X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

লাভ লোকসানের রাজনীতি মিথ্যা

তুষার আবদুল্লাহ
২০ আগস্ট ২০১৮, ১৬:১৫আপডেট : ২০ আগস্ট ২০১৮, ১৬:২৩

তুষার আবদুল্লাহ মাস দুয়েকের মধ্যে বাস-ট্রেন-লঞ্চ এবং গাড়িতে উত্তর-দক্ষিণ এবং পূর্বে একাধিকবার দৌড়াতে হয়েছে। যাত্রাপথে বিমূর্ত প্রকৃতি ও মানুষ দেখাতে স্থির থাকতে পারি না। মৌনতা স্বভাবের সঙ্গে যায় না। কথা বলতেই হবে। যেতেই হবে মানুষের কাছে। পাশে বসে থেকে এক কাপ চা কিংবা লটকন সাবাড় করে উঠে চলে আসা আমার কাজ নয়। প্রথম কিছুক্ষণ হয়তো তাদের অবয়বের ভূগোল বুঝে ওঠার চেষ্টা করি। শুনতে চাই তাদের কথোপকথন কোন ভুবনে আছে। তারপর ধীরে ধীরে কথায় কথায় তাদের ঘনিষ্ঠ হতে থাকি। চলন্ত অবস্থাতেও হঠাৎ নেমে পড়ি কোনও মুখচিত্র দেখে। মনে হয় সেই মুখটিতে শব্দের সমুদ্র আছে। নতুন ভাবনার দিগন্ত ছোঁয়া যাবে। ভুল পাঠ হয় কখনও কখনও, সেটাও ঠিক। 
আমার জানতে চাওয়ার প্রথম এলাকা এই গণমানুষদের সঙ্গে গণমাধ্যমের সম্পর্কটা কেমন আছে, তারা কতটা ভরসা রাখতে পারছে গণমাধ্যমে? তাদের চাহিদার কতটা জোগান দিতে পারছে গণমাধ্যম। প্রশ্ন এবং উত্তর ঘুরেফিরে টেলিভিশনে এসে ঠেকে। আমি নিজে টেলিভিশনের কর্মী বলেই যে আলোচনা এই মাইলফলকে পৌঁছে তা নয়। লোকে এখন পত্রিকা পড়ে কম। আগে যেমন তীর্থের কাকের মতো গ্রামগঞ্জের মানুষ বাসি পত্রিকার জন্যও বসে থাকতো, তা এখন হয় না। পত্রিকা থেকে চোখ সরে যাচ্ছে। যাদের কাছে ইন্টারনেট সুলভ হয়েছে, তারা অনলাইন পত্রিকা দেখে নিচ্ছে। চোখ সরেছে টেলিভিশন থেকেও। টেলিভিশন দেখি না, দেখা হয় না, এই কথা এখন বেশ জোরেশোরেই উচ্চারিত হয়। কোনও কোনও গ্রাম এলাকায় টেলিভিশন দেখা নিষিদ্ধই বলা যায়। অন্যত্র ব্যস্ততা বেড়েছে বলে নিয়ম করে টিভি সেটের সামনে বসা হয় না। উভয়েই ইউটিউবের ওপর নির্ভরশীল। প্রয়োজনের খবরা-খবর ও বিনোদন ইউটিউবে দেখে নেয়। রাখাল বালক, নৌকার মাঝি, ইটভাটার শ্রমিককে দেখেছি ২০ টাকা থেকে ৫০ টাকা খরচ করে নাটক, মিউজিক ভিডিও নিয়ে নিচ্ছে মোবাইলে।

জানতে চাওয়া হয় কেন পত্রিকা পড়েন না, টেলিভিশন দেখেন না? উত্তর আসে-আমরা রাজনীতি করি না ভাই। খামোখা খবর পইড়া দেইখা কি লাভ? রাজনীতি পছন্দ করেন না? উত্তর আসে- রাজনীতিতে অনেক ঝামেলা। জানতে চাই- গ্রামে গঞ্জে শহরে মানুষজনরে তো দেখি রাজনীতি করছে, আপনি করেন না কেন? উত্তর আসে- ওরাও রাজনীতি করে না। অবাক হয়ে বলি-ওদের তো স্লোগান দিতে দেখি। উত্তর পাই-রাজনীতি করে না, স্বার্থনীতি করে। সম্পূরক প্রশ্ন-স্বার্থনীতি কি? এবার একটু বিস্তারিত উত্তর- গ্রামে যদি নিজের ভিটা, ব্যবসা রক্ষা করতে চান তাহলে আপনাকে রাজনীতির খাতায় নাম লেখাতে হইবোই। এই রাজনীতি হইলো সরকারি রাজনীতি। যখন যে দল সরকারে যাইবো, তখন ওই দলে নাম লিখলেই ব্যবসা, ভিটা-জমি নিরাপদ। এমন যে রাজনীতি ওই রাজনীতি কইরা কি লাভ? তারচেয়ে রাজনীতি থিকা দূরে থাকা ভালো।

শ্রেণিকক্ষের পাশে বইমেলা, সিনেমা উৎসবের আয়োজন করতে গিয়ে আড্ডা হয় অনেক তরুণ-তরুণীর সঙ্গে। তাদের কাছে জানতে চাই রাজনৈতিক মতাদর্শ কি। বাংলাদেশকে ঘিরে তাদের রাজনৈতিক দর্শন কি? এই যে সংগঠন গড়ে তোলা, সেখানে রাজনৈতিক কোন দর্শন দ্বারা প্রণোদিত হয়েছে তারা। এর জবাব বেশ সোজাসাপ্টা- সংগঠনের মধ্যে রাজনীতি প্রবেশ করাতে চাই না। যতটা সম্ভব রাজনীতি থেকে দূরে রাখা হবে রাজনীতিকে। কারণ, রাজনীতি ঢুকলেই বিভক্তি। ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি। দলীয়করণের ভয়। তাই তারা সময় কাটাতে, নিজেদের মনের আনন্দে সাংগঠনিক কাজ করে যাচ্ছেন। এ ধরনের কোনও কোনও উদ্যোগে আর্থিক সমৃদ্ধিও আছে। রাজনীতি নিয়ে ভাবলে সেই সমৃদ্ধিও হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে।

এই যে রাজনীতি নিয়ে বিমুখতা তার জন্য গণমানুষ দায়ী নয় মোটেও। রাজনৈতিক দলগুলো যখন থেকে আদর্শ বিসর্জন দিয়ে বা আদর্শ থেকে সরে গিয়ে কেবল ক্ষমতামুখী হয়েছে, দলের নেতাকর্মীদের শুধু লাভ-লোকসান হিসাব শিখিয়েছে, রাজনীতি মানে দল নয় ব্যক্তি, তখন থেকেই সাধারণের মধ্যে রাজনীতি বিমুখতার শুরু। আদর্শভিত্তিক রাজনীতির আপদ বিপদ গোষ্ঠী বা ব্যক্তি মেনে নিতে পারে। সয়ে যেতে পারে। কিন্তু লাভ-লোকসানভিত্তিক রাজনীতির আপদ বিপদে থাকে ব্যক্তিহিংসা-লোভ। তাতে বলি হওয়ার বা সেই রাজনীতি সইবার ইচ্ছে ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর নেই। এই ইচ্ছে আমাদের উত্তর প্রজন্মের মধ্যেও সংক্রমিত হচ্ছে। কিন্তু এর প্রতিরোধ দরকার। প্রয়োজন প্রতিষেধক। কারণ, রাজনৈতিক দর্শন ছাড়া কোনও আন্দোলন, সংগঠনই স্বপ্নের লক্ষ্যে পৌঁছে না। স্বপ্ন দেখাতে জানে রাজনীতি। রাজনীতিহীন স্বপ্ন হচ্ছে মরীচিকা। রাজনৈতিক দলগুলো কবে যে আমাদের উত্তর প্রজন্মকে মরীচিকা থেকে সরিয়ে আনার দায়িত্ব নেবে। আপাতত তাদের আলসেমি কাটার লক্ষণ দেখছি না।

লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি

/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ছুটির দিনে নিউ মার্কেটে জনসমুদ্র
ছুটির দিনে নিউ মার্কেটে জনসমুদ্র
ভারতের নিখিলের হ্যাটট্রিকে ঊষার বড় জয়
ভারতের নিখিলের হ্যাটট্রিকে ঊষার বড় জয়
বাংলাদেশে আইসিটির ভবিষ্যৎ কেন হুমকির মুখে?  
বাংলাদেশে আইসিটির ভবিষ্যৎ কেন হুমকির মুখে?  
মস্কোতে কনসার্টে হামলা: ৯ সন্দেহভাজনকে আটক করলো তাজিকিস্তান
মস্কোতে কনসার্টে হামলা: ৯ সন্দেহভাজনকে আটক করলো তাজিকিস্তান
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ