X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

ভরসা আছে

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
০৮ জানুয়ারি ২০২০, ১৮:০৮আপডেট : ০৮ জানুয়ারি ২০২০, ১৮:১৪

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের এক বছর পালন করছে আওয়ামী লীগ। মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) জাতির উদ্দেশে দেওয়া বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ওপর দেশবাসীকে ভরসা রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর কন্যা হিসেবে আমার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। আমি আপনাদেরই একজন হয়ে থাকতে চাই।
২০০৮ সালে নির্বাচনের সময় শেখ হাসিনা স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন উন্নয়নের একটি বুলেট ট্রেনে করে দেশকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবেন। আজ প্রায় ১১ বছর ক্ষমতায় আছেন তিনি এবং আমরা অর্থনীতিতে একটি প্রবৃদ্ধি সক্রিয়তা দেখেছি। বরাবরই বড় প্রবৃদ্ধি এসেছে তার সময়ে, জনগণের মাথাপিছু আয় বেড়েছে, বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে, হচ্ছে এবং মানুষের মনে সাধারণভাবে একটা উন্নয়ন স্পৃহাও সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু এই সময়টাতেই উন্নয়নের পাশাপাশি দুর্নীতি শব্দটি ব্যাপকভাবে উচ্চারিত হয়ছে এবং এ কারণেই যাত্রাপথ কখনও কখনও জটিলতর হয়েছে।
বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে ভাবিয়েছে এবং বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ারও চেষ্টা করেছেন। মঙ্গলবারের ভাষণেও তিনি বলেছেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখা হবে। দুর্নীতিবাজদের আবারও সতর্ক করে তিনি বলেন, ‘দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে। দুর্নীতিবাজ যে-ই হোক, যত শক্তিশালীই হোক না কেন, তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। মানুষের কল্যাণের জন্য আমি যেকোনও পদক্ষেপ করতে দ্বিধা করবো না।’

এই দৃঢ়তাকে স্বাগত জানাবে নিশ্চয়ই সবাই। দুর্নীতি এক গভীর রোগ, যা সমাজকে ধ্বংস করে দেয়। দুর্নীতি গণতন্ত্র এবং আইনের শাসনকে দুর্বল করে, মানবাধিকার হরণ করে, বাজারকে বিকৃত করে, জীবনের মান নষ্ট করে, নানারকম অপরাধ, সন্ত্রাস বাড়ায়, যা জননিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। সরকারের অত্যাবশ্যক সেবা, পরিষেবা দুর্নীতির প্রকোপে ব্যাহত হয়, অসাম্য এবং অন্যায় উৎসাহিত হয়।

প্রশ্ন হলো এই দুরাচার কীভাবে দূর হবে। প্রধানমন্ত্রী গত বছরের শেষ সময়টাতে এসে দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তবিরোধী অভিযান পরিচালনা করেছেন। এই অভিযানে তার দলের কিছু নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছেন, কেউ কেউ পদ হারিয়েছেন। এরপর আমরা দেখেছি সেই অভিযানে একটা বিরতি চলছে। প্রধানমন্ত্রী যখন আবার বলেন এই অভিযান চলবে, তখন আমরা আশাবাদী হই। 

অনেকেই বলেন, দুর্নীতি আর উন্নয়নের মধ্যে একটা পরিষ্কার সম্পর্ক আছে। উন্নয়ন হলে দুর্নীতি কিছুটা হবেই, এমন একটা কথা বলে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেওয়ার কথা কেউ কেউ বলেন। এ ধরনের বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়। তাই আমরা চাই দুর্নীতির বিরুদ্ধে আরও সক্রিয় উদ্যোগ নেওয়া হোক। দুর্নীতি অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়। কিন্তু এই অপরাধের সংজ্ঞা নেই সেভাবে। 

বর্তমান সরকার প্রশাসনিক কাজ পরিচালানায় জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল প্রয়োগ করছে। সরকারি চাকুরেদের বেতন ও সুবিধাদি আকাশছোঁয়া করেছেন। কিন্তু সরকারি কর্তব্য নির্বাহের ক্ষেত্রে অন্যায় আচরণ কমছে না। বেনামি লেনদেন থেকে শুরু করে জনগণের সম্পদ ও অর্থের অপচয় এক সংস্কৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেনতেন কাজে কোটি কোটি টাকা অপচয় করে বিদেশ যাওয়া, ক্রয় কাজে চড়া দামে সাধারণ জিনিস অস্বাভাবিক দাম দিয়ে কিনে সরকারি অর্থ লোপাট করার বহু কাহিনি এখন মানুষের মুখে মুখে। বেআইনি দুর্নীতির প্রবল দাপট কোনোভাবেই কমছে না। 

এ কারণেই বলি, উন্নয়ন আর দুর্নীতি হাতে হাত ধরে চলতে পারে না। চলতে দিলে দুর্নীতি সম্পর্কে সমাজের নৈতিক অবস্থানকে ভঙ্গুর করে দেওয়া হয়। উন্নয়ন হলে কিছু দুর্নীতি মেনে নিতে হবে, এটা বলে একটি চক্র আসলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে মূল্যবোধ তৈরির ব্যাপারে আমাদের সামাজিক অনীহা সৃষ্টির চেষ্টা করে। 

আরেকটি দিক হলো বৈষম্য। উন্নয়নের সঙ্গে বৈষম্যেরও একটা যোগ আছে। যখন উন্নয়ন এবং দুর্নীতি হাতে হাত ধরে এগোয়, অর্থাৎ, উন্নয়নও হয়, দুর্নীতিও চলতে থাকে, তখন এই বৈষম্য বেশি বাড়ে। এই দুটো পরিস্থিতির মধ্যে তফাৎটা খেয়াল রাখা জরুরি, তা না হলে অনেক উদ্যোগই বিপথে হারিয়ে যায়।

প্রধানমন্ত্রী যা বলেছেন, আশা করছি এ বছর তিনি আরও গভীরে গিয়ে ভাববেন সুশাসন নিশ্চিত করতে নতুন কী করতে হবে। সরকারি উচ্চপদে দুর্নীতির ওপর নজরদারি চালানো প্রয়োজন বেশি করে। তিনি দুদককে আরও সক্রিয় হতে বলেছেন। সংসদের অধিবেশনগুলো যেন ঠিকমতো পরিচালনা করা হয়। বিরোধী দলের শক্তি যেটুকুই আছে, প্রত্যাশা থাকবে জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে প্রাঞ্জল বিতর্ক হবে সংসদে। প্রশাসনকে, আইনশৃঙ্খলা কার্যক্রমকে আরও জনবান্ধব করতে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারে গতি রুদ্ধ করলে হবে না। নীতিবিষয়ক সিদ্ধান্ত গ্রহণেও সরকারকে যেন কখনও পক্ষাঘাতগ্রস্ত বলে মনে না হয়। 

দেশের ব্যবসায়ী ও শিল্প উদ্যোক্তারা যেন হতাশ হয়ে না পড়েন। বিদেশি বিনিয়োগকারী ও বহুজাতিক সংস্থাগুলো যেন আস্থার সঙ্গে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করতে পারেন সেরকম একটা পরিবেশ সৃষ্টিতে নিশ্চয়ই সরকার পিছপা হবে না। প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেছেন, তার ওপর ভরসা রাখতে। ভরসা আছে বলেই তার কাছেই এমনসব প্রত্যাশা। 

লেখক: প্রধান সম্পাদক, জিটিভি ও সারাবাংলা

 

/এসএএস/এমএমজে/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অ্যাসেম্বলি বন্ধ
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অ্যাসেম্বলি বন্ধ
দ্বিতীয় বিয়ের চার দিন পর বৃদ্ধকে হত্যা, দুই ছেলে পলাতক
দ্বিতীয় বিয়ের চার দিন পর বৃদ্ধকে হত্যা, দুই ছেলে পলাতক
লখনউ ও চেন্নাইয়ের অধিনায়ককে ১২ লাখ রুপি জরিমানা 
লখনউ ও চেন্নাইয়ের অধিনায়ককে ১২ লাখ রুপি জরিমানা 
বিদ্যুৎস্পৃষ্টে প্রাণ গেলো ইউপি সদস্যের
বিদ্যুৎস্পৃষ্টে প্রাণ গেলো ইউপি সদস্যের
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ