X
মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪
৫ চৈত্র ১৪৩০

তালিকাটি প্রকাশের নির্দেশ দিন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী

হারুন উর রশীদ
০৩ অক্টোবর ২০১৯, ১৪:০৮আপডেট : ০৩ অক্টোবর ২০১৯, ১৪:০৯

হারুন উর রশীদ বাংলাদেশে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে একটি নতুন দিকের উন্মোচন হয়েছে। দুর্বৃত্তায়নের সন্ধির একটি নতুন মাত্রার প্রকাশ ঘটেছে। বোঝা গেছে রাষ্ট্রের বিভিন্ন সেক্টরে পচন ধরেছে। আর এই পচনের বিস্তৃতি মাথা থেকে পা পর্যন্ত। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত।
আমি মনে করি না পতিত এসব মানুষ সংখ্যায় খুব বেশি। কারণ রাষ্ট্র বা সমাজের অধিকাংশ মানুষই দুর্নীতিবাজ নয়। এর তিনটি কারণ—১. মানুষ প্রধানত শুভবাদী, ২.দুর্নীতির সঙ্গে ক্ষমতার সম্পর্ক আছে, ৩. ক্ষমতা থাকে গুটিকয়েক মানুষের হাতে।
ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে এখন পর্যন্ত যারা গ্রেফতার হয়েছেন, তারা মূলত প্রকাশ্য প্লেয়ার। এখন পর্যন্ত যে কালো টাকা উদ্ধার হয়েছে, তা মোট কালো টাকার খুব সামান্যই। মহাসাগরে লুকোনো বিশাল হিমবাহের দৃশ্যমান অংশ। কিন্তু এর ভেতরে এবং বাইরে আরো অনেক বলয় আছে। এটা আসলে দুর্বৃত্তায়নের সামান্য প্রকাশ মাত্র। এই দুর্বৃত্তায়নে সমাজের গুরুত্বপূর্ণ অংশের মানুষেরা জড়িয়ে পড়েছেন—
১.রাজনীতিবিদ, ২. নানা ক্ষেত্রে প্রভাবশালী ব্যক্তি,
৩. প্রশাসনিক কর্মকর্তা, ৪. আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ৫. সাংবাদিক।
অভিযান শুরুর পর এটা স্পষ্ট, বেশ কয়েক বছর ধরে এই সিন্ডিকেটেড ক্যাসিনো ব্যবসা এবং টেন্ডার ব্যবসা চলছে। আর এই নানা শ্রেণি ও পেশার মানুষ যার যার অবস্থান থেকে এটাকে টিকিয়ে রাখতে ও বিস্তার ঘটাতে ভূমিকা পালন করেছেন ও সুবিধা নিয়েছেন। তাই কে কীভাবে সুবিধা নিয়েছেন এবং এই দুর্বৃত্তায়নে সহায়তা করেছেন, তা জানা দরকার। প্রকাশ হওয়া প্রয়োজন। আর তা যদি না হয়, তাহলে গুটিকয়েক মানুষের অবৈধ কাজের দায় ওই পেশা ও শ্রেণির সব মানুষের ওপর পড়বে। নিজ নিজ পেশা ও শ্রেণির মানুষ হয়তো তাদের পেশা ও শ্রেণির দুর্বৃত্তদের চেনেন, কিন্তু সাধারণ মানুষ চেনেন না। এসব দুর্বৃত্তকে চিহ্নিত না করলে সবাইকে সাধারণ মানুষ সন্দেহ করবেন। সবার প্রতি একধরনের আস্থাহীনতা তৈরি হবে। দুর্বৃত্তরা এটাই চায়। তারা চায় সবাইকে অপবাদে ফেলে তাদের অপরাধ ঢাকতে। তারা চায় তাদের মতো সবাইকে মানুষ একই চোখে দেখুক। এতে তাদের অপরাধ সমাজের স্বাভাবিক অবস্থার রূপ পাবে, যা রাষ্ট্র ও সমাজের জন্য ভয়ঙ্কর।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, এরইমধ্যে সংবাদমাধ্যমে নানা তথ্য আসছে। যারা আটক হয়েছেন তারা যেমন তথ্য দিচ্ছেন, তেমনি যারা নজরদারিতে আছেন তারাও তথ্য দিচ্ছেন। বিশেষ করে এই অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসার ‘মূল আকর্ষণ’ ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট আসলে সব স্তরের তথ্যের ব্যাপারে পারফেক্ট ব্যক্তি। তাকে দিয়েই রাষ্ট্রের দুর্বৃত্তায়নের চেইনটি জানা সম্ভব। তিনি হতে পারেন দুর্বৃত্তায়নের ‘রাজসাক্ষী’।
তাদের মাধ্যমে জানা সম্ভব–
১.উপরের সারিতে কারা আছেন, কারা তাদের ব্যবহার করেছেন এবং অবৈধ অর্থ আয়ের মেশিন হিসেবে ব্যবহার করেছেন; ২. কারা হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছেন এবং লাভবান হয়েছেন; ৩.কারা সুবিধার বিনিময়ে সহযোগিতা করেছেন; ৪. কারা সুবিধা নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এবং ঘটনা প্রকাশে বিরত থেকেছেন।

সংবাদমাধ্যমে নানা তালিকার কথা প্রকাশ হচ্ছে। রাজনীতিবিদদের তালিকা, পুলিশের তালিকা, ক্রীড়া সংগঠক ও প্রভাবশালীদের তালিকা, সাংবাদিকদের তালিকা। কিন্তু কোনও তালিকাই সুনির্দিষ্ট নয়। ফলে এতে সন্দেহ অবিশ্বাস বাড়ছে। পানি ঘোলা হচ্ছে। সত্যিকারের যারা অপরাধী তাদের উল্টো সুবিধা হচ্ছে। যারা এর সঙ্গে জড়িত নন, তারাও সন্দেহের মধ্যে পড়ে যাচ্ছেন। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
তাই একটি স্বাধীন কমিশন বা নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি করে বিভিন্ন সেক্টরে যারা এই দুর্বৃত্তায়নের সঙ্গে জড়িত, তাদের চিহ্নিত করা হোক। শুধু তাই নয়, অপরাধের ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে তাদের তালিকা প্রকাশ ও তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, এই ভয়াবহ দুর্বৃত্তায়ন কয়েকজন ওসি, এসআই বা পুলিশ কনেস্টবলের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। যারা আটক হয়েছেন, তারাই শেষ নয়। এর ওপরে আরো অনেক বড় নেতা আছেন। আছেন অনেক বড় কর্মকর্তা। আছেন সাংবাদিক। তাই সুষ্ঠু তদন্ত করে এই দুর্বৃত্তায়নের সন্ধি ভেঙে দিতে হবে। বড়রা পার পেয়ে যাবেন আর ছোটরা ধরা খাবেন, এটা তো হতে পারে না। আর গুটিকয়েক দুর্বৃত্তের জন্য সবাইকে তো অপবাদ দেওয়া যায় না।
তাই এখন এই অপরাধের সঙ্গে জড়িত সবার তালিকা প্রকাশ রাষ্ট্র এবং সামাজিক কাঠামোর মধ্যে বিশ্বাস ও আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য খুবই প্রয়োজন। প্রয়োজন রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও সামাজিক দুর্বৃত্তায়ন দূর করার। প্রয়োজন দুর্বৃত্তায়নের সন্ধিকে ভেঙে দেওয়ার।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, এটা আপনিই পারবেন। আপনি যখন দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে আবারো আপনার অবস্থানকে পরিষ্কার করেছেন, অভিযান শুরু করেছেন, আমরা আশা করি আপনি এর কোনও লেজ রাখতে দেবেন না। কোনও মাথাও না। দুর্নীতির বিরুদ্ধে আপনার এই অভিযানে দেশের মানুষ আপনার সঙ্গে আছে।
লেখক: সাংবাদিক
ইমেইল:[email protected]

/এসএএস/এমএমজে/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
এবার রাজশাহীর আম গাছে প্রচুর মুকুল, স্বপ্ন বুনছেন চাষিরা
এবার রাজশাহীর আম গাছে প্রচুর মুকুল, স্বপ্ন বুনছেন চাষিরা
টিভিতে আজকের খেলা (১৯ মার্চ, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (১৯ মার্চ, ২০২৪)
চীনে ৯ বছরে প্রথমবারের মতো বিয়ের সংখ্যা বেড়েছে
চীনে ৯ বছরে প্রথমবারের মতো বিয়ের সংখ্যা বেড়েছে
‘যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করেছে, রাশিয়ায়ও চেষ্টা করেছে’
আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক দলের প্রধান ম্যাককিনি‘যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করেছে, রাশিয়ায়ও চেষ্টা করেছে’
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ