X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

আবারও বেসিক ব্যাংক

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
২৫ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৩:৫৩আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৩:৫৪

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা আবারও গণমাধ্যমের শিরোনাম বেসিক ব্যাংক। বড় চুরির পর ধুকে ধুকে চলা এই বিশেষায়িত ব্যাংকে আরেক অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটলো। ব্যাংকটির উচ্চতর বেতন-স্কেল কমানো হচ্ছে। লোকসান ঠেকানো এবং রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকের সঙ্গে সমন্বয় করে কর্মকর্তাদের বেতন কমানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। ব্যাংকটি আর্থিক খাতে বিবেচনা করা হলে এই সিদ্ধান্ত যৌক্তিক। তবে দেশের আইনে বা প্রথা অনুযায়ী কর্মীদের যে সুবিধা একবার দেওয়া হয়, তা ফিরিয়ে নেওয়া যায় কিনা, সেটা বড় বিতর্কের বিষয়।
গত সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) স্বতন্ত্র বেতন-কাঠামো বহাল রাখার দাবিতে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রফিকুল আলমকে সাড়ে ৫ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রেখেছিলেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন এ মজিদ বলেছেন, ‘বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বতন্ত্র বেতনকাঠামোতে বেতন দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ব্যাংকটি বড় ধরনের লোকসানে থাকার কারণে বিদ্যমান কাঠামোতে বেতন দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তাই বেসিক ব্যাংকের বর্ধিত বেতন কাঠামো বাতিল করা হয়েছে।’ হ্যাঁ,ভালো নেই বেসিক ব্যাংক। ২০০৯ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে চার বছরে বেসিক ব্যাংক থেকে ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বের করে নিয়ে যাওয়া হয়। টাকার অঙ্কে দেশের ইতিহাসে এককভাবে এটাই সবচেয়ে বড় ঋণ কেলেঙ্কারি। পরবর্তীতে দুর্নীতির কথা প্রকাশ্যে আসার পর একে ঘিরে নানা ঘটনা ঘটেছে, যেগুলো আরও বেশি হতাশাব্যঞ্জক। একটি প্রতিষ্ঠানকে রক্ষা করার জন্য যাদের ওপর দায়িত্ব থাকে, তারাই যে লুণ্ঠনকারী হয়ে উঠতে পারে, তার একটি জ্বলন্ত উদাহরণ বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি। ব্যাংকটি লুণ্ঠন নিয়ে যতগুলো তদন্ত হয়েছে, তার প্রত্যেকটিতেই ব্যাংকটির তৎকালীন চেয়ারম্যান আব্দুল হাই বাচ্চুকে দায়ী করা হচ্ছে। ২০১৫ সালে দুর্নীতি দমন কমিশন এই কেলেঙ্কারি নিয়ে ৫৬টি মামলা দায়ের করে। কিন্তু যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সেই বাচ্চু ও পরিচালনা পর্ষদের কাউকেই মামলাগুলোতে অভিযুক্ত করা হয়নি।

বেসিক ব্যাংকের আর্থিক স্বাস্থ্য খারাপ। কিন্তু বেতন কমিয়ে দেওয়ার এমন সিদ্ধান্ত সামগ্রিকভাবে ব্যক্তি খাতে আর্থিক খাতের জন্য খারাপ সংকেত। নব্বইয়ের দশক থেকে মেধা আর দক্ষতায় বিকশিত ব্যাংকিং খাতে এই নজির একবার স্থাপিত হলে এর সুদূর প্রসারী প্রভাব পড়বে পুরো ব্যাংকিং খাতে, তথা অর্থনীতিতে।

ব্যাংকিং খাতে বিশৃঙ্খলা, অনিয়ম-দুর্নীতি নতুন নয়। বিশেষ করে রাজনৈতিক বিবেচনায় নতুন নতুন ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পর থেকে সংকট বারবার ঘনীভূত হয়েছে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক হস্তক্ষেপ করেও নতুন প্রজন্মের ব্যাংকগুলোকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে পারছে না। কিন্তু ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনের সময় আমাদের প্রত্যাশা ছিল— আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে এবার সুশাসনে অনেক বেশি নজর দেবে। হয়তো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তরফে সেই চেষ্টা আছেও। কিন্তু দেশের ব্যাংকিং খাতে সুশাসন এখনও অধরা। একটা পর্যবেক্ষণ তৈরি হয়েছে যে, অর্থমন্ত্রণালয় ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূলধারার ব্যাংকিং-কে এড়িয়ে গিয়ে শুধু বেসরকারি ব্যাংকের উদ্যোক্তা শ্রেণির সহায়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে।

মালিকদের সুবিধা দিতে সিআরআর কমানো, ঋণ খেলাপিদের একের পর এক সুবিধা দেওয়া, মালিকদের পারিবারিক নিয়ন্ত্রণ দীর্ঘস্থায়ী করাসহ সব আয়োজন বাংলাদেশের ব্যাংকিং তথা আর্থিক খাতকে নতুন দিকে নিয়ে যাচ্ছে, যেখানে ব্যাংকের অর্থের যে আসল মালিক— অর্থাৎ সাধারণ সঞ্চয়ী, তাদের উপেক্ষা করা হচ্ছে সব ক্ষেত্রে।

ঋণ নিয়ে ফেরৎ দিচ্ছে না ঋণগ্রহীতারা এবং দিনে দিনে টাকার অঙ্কটা বড় হচ্ছে— যা অর্থনীতির জন্য বড় চাপ। সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের কারণে ব্যাংকে তারল্য সংকট হয় না ঠিকই, তবে এটি সুস্থ লক্ষণ নয়। সরকার শুধু সুদের হার নির্ধারণ করে দিলে হবে না। সুদের হার নির্ধারণের বিষয়গুলোতেও নজর দিতে হবে। মন্দ ঋণ নামের বিষফোঁড়া বড় হতে থাকলে সুফল মিলবে না। ব্যাংকিং খাতে আমূল সংস্কার করতে হবে।কিন্তু সেটা কবে এবং কীরকম, সেটা কেউ জানে না।

খারাপ ঋণ আর আর্থিক অনাচারের চাপে গোটা ব্যাংক ব্যবস্থা রসাতলে যাওয়ার উপক্রম বলেই মনে করেন অনেক সাবেক ব্যাংকার। তবে তারা এটাও বলেন যে, তাই বলে বসে থাকলে ভুল করা হবে। পুঁজিবাদী ব্যবস্থা স্থির জলাশয়ের মতো নয়, সেখানে ঢেউয়ের ওঠাপড়া চলবেই। যাবতীয় আর্থিক দুরাচার বন্ধ না করা গেলে অর্থনীতিতে ঝাপ্টা লাগতে পারে। আর্থিক অবস্থা এখন যেখানে দাঁড়িয়ে, তাতে রাজস্ব ঘাটতি আর ব্যাংকিং খাত থেকে সরকারের ঋণ নিয়ে দুশ্চিন্তা থাকাটা স্বাভাবিক। আমাদের সমস্যা হলো— রোগীকে ঠিকঠাক দাওয়াই দেওয়া হচ্ছে না, বরং মাঝে মধ্যে ভুল ওষুধ দিয়ে সমস্যা বাড়ানো হচ্ছে। অর্থনৈতিক বোধের জায়গা থেকে যদি ব্যবস্থা নেওয়া যায়, নিশ্চয়ই এই খাতে সুস্থতা ফিরবে।

লেখক: প্রধান সম্পাদক, জিটিভি ও সারবাংলা

 

/এসএএস/এপিএইচ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
গরমে স্বস্তির খোঁজে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সচেতনতার আহ্বান ডিএমপির
গরমে স্বস্তির খোঁজে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সচেতনতার আহ্বান ডিএমপির
৩ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না কয়েকটি এলাকায়
৩ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না কয়েকটি এলাকায়
জাবির সিনেট ও সিন্ডিকেট প্রতিনিধি নির্বাচন: বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের নিরঙ্কুশ জয়
জাবির সিনেট ও সিন্ডিকেট প্রতিনিধি নির্বাচন: বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের নিরঙ্কুশ জয়
ঝুঁকি নিয়ে পজিশন বদলে সব আলো কেড়ে নিলেন রাফায়েল
ঝুঁকি নিয়ে পজিশন বদলে সব আলো কেড়ে নিলেন রাফায়েল
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ