X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

দুর্বৃত্তের রাজনীতিকায়ন

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৫:৫৬আপডেট : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৬:১১

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা যাদের বৈধ কোনও ব্যবসা নেই, তাদের বাসা থেকেই বের হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। তাদের বাসায় ভল্ট আছে, টাকা গণনার মেশিনও নাকি আছে। মঙ্গলবার র‌্যাব যখন গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এনামুল হক ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রুপন ভূঁইয়ার বাসায় তল্লাশি চালাচ্ছিল, সে খবর টেলিভিশনে, অনলাইনে প্রচারিত হচ্ছিল, মানুষ তখন বিস্ময়ে দেখল তাদের বাড়ির ভেতরের ভল্ট থেকে বের হলো ৫ কোটি ৫ লাখ টাকা। প্রতিদিন এত নগদ টাকা তারা বাসায় আনতো যে, সেটা রাখারও জায়গা নেই আর তাদের বাড়িতে। তাই তারা শুরু করেছিল সোনা কেনা।
অনেকদিন ধরেই বলা হচ্ছে, ব্যাংকে তারল্য সংকট বিরাজমান। এই নেতাদের বাসা যেনো একেকটি ব্যাংক।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দুর্বৃত্তায়ন নতুন নয়। আমরা সব সময় বলি সামরিক শাসকরা দুর্বৃত্তায়নকে প্রশ্রয় দিয়েছে। কিন্তু গণতান্ত্রিক আমলে যেনো তা আরও বিকশিত হয়েছে। ক্যাসিনো খালেদ, টেন্ডার মাফিয়া জি কে শামীমের পর গেন্ডারিয়ার এই নেতারা জানিয়ে দিলো আমাদের, রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন একটি শিল্পে পরিণত হয়েছে। দুর্বৃত্তের রাজনীতিকায়নের এই চিত্রটি উন্নয়নও বটে।

রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন বলতে আমরা গুন্ডামিকে জেনে এসেছি। কিন্তু এর এক নতুন দিক উন্মোচিত করেছেন ক্যাসিনো খালেদরা। অবিশ্বাস্য গতিতে ধনী হওয়ার এমন সব রোমহর্ষক অমৃতবচন শুনতে শুনতে আমাদের রাজনৈতিক সচেতনতা সম্পর্কে কোনও সংশয় থাকে না। বরং আমরা উল্লাসে করতালি দিচ্ছি, দেশ কতটা এগিয়ে গেছে, ঝলমলে ক্যাসিনো হচ্ছে, বাড়িতে কোটি টাকা পড়ে থাকে।

শাসক দলের রাজনীতিতে যা ঘটছিল তা এতটাই উদ্বেগজনক যে, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীকে কড়া বার্তা দিতে হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সাহসের সঙ্গে নিজ দলের নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেন। এখন দায়িত্বটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। প্রত্যাশা যে তারা নিরপেক্ষভাবে কাজটা করবেন।

রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন বন্ধে প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগকে স্বাগত জানাতেই হয়। এই দুর্বৃত্তায়ন পরিবর্তিত জমানার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য নয়। দীর্ঘকাল ধরেই এ দেশের রাজনীতিতে দুষ্কৃতদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু এই জমানাতেও সেই ধারার পরিবর্তন ঘটেনি, বরং বেড়েছে। ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ পদে পরিবর্তন এসেছে। আর যুবলীগের নেতাদের কাণ্ড উন্মোচিত হচ্ছে একটা একটা করে। যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ভূমিকা, পুলিশের ভূমিকা এখন প্রশ্নবিব্ধ। শাসকদলের দুষ্কৃতকারীদের উদার প্রশ্রয় দানের তৎপরতাই পরিস্থিতিকে এতটা খারাপের দিকে নিয়েছে বলেই মনে করছে সবাই।

প্রধানমন্ত্রীর বার্তাটি পরিষ্কার। দুর্বৃত্তদের ওপর নির্ভর করে কি আওয়ামী লীগ দেশ চালাতে চায় না। তিনি নাগরিকদের নিশ্চিত করতে চান দুর্বৃত্ত যারা কায়েম করেছে এলাকায় এলাকায়, পাড়ায় পাড়ায়, তাদের সময় ফুরিয়েছে।

বলা হয়, ধনতন্ত্রে এক ধরনের আদিম স্পৃহা বা অ্যানিমাল স্পিরিট থাকে পুঁজি বৃদ্ধির জন্য। ক্যাসিনো খালেদ বা জি কে শামীমরা কি তবে সেই আদিম স্পৃহার প্রদর্শন করতেই এমন উন্মত্ত হয়ে উঠেছিলেন?

১৯৭৫-এ বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে পাকিস্তানপন্থীরা এদেশে যে রাজনীতির সূচনা করেছিল, তার মাধ্যমেই সামরিক শাসকদের আমলে এক শ্রেণির রাজনীতিক রাজনীতিতে দুর্বৃত্তায়ন এবং রাজনৈতিক আধিপত্যকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন অসামাজিক কাজ করত। দুঃখজনক হলো, গণমানুষের দল আওয়ামী লীগ কী ছিল, কী হলো আজ। আওয়ামী লীগের মতো আদর্শিক গরিবের দল আজ দুর্নীতিবাজ, চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ, ক্যাসিনোবাজ, মনোনয়ন, পদবি কমিটি বাজিকরদের আশ্রয়স্থল হয়, তখন আর কার কাছে যাবে মানুষ?

আজ যারা এসব করছে, তারা জানে না আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ও আদর্শের কথা। তাদের কারণে সমাজ জীবনে বিপর্যয় সৃষ্টি হয় কি না, তা নিয়ে বিন্দুমাত্র চিন্তিত নয় তারা। এ দেশের লাখো শিক্ষিত যুবক যখন একটা চাকরির খোঁজে মরিয়া, জীবনের সঙ্গে লড়ছে বেঁচে থাকার জন্য, তখন এ জুয়াড়ি রাজনীতিকদের দেখে তারা আরও হতাশ হয়। তারা এখন নীরব দেখছে কী শহরাঞ্চল, কী গ্রামাঞ্চল, প্রায় সর্বত্রই প্রভাবশালী নেতার ছত্রছায়ায় থাকা হাফ-নেতারা জমির দালালি, ঠিকাদারি, ক্যাসিনোবাজি পেশা দখল করে নিলো।

শেখ হাসিনা পরিশ্রম করছেন। তিনি সাধারণ মানুষের মনে একটি উন্নয়ন স্পৃহা তৈরি করেছেন। সাধারণ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের যে সংগ্রাম তিনি করছেন, তার সঙ্গে যেতে পারছেন না তারই দলের কিছু সহযোগী সংগঠনের নেতা। তারা পাড়ায়, পাড়ায়, জেলায় জেলায় ক্ষমতার মোড়লতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন।

কেউ এসেছেন ফ্রিডম পার্টি থেকে, কেউবা যুবদল থেকে। কিন্তু এখন তারা যুবলীগ করেন। এই যে পদ পদবি বিক্রি করে ভাড়াটে লোক দলে প্রবেশ করানো হয়েছে, তার সাজাও দেখতে চান দলের ত্যাগী কর্মীরা। আগের আমলের অনিয়ম বা অসামাজিক কাজের মহিরুহগুলো রং পাল্টে একই থেকে গিয়েছে। অন্যদিকে চারাগাছগুলো মহিরুহ হয়ে উঠেছে। এই চারাগাছ থেকে মহিরুহ হয়ে ওঠার প্রক্রিয়াতে কিছু পরিবর্তন এসেছে। জামায়াত-বিএনপি আমলের চারাগাছ সিন্ডিকেট আর চাঁদাবাজি যেমন এখন মহিরুহে পরিণত হয়েছে, তেমনই ওই তাদের ব্যবসায় অভিনবত্ব এসেছে। তার নাম ক্যাসিনো।

সাহিত্য সংস্কৃতির কাল বদল নিয়ে বাজারে কত তত্ত্ব আছে। যুবলীগের জুয়াড়িরা রাজনীতিতে দুর্বৃত্তায়নের যে অভিনবত্ব এনেছেন, তা নিয়ে এখন গবেষণা হতে পারে।

লেখক: প্রধান সম্পাদক, জিটিভি ও সারাবাংলা

/এমএমজে/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে করারোপ: আইনের বিশ্লেষণ
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে করারোপ: আইনের বিশ্লেষণ
ইউক্রেনের মার্কিন সামরিক সহায়তা আইনে স্বাক্ষর বাইডেনের
ইউক্রেনের মার্কিন সামরিক সহায়তা আইনে স্বাক্ষর বাইডেনের
নামাজ শেষে মোনাজাতে বৃষ্টির জন্য মুসল্লিদের অঝোরে কান্না
নামাজ শেষে মোনাজাতে বৃষ্টির জন্য মুসল্লিদের অঝোরে কান্না
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগে বৃষ্টির আভাস
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগে বৃষ্টির আভাস
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ