X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

যে যুদ্ধে কেউ জেতে না

রুশাদ ফরিদী
০৮ জুন ২০১৮, ১৪:৩১আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৬:৫৮

রুশাদ ফরিদী সেসার গাভিরিয়া যখন মাদক সমস্যা নিয়ে কথা বলেন তখন সেটা একটু মনোযোগ দিয়ে না শুনে উপায় নেই। ভদ্রলোক মাদকের স্বর্গরাজ্য বলে খ্যাত কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট ছিলেন ১৯৯০ থেকে ১৯৯৪ পর্যন্ত। পাবলো এসকোবারের নাম ড্রাগলর্ডদের ইতিহাসে কিংবদন্তি হিসেবে রয়েছে। সেই এসকোবারের  যখন ১৯৯৩ সালে ধরা পড়লো সেটা হয়ে উঠলো স্টোরি অব দ্য সেঞ্চুরি। এই কাহিনি নিয়ে বহু প্রামাণ্যচিত্র, সিনেমা আছে। এসকোবারের ঘটনা কিন্তু এই গাভিরিয়ার আমলেই। ১৯৯৪ সালে প্রেসিডেন্ট পদ ছাড়ার পর থেকে আরও দশ বছর ছিলেন অর্গানাইজেশন অব আমেরিকান স্টেটস-এর সেক্রেটারি জেনারেল। এছাড়াও বর্তমানে তিনি গ্লোবাল কমিশন অন ড্রাগ পলিসি নামক প্রতিষ্ঠানের একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে কাজ করছেন।

গাভিরিয়া নিউ ইয়র্ক টাইমসে একটি কলাম লিখেন ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে। সেখানে অত্যন্ত খোলামেলাভাবে নিজের সরকার দায়িত্বে থাকার সময় ড্রাগের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যে ভুলগুলো হয়েছিলো সেগুলো স্বীকার করে নিয়েছিলেন। কিন্তু তার লেখার মূল উদ্দেশ্য ছিল না খোলামেলা আত্মস্বীকারোক্তি। তার মূল লক্ষ্য ছিল রডরিগো দুতার্তে।

ফিলিপাইনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট রডরিগো দুতার্তে ক্ষমতায় আসেন ২০১৬ সালের ২ জুন। ক্ষমতায় আসার সঙ্গে সঙ্গে তিনি মাদক সমস্যার বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করে বসলেন। তিনি মাদক ব্যবহারকারী, সরবরাহকারী নির্বিশেষে সবাইকে নির্বিচারে খতম করার মিশনে নামলেন।

সরকারি হিসাবেই এ পর্যন্ত প্রায় চার হাজারের মতো মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সরকারি হিসাবের এই সংখ্যাটির ওপর বিশ্বাস স্থাপন করে এরকম মানুষ তো দূরের কথা, কোনও কাকপক্ষীও খুঁজে পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ। যেটি বিশ্বাসযোগ্য সেটি হলো বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার রিপোর্ট এবং সেগুলো বলছে এই সংখ্যা পনেরো থেকে বিশ হাজারের কম হবে না।

আর এই মৃত্যুগুলোর বেশিরভাগ স্রেফ নির্বিচারে হত্যা। বেশিরভাগই ঘটিয়েছে পুলিশ অথবা পুলিশের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সহায়তায় কিছু নিজ হাতে আইন তুলে নেওয়া পেটোয়া বাহিনী।

সেসার গাভিরিয়া তাঁর নিউ ইয়র্ক টাইমসের এই আর্টিকেলে সরাসরি বলেছেন যে ১৯৯০ সালে তিনি যেই ভুল করেছিলেন দুতার্তে আজ সেই একই ভুল করে চলেছে।

ভুলটা কী ছিল?

গাভিরিয়ার  মতে,  মাদক একটা জাতীয় সমস্যা এতে কোনও সন্দেহ নেই, কিন্তু শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে এই যুদ্ধ জেতা যাবে না। আরও বেশি সৈন্য, আরো বেশি পুলিশ ইত্যাদি দিয়ে শুধু অর্থের অপচয় ঘটবে তাই না, মূল সমস্যা আরও প্রকট আকার ধারণ করে। তিনি বলছেন, আমরা সেই সময়ে আমাদের যা কিছু আছে সব নিয়ে এই মাদক সমস্যার বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম।  সামনেই মাদক ব্যবহারকারী কিংবা সরবরাহকারী যাকেই পাচ্ছিলাম তাঁকে ধরে জেলে পুরে দেওয়া হচ্ছিল।

এর ফলে যেটা হয়েছিল সেটা হলো যে আমরা শুধু মাদক সরবরাহ কমাতে ব্যর্থ হলাম তাই না, আমাদের প্রতিবেশী দেশেও এই সমস্যা তখন ছড়িয়ে গেল। কলম্বিয়ার দুর্ধর্ষরা পালিয়ে গেলো আশপাশের দেশগুলোতে এবং সেখান থেকে মাদক ব্যবসা আগের মতোই চলতে থাকলো।

মাঝখান থেকে যেটা হলো, মাদকের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধে অপরাধী নিরপরাধী মিলে হাজার হাজার মানুষকে মেরে ফেলা হলো। অনেক দেশদরদী রাজনীতিবিদ, সাহসী বিচারক, সাংবাদিক, পুলিশ অফিসার ড্রাগ মাফিয়াদের হাতে মারা পড়লো। একই সময়ে মাদকের বিশাল অর্থ দিয়ে সরকার পরিচালনার বিভিন্ন অঙ্গকে কিনে ফেলার চেষ্টা করা হলো বিভিন্ন সময়ে। ফলে দুর্নীতি কলম্বিয়ার রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়তে লাগলো।

মাদকের বিরুদ্ধে এই বিশাল কর্মযজ্ঞে কলাম্বিয়ার জন্য ছিল পশ্চিমা শক্তির প্রত্যক্ষ সহযোগিতা আর আমেরিকার সরাসরি অর্থায়ন। 'প্ল্যান কলাম্বিয়া'র অধীনে গত পনেরো বছরে দশ বিলিয়ন ডলার আমেরিকা একাই কলম্বিয়ার এই মাদক যুদ্ধে ঢেলেছে। কারণ, আমেরিকার মাদকের বাজারের এক বিশাল অংশ এখনও জোগান দিয়ে যাচ্ছে কলম্বিয়া।

কিন্তু এতো লাফালাফি এতো ঝাঁপাঝাপি করে কলম্বিয়াতে মাদকের বিস্তার কোনোভাবেই কমানো যায়নি। কোকেইন, হেরোইন ইত্যাদি ড্রাগ বোগোটা, নিউ ইয়র্ক আর ম্যানিলাতে দশ বছর আগেও  যেরকম ছিল এখনও সেরকমই সহজলভ্য আছে।

গাভিরিয়ার মতে, মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ আসলে নিজের দেশের মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। এই যুদ্ধে কেউ জেতে না। গত চল্লিশ বছরে কলম্বিয়া অনেক চেষ্টা করেছে জিততে। পারেনি।

গাভিরিয়ার গ্লোবাল কমিশন অন ড্রাগ পলিসি যেটা বলছে সেটা হলো বড় বড় জেলখানা, মিলিটারি হার্ডোয়ার, নিপীড়নমূলক নির্যাতন আসলে মাদক সমস্যার সমাধান নয়। প্রকৃত সমস্যার সমাধান আসবে গণস্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন, সুশাসন।

মাদক ব্যবহারকারীকে অপরাধী বানিয়ে দিলে তার পুনর্বাসনের ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যায়। ছোটখাটো মাদক সরবরাহকারীকে বিশাল শাস্তি দিলে তারা একসময় বিশাল অপরাধীতে পরিণত হয়। আর রুই কাতলাকে ধরলে আরেক রুই কাতলা এসে দখল করে জায়গা। মূল সমস্যা হলো মাদক ব্যবসা হচ্ছে একটা প্রচণ্ডরকম লাভবান ব্যবসা। যতই মেরে কেটে সাফ করা হোক, এই ব্যবসার আকর্ষণ কিছুতেই কমবে না। কেউ কেউ না শূন্যস্থান দখল করে নেবেই।

শুধু তাই না, মাদকবিরোধী আন্দোলন যত তীব্র হয়, মাদকের সরবরাহ তত কমে, লাভের অংক তত ধাঁ-ধাঁ করে বাড়ে। কোকেইনের স্বর্গরাজ্য কলম্বিয়া যুগের পর যুগ বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করে, বিচারের আওতায় এনে কিংবা বিচারবহির্ভূতভাবে হাজার হাজার মানুষ মেরে এই সমস্যার তেমন কোনও সমাধান করতে পারে নাই। সম্প্রতি ফিলিপাইনের ট্রাম্প দুতার্তে ২০১৬ সালে এসে মাদক ব্যবসার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। এ পর্যন্ত ২০ হাজার লোক দুতার্তের সরকার খতম করছে একদম বিনা বিচারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এতে কোনও লাভ হবে না।

তাদের মতে, মাদক সমস্যাকে একটা ক্রিমিনাল অফেন্স হিসেবে না নিয়ে সামাজিক সমস্যা হিসেবে দেখতে হবে। সহমর্মিতা, মানবাধিকার রক্ষা এসব বিবেচনা করে এই জটিল সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে। এই ব্যবসায় যে বিশাল লাভ, সেই লাভের উৎসমূলে আঘাত করতে হবে। লাভের টাকা বেশিরভাগ পাচার হয়। সরকারের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অসৎ মানুষজনকে কিনতে ব্যয় হয় এসব অর্থ। এই অর্থ পাচার, এই দুর্নীতি এসব ঠেকাতে হবে।

গাভিরিয়া বলছেন, ফিলিপিনো সরকারের অবশ্যই দায়িত্ব আছে তার দেশের লোকজনের ড্রাগের করাল থাবা থেকে রক্ষা করার। সুসংগঠিত মাফিয়া টাইপ গ্রুপগুলোর ভয়ঙ্কর ক্ষতিকর দিক থামানো। কিন্তু  বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা একেবারেই এটার সমাধান না। এর ফলে অনেক ব্যক্তিগত হিসাব নিকাশ মেটানোর সুযোগ তৈরি হয়। পুলিশ টাকার বিনিময়ে মানুষকে ধরে ধরে অত্যাচার করে, বেশিরভাগ সময়ই স্রেফ মেরে ফেলে।

তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো যে সত্যিকারের মাদক ব্যবসায়ী বা মাদক ব্যবহারকারী, যারা কোনও ভায়োলেন্স করছে না, তাদের সবাইকে ধরে আগাপাশতলা জেলে পুরে কিংবা নির্মমভাবে বিনা বিচারে হত্যা করে কখনও কোনও দেশে মাদকের অপব্যবহার থামানো যায়নি। গাভিরিয়া দুতার্তেকে বলছেন, এটা মেনে নিন যে আপনি যতই ফিলিপাইনের মানুষজনকে মেরে কুটে সাফ করে দিন না কেন, মাদকের সমস্যা আপনার দেশ থেকে যাবে না। থাকবেই। তাছাড়া নিয়মিত মাদক সেবনকারী সেখানে খুব বেশি নেই। কিন্তু আপনি যেই মুহূর্তে মাদক সেবনকারী এবং ছোটখাটো ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করছেন তখন আসলে তাঁরা চিকিৎসা বা সুপথে আসার সুযোগ হারাচ্ছে। তখন তারা আরও বেশি করে মাদকের অন্ধকার পথের দিকে ছুটে যায়।

মাদক নিয়ে যত গবেষণা হয়েছে, সবকিছুতেই বলা হয়েছে মাদক ব্যবহারকারীদের অপরাধী বানালে সেটা এ পর্যন্ত কখনই কাজে দেয়নি, আর কখনও দিবেও না।

কিন্তু যেটা হয় অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান সবসময়ই বেশ জনপ্রিয়। তাই প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় সেসার গাভিরিয়াও ভেবেছিলেন যে এটা তার জন্য বেশ জনপ্রিয় একটা কিছু হতে যাচ্ছে।  দুতার্তের ফিলিপিন্সেও যখন এটা শুরু হয়েছিল, এটা বেশ জনপ্রিয়ই হয়েছিল। কিন্তু জনপ্রিয় সব কাজ যেমন ভালো ফল আনে না, তেমন মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বেশ গ্রহণযোগ্যতা পেলেও ফলাফল হয় বিপর্যয় ডেকে আনার মতো।

গাভিরিয়ার মূল্যবান উপদেশ দুতার্তে শোনেননি। এর ফল পেতেও বেশি দিন দেরী হয়নি। ২০১৭ সালে এক দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিককে ফিলিপিনো পুলিশ ধরে নিয়ে বিশাল অংকের মুক্তিপণ দাবি করে। কিছু টাকা আদায় করে তাকে মেরে ফেলা হয়। এই নিয়ে বিশাল কেলেঙ্কারি। ফিলিপাইনের পুলিশ চিফের পদত্যাগ করার অবস্থা। দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে হাতে-পায়ে ধরে মাফ চেয়ে তবে রক্ষা।

এখন ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট দুতার্তের ফিলিপাইনের এই চলমান হত্যাযজ্ঞের ব্যাপারে তদন্ত করবে বলে শোনা যাচ্ছে। দুতার্তের প্রতিক্রিয়া? স্বভাবসুলভভাবে ঘোষণা দিলেন যে ফিলিপিন্স রোম স্ট্যাটিউট যার ওপর ভিত্তি করে এই কোর্ট প্রতিষ্ঠিত সেখান থেকে বের হয়ে যাবে।

অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান সবসময়েই রাজনৈতিক দিক থেকে জনপ্রিয়তা এনে দেয়। তাই বাংলাদেশেও মাদকের বিরুদ্ধে অভিযানের জনসমর্থন যথেষ্টই আছে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডগুলোর মতো চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনে জনমনে এর জনপ্রিয়তা কমাতে পারেনি। শুধুমাত্র যখন একজন নিরীহ কমিশনারের হত্যার অডিও ফাঁস হলো তখন জনমনে দোলা লাগলো।

কিন্তু আওয়ামী লীগের এই অভিযানে কাজের কাজ কিছু কি হবে? এই অভিযান ভিশন ২০২১ বা  ২০৪২-এ অন্তর্ভুক্ত করে বছরের পর বছর পর্যন্ত চালালেও কিছু হবে না। কলম্বিয়াসহ অন্যান্য দেশের মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধের শিক্ষা আমাদের এটাই বলে।

গাভিরিয়া দুতার্তেকে এক বছর আগে মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে সাবধান করেছিলেন। দুতার্তে তাতে কর্ণপাত করেননি। এর ফলে হাজার হাজার মানুষ নির্মম পৈশাচিক মৃত্যুর শিকার হয়েছিল। এখনও হয়েছিল। মাদকের মূল সমস্যা কোনোভাবেই তাতে মিটে যায়নি।  ২০১৮ সালে এসে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কি শুনবেন? নাকি বাংলাদেশেও একই ভয়াবহতার পুনারাবৃত্তি আমরা দেখতে থাকবো মাসের পর মাস?

দুষ্টলোকেরা অবশ্য বলছে- 'এত বছর ধরে পেলে পুষে মাদক সমস্যাকে ভয়াবহ অবস্থায় এনে নির্বাচনের বছরে 'সস্তা জনপ্রিয়তা' পাওয়ার নেশায় সরকার এই পন্থা বেছে নিয়েছে'। সেটা সত্যি কিনা জানি না। কিন্তু জানি এর মূল্য আমাদের সবাইকে দিতে হবে অত্যন্ত উঁচু দরে।

লেখক: শিক্ষক, অর্থনীতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

/এমওএফ/আপ-এফএস/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
বাসের পেছনের অংশ খোয়া যাচ্ছে কেন?
বাসের পেছনের অংশ খোয়া যাচ্ছে কেন?
বিরল সূর্যগ্রহণ দেখতে নায়াগ্রা জলপ্রপাতে জড়ো হবেন ১০ লাখ দর্শনার্থী
বিরল সূর্যগ্রহণ দেখতে নায়াগ্রা জলপ্রপাতে জড়ো হবেন ১০ লাখ দর্শনার্থী
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ