X
বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪
৫ বৈশাখ ১৪৩১

রঙিলা পেশাজীবী

তুষার আবদুল্লাহ
১৯ অক্টোবর ২০১৯, ১৭:২৩আপডেট : ১৯ অক্টোবর ২০১৯, ১৭:২৪

তুষার আবদুল্লাহ এই বিবর্ণ সময়ে উজ্জ্বল, রঙিন আমাদের পেশাজীবীরা। সাংবাদিক, শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আমলা ও শিল্পীরা রঙধনু রঙে রঙিন। বিবর্ণ সময় বলছি এজন্য যে, সামাজিক বিভিন্ন সংকটে আছি। সমাজ রাজনীতিবিচ্ছিন্ন কোনও জনপদ নয়। মূলত রাজনীতি থেকে আদর্শবাদী মানুষেরা নির্বাসনে যাওয়ার কারণেই সমাজ রোগাক্রান্ত হচ্ছে। ডেঙ্গু, চিকনগুনিয়ার পাশাপাশি জিকা বা ইবোলা ভাইরাস যেমন আতঙ্ক ছড়াচ্ছে, তেমনি দুর্নীতি রোগটি পুরনো হলেও, নিত্য প্রকাশ পাচ্ছে তার অজানা, ভয়ঙ্কর রূপ। এখন আর পদধারী ব্যক্তি নয়, সাধারণ চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী বা ছাত্রও ঈর্ষণীয়, চমকে দেওয়ার মতো সম্পদের মালিক হয়ে যাচ্ছে। এমন রহস্য উন্মোচিত। কেমন করে হচ্ছে? একজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী যখন শিক্ষক নিয়োগে প্রভাব বিস্তার করবেন, যখন টেন্ডারে তার সিদ্ধান্ত নেওয়ার কিংবা প্রভাব খাটানোর সুযোগ থাকবে, তখন তার পকেটে তো ভুবনজয়ের সোনার চাবি থাকবেই। ছাত্রের বেলায়ও একই কথা। বিদ্যায়তন স্তরের সংগঠনের নেতা হলেও সর্বোচ্চ দায়িত্বে থাকা শিক্ষকও তাকে সমীহ করেন। অতএব বিদ্যায়তনকে শাসন করার পরগনা ভাবতেই পারে সে। এক সময়ের আমলারা ভালোই ‘ছল-চাতুরি’ জানতেন। সব রাজার রাজত্বে ভালো থাকার মন্ত্র তাদের জানা ছিল। আমলারা ক্রমশ সরল হয়ে উঠেছেন! লোভও কমেছে মনে হয়! তারা সব রাজত্বের মনিমুক্তার লোভে নেই। তাই সরলভাবে নিজেদের আনুগত্য প্রকাশ করতে ‘নৈতিক’ বাঁধে আটকাচ্ছেন না। ২০০১ সময়কাল থেকে তাদের এই মনস্তত্ত্বের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন সাংবাদিক, শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলীরাও।

আগে এই পেশাজীবীদের দলীয় আনুগত্য বা কোনও রাজনৈতিক আদর্শের প্রতি বিশ্বাস ছিল না—এমন বলছি না। কিন্তু নিজ পেশার কৌলীন্য ধরে রাখা ছিল তাদের অগ্রাধিকারের বিষয়। কারও কারও পেশাগত কাজে হয়তো তার বিশ্বাস বা আনুগত্যের ছটা পাওয়া যেতো, কিন্তু পেশাকে দূরে রেখে নিজেকে বিকিয়ে দেওয়ার প্রবণতা ছিল কম। শেষ বিচারে তারা পেশাজীবীই ছিলেন। ফলে রাজনীতিবীদরাও তাদের সম্মান করতেন। তাদের যেকোনও অভিমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতেন। দিন বদলেছে। বাংলাদেশের মানুষের আর্থিক সচ্ছলতা বাড়ার সঙ্গে পেশাজীবীরাও নিজেদের পকেটে জোয়ার বইয়ে দিতে চেয়েছেন। পেশার অহংবোধ মানুষটিকে যে বিনয়ী করে তৈরি করে, সেই সূত্র বদলে গেলো। শিল্পগোষ্ঠীর মালিকের জৌলুস আর সাংবাদিক, শিক্ষক, শিল্পীর জৌলুসের ফারাক কমে আসতে শুরু করলো। সাংবাদিক, শিক্ষক, সংস্কৃতিকর্মীকে ‘বাণিজ্যিক যোগাযাগপত্র’ বাড়িয়ে দিয়ে, মুখে চাপার জোর বাড়িয়ে প্রমাণ দিতে হতো না, তিনি নিজ পেশায় তো বটেই, সমাজে কতটা প্রভাবশালী এবং সরকারের কত নিকট স্বজন। যখন থেকে পেশাজীবীরা এই পথে হাঁটতে শুরু করলেন, তখন থেকে আর তাদের অভিমত রাজনীতিবীদরা কানে তুলছেন না। এখন বরং রাজনীতি ও ক্ষমতানীতির সঙ্গে যুক্ত যারা তাদের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ীই পেশাজীবীরা নড়েন-চড়েন, দুই-চার কথা বলেন। অন্যদিকে পরিবেশকে যতই ভালো ও ভেজালমুক্ত বলি না কেন, রাজনীতিমনস্করা ধীরে ধীরে দেয়ালের আড়াল হয়ে যাচ্ছেন। অসৎরা লাফ দিয়ে এসে রাজনীতির অ্যাপ্রোন পরে  বসে পড়ে জপমালা জপতে শুরু করেছে কিছু অদ্ভুত মানুষ। যাদের সঙ্গে আদর্শ আর  জনমানুষের সম্পর্ক নেই।

এ কথা প্রমাণিত—স্বৈরাচার সরকারগুলো এসে এমন অসৎদের রাজনীতিবিদ বানিয়েছে। তাদের পতাকাসমেত গাড়িতে চড়িয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্য সেই, রেওয়াজ থেকে বাংলাদেশ বেরিয়ে আসতে পারেনি। বরং আরও তীব্রভাবে ওই রেওয়াজই রাজনৈতিক সংস্কৃতি হয়ে উঠছে। ফলে রাজনীতি এখন ‘করপোরেট’ বা ‘শিল্পগোষ্ঠীর’ আদল নিয়েছে। এখানে সময় দেওয়া বা যুক্ত হওয়ার তুল্য কোনও বিনিয়োগ নেই। তাই পেশাজীবীদের মধ্যে যারা রঙিন, নানা রঙে তারা পরিচিত। ক্ষমতায় থাকলে উজ্জ্বল না থাকলে একটু ফ্যাকাশে। সেই পেশাজীবীরা এখন সোজাসাপ্টা নিজেদের রঙের তীব্রতা জানান দিচ্ছেন। রঙের বদৌলতে পদ পেয়েও সাধ মিটছে না। এখন পদ ছেড়ে দিয়ে আরও জোরালোভাবে আঁকড়ে ধরতে চায় ক্ষমতার বৈঠা। এই মাঝিদের নিয় রাজনীতি, গণতন্ত্র, পেশার উৎকর্ষ ও মানসম্মত শিক্ষার বন্দরে আমরা কী করে পৌঁছাবো, ভরসা রাখতে পারছেন?

মুশকিল হলো এই প্রজাতির পেশাজীবীরা সরকার বা রাজনৈতিক দলকেও  বিব্রত করে। বাহারি রঙের এই পেশাজীবী মুক্ত হলে রাজনৈতিক দলগুলোও ভারমুক্ত হয়।

লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি

 

/এসএএস/এমএনএইচ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
যে কারণে ১৫ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপান ছাড়তে উৎসাহী হবে
যে কারণে ১৫ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপান ছাড়তে উৎসাহী হবে
বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের প্রথম পতাকা উত্তোলন দিবস পালিত হলো কলকাতায়
বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের প্রথম পতাকা উত্তোলন দিবস পালিত হলো কলকাতায়
সরকারি চাকরির বড় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, বেতন স্কেল ৯৩০০-২২৪৯০ টাকা
সরকারি চাকরির বড় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, বেতন স্কেল ৯৩০০-২২৪৯০ টাকা
মিয়ানমারে বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রিত শহরে কোণঠাসা জান্তা
মিয়ানমারে বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রিত শহরে কোণঠাসা জান্তা
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ