X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রসঙ্গ ঈদের টিভি নাটক

সারওয়ার-উল-ইসলাম
১৬ আগস্ট ২০১৯, ১৪:৫৭আপডেট : ১৭ আগস্ট ২০১৯, ১৩:২৯

সারওয়ার-উল-ইসলাম

‘ঈদে কি আজকাল নাটক হয় টেলিভিশনে?’

প্রশ্নটা করেছেন একজন মাঝবয়সী ভদ্রলোক। মজা করেই প্রশ্নটা করেছেন তিনি।

কারণ, ঈদের নাটক এখন আর আমাদের টানছে না। কারও ভেতর সেই আগের মতো আগ্রহ নেই–এবার ঈদে কোন নাটকটা দেখবেন, কোন চ্যানেলে সেই নাটকটা প্রচারিত হবে। এ বিষয়ে তেমন একটা আলোচনাও হয় না।

ভালো গল্প, ভালো নাট্যকার, ভালো নির্মাতা নেই– এরকম অভিযোগ অনেকেই করে থাকেন।  নিতান্তই দায়সারা গোছের কথা এটা। বলতে হবে, তাই বলা।

এখনও কি দু’-একটা চ্যানেলে ভালো নাটক হয় না? অবশ্যই হয়।  নাটকের দু’-একজন মেধাবী মানুষ নিজেদের উদ্যোগেই সেই নাটকগুলো করেন। আর করার আগে চ্যানেল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সেই স্বাধীনতা নিয়ে থাকেন। তারা যা তৈরি করবেন তাতে কোনও হাত দিতে পারবেন না। আর স্পন্সরের ব্যাপারেও নাটকের সেই মেধাবী লোকদেরও খুব একটা ভাবতে হয় না।

তার মানে কী দাঁড়ালো? দাঁড়ালো এই যে, একটি দু’টি চ্যানেল এখনও চায় ভালো নাটক হোক, দর্শক দেখে তৃপ্তি পাক। তবে বেশিরভাগ চ্যানেল সম্পর্কে অভিযোগ– তারা ওই ‘ফঁড়িয়া’দের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। তারা নিজেদের রুচিবোধকে জলাঞ্জলি দিয়ে ‘ফঁড়িয়া’রা যা দেবে, তা-ই গিলবে। সেটা দেখে দর্শক গালাগাল দিলো কী দিলো না, সেটা নিয়ে তাদের কোনও মাথাব্যথা নেই। তাদের দরকার টাকা। সেটা ঠিকমতো এলো কিনা সেই চিন্তা থেকেই নাটক কিনে ঈদের সাতদিন প্রচার করে। সেই নাটক ‘ছ্যাবলামি’ না ‘ক্যাবলামি’ ভরপুর সেটা কোনও ব্যাপারই না তাদের কাছে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে–এসব নাটক কি প্রযোজক বা পরিচালকের কথা মতো নাট্যকার লিখে দেন? কারণ, কোনও নাট্যকারই একই ছাঁচে ফেলা একাধিক নাটক লিখতে উৎসাহী হবেন না। হাসির নাটক তৈরি করতে গিয়ে কী সব তৈরি করছেন পরিচালক, তিনি নিজেও হয়তো উপলব্ধি করতে পারছেন না। কারণ, তাঁর কিছুই করার নেই। তাকে বলা হয়েছে—‘এরা এরা নাটকে থাকবে, এই কাহিনির ওপর নাটক তৈরি হবে। তাহলেই চ্যানেলের কাছে বিক্রি করা যাবে। সুতরাং, আপনার সারা জীবনের শিক্ষা আর কমিটমেন্ট জলাঞ্জলি দেন। ঝাঁপাইয়া পড়েন ১০/১২টা নাটক তৈরি করতে।’

এই যদি হয় আমাদের নাটকের অবস্থা, তাহলে তো মজা করে অনেকেই বলবেন—ঈদে কি আজকাল নাটক হয় টেলিভিশনে? এর থেকে মুক্তি পাওয়ার কোনও সম্ভাবনাও নেই সহসা, সেটাও বোঝা যাচ্ছে। কারণ, গত কয়েক বছর ধরেই এই হাসির নামে ঈদের নাটকের ‘ছ্যাবলামি’র খবর অনেক নাট্যবোদ্ধারাই বেশ জোরেশোরে বলছেন, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। বরং ওই ঈদের নাটকের ‘ফঁড়িয়ারা’ আরও বেশ আঁটঘাট বেঁধেই নেমেছেন। চ্যানেলগুলোকে জিম্মি করে বস্তাপচা রদ্দি মাল গছিয়ে দিচ্ছে।

এখন কথা হচ্ছে এরা কারা? এদের শিকড় কোথায়? এরা কি আসলেই নাটকের লোক? নাটক সম্পর্কে আদৌ কোনও ধারণা আছে তাদের? নাকি আলু পটলের ব্যবসা করতে করতে অনেক টাকার মালিক হয়ে গেছে, এখন একটু আর্ট কালচারের লোকজনের সঙ্গে কাজ করে নিজেকে একটু জাতে ওঠানোর অপচেষ্টা করছে এরা? যাতে করে মানুষ বলবে, ‘আরে আমাদের ব্যাপারী সাহেব তো এখন রঙিন দুনিয়ার মানুষ।  নায়ক-নায়িকা-পরিচালক আর টেলিভিশন চ্যানেলের মালিকদের সঙ্গে ওঠবস করে।’

শুধু কি ওই শ্রেণির ‘ফঁড়িয়া’দের দোষ? আমাদের চ্যানেল কর্তৃপক্ষের নিজেদের কোনও রুচিবোধ থাকবে না? দেশে এমন অনেক টেলিভিশন চ্যানেল আছে, যেগুলোর মালিক কর্তাব্যক্তিরা শিল্প-সংস্কৃতির সঙ্গে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জড়িত। প্রথমদিকে তারা বেশ মানসম্পন্ন নাটক প্রচার করে সুনাম কুড়িয়েছেন। কিন্তু বর্তমানে তারাও গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়েছেন। জোকস বা কৌতুকধর্মী গল্পে নাটক তৈরি করে চ্যানেলে চালিয়ে দিচ্ছেন।  চুইংগামের মতো চিবিয়ে চিবিয়ে গল্প টানা হচ্ছে। এতে বোঝা যাচ্ছে টাকার কাছে শিল্প পরাজিত আজ।

নাটকের মান ধরে রাখার কোনও আগ্রহ নেই অনেকের। কিছু পরিচিত মুখ ঘুরেফিরে বিভিন্ন চ্যানেলে ঈদের সময় দেখা যায়। একইভাবে কথা বলার ঢং, জোর করে হাসানোর চেষ্টা।

অনেকে আবার বলে থাকেন, প্রযুক্তির এই অবাধ যুগে নাটক কেন দেখবে মানুষ। হাতের মুঠোয় মোবাইলে পেয়ে যাচ্ছে বিনোদনের নানা খোরাক। বিশেষ করে আজকের তরুণ প্রজন্ম সময় নষ্ট করে ঈদের নাটক দেখতে বসবে কেন টেলিভিশনের সামনে? তাদের সেই সময় কই? ধৈর্যই বা আছে ক’জনের? তাই ঈদের নাটক নিয়ে চ্যানেল কর্তৃপক্ষ খুব একটা ভাবে না বলেও অভিযোগ আছে। 

টেলিভিশনের সামনে তাহলে বসেন কারা?

যারা আজ  থেকে ১০-১২ বছর আগে থেকেই ঈদের নাটক দেখতে অভ্যস্ত। ঈদ মানে ওমুক নাট্যকারের নাটক দেখতে হবে, তমুক অভিনেত্রীর নাটক দেখতে হবে—এরকম মানসিকতা ছিল তাদের ভেতর। কিন্তু দিন যতই যাচ্ছে, সেই মানসম্পন্ন বা নির্মল হাসির নাটক দেখতে না পেয়ে টেলিভিশন থেকে কিছুটা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। তারপরেও টেলিভিশন নাটকের দর্শক নেই, এ কথা বলা যাবে না অবজ্ঞাভরে।

সারা বছরের কর্মব্যস্ততা, ঈদের দিনের নানা আনুষ্ঠানিকতা শেষে সন্ধ্যার পর একটু বসেন টেলিভিশনের সামনে। কিন্তু মনমতো না পাওয়ার বেদনাটাই বেশি।

আজকাল শোনা যায়, ঈদের সময় অনেক মৌসুমি ব্যবসায়ী টাকা নিয়ে ব্যবসা করতে আসেন। যেমনটা গরুর চামড়ার ক্ষেত্রে হয়। প্রকৃত চামড়ার ব্যবসায়ীদের দূরে ঠেলে দিয়ে ব্যবসা করে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা হাতিয়ে নিয়ে যার কোটি কোটি টাকা। এরা রাজনৈতিকভাবেও বেশ শক্তিশালী। টেলিভিশন নাটকের বেলায় এই রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালীরা প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন চ্যানেলের বিশেষ সময় কিনে নেন। পরে নিজেদের পছন্দে কম বাজেটে তৈরি নাটক চ্যানেলের কাছে বিক্রি করেন।

সমস্যাটা হয় তখনই। কারণ, এই ব্যবসায়ীরা টাকা কামানো বোঝে শুধু। এভাবে চলতে থাকলে কীভাবে ভালো নাটক পাওয়া সম্ভব?

তারপরেও সম্ভাবনার জায়গাটা একেবারেই নিঃশেষ হয়ে যায়নি। শুধু প্রয়োজন সদিচ্ছা। চ্যানেল কর্তৃপক্ষের অবশ্যই বিজ্ঞাপন প্রয়োজন। তা না হলে প্রতিষ্ঠান চালানো সম্ভব না। কিন্তু ঈদের নাটকের যে ঐতিহ্য আমাদের, সেই জায়গাটা ধরে রাখার জন্য কিছুটা ছাড় দিয়ে হলেও নাটক নির্মাণ করা প্রয়োজন।

আমরা সেই সম্ভাবনা দেখতে চাই।

/এপিএইচ/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
পুরান ঢাকার কেমিক্যাল কারখানা সরাতে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ
পুরান ঢাকার কেমিক্যাল কারখানা সরাতে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ
ওরসে ঝগড়া, সেই শত্রুতায় ছুরিকাঘাতে যুবককে হত্যা
ওরসে ঝগড়া, সেই শত্রুতায় ছুরিকাঘাতে যুবককে হত্যা
ন্যাপ বাস্তবায়নে উন্নত দেশগুলোর প্রতি পর্যাপ্ত সহায়তার আহ্বান
ন্যাপ বাস্তবায়নে উন্নত দেশগুলোর প্রতি পর্যাপ্ত সহায়তার আহ্বান
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ