X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিনোদন: আকালের দেশে

তুষার আবদুল্লাহ
২৫ আগস্ট ২০১৮, ১৮:৫২আপডেট : ২৫ আগস্ট ২০১৮, ১৯:০০

তুষার আবদুল্লাহ ঈদে এক প্রকার সুবিধাজনক অবস্থাতেই থাকবেন আমাদের নাটক-অনুষ্ঠান নির্মাতারা—এমন ধারণা ছিল। যেহেতু সীমানার ওপারের কলা-কুশলীরা ধর্মঘটে ছিলেন। পুরনো ধারাবাহিক পুনঃপ্রচার হচ্ছিল প্রতিবেশীদের চ্যানেলে। তাই নিরুপায় হয়ে টাটকা কিছুর জন্য দর্শকেরা নিজেদের পর্দার দিকে চোখ ফেরাবেন। নিজের কাছে নিজের এই পূর্বাভাস দেওয়া কতটা কার্যকর হলো, তা যাচাই করতে পরিচিত মহলে টেলিফোন, খুদে বার্তা ও ইনবক্স চালাচালি করলাম। পূর্বাভাস একেবারেই জলে গেছে, এমন বলা যাবে না। লোকজন টেলিভিশন দেখতে বসেছিল রিমোর্ট হাতে। মুক্তমনে টেলিভিশন দেখতে বসে তাদের মনে ধারণা তৈরি হয়েছে—আমরা মনে হয়, সামাজিকভাবে মোটামুটি এক আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলি। গ্রামে-শহরে যেখানেই থাকি না কেন, স্বস্তা রসিকতা ছাড়া আমরা কথা বলতে পারি না। সেটা পরিবার, অফিস কিংবা বন্ধুদের আড্ডা, যেখানেই হোকনা কেন। বর্ণ-গোত্র বিশেষকে হেয় করে আমরা এক ধরনের বিনোদন উৎপাদন করার চেষ্টা করে যাচ্ছি নিরলসভাবে। স্বস্তা বিনোদন হজম করতে করতে আমাদের মধ্যে এক ধরনের প্রতিরোধ ক্ষমতাও মনে হয় তৈরি হয়ে গেছে। যার ফলে একক নাটক বা ধারাবাহিকের ক্ষুদ্র পর্বে হালি বা অর্ধডজন কৌতুক অভিনেতা নেওয়া হয়, জোর জবরদস্তি করে বিনোদিত করতে। কোনও কোনও নাটকের সব পাত্র-পাত্রীই কৌতুক অভিনেতার ভূমিকায় নেমে পড়েন। দুই-একটি মুখকে কুমিরছানা বানানো ছাড়া আমাদের নির্মাতাদের উৎপাদনের কোনো মুরোদ নেই। দর্শক টানতে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি ও ভাষার দিকে দ্রুত অবনমনও ঘটছে  নাটক ও ধারাবাহিকের।

পরিচিতজনদের এই পর্যবেক্ষণ নীরিক্ষা করতে নিজেও ছোট পর্দা খুলে বসেছিলাম। খবরের চ্যানেল টপকে টপকে গেছি দেশি মিশেল চ্যানেলে। সেখানে মেন্যুতে বিনোদনের ঠাসাঠাসি আয়োজন। নাটক, ধারাবাহিক দেখলেই থেমে যাই। মনোযোগী হই সংলাপ ও অভিনয়ে। দেখতে বসা হয়েছিল সপরিবারে। তাই অভিনেতা-অভিনেত্রীদের শারীরিক ভাষা যখন আরোপিত অশ্লীলতায় চলে যাচ্ছিল, সংলাপে যখন স্বস্তা যৌনতার আভাস, তখন তো দৌড় না দিয়ে উপায় নেই। তিনদিন মোটামুটি দৌড়ের ওপরই ছিলাম। এক-দু’টি যে দেখার মতো হয়নি, তা বলে অপরাধী হতে চাই না। কিন্তু এত্ত এত্ত চ্যানেলের গামলা ভর্তি নাটক, টেলিফিল্ম ও ধারাবাহিকের মধ্যে এক-দু’টি থেকে কেন বিনোদন খুঁটে নিতে হবে? একখানা-দুইখানা কেন দর্শককে ভাবাবে? বোঝা গেলো, যারা লিখছেন তাদের সমাজ পর্যবেক্ষণ নেই। সাহিত্য-দর্শন থেকে দূর-দুরান্তে আছেন তারা। কারও কারও হয়তো ভনিতা আছে সাহিত্যঘনিষ্ঠতার। দৃশ্যমান ঘোরাঘুরি আছে সাহিত্যের উঠোনে। মস্তিষ্কের সঙ্গে যোগাযোগ ঘটেনি। দুই-একজনের সব সক্ষমতা থাকার পরেও, নিজেকে তারা বাজারের কাছে ছেড়ে দিয়েছেন। বাজার এত সুলভে  পণ্য দাবি করছে যে ‘পচা’ পণ্য সরবরাহ করা ছাড়া তাদের আর কোনও উপায় থাকছে না।

আর নির্মাতা? টেলিভিশনের সময় ভরিয়ে দেওয়ার জন্য কেউ কেউ কাজ করে যান। তারাও নির্মাতা। মাটি ভরাটের মতো সময় ভরাট। এই ভরাট কাজটি কি আবর্জনা দিয়ে করা হচ্ছে, না মাটি বা বালি দিয়ে করা হচ্ছে, সেদিকে নজর নেই। ভরাট সময়টিতে বিজ্ঞাপণ বুনে দিলেই তো ব্যবসা।

ওই যে বলছিলাম, এক-দুটি সত্যি, ভিন্ন চিন্তা ও বিষয়ের নাটক হয়েছে। সেখানে বিনোদন কম থাকলেও গল্প বলার ঢঙ অসাধারণই ছিল। কিন্তু আবর্জনার ভাগাড় থেকে এই রত্ন খুঁজে বের করার সময়-সুযোগ কই ভোক্তাদের? আর একটি শিল্পের মান যাচাই বা নির্ণয় করার জন্য একটি-দু’টি নাটক বা সিরিয়াল তো বিবেচ্য হতে পারে না। শিল্প টেকসই হওয়ার জন্যও এই প্রবণতা পুষ্টিকর নয়। আমাদের টেলিভিশন নাটক ও অনুষ্ঠান মানের অবনমন হচ্ছে, এই পূর্বাভাস-আলোচনা, অভিযোগ চলছে একদশক ধরেই। কিন্তু মান উন্নয়ন, ধরে রাখার কোনও কার্যকর উদ্যোগ কোনও কূল থেকেই আসছে না। টেলিভিশন, নির্মাতা, কলাকুশলী সবাই বাজারে হণ্যে হয়ে ছুটে বেড়াচ্ছে। বেচাকেনায় উন্মাদ এই পক্ষগুলো একসময় দেখবে বাজারে সওদা আছে ভোক্তা নেই। সেই দিন এসে গেছে বেশ আগেই। এখন ভোক্তা শূন্য হওয়ার পথে। সেই দিন কত কাছে, সেই আতঙ্কেই আছি।

লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি

/এমএনএইচ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ভারতের নিখিলের হ্যাটট্রিকে ঊষার বড় জয়
ভারতের নিখিলের হ্যাটট্রিকে ঊষার বড় জয়
বাংলাদেশে আইসিটির ভবিষ্যৎ কেন হুমকির মুখে?  
বাংলাদেশে আইসিটির ভবিষ্যৎ কেন হুমকির মুখে?  
মস্কোতে কনসার্টে হামলা: ৯ সন্দেহভাজনকে আটক করলো তাজিকিস্তান
মস্কোতে কনসার্টে হামলা: ৯ সন্দেহভাজনকে আটক করলো তাজিকিস্তান
চট্টগ্রামে জুতার কারখানায় আগুন
চট্টগ্রামে জুতার কারখানায় আগুন
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ