X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘দায়ী কে?’

তুষার আবদুল্লাহ
২৪ মার্চ ২০১৯, ১৪:৩৮আপডেট : ২৪ মার্চ ২০১৯, ১৪:৪২

তুষার আবদুল্লাহ ‘দায়ী কে’ নামে একটি বাংলা ছবি ছিল। ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পর সেই সময় আড্ডা, অফিস এবং পারিবারিক আলাপনেও বলা হতো দায়ী কে?  কৌতুকের সঙ্গে সঙ্গে কখনও হতাশা, ক্ষোভ থেকেও উচ্চারিত হতো ছবিটির নাম। সেই কৈশোর পাড়ি দেওয়ার সময়ের ছবিটির নাম আবারও মনে পড়লো, যখন নগরের পুলিশ কমিশনার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলেন সড়কের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে পুলিশ ব্যর্থ হয়েছে।
এখন খুব জানতে ইচ্ছে করছে সড়কে বিশৃঙ্খলার জন্য সত্যি দায়ী কে?
গণমানুষ বা পথচারীর অবস্থান থেকে প্রথমেই দায় স্বীকার করে নিচ্ছি, সড়কে বিশৃঙ্খলার জন্য পথচারীর বিস্তর দোষ রয়েছে। হুট করে ডানে বামে না তাকিয়ে রাস্তা পাড়ি দেওয়া, তারকাঁটা পেরিয়ে সীমান্ত অতিক্রমের মতো জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছে পথচারীরা। ফুটপাত, ফুটওভারব্রিজ ব্যবহার না করে সড়কের বিশৃঙ্খলায় আমরা অবদান রাখছি। ব্যক্তিগত বাহন অথবা রিকশা, মোটরসাইকেল, অটোরিকশা ব্যবহার করি যারা, তারাও পিছিয়ে নেই। রাস্তার উল্টোদিক দিয়ে আসা, যত্রতত্র গাড়ি পার্ক করে রাখা, এই বদ অভ্যাস আমাদের আছে। ট্রাফিক আইন মেনে চলতেই আমাদের যেন কেমন অস্বস্তি। এক প্রকার বেপোরোয়া এবং বিশেষ ক্ষমতাবান সুলভ অহংবোধও কাজ করে পথে নামলে। নিজে না হই দূরের কোনও পরিচিতজনের তাপেও উত্তপ্ত থাকি।

সড়ক দাপিয়ে বেড়ায় যে গণপরিবহন, তাদের দাপটের কাছে নাজুক সাধারণ যাত্রী, পথচারী এবং ব্যক্তিগত বাহনের চালকেরা। লেগুনা, পিকআপ ভ্যান, ট্রাক কিংবা বাস সকলেই যেন রাস্তার রাজা। মাঝপথে দাঁড়িয়ে যেখানে সেখানে যাত্রী তুলছে নামাচ্ছে। বেপরোয়া গতিতে বাহনটিকে নিয়ে ছুটছেন যিনি, তার লাইসেন্স নেই। ফিটনেস নেই বাহনটিরও।

এই তথ্যগুলো আমাদের অজানা থাকে। চালকের আসনে যখন কিশোর, তখন তাকে আমরা দেখতে পাই না অথবা ধূম্রজালে তাকে পূর্ণবয়স্ক মনে হয়। একইভাবে দেখি হয়তো ফিটনেসবিহীন  লক্কড়ঝক্কড় গাড়িগুলোকে। যখন কোনও দুর্ঘটনা ঘটে, সেই দুর্ঘটনার প্রতিবাদের ঝড় ওঠে, তখনই আমরা জানতে পারি বাহনটির ফিটনেস সনদ ছিল না, অসংখ্য মামলা আছে এবং চালকেরও লাইসেন্স নেই। জাবালে নূর, সুপ্রভাত এবং সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেননের গাড়িকে আঘাত করা বাসের ক্ষেত্রে এমন তথ্যই প্রকাশ পেয়েছে। সুপ্রভাত কেমন করে এতদিন রাজধানীর সড়কে চলেছে, তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন স্বয়ং মহানগর পুলিশ কমিশনার।

বিস্মিত আমরাও। এই যে সড়কে নেমে যেমন খুশি তেমন করে চলাচল করছি, সড়ককে ভাবছি নিজ বাড়ির উঠোন। গণপরিবহনের কাউকে পরোয়া না করার হিম্মত দেখানো, এগুলো ঘটছে কার বা কাদের প্রশ্রয়ে। রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি থাকার পরেও। লাখ গাড়ি কেন ফিটনেসের বাইরে, কী করে পথে চলে মেয়াদোত্তীর্ণ বাহন, চালকের আসনে কেন নকল লাইসেন্সধারী? মহাসড়কে একাধিকবার নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর এখনও কেন তিন চাকার বাহন এবং নসিমন, করিমন চলাচল করে? মহাসড়কের ওপর থেকে তোলা যায়নি বাজার, আর বাস-ট্রাকের বেপরোয়া গতিতে ক্রমশ বাড়ছেই। রাজধানীর ট্রাফিক ব্যবস্থা বলে কিছু কি অবশিষ্ট আছে আর? রাস্তার প্রায় অর্ধেক অংশ পার্কিং আর হকারের দখলে। রিকশা, গাড়ি, বাস কাউকেই নির্দিষ্ট লেনে রাখা যায়নি। বিশেষ প্রযুক্তির সরঞ্জাম এনেও উল্টো দিকের চলাচল আটকানো যায়নি।

ট্রাফিক সিগন্যালে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি অনুশীলনে ব্যর্থ হয়েছি। দড়ি, বাঁশ ছাড়া ট্রাফিক সামলানো যাচ্ছে না। ট্রাফিক ব্যবস্থার একেকদিন একেক ফর্মুলা আবিষ্কৃত হচ্ছে। কোনও ফর্মুলাতেই আম-নাগরিকের উদ্বেগ কমছে না। দশ মিনিটের পথ যেতে জীবন থেকে এক ঘণ্টা ছিনতাই হয়ে যাচ্ছে। তবে যারা রাজনীতি ও টাকার তোপে ভিআইপি বা বিশিষ্টজন তারা অনেকটা আয়েশেই চলেন। এই বিভাজনও সড়কে বিশৃঙ্খলার অন্যতম প্রধান কারণ।

সকল কারণ সকলের জানা। হয়তো জানা আছে যুতসুই দাওয়াইও। তারপরও কেন ভুল ওষুধ, মিছেমিছি চিকিৎসা চিকিৎসা খেলছি আমরা। কার বা কাদের স্বার্থে সাদা জেব্রাক্রসিং লাল হচ্ছে। হত্যার মূল্য হচ্ছে ফুটওভারব্রিজ? আমরা হয়তো ব্যক্তি, গোষ্ঠী, প্রতিষ্ঠানের নাম জানি। নাম জেনেও জিজ্ঞাসা করেই যাচ্ছি দায়ী কে? আসুন সবাই মিলে সম্মিলিতভাবে তাদের নাম উচ্চারণ করি। বলুন আর কত চুপ করে থাকা যায়?

লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল
মার্কেসের 'আনটিল আগস্ট'
মার্কেসের 'আনটিল আগস্ট'
ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলছে
ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলছে
রেলক্রসিংয়ে রিকশায় ট্রেনের ধাক্কা, বাবার মৃত্যু মেয়ে হাসপাতালে
রেলক্রসিংয়ে রিকশায় ট্রেনের ধাক্কা, বাবার মৃত্যু মেয়ে হাসপাতালে
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ