X
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

স্রোতে ভেসে চলা আর কত?

তুষার আবদুল্লাহ
১৯ জানুয়ারি ২০১৯, ১৮:০৮আপডেট : ১৯ জানুয়ারি ২০১৯, ১৮:১০

তুষার আবদুল্লাহ চলার জন্য সাধারণত সমতল পথ বেছে নিই আমরা। চলতে আরাম লাগে বলেই যে সবসময় সমতল বেছে নেওয়া তা কিন্তু নয়। মূলত উঁচুতে ওঠার দুঃসাহস আমাদের পুঁজিতে নেই। তাছাড়া এবড়োথেবড়ো পথে চলার ঝামেলা কেইবা নিতে চায়! ঝামেলামুক্ত জীবনই মূলত আমাদের ভালো লাগে। উঁচুতে উঠতে চাওয়া মানে কারও মুখোমুখি হওয়া। কোনও পক্ষের দিকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেওয়া।
শুধু কি উঁচুতে? নিচে নামতে চাইলেই যে হুড়মুড় করে নেমে যাওয়া যায় তা কিন্তু নয়। শারীরিক ও মানসিক ভারসাম্য ধরে রেখে নামতে হয়। একটু এদিক-ওদিক হলেই ধপাস! তখন উঁচু-নিচু কিছুই জয় করা যায় না। ওপরে ওঠার ক্ষেত্রে যেমন ঔদ্ধত্য দেখানো  বিপদ ডেকে আনতে পারে, একইভাবে নিচকে হেলা করাও ঠিক নয়।
মুশকিল হলো, আমরা সেই ভারসাম্য রক্ষা করে জীবনের লক্ষ্য স্থির করতে পারি না। সবাই পারে না, এমন বলবো না। এক-দুই জনের বাইরে  বেশিরভাগই তা পারেন না। যখন উঁচুতে উঠতে থাকি তখন ভাবনায় মোটেও আনি না,এই দুর্গম  পথেই যে নেমে আসতে হবে। নেমে আসা অনিবার্য। উঁচু জায়গা ক্ষণিকের আনন্দ ও অহংবোধের। নিচে নেমে  এসে সবার সঙ্গে সেই আনন্দ ভাগাভাগি না করে নিলে দুর্জয় অভিযানের কোনও মাহাত্ম্য থাকে না।

ব্যক্তি থেকে সামষ্টিক, আমরা দেখতে পাচ্ছি সবার মধ্যে তরতর করে ওপরে উঠে যাওয়ার তাড়া। হাঁটা পথে বন্ধুর পথ জয় করার যে আনন্দ, কোনও যান্ত্রিক বাহনে চট করে সেই পথ জয়ে প্রশান্তি নেই। আমরা দ্রুতযানে উচ্চতায় ওঠার জন্য সব নৈতিকতা ও আদর্শকে বিসর্জন দিচ্ছি। যেদিকে স্রোত সেদিকেই ভাসিয়ে দিচ্ছি নিজেকে। নিজ শক্তিতে নয়, স্রোতের টানে ঘাটে পৌঁছার ছল। কিন্তু স্বল্প সময়ের মধ্যে দেখতে পাই, স্রোত আমাকে জলোচ্ছ্বাসে টেনে নিচ্ছে। যে জলোচ্ছ্বাসে ধ্বংস ও বিলীন হয়ে  যাওয়া অনিবার্য। স্রোত আমার অপছন্দের হতে পারে। স্রোতের সঙ্গে ভেসে আসতে পারে আবর্জনা, তবুও হাত মিলিয়ে চলছি। কিছু পাওয়ার প্রত্যাশায়, টিকে থাকার কৌশলে। চরম অস্বস্তি বা প্রতিবাদ করার মুহূর্তেও হাসি মুখে বলছি ‘ভাল্লাগে’।

ভেসে চলায় আনন্দ সীমাহীন। খুশি অফুরান। বেদনায়, ঘৃণায়, অপমানে ক্ষয়ে যেতে যেতেও আমাদের  অনুভূতিতে প্রকাশ হচ্ছে– খুশিতেই অপদস্ততাকে বরণ করেছি। নিজেকে মুক্ত রাখার তাড়নাও আমাদের কম নেই। চারপাশের সব প্রতারণা ও প্রপাগান্ডার সঙ্গে আমরা সহমত প্রকাশ করে যাচ্ছি। অথচ এসবে জড়িতদের সঙ্গে আমাদের কোনও হৃদয় বা চেতনাগত আত্মীয়তা নেই। তবে এর মাধ্যমে নির্ভার থাকার একপ্রকার ফায়দা নেওয়া যায়। তাই আমরা কোনও কোনও কাজের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত রেখেও বলে যাই– কোনও পক্ষের চোখরাঙানি বা ঠ্যালাতে নয়, ঘটনা বা বিষয়ের সঙ্গে আছি। নিজেকে নিরাপদ  রাখার জন্য আমাদের এই ভনিতা।

আজকাল অনেকেই অপ্রিয় অনেক কাজ ও চিন্তার সঙ্গে বসবাস করা থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার একটি দুয়ার খোলা রাখেন। তারা বলেন, নিছক কৌতূহলের বশেই এ ধরনের চিন্তা বা উদ্যোগে জড়িয়ে গেছেন। শখের বশে ঘুরতে এসে জড়িয়ে যাওয়া। বেরোতে পারছেন না। সমাজ কিন্তু এভাবেই চলছে। এখন যে এমন করে চলছে তা নয়। দীর্ঘ সময় ধরেই ভালোলাগার ছুতো ধরে খুশির ভান করে ঠ্যালা খাওয়ার অজুহাতে ও শখের বশে ঘোরার কারণ দেখিয়ে সমতল পথে চোচল করছে সবাই। উত্থান-পতন এড়িয়ে শরীর ও মন বাঁচিয়ে চলার জীবনকে জীবন বলা যায় না। অথচ আমরা এই যাপনকেই বেছে নিলাম। জীবনের কাছে কত সামান্য চাওয়া আমাদের! এই সামান্য চাওয়া দিয়ে আমরা পর্বত জয় করতে চাই। আমাদের চাহিদাপত্রে যোগ হচ্ছে নিত্যনতুন পর্বত।

মুশকিল হলো, আমাদের সামর্থ্যের মতোই আকাঙ্ক্ষাগুলো। একেবারে হাওয়াই মিঠাইর মতো মুঠোয় নেওয়ার মতো। কিন্তু জীবন তো হাওয়াই মিঠাইয়ের মতো মিলিয়ে যাওয়ার নয়। টিকে থাকার। লড়াই করার। পৃথিবী আমাদের কালেই গ্রাম-মহল্লায় রূপ নিয়েছে। এখানে নিজেকে টিকিয়ে রাখার রণযুদ্ধ সহজ নয়। শুধু ভাড়া করা বা কেনা অস্ত্র আর প্রযুক্তি এনে দেবে না কাঙ্ক্ষিত জয়। এজন্য দরকার মেধা ও ইচ্ছেশক্তির জোর। এই দুই ক্ষেত্রে কমজোরির জায়গা নেই।

কিন্তু আমরা যে মন্ত্র পাঠ করে আছি বা যে মন্ত্র আমাদের পাঠ করানো হচ্ছে– ‘খুশিতে, ভাল্লাগে, ঠ্যালায়, ঘোরতে’। এই মন্ত্র উচ্চতায় ওঠা ও বন্ধুর পথ পেরিয়ে সমতলে নেমে আসার নয়। শুধুই পতনের। পতন থেকে রক্ষার ও উচ্চে স্থির থাকার মন্ত্রের ঘাটতি নেই আমাদের। আমরা নিজেরা সেই মন্ত্রগুলোকে অচল আধুলি ভেবে ছুড়ে ফেলে দিয়েছি। পতন থেকে রক্ষা পেতে আবারও পুরনো মন্ত্র আওড়াতে হবে–  ‘রক্ত আলোর মদে মাতাল ভোরে/আজকে যে যা বলে বলুক তোরে/সকল তর্ক হেলায় তুচ্ছ করে/পুচ্ছটি তোর উচ্চে তুলে নাচা।’

লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি

 

/এসএএস/জেএইচ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
পড়ে আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬০ লাখ টাকার অ্যাম্বুলেন্স, বের হচ্ছে না পুলিশের ভয়ে
পড়ে আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬০ লাখ টাকার অ্যাম্বুলেন্স, বের হচ্ছে না পুলিশের ভয়ে
ক্ষতচিহ্নিত হাড়মাংস অথবা নিছকই আত্মজনের কথা
ক্ষতচিহ্নিত হাড়মাংস অথবা নিছকই আত্মজনের কথা
পার্বত্য তিন উপজেলার ভোট স্থগিত
পার্বত্য তিন উপজেলার ভোট স্থগিত
কৃষিজমির উপরিভাগ কাটার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ
কৃষিজমির উপরিভাগ কাটার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ