X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

‘একুশ কেবল একটি তারিখ নয়’

মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১২:০২আপডেট : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১২:১৫

মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান একুশ কেবল একটি তারিখ নয়
একুশ শুনলে ভেঙে যায় যত ভয়
একুশ শুনলে ছাব্বিশ শুনি- শুনি বুক ভরে বাংলাদেশের জয়।।
একুশ, একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের রাষ্ট্রভাষা দিবস থেকে আজ বিশ্ব মাতৃভাষা দিবস। ১৯৫২ সালের এই ভাষা বিজয়ের সংগ্রাম কিন্তু ১৯৫২ সালে নয়,শুরু হয়েছিলো ১৯৪৮ থেকে। এবং ১৯৪৮ এ-ই তা চূড়ান্ত রূপ পেতে পারতো। কিন্তু তা হয়নি এ দেশেরই প্রধান রাজনীতিবিদদের কারণে। বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে পাওয়া ছিল ওই রাজনীতিকদের কাছে দ্বিতীয় বিবেচ্য বিষয়। তাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল ভাষা আন্দোলনকে জিইয়ে রেখে নির্বাচনে জয়লাভ। তাদের অনীহার কারণে ১৯৪৮-এর আন্দোলন ব্যর্থ হয়ে যায়। ব্যর্থ বায়ান্নতেও হতো যদি সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা পরিষদের সিদ্ধান্ত অমান্য করে,বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ১৪৪ ধারা ভঙ্গের সিদ্ধান্ত না নিতো। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ,ভাষা-মতিনের মতো কিছু ছাত্রনেতার নেতৃত্বে গাজীউল হকের সভাপতিত্বে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল বের করার সিদ্ধান্ত নিয়ে সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করে। মিছিল বের হয়- গুলি চলে- ছাত্রসহ সাধারণ মানুষের রক্ত ঝরে– শহীদ হন পাঁচজন। রাজনীতিকবৃন্দ তখনও এর বিপক্ষে ছিলেন এবং ২২শে ফেব্রুয়ারি গায়েবানা জানাজায় অংশ নিতে অস্বীকার করেন। তারা ছাত্রদের কর্মসূচিকে হঠকারী বলে আখ্যায়িত করেন। কিন্তু সর্বস্তরের জনগণ,যে যার কাজ ফেলে, অফিস ফেলে,ছুটে আসেন ছাত্রদের সমর্থনে। গায়েবানা জানাজা হয়, জানাজা শেষে মিছিল বের হয়। আবারও গুলি চলে, আবারও মৃত্যু হানা দেয়, কিন্তু জেগে ওঠে সারা পূর্ববাংলা। জেলায় জেলায়, থানায় থানায় মিছিল মিটিং চলতে থাকে। এই গণজাগরণ দেখে, তরুণদের কাছে নেতৃত্ব হারাবার ভয়ে, রাজনীতিকবৃন্দও সমর্থন জানিয়ে এগিয়ে আসেন।

ভাষা আন্দোলনের শুরু থেকে সফল সমাপ্তি পর্যন্ত ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ বহু গ্রন্থে সন্নিবেশিত আছে বলেই আমি সংক্ষিপ্ত একটা রেখাচিত্র দিলাম মাত্র। একুশ যখন বিশ্ব মাতৃভাষা দিবস, তখন আমরা আমাদের মাতৃভাষাকে জীবনের কোন কোন ক্ষেত্রে কতটা গুরুত্বের সঙ্গে ব্যবহার করছি, সেদিকে একটু দৃষ্টি দেওয়া যেতে পারে। একসময় পশ্চিমবঙ্গ থেকে কেউ এখানে এলে, রাস্তায় রাস্তায় সমস্ত দোকানের নামফলক বাংলায় দেখে অবাক হয়ে যেতো। এবং তারা সে বিস্ময় প্রকাশেও কুণ্ঠিত হতো না। আমরা জানতাম, এটা সাধারণ মানুষের ভালোবাসার উদ্যমের ফল। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও, বাংলা প্রচলনে সরকারি অফিস আদালতসমূহকেও তেমন উদ্যোগী হতে দেখিনি। কি জানি, কর্তাব্যক্তিদের ওই আচরণের প্রভাব লেগেই কিনা, ক্রমে ক্রমে দোকানে দোকানেও বাংলার বদলে ইংরেজি প্রবেশ করতে থাকে। এখন ঢাকার রাস্তার পাশের দোকানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামফলকে বাংলা অবলুপ্ত হতে চলেছে। কেন এমন হলো? এই ‘কেন’র উত্তর পেতে হলে আমাদের প্রশাসনের দিকেই অঙ্গুলি নির্দেশ করতে হবে। কারণ, প্রশাসনের মানুষেরা তো অফিসকক্ষেই আবদ্ধ থাকেন না যে যা ঘটে চলেছে, তা তাদের অগোচরেই হচ্ছে বলে দাবি করা যাবে। অন্তত অফিসে যাওয়া-আসার সময়ে তারা তো রাস্তা দিয়েই চলাচল করেন। অতএব, দায় এড়ানোর কোনও উপায় নেই।

সান্ত্বনার বিষয় হলো, সম্প্রতি সরকারি মহল থেকে এ ব্যাপারে নির্দেশ জারি করা হয়েছে, সমস্ত নামফলক অবশ্যই বাংলায় লিখতে হবে। তবে কেবলমাত্র বাংলায় লিখলে বিদেশিদের জন্যে তা অসুবিধার কারণ হতেও পারে। বাংলাদেশ তো বিদেশিমুক্ত কোনও দেশ নয়। নানা উপলক্ষে বিদেশিরা এদেশে আসা-যাওয়া করেন, বসবাসও করেন অনেকেই। অনেক বিদেশি এখানে কর্মরত আছেন। তাদের সুবিধার জন্যে বাংলার পাশাপাশি ইংরেজিতেও লেখা থাকতে পারে। বিশেষ করে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যেসব প্রতিষ্ঠানের লেনদেন আছে, তাদের ক্ষেত্রে এই সুবিধা দেওয়া অত্যাবশ্যক।

‘চেতনা’ শব্দটি অতিব্যবহারে নিজেই অচেতন হয়ে পড়েছে। তাই একুশের চেতনা,মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ইত্যাদি শব্দ খুব সচেতনভাবে যথোপযুক্ত স্থানে ব্যবহার করতে হবে। চেতনা তাহলেই জাগরিত হবে এবং থাকবে। সচেতন থাকলে, অফিস আদালতেও বাংলার প্রচলন করাটা অসম্ভব কিছু হবে না।

লেখক: কবি ও কলামিস্ট

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ভিসা-পাসপোর্ট হারিয়ে প্রবাসী অজ্ঞান, ৯৯৯-এ কলে উদ্ধার
ভিসা-পাসপোর্ট হারিয়ে প্রবাসী অজ্ঞান, ৯৯৯-এ কলে উদ্ধার
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
উত্তর কোরিয়া সফর করলেন রুশ গোয়েন্দা প্রধান
উত্তর কোরিয়া সফর করলেন রুশ গোয়েন্দা প্রধান
ঈদে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে চলবে ১৫ ফেরি, ২০ লঞ্চ
ঈদে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে চলবে ১৫ ফেরি, ২০ লঞ্চ
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ