতে পারেনি। তাদের জবাই করা দেহ কাটা মুরগির মতো ছটফট করছিলো। তাদেরকে সেভাবে রেখেই প্রাণ বাঁচাতে দৌড় দিয়েছে পরিবারের অন্য সদস্যরা। পথে দেখেছে অসংখ্য কাটা লাশ, গুলিবিদ্ধ মৃত দেহ। বীভৎস, নিষ্ঠুর বর্ণনা দিচ্ছিলো তরুণ সদস্যটি। পাশে দাঁড়িয়েছিল আরেকজন রোহিঙ্গা তরুণ। সে বললো, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের কোনও স্বাধীনতা নাই। ২০১৬ সালের অক্টোবর মাস থেকে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর আবারও নির্যাতন শুরু হয়। আকাশে হেলিকপ্টার উড়িয়ে মাঝে মাঝেই রোহিঙ্গাদের গ্রামের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হতো। রোহিঙ্গাদের অবাধ যাতায়াতের কোনও সুযোগ ছিল না। মূলত তারা ছিল অবরুদ্ধ।

পাশে দাঁড়ানো আরেক তরুণ ক্ষোভের সাথে বললো, আসল কথা, আরার মুসলমান... তাদের কাছে মুসলমান কোনও মানুষ না। তাদের সঙ্গে সহমর্মিতা প্রকাশ করে টেলিভিশনের রিপোর্টার প্রশ্ন ছুঁড়লেন– বাংলাদেশ তো একটি ছোট্ট দেশ। আপনাদের এতো মানুষকে বাংলাদেশ জায়গা দেবে কিভাবে? উত্তরে একজন রোহিঙ্গা তরুণ বললো, আরা ইতা বুঝি। প্রাণ বাঁচানোর লাই আসছি। আরা আরার দ্যাশ বার্মায় ফিরৎ যাইতে চাই...।

প্রচার মাধ্যমে দেখলাম মিয়ানমার নেত্রী অং সান সু চি ১৯ সেপ্টেম্বর মিয়ানমার পরিস্থিতির ওপর ভাষণ দেবেন। অপেক্ষায় আছি তিনি কী বলেন তা দেখার জন্য। শোনার জন্য। তবে প্রত্যাশাতো করতেই পারি তিনি মিয়ানমার নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের পক্ষে কথা বলবেন। ধরা যাক রোহিঙ্গারা মুসলমান। কিন্তু মুসলমানরা তো মানুষ নাকি? কাজেই সু চি মানষের পক্ষেই কথা বলবেন এটাই বিনীত প্রার্থনা।

লেখক: নাট্যকার, সাংবাদিক, কথাসাহিত্যিক

 

এসএএস

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস আর নেই
জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস আর নেই
পথের পাশের বাহারি শরবতে স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটা?
পথের পাশের বাহারি শরবতে স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটা?
মন্ত্রণালয়ে সভা করে ধানের দাম নির্ধারণ করা হবে: কৃষিমন্ত্রী
মন্ত্রণালয়ে সভা করে ধানের দাম নির্ধারণ করা হবে: কৃষিমন্ত্রী
জোভানের নতজানু বার্তা: আমার ওপর কষ্ট রাখবেন না
জোভানের নতজানু বার্তা: আমার ওপর কষ্ট রাখবেন না
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ