X
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

আগুনমুখো যাত্রা

তুষার আবদুল্লাহ
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৬:৪৫আপডেট : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৬:৪৮

তুষার আবদুল্লাহ পোড়া মানুষ কম দেখিনি। আগুনে পুড়তে দেখেছি কত ভবন, বাজার, বস্তি। পোড়া শরীরের আর্তনাদ, স্বজনদের আহাজারি দেখেছি অনেকটা বেপরোয়া মন নিয়েই। মনকে আর্দ্র হতে দেইনি। হলেই খবর ফেরি করতে পারবো না। তবে এই বেপরোয়া মন চোখে নোনা জল আসতে না দিলেও, ঠিক জেনে গেছি কে পোড়ায়, কেন পোড়ায়। মানুষ কেবল কাঠখড়ি। জানা কথা বলা যায়নি এক আনাও। শুধু বলে গেছি দমকলের ছোটাছুটি, বণিকের ক্ষয়ক্ষতির কথা। শেষমেশ দায় গিয়ে পড়েছে সংখ্যাবাচক কিছু বেকুব মানুষের কাঁধে। তাদের বলেছি ঠিকমতো চলো। তোমরা সচেতন নয় বলেই তো আগুন জেগে ওঠে।
সরকারের লাল ফিতার সংখ্যা বাড়ে। শীতল আলমিরাতে ঠাঁই হয় একের পর এক তদন্ত প্রতিবেদনের। কেউ সেই আলমারি খুলে পড়েছে কোনও দিন কোনোকালে সেই প্রতিবেদন? পাঠ করলে পোড়া মানুষের ঘ্রাণ ফিরে ফিরে আসতো না।
মাশরুমের মতো চাষ বেড়েছে পরামর্শকের। তারা প্রতারকের মতো বয়ান করে যাচ্ছেন। তাদের কত ‘মাসালা’, কত ‘ফতোয়া’ শহর রক্ষায়, আম মানুষের নিরাপত্তায়। এই মাসালা দেওয়া মানুষগুলোর অনেকেই শহরের অসুখ বাড়ানোর হোতা। এখন গণমাধ্যমে তাদের কদর বেশি। তারা আম মানুষকে সুবোধ হতে বলেন, সরকারকে সুবোধ হতে বলেন। এই যে পুড়ছি তার জন্য তাদের কারো কারো দায়িত্বহীনতা ও দুর্নীতি দায়ী। সরকারগুলো বারবার তাদের ফাঁদে পড়েছে।

নিমতলীর অগ্নিকাণ্ড, তাজরিনের আগুন, রানা প্লাজার ধস কি শেখালো আমাদের? কতটুকু সভ্য হলাম বা হতে চেয়েছি? সেই বঙ্গবাজার থেকে শুরু করে চকবাজার, হাজারীবাগের একাধিক অগ্নিকাণ্ডের পরেও আমরা বাজার, ভবনের সুরক্ষায় কার্যকর কোনও উদ্যোগ নেইনি। অনেক আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকার সড়ক এখনও সরু। দমকলের গাড়ি ঢুকতে পারছে না। এখনও যে আবাসিক এলাকা তৈরি হচ্ছে সেখানেও সড়ক সরুভাবে তৈরি হচ্ছে। জল ও জলাধারও সুলভ করার বন্দোবস্ত করতে পারিনি।

এবারের আগুন, পোড়া মানুষের মুখ, পরিবারের কান্না আরও কিছুদিন আমাদের সাজানো শোকে ভাসাবে। এই অল্প ক’দিন গেলেই আমাদের শোকও  চলে যাবে শীতল আলমারিতে।

কিন্তু এই প্রতারণা, আর কতদিন? শুধু বচন দিয়ে একটি শহর, একটি জনপদ, সভ্যতা এবং মানুষের আত্মহনন দেখে যাবো আমরা? আগ্নেয়গিরিতে দাঁড়িয়েও বলবো এই আছি,বেশ আছি। আছি সুখ উদ্যানে? ঠিক যেন সিলিন্ডার গ্যাসচালিত গাড়িতে মৃত্যুপথের যাত্রী আমরা।

চারদিক থেকে পরামর্শের স্রোতধারা বইছে। শহরের ভালো-মন্দ দেখতে এত যে সংস্থা বা সংগঠন কাজ করছে আমরা বুঝি ভুলেই গিয়েছিলাম। নগরে তাই অসহায় বোধ হতো। কিন্তু একই যে যারা এখন ঝাঁপ খুলে বসলেন, তারা কত সময় সেই ঝাঁপ খোলা রাখবেন। গণমাধ্যম অন্যত্র ব্যস্ত হয়ে গেলেই আপনাদের ঝাঁপ বন্ধ বা নতুন বিষয়ের পণ্ডিত হয়ে উঠবেন আপনারা। সরকারের কেউ কেউ বলছেন পুরনো ঢাকা থেকে কেমিক্যাল কারখানা সরিয়ে নিতে না পারা কোনও কোনও সেবা সংস্থার ব্যর্থতা। প্রশ্ন হলো, তারা তো সরকারেরই। তবে ২০১০ থেকে ২০১৯, এই সংস্থাগুলো স্থবির থাকার দুঃসাহস পেলো কোথায়?

প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন পুরনো ঢাকার সড়ক প্রশস্ত করা হবে। এই নির্দেশ পালন করতে সেবা সংস্থাগুলো যদি আবারও দশক সময় খরচ করে ফেলে, তাহলে এই মুহূর্ষু শহর এবং তার নাগরিকদের প্রাণ বাঁচানো মুশকিল হয়ে পড়বে।

শহর নিয়ে পরিকল্পনা, মহপরিকল্পনা কম হয়নি। কিন্তু পরি উড়ে গিয়ে কল্পনাটাই ফানুস হয়ে ওড়ে বেড়ায়।

নগরের বাতাসের যে হাল হয়েছে তাতে ক’দিন পর সেই ফানুসও ওড়বে কিনা সন্দেহ আছে।

লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
বুধবার গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায়
বুধবার গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায়
‘রানা প্লাজার দুর্ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে কর্মক্ষেত্রকে নিরাপদ করতে হবে’
‘রানা প্লাজার দুর্ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে কর্মক্ষেত্রকে নিরাপদ করতে হবে’
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাকি দুই টি-টোয়েন্টিতে অনিশ্চিত রিজওয়ান
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাকি দুই টি-টোয়েন্টিতে অনিশ্চিত রিজওয়ান
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ