X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

রবিবার উদযাপন হোক সবার

তুষার আবদুল্লাহ
২৯ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৫:২৪আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৫:২৫

তুষার আবদুল্লাহ আজ চাঁদরাত। কাল উৎসবের সকাল। রজনী পেরিয়ে সোমবারের ভোরও হবে আনন্দের। একথা বলছি অভিজ্ঞতার স্মৃতিতে দাঁড়িয়ে। স্বৈরাচার পতনের পর ১৯৯১,১৯৯৬,২০০১, ২০০৮ সালের ভোটে কোন দল জয়ী হচ্ছে, তা নিয়ে ভোটারদের ভাবনা ছিল। সংবাদকর্মীদের মধ্যে ছিল হিসাব-নিকাশ। সবশেষে ছিল তৃপ্তির ঢেঁকুর-ভোট উৎসব উদযাপনের। দেখেছি একই চায়ের দোকানে নৌকা ও ধানের শীষের কর্মী সমর্থকরা তর্কে মেতেছেন। নিজ সমর্থিত দলের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরছেন। পাল্টা যুক্তি এলে তা মোকাবিলা করেছেন যুক্তি দিয়েই। একসময় উভয়পক্ষ হাসিমুখে একসঙ্গে বাড়ি ফিরে গেছেন। এক বাড়ি থেকে দুই মিছিলে মিলে যেতে দেখেছি। বন্ধুদের আড্ডা ভিন্ন ভিন্ন মিছিলে ভাগ হয়ে যেতো, মিছিল শেষে আবার একই আড্ডায় ফিরে আসা। ভোটের দিনও দুই প্রতিপক্ষ সম্প্রীতির রাখিবন্ধনে যুক্ত থাকতো। রক্তপাত হয়নি, এমন কথা বলবো না। তবে উল্লেখ করা ভোটের দিনগুলোতে উৎসবকে ছাপিয়ে যেতে পারেনি সহিংসতা। জয়ী হয়েছিল ভোটারদের একদিনের রাজা হওয়ার উৎসব। তারপর কতটা সংজ্ঞা মেনে গণতন্ত্র এসেছিল, সংসদ কত কার্যকর হয়েছিল সেই শ্বেতপত্র জনগণের জানা হয়ে গেছে। হয়তো একই বৃত্তে ঘুরেছে রাষ্ট্র। তারপরও ভোটার, প্রার্থী সকলেরই সহিষ্ণুতা ছিল অন্যের স্লোগান সয়ে যাওয়ার। ধীরে ধীরে আমরা সেই সক্ষমতা হারিয়েছি। এবারের নির্বাচনের প্রচারণা তুল্য ভোটের পরিবেশ বাংলাদেশ দেখেনি আগে। প্রচারণার এই দৃশ্যপট দেখে শঙ্কা হয়–তাহলে কি আমরা সহিষ্ণুতায় দেউলিয়াপনার শেষ প্রান্তে পৌঁছে গেলাম?

উত্তর যদি হ্যাঁ-বোধক হয়, তাহলে ব্যক্তিগতভাবে কোন প্রার্থী বা দল কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে জানি না। নিশ্চিত করে জানি বড় ক্ষতি হয়ে যাবে বাংলাদেশের। এই রাষ্ট্রের। তাৎক্ষণিক ফায়দা নিতে ক্ষমতার বলয় তৈরি হয়। সেখানে সব পক্ষই নিজ নিজ হিস্যা নিতে মরিয়া। তাদের এই মরিয়া মনোভাবের কাছে ভোটারের স্বার্থ উপেক্ষিত থাকে। দৃশ্যত ভোটারের প্রতি তাদের আনুগত্যের শেষ নেই। কিন্তু বাস্তবতা হলো– ভোটের দিন তারা একটি প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত হন মাত্র। কখনও কখনও এই ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তাকেও তারা তোয়াক্কা করেন না। নিজের মতো করে উৎসব সাজিয়ে নেন। রাজনৈতিক দলগুলোর এমন অনুশীলনের দিস্তা দিস্তা উদাহরণ ভোটারদের কাছে আছে। তারপরও তারা ক্ষমাশীল। রাজনৈতিক দলগুলোকে বারবার সুযোগ দিয়ে আসছেন। মনোবাসনা-এবার যদি তারা শুদ্ধ হন। সহনশীল হন। তাদের মধ্যে সহিষ্ণুতা জাগ্রত হবে। কখনও কখনও রাজনৈতিক দলগুলো কিঞ্চিৎ সেই বাসনা পূরণের ইঙ্গিত দিলেও, পর মুহূর্তে পিছিয়ে গেছে তারা কয়েক ধাপ।

রবিবারের ভোটকে নিয়ে নানা শঙ্কা ছিল। সেই শঙ্কার মেঘ কেটে গেছে অনেকটাই। রাজনৈতিক দলগুলো একে অপরের ওপর আধিপত্য বিস্তার করতে নানা নকশা এঁকেছে। ফাঁদ পেতেছে। ভোটাররা সেই নকশা ও ফাঁদের সাক্ষী হয়ে কখনও কখনও যেমন আতঙ্কিত হয়েছেন, হতাশায় নিমজ্জিত হয়েছেন, আবার আশান্বিত হওয়ার মতো উপলক্ষও খুঁজে পেয়েছেন। নানা সংকটকাল ও মেরুকরণ অবশেষে গন্তব্যের দ্বারে এসে পৌঁছেছে। জংশনে ঢুকতে আর কিছু সময় মাত্র বাকি। এখন রাজনৈতিক দলগুলো বিশেষ করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি গণতন্ত্রের প্ল্যাটফর্মে কী আচরণ করে, তার ওপরই নির্ভর করছে আগামী দিনে রাষ্ট্র কতটা সুষম থাকবে। তাদের সহিষ্ণুতার পরিমাপ পরীক্ষা করবেন ভোটারেরা। ভোটারদের আমলে না নিয়েও যে কোনও রাজনৈতিক দল ক্ষমতার বলয়ে ঢুকে পড়তে পারবে ঠিকই। কিন্তু সেই ক্ষমতা উপাদেয় হয় না, হবে না যে, সেটা তারাও জানেন। আমরা আশা রাখতে চাই– যারা রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্ব নেবেন, তারা উপাদেয় ক্ষমতাকেই বেছে নেবেন। সেক্ষেত্রে সাধারণ ভোটাররা যারা ভোট দেওয়ার মুহূর্তে পর্যন্ত রাজার আসনে থাকবেন, রাজ্য হারিয়েও তাদের নিঃস্ব হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না। কারণ, ক্ষমতা কাঠামোতে যারা থাকবেন, তাদের মস্তিষ্কে কল্যাণ রাষ্ট্রচিন্তা প্রবাহিত থাকবে। এই বিবেচনায় রবিবার ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের ঘরে ঘরে উৎসবের আনন্দ ছড়িয়ে পড়ার বাসনা জাগিয়ে রাখতেই পারি। তবে উৎসব তখনই সর্বজনীন হবে যখন বিজয়ীরা উদ্ধত হবেন না। বিজয় উদযাপনে সংযম দেখাবে। এবং বিজয়ের অংশীদার হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বী দলকেও স্বীকৃতি দেবে। এই প্রত্যাশা প্রতিবার রেখে, আমরা বঞ্চিত হই। এবার সেই বঞ্চনায় লজ্জিত হতে চাই না।

লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি

 

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
শিশুকে পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগে ৪ কিশোর সংশোধনাগারে
শিশুকে পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগে ৪ কিশোর সংশোধনাগারে
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ