X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

মাশরাফি-সাকিবদের স্বাগত, তবে...

প্রভাষ আমিন
১২ নভেম্বর ২০১৮, ১২:৩৬আপডেট : ১২ নভেম্বর ২০১৮, ১৩:৩১

প্রভাষ আমিন বোমাটা ফাটিয়েছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল, যিনি লোটাস কামাল নামেই বেশি পরিচিত; এখন রাজনীতিবিদ হলেও আদতে তিনি ক্রীড়া সংগঠক। ছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি, ছিলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলেরও সভাপতি। সফল ব্যবসায়ী লোটাস কামাল রাজনীতির মাঠে যতটা সক্রিয়, খেলার মাঠে তারচেয়ে কম নয়। তাই তিনি যখন ক্রিকেট নিয়ে কিছু বলেন, তা গুরুত্ব পায়। গত ২৯ মে একনেক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করতে গিয়ে লোটাস কামাল প্রথম বাংলাদেশ ক্রিকেটের দুই মহাতারকা মাশরাফি এবং সাকিবের নির্বাচন করার সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেন এবং তাদের পক্ষে ভোট চান। এরপরই বিতর্কের ঝড় ওঠে, পক্ষে-বিপক্ষে তুমুল তর্ক। তবে পক্ষের চেয়ে বিপক্ষে মত বেশি।

এবারই তারা নির্বাচন করছেন না, এ কথা বলে তখন বিতর্কে সাময়িক যতি টেনেছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সেই বিতর্ক আবার সামনে আনলেন ওবায়দুল কাদেরই। শনিবার তিনি সাংবাদিকদের জানান, রবিবার আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করবেন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দুই তারকা মাশরাফি বিন মোর্তাজা আর সাকিব আল হাসান। শনিবার রাতেই গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সাকিব জানিয়ে দেন, তিনি মনোনয়ন চাইছেন না। তবে রবিবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর দোয়া নিয়ে ধানমন্ডিতে গিয়ে নড়াইল-২ আসনের জন্য মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন মাশরাফি। তাতেই থেমে যাওয়া বিতর্ক আবার চাঙা। গণমাধ্যমের সকল আগ্রহের কেন্দ্রে মাশরাফি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমও সয়লাব মাশরাফি-সাকিবের নির্বাচন বিতর্কে। যথারীতি পক্ষের চেয়ে বিপক্ষের মত বেশি।

সন্দেহাতীতভাবে সাকিব আল হাসান বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক তারকা, বিশ্বের এক নাম্বার অলরাউন্ডার। বাংলাদেশের টেস্ট ও ওয়ানডে অধিনায়ক। আর বর্তমানে ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মোর্তাজা, বাংলাদেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যক্তি, এই মুহূর্তে সবচেয়ে আলোচিতও। বিভিন্ন অঙ্গনের সেলিব্রেটিরা তাদের জনপ্রিয়তা পরে রাজনীতিতে কাজে লাগাতে চান, চাইতেই পারেন। যুগে যুগে, দেশে দেশে এমন অসংখ্য উদাহরণ আছে। পাকিস্তানের বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক ইমরান খান তো এখন তার দেশের প্রধানমন্ত্রী। শ্রীলঙ্কার বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক অর্জুনা রানাতুঙ্গা মন্ত্রিত্ব করেছেন। সর্বকালের সেরা ফুটবলার পেলেও মন্ত্রিত্ব করেছেন। রাজনীতিতে নেমেছেন ব্রাজিলের বিশ্বকাপজয়ী তারকা রোমারিও। জর্জ উইয়াহ তো তার দেশের প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। বেশিদূরে যেতে হবে কেন। বাংলাদেশের সাবেক ফুটবলার মেজর হাফিজ এখন ফুলটাইম রাজনীতিবিদ। সাবেক ফুটবলার আরিফ খান জয় এখন ক্রীড়া উপ-মন্ত্রী। প্রথম টেস্ট অধিনায়ক নাইমুর রহমান দুর্জয় এখন সংসদ সদস্য। ক্রীড়াঙ্গনের বাইরের সেলিব্রেটি থেকে রাজনীতিবিদ বনে যাওয়ার তালিকা করলে এই লেখার কলেবরে কুলাবে না।

খেলোয়াড়রা যদি তাদের প্রতি জনগণের ভালোবাসাকে জনগণের কল্যাণেই কাজে লাগাতে চান, তাতে আমি অন্তত অসুবিধার কিছু দেখি না। আর জনগণের কল্যাণ করার সবচেয়ে বড় প্ল্যাটফর্ম রাজনীতি। কিন্তু মাশরাফি-সাকিবের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার খবরে যেন কারো কারো মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে। কেউ কেউ স্বাগত জানালেও অধিকাংশই তাদের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রবল বিরোধিতা করেছেন। যারা বিরোধিতা করেছেন, তারাও মাশরাফি-সাকিবকে ভালোবেসেই করেছেন। মাশরাফি বা সাকিব এখন দলমত নির্বিশেষে সবার প্রিয়। কিন্তু রাজনীতিতে নামতে হলে তাদের কোনও না কোনও দলের পক্ষে নির্বাচনে অংশ নিতে হবে। তখন আর সবাই তাদের ভালোবাসবে না। বাংলাদেশের সমাজ প্রবলভাবে রাজনীতি বিভক্ত। তাই মাশরাফি বা সাকিব বিএনপি থেকে নির্বাচন করলে আওয়ামী লীগ সমর্থকরা তাদের ভোট দেবেন বা আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নির্বাচন করলে বিএনপি সমর্থকরা তাদের ভোট দেবেন; এমন আশা করাটা অবাস্তব। ইতোমধ্যেই নড়াইলের বিএনপির নেতারা বলছেন, মাশরাফিকে তারা নৌকার প্রার্থী হিসেবেই বিবেচনা করবেন, ক্রিকেটার মাশরাফি হিসেবে নয়। তবে সবক্ষেত্রে একই বিবেচনা প্রযোজ্য নয়। মাশরাফির মতো মানুষের জন্য বিএনপি বিবেচনাটা পাল্টালে ভালো করবে। মাশরাফির আসনে বিএনপি প্রার্থী না দিলে তাদের মহা ক্ষতি হয়ে যাবে না।

আমাদের দেশে পুরুষদের জন্য কোনও সংরক্ষিত আসন নেই। ভারতে শচিন কিন্তু রাষ্ট্রপতির মনোনয়নে সংসদ সদস্য হয়েছেন। বাংলাদেশে যেহেতু এই ব্যবস্থা নেই, তাই মূল দলগুলো চাইলেই মাশরাফির জন্য ছাড় দিতে পারে।

তবে মাশরাফি-সাকিবের নির্বাচন তথা রাজনীতিতে আসার বিরোধীদের মূল পয়েন্টটা নিয়েই আমার মূল আপত্তি। তারা বলছেন, রাজনীতি খুব খারাপ জায়গা। তাদের মতো ভালো মানুষের রাজনীতিতে আসা উচিত নয়। এই ভাবনাটাই আপত্তিকর এবং বিপজ্জনক। রাজনীতিকে আমরা রাজা হওয়ার নীতি বানিয়ে ফেলেছি বটে, তবে রাজনীতি আসলে নীতির রাজা, রাজা হওয়ার নীতি নয়। যার নীতি সবচেয়ে ভালো, তিনিই সবচেয়ে ভালো রাজনীতিবিদ। তাই ভালো মানুষদেরই বেশি করে রাজনীতিতে আসা উচিত। কিন্তু আমাদের দেশে হয়েছে উল্টো। আমাদের দেশে ধারণাটাই এমন করে ফেলেছি, রাজনীতি করবে পাড়ার বখে যাওয়া মাস্তান, চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ, ঋণখেলাপি ব্যবসায়ী বা অবসরে যাওয়া আমলারা। আর সাধারণ মানুষ রাজনীতি থেকে দূরে থাকবে, রাজনীতিকে ভয় পাবে। এই রাজনীতিবিমুখ ধারণার শেকড় আমাদের ভাবনার গভীরে পৌঁছে গেছে। তাই গড়ে উঠছে রাজনীতিবিমুখ প্রজন্ম। তরুণদের জিজ্ঞাসা করলেই তারা খুব গর্বের সাথে বলে, আমি রাজনীতি করি না। কেউ কেউ আরও আগ বাড়িয়ে বলেন, আমি রাজনীতি ঘৃণা করি। বেশ কয়েকদিন আগে একটি টেলিভিশনের রিপোর্টার নিয়োগের জন্য অনেক তরুণের সাক্ষাৎকার নিতে হয়েছিল। তাদের অধিকাংশই দাবি করেন, ক্যাম্পাসে তারা কোনও ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। তারা এমনভাবে কথাটি বলেন, যেন এটা তার বাড়তি যোগ্যতা। আর আমার বিবেচনায় এটা অযোগ্যতা। একটা তরুণ ৪/৫ বছর একটা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কাটিয়ে মাস্টার্স পাস করে বেরিয়েছে; কিন্তু কোনও রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল না; তার মানে তিনি কিছুটা স্বার্থপর, কিছুটা নির্বিরোধী। একজন তরুণ পড়াশোনা করবে; পাশাপাশি অন্তত রাজনীতি সচেতন হবেন, অন্যায়ের প্রতিবাদ করবেন, ন্যায়ের পক্ষে রাস্তায় নামবেন, লড়াই করবেন। করুক ছাত্রফ্রন্ট, ছাত্রদল, ছাত্রলীগ বা ছাত্র ইউনিয়ন। কিন্তু একজন তরুণকে অবশ্যই তার আদর্শিক অবস্থান সম্পর্কে সচেতন হতে হবে, সেটা রক্ষায় লড়াই করতে হবে। শুধু লাইব্রেরিতে মুখ গুজে নোট মুখস্থ করা আর ভালো ভালো নম্বর পাওয়াই জীবনের শেষ কথা নয়।

বলছি না সবাইকেই রাজনীতি করতে হবে। তবে সচেতনতাটা সবার জন্যই জরুরি। কোনও বাবা-মা চায় না তার সন্তান বড় হয়ে রাজনীতি করুক। কোনও শিশু কোনও দিন ‘এইম ইন লাইফ’-এ বড় হয়ে রাজনীতিবিদ হওয়ার কথা লেখে না। এ এক ভয়ঙ্কর রাজনীতিবিমুখ প্রবণতা। আমাদের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে খুঁজলে লেটেস্ট সব মাদকের খোঁজ পাওয়া যেতে পারে, কিন্তু রাজনীতি সেখানে নিষিদ্ধ। ছাত্র রাজনীতি যেন মাদকের চেয়েও খারাপ। অথচ রাজনীতি একটা ছেলেকে সাহসী করবে, পরোপকারী বানাবে, সে বিপদ এড়িয়ে যাবে না, মোকাবিলা করবে, দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারবে, একটা সমস্যার একাধিক সমাধান চিন্তা করবে।

ভাবুন ক্লাসের ফার্স্টবয় মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করছে, সময় কাটাচ্ছে লাইব্রেরিতে। আর ব্যাক বেঞ্চারের সময় কাটে মিছিল-মিটিংয়ে। ফার্স্টবয় বিসিএস দিয়ে ধাপে ধাপে এগিয়ে গেলেন। আর ব্যাকবেঞ্চার রাজনীতি করে ধাপে ধাপে নেতা, এমপি হয়ে সেই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হয়ে গেলো। এখন ফার্স্টবয়কে কিন্তু ব্যাকবেঞ্চারের নীতি বাস্তবায়ন করতে হবে। কিন্তু ফার্স্টবয়টাই যদি রাজনীতি করে মন্ত্রী হতেন, কী চমৎকার বিষয় ঘটতো। দেশ কিন্তু চালায় রাজনীতিবিদরা, তারা নীতি ঠিক করেন। তাই রাজনীতিবিদরা যদি সৎ, যোগ্য, দক্ষ হন; তাহলেই দেশ ভালো চলবে।

কিন্তু এখন পরিস্থিতিটা এমন দাঁড়িয়েছে, আমরা যেন জেনে-শুনে দুর্বৃত্তদের হাতে রাজনীতি লিজ দিয়ে নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে উপভোগ করছি, যাক রাজনীতি আমাকে পাচ্ছে না। কিন্তু এভাবে আসলে রাজনীতিকে এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। রাজনীতিই আমাদের সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে, নীতিনির্ধারণ করে, দেশ চালায়। তাই রাজনীতিকে দুর্বৃত্তদের হাতে ছেড়ে দেওয়া মানে নিজেদেরই দুর্বৃত্তদের কাছে দিয়ে দেওয়া। তাই নিজের স্বার্থে রাজনীতিকে পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। সবাইকে রাজনীতি করতে হবে, তা নয়; কিন্তু ভালো মানুষেরা যাতে রাজনীতিতে আসতে পারেন; সেই পথ করে দিতে হবে। মাস্তান, টেন্ডারবাজ, চাঁদাবাজ, নীতিহীনরা রাজনীতি দখল করে রেখেছে বলে ভালো মানুষেরা ভয়ে রাজনীতিতে আসতে চান না, আবার ভালো মানুষেরা আসে না বলে রাজনীতি পরিচ্ছন্ন হয় না। এই চক্র ভাঙতে হবে। আর সেটা ভাঙতে পারেন মাশরাফির মতো সময়ের সাহসী সন্তানেরাই। মাশরাফিকে তাই রাজনীতিতে স্বাগত। আপনি চাইবেন ভালো মানুষেরা রাজনীতি করুক। আবার ভালো কেউ রাজনীতিতে এলে গেলো গেলো রব তুলবেন, এটা স্ববিরোধিতা।

অনেকে বলছেন, এতদিন মাশরাফি সবার ছিল, আজ একটি দলের হয়ে গেলেন। এটা ঠিক। কিন্তু রাজনীতি করতে হলে তো তাকে কোনও না কোনও দলে যোগ দিতেই হবে। মাশরাফি বিএনপিতে যোগ দিতে পারতেন, সিপিবিতে যোগ দিতে পারতেন, বাসদে যোগ দিতে পারতেন। তার কাছে আওয়ামী লীগ ভালো লেগেছে বলে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন; তাতে আপনার-আমার সমস্যা কী? আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছে, এটা তো অপরাধ নয়। আর এই অপরাধে যদি আপনি তাকে ঘৃণা করতে শুরু করেন, তার খেলা যদি আপনার আর ভালো না লাগে; তাহলে সমস্যাটা আপনার, মাশরাফির নয়।

মাশরাফি একজন সহজাত নেতা। তার নেতৃত্ব বদলে দিয়েছে বাংলাদেশকে। তার দেশপ্রেম, তার আবেগ, তার ত্যাগ, তার দৃঢ় মনোবল সবার জন্য অনুপ্রেরণা জোগায়। মাশরাফিদের ধ্বংস করা যায় না। মাশরাফির ক্যারিয়ার কতবার ধ্বংসের মুখে গেছে। কিন্তু হাঁটুতে ৭টি সেলাই নিয়েও মাশরাফি ঘুরে দাঁড়িয়েছেন, দেশকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। মাশরাফি প্রতিটি ম্যাচ খেলতে নামেন হাঁটুতে ব্যান্ডেজ নিয়ে, পঙ্গু হওয়ার ঝুঁকি নিয়ে। মাশরাফির জায়গায় অন্য কেউ হলে ১০ বছর আগেই অবসরে যেতেন। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্ব ক্রিকেটেই মাশরাফি অন্যরকম এক অনুপ্রেরণার নাম।

মাশরাফি আসলে ক্ষণজন্মা। যুগে যুগে মাশরাফি এক-দুজন জন্মায়। শুধু এমপি নয়, আমি তো চাইবো মাশরাফি ভবিষ্যতে মন্ত্রী হবেন, এমনকি কোনও একদিন প্রধানমন্ত্রী হবেন।

মানুষের উপকার করার, জনগণের সেবা করার সবচেয়ে বড় প্ল্যাটফর্ম রাজনীতি। একজন এমপি যদি সৎ হন, ভালো মানুষ হন; তাহলে তিনি বদলে দিতে পারেন তার এলাকা। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো, কর্মসংস্থান সব ক্ষেত্রেই। একবার ভাবুন যে দলেরই হোক, বাংলাদেশে যদি মাশরাফির মতো সৎ, দেশপ্রেমিক ৩০০ এমপি থাকতো, দেশটা কেমন বদলে যেতে পারতো। তাই শুধু একজন মাশরাফি নয়; চাই মাশরাফির মতো ভালো মানুষেরা আরও বেশি সংখ্যায় রাজনীতিতে আসুক।

তবে মাশরাফির রাজনীতিতে আসার টাইমিংটা নিয়ে আমার প্রবল আপত্তি আছে। একজন ক্রিকেটার হিসেবে টাইমিংয়ের গুরুত্বটা বুঝবেন মাশরাফি। সাকিব আল হাসানকে প্রধানমন্ত্রী মনোযোগ দিয়ে খেলার পরামর্শ দিয়েছেন। একই পরামর্শ তো মাশরাফিরও প্রাপ্য। অনেকে বলছেন, সাকিব আরও ৪/৫ বছর খেলতে পারবে, তাই তাকে খেলায় মনোযোগ দিতে বলা হয়েছে। আর মাশরাফি বিশ্বকাপের পর মানে মাস সাতেক পর অবসরে যাবেন, তাই তার এবারই নির্বাচন করা উচিত, নইলে পাঁচ বছর পিছিয়ে যাবেন। রাজনীতি করতে হলে যে এখনই এমপি হতে হবে এমন তো কোনও কথা নেই। মাশরাফি তো নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশন করে সমাজসেবায় আছেনই। পুরোদমে রাজনীতি করতে হলে পুরোদমে খেলা ছেড়ে আসতে হবে। ক্রিকেট গভীর মনোযোগের খেলা। বাংলাদেশের প্রতিটি খেলোয়াড়ের উচিত এখন বিশ্বকাপকে পাখির চোখ করা। জগতের অন্য সব কাজ ফেলে বিশ্বকাপ নিয়ে ধ্যান করা। সেখানে অধিনায়কই যদি নির্বাচনের মাঠে ব্যস্ত হয়ে যান, তাহলে খেলার মাঠ থেকে মনোযোগটা সরে যেতে পারে। বিশ্বকাপ মাশরাফির জীবনের সবচেয়ে বড় টুর্নামেন্ট, বাংলাদেশেরও। আমি চাই বাংলাদেশ সম্পূর্ণ প্রস্তুত থাকুক শারীরিক ও মানসিকভাবে। তারা নিজেদের উজাড় করে খেলুক। তাই চাই মাশরাফির মনোযোগ মাঠেই থাকুক। এই যেমন ডিসেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বাংলাদেশ সফরে আসছে। ৯-১৪ ডিসেম্বর ওয়ানডে সিরিজে নেতৃত্ব দেবেন মাশরাফি। তখন আবার নির্বাচনেরও শেষ সময়। মাশরাফির মন তখন কোথায় থাকবে- খেলার মাঠে না রাজনীতির ময়দানে? বিশ্বকাপে অধিনায়কের অখণ্ড মনোযোগ নিশ্চিত করতে দাবি জানাচ্ছি, তাকে যেন এবার অন্তত মনোনয়ন দেওয়া না হয়। মাশরাফি-সাকিবের মতো মাঠের নায়ক এবং তাদের মতো আরও অনেক দেশপ্রেমিক ভালো মানুষকে রাজনীতিতে স্বাগত, তবে অবশ্যই সেটা অবসরের পর।

লেখক: হেড অব নিউজ, এটিএন নিউজ

/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
দোকান থেকেই বছরে ২ লাখ কোটি টাকার ভ্যাট আদায় সম্ভব
দোকান থেকেই বছরে ২ লাখ কোটি টাকার ভ্যাট আদায় সম্ভব
বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে অতীত ফিরিয়ে আনলেন শান্ত-রানারা
বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে অতীত ফিরিয়ে আনলেন শান্ত-রানারা
হিট স্ট্রোক প্রতিরোধে করণীয় ও বিশেষজ্ঞ পরামর্শ জেনে নিন
হিট স্ট্রোক প্রতিরোধে করণীয় ও বিশেষজ্ঞ পরামর্শ জেনে নিন
হাতিরঝিলে ভাসমান অবস্থায় যুবকের মরদেহ
হাতিরঝিলে ভাসমান অবস্থায় যুবকের মরদেহ
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ