X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৫ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপির রাজনৈতিক রোমাঞ্চ

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
০১ মে ২০১৯, ১৪:৩৩আপডেট : ০১ মে ২০১৯, ১৫:০৪

 

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা রাজনীতি চর্চার রোমাঞ্চ রাজনীতিকরা কতটা উপভোগ করেন জানা নেই, তবে রাজনীতিতে ত্যক্ত-বিরক্ত মানুষ রোমাঞ্চকর কাণ্ডে মজা পায় কখনও কখনও। জাতীয় পার্টির প্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বারবার দলীয় পদ-পদবী বণ্টনের সিদ্ধান্ত বদল করে একটা আলাদা ভাবমূর্তি সৃষ্টি করেছেন। অনেকেই বলছেন, জাতীয় পার্টির মতো সেনানিবাসে জন্ম নেওয়া বিএনপিও এমন একটি ভাবমূর্তি তৈরির চেষ্টা করছে।
অবশেষে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলটির বিজয়ী ছয় সদস্যকে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিএনপির শীর্ষ নেতা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গত বছরের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর চার মাস ধরে সংসদে না যাওয়ার ব্যাপারে দলটির শক্ত অবস্থান নমনীয় হলো রাতারাতি। একদিন আগেই শপথ নেওয়ায় জাহিদুর রহমানকে বহিষ্কারও করে দলটি। দেশের মানুষ এখন বিএনপির এই রাজনৈতিক রোমাঞ্চ উপভোগ করছে পুরোদমে।
আরেকবার বোঝা গেলো রাজনীতি সরলরেখায় চলে না। গণমাধ্যমের জন্য শিক্ষা এই যে, আজকের কোনও কথা বা বক্তব্য দিয়ে রাজনীতির আগামীকাল অথবা পরশুর গতি-প্রকৃতির পূর্বাভাস করা বিপজ্জনক। বিএনপির রাজনীতি কোন পথে চলবে তা বলা কঠিন। তবে আপাতত দলের সবার রাজনৈতিক পাঠের ভিত্তি এটুকুই যে, লন্ডনের ইচ্ছায় ঢাকায় শপথ। দলের লন্ডনি ইচ্ছার মাঝে কতখানি রাজনৈতিক ভঙ্গি বা কৌশল আছে তা বুঝতে আরও সময় পাড়ি দিতে হবে। তবে এই সময় বিএনপির আপনার চেয়েও আপন, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, রাজনীতির দাবার চালে হেরে গেছে বিএনপি। এর আগে তাদের সবার ঐক্যের স্তম্ভ ড. কামাল হোসেনের দল থেকেও নির্বাচিত দু’জন সংসদে গিয়েছেন দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে। এখন বিএনপির এই সিদ্ধান্তের পর অবশ্য বলা যাচ্ছে না সেটাও আসলে গোপন একটা সিদ্ধান্ত ছিল কিনা।
সংসদে না গিয়ে রাজপথে থাকা, সমাজের মানুষকে সরকারবিরোধী আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করা, মানুষের জন্য দাবি আদায় করা সহজ কাজ নয়। অবশ্য দলটি মানুষের দাবির খুব কাছে যেতে পেরেছে গত দশটি বছরে সে প্রমাণ খুব একটা নেই। দলের সবকিছু পরিচালিত একটি বৃত্তে, বেগম জিয়া ও তারেক রহমান বিষয়ক জটিলতায়। এখনও দলের একমাত্র ফোকাস দলীয় প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি।
বিএনপি মূলত ক্ষমতায় থেকে জন্ম নেওয়া দল। তবে অনেকদিন ধরে রাজপথে আছে। সে ক্ষমতায় যেতে চায়। কিন্তু এই ক্ষমতার রাজনীতি রূঢ় বাস্তব দিয়ে ঘেরা। সে রাজনীতির চর্চায় খুব কষ্ট, ঝুঁকিও বড় বেশি, নির্যাতিত হওয়ার সম্ভাবনা প্রভূত। আর তাতেই তারেক রহমানের অনীহা। তিনি বিদেশে থেকেই নির্দেশনা দেন এবং এমন সব নির্দেশনা দেন যেসবের বাস্তবায়ন খুব সহজ কাজ হয় না নেতাকর্মীদের জন্য।
সংসদে যাওয়ার এই রাজনৈতিক স্ট্র্যাটেজি দেখে অনেকেই তাজ্জব। তবে আমার মনে হয় ভালোই করেছেন তারেক রহমান। মির্জা ফখরুল ছাড়া আর কাউকে শপথ নেওয়া থেকে আটকানো যেত না। যত ক্ষুদ্রই হোক, এই কয়জনের একটি সংসদীয় দল হতো। আর বিএনপি হিসেবে পরিচিতি পেতো সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী সেই দলটিই। আসল বিএনপিকে অস্তিত্বহীন হওয়া থেকে রক্ষা করেছে তারেকের এই সিদ্ধান্ত।
স্পষ্টতই ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর থেকেই বিএনপি নেতৃত্ব রাজনীতির গভীরতা মাপছিলেন। কিন্তু বুঝে উঠতে পারছিলেন না কোথায় গিয়ে থামবেন। এই নির্বাচনে দলের যে ফলাফল হয়েছে তাতে সরকারকে একতরফা দোষ দিয়ে, আগের রাতে ভোট হয়েছে ইত্যাদি অভিযোগ করে রাজনীতির মাঠে নিজেদের খুব একটা গুরুত্ব বাড়াতে পারছিল না নেতারা। ঐক্যফ্রন্ট অকার্যকর হয়েছে নির্বাচনের পরপরই। নিজেদের দলীয় মনোবল আর চাঙ্গা করার কোনও উপায়ই খুঁজে পাচ্ছে না দলীয় নেতৃত্ব। এমন বাস্তবতায় এই ছয়জনের সংসদে যোগদানেই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে তারেক রহমানকে। নানা কিছুর বিবেচনায় সংসদীয় রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক থাকতে চাওয়ার এই সিদ্ধান্ত যৌক্তিক বলেই প্রতীয়মান হয়।
গণতন্ত্রে রাজনৈতিক দলের কাজ কী? দেশের মানুষের চাহিদা-আকাঙ্ক্ষাকে একটি নির্দিষ্ট দাবিতে পরিণত করে তার রূপায়ণের প্রচেষ্টাই রাজনৈতিক দলের কাজ। সেই বিবেচনায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একটা জটিল পরিবেশে বিএনপির এই ছয়জন জয়লাভ করে এসেছেন। ভোটারদের প্রতি তাদের একটা অঙ্গীকার আছে। ক্ষমতা ও সংসদের বাইরে থাকায় বিএনপি ও তাদের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা একটা বৈরী সময় পার করছে গত দশটি বছর। এমন বাস্তবতায় সংসদে বসে তাদের নেতারা এসব ইস্যুতে সরকারের ওপর কিছুটা হলেও চাপ প্রয়োগ করতে পারেন, যা সংসদের বাইরে বসে করা কঠিন। সংসদে জনগণের মত প্রভাবিত করতে, তাদের সমর্থন নিজের প্রতি আকর্ষণ করতে একটা প্রচেষ্টা গড়ে উঠবে দলের মধ্যে।
বিপ্লব করার আকাঙ্ক্ষা ভালো। তবে যে সংগঠনকে ভিত্তি করে বিপ্লবের পরিকল্পনা হয়, বিপ্লব ব্যর্থ হলে বেচারা সংগঠনকেই তার ঠেলা সামলাতে হয়। বিএনপির বেলায় তেমনটাই হয়েছে। তারেক রহমান দেশে ফিরে কবে আসল রাজনীতি করবেন সেটা দেখার অপেক্ষায় জাতি এবং তার দলের কর্মীরা। দেশের ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে নেমে দেশ থেকে দূরে বসে সবকিছু করা যায় না।
লেখক: প্রধান সম্পাদক, জিটিভি ও সারাবাংলা

/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
শিশুকে পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগে ৪ কিশোর সংশোধনাগারে
শিশুকে পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগে ৪ কিশোর সংশোধনাগারে
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ