X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

অর্থনীতিকে বিধ্বস্ত করে ফেলছে করোনা

বখতিয়ার উদ্দীন চৌধুরী
০২ এপ্রিল ২০২০, ১৪:৩৭আপডেট : ০২ এপ্রিল ২০২০, ১৪:৩৯

বখতিয়ার উদ্দীন চৌধুরী জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, পৃথিবী এমন এক অর্থনৈতিক মন্দার সম্মুখীন হচ্ছে, যা আগে কখনও হয়নি। তিনি বিশ্ব নেতাদের এই মন্দা মোকাবিলায় সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন। ২০০৩ সালে সার্স ভাইরাস আরম্ভ হয়েছিল চীন থেকে। এতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৮ হাজারেরও বেশি লোক এবং ১৭টি দেশে মৃত্যু হয়েছিল ৭৭৪ জনের। সেই সময়ে বৈশ্বিক জিডিপির ৪ শতাংশ আসতো চীন থেকে। তখনই বৈশ্বিক অর্থনীতির ৪ হাজার ৫০০ কোটি ডলার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল বলে অর্থনীতিবিদরা জানিয়েছিলেন।
২০১৯ সালে বৈশ্বিক জিডিপিতে চীনের অবদান হচ্ছে ১৬ শতাংশ। করোনায় আক্রান্ত পুরো বিশ্ব। এপ্রিলের প্রথম দিন পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের কারণে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৪ হাজারে। এরমধ্যে কেবল ইউরোপেই সংখ্যাটা ৩০ হাজার ছাড়িয়েছে, যার ২০ হাজার লোক অধিক আক্রান্ত ইতালি-স্পেনের। সুতরাং সেই সার্সের তুলনায় করোনাভাইরাসের প্রভাব যে আরও বিধ্বংসী হবে তা তো অবধারিত। বিশ্বব্যাপী উৎপাদন সম্পূর্ণ বন্ধ। এই পরিস্থিতি যদি দীর্ঘায়িত হয়, বাজারে তো পণ্যের অভাব দেখা দেওয়া স্বাভাবিক।

গত ১৪ মার্চ থেকে ১৯ মার্চ পর্যন্ত আমেরিকায় ৩৩ লাখ মানুষ বেকার ভাতার দরখাস্ত করেছে। এটি আমেরিকার ইতিহাসের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে বলে মার্কিন কর্তৃপক্ষ জানায়। অথচ করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের শেষ পরিণতি কী দাঁড়াবে সেই পরিস্থিতি এখনও উপস্থিত হয়নি। আমরা দেখছি বর্তমানে বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ। মার্কিন জনগণের এক-পঞ্চমাংশ লকডাউনে রয়েছে। মোটরগাড়ি কোম্পানিগুলো কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে। এই বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেকারত্বের সংখ্যা ছিল সর্বনিম্ন, অথচ করোনার কারণে এখন তা অবনতিশীল অবস্থার সম্মুখীন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশে করোনায় আক্রান্ত হওয়া এবং মরার ঘটনা স্বাভাবিক হয়ে গেছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন এই রোগে কমপক্ষে আমেরিকার ২ লাখ লোকের মৃত্যু হবে। চীনের পরেই ভারত লোকসংখ্যায় বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। তার লোকসংখ্যা ১৩০ কোটি। তার অর্থনৈতিক অবস্থা এমনিতেই ভালো নয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমলে। প্রবৃদ্ধি চলছিল ৪ শতাংশ। করোনায় ৩০ কোটি লোক আক্রান্ত হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে। সরকার জনতার কারফিউ দিয়েছিল। এখন ২১ দিনের লকডাউন চলছে। ভারতের দরিদ্র লোকের সংখ্যা কম নয়। ২১ দিনের লকডাউন সহ্য করার মতো আর্থিক সঙ্গতি মানুষের নেই। সুতরাং এই কর্মসূচি সফল করতে হলে সরকারকে ব্যাপক আর্থিক জোগান দিতে হবে। অবশ্য একটি আশার কথা যে, এই বছর ভারতের ফলন ভালো হয়েছিল। খাদ্যশস্য উদ্বৃত্ত আছে।

বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ। তার বৈদেশিক মুদ্রা আসে তৈরি পোশাক রফতানি থেকে, আর বিদেশে চাকরি করা মানুষের পাঠানো রেমিট্যান্স থেকে। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি থেকেও আসে। যতই দিন যাচ্ছে করোনা সমগ্র বিশ্বকে টালমাটাল করে তুলেছে। ইউরোপ-আমেরিকা বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের মূল ক্রেতা। করোনা ইউরোপ-আমেরিকাকে বিপন্ন করে ফেলেছে।

ইতালি আর চীন ছিল আমাদের চামড়ার মূল ক্রেতা। তারা এই রোগের আক্রমণে বিপন্ন আজ। শুধু বাংলাদেশ নয়, বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্য মারাত্মক উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে কোভিড-১৯। প্লেগের মতো করোনা দীর্ঘসময় অব্যাহত থাকলে গত শতকের ত্রিশের দশকের মতো মন্দার সম্মুখীন হবে বিশ্ব। করোনা যে ধাক্কা সৃষ্টি করেছে এখন বাংলাদেশের পক্ষে সেই ধাক্কা সামলানো কঠিন। বাংলাদেশের রফতানি বাজার তাই করোনার আঘাতে বিধ্বস্ত। সুতরাং মালামাল তৈরি করাও মুশকিল।

সর্বোপরি বায়ারেরা এলসি স্থগিত করেছে। কোনও কোনও বায়ার ক্রয় আদেশ বাতিল করেছে। বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলো করোনার ধাক্কায় যে অনিয়মের মধ্যে পড়েছে, তা করোনা চলে গেলেও পুনরায় শৃঙ্খলা ফিরে আসতে বেশ সময়ের প্রয়োজন হবে। আবার বহু ফ্যাক্টরি এই অনিয়মের মধ্যে পড়ে দায়গ্রস্ত হয়ে যাবে। বাংলাদেশের রফতানি আয়ের ৮৫ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। এই খাত সংকটে পড়লে পুরো আয়টা লন্ডভন্ড হয়ে যাবে।

ঢাকাস্থ চীনের রাষ্ট্রদূত ব্যবসা-বাণিজ্য সূচনা করার কথা বলেছেন। কিন্তু বায়ারের অবস্থা তো সুস্থির পর্যায়ে আসতে হবে! তারা পুনরায় না বললে পোশাক তৈরি করে কী করবে! আর ফ্যাক্টরি চালু রাখা সম্ভব হচ্ছে কিনা সেটাও দেখার আছে, কারণ পাশাপাশি বসে এত লোক কাজ করা ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন।

অত্যন্ত দুঃখের কথা হচ্ছে, এই ভাইরাসটি সমাপ্তি সম্পর্কে কোনও কথা কেউ বলতে পারছে না। এখনও বিজ্ঞানীরা বলছেন সহসা এই ভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কার করতে না পারলে বিশ্বের ৪০ শতাংশ মানুষ নাকি আক্রান্ত হবে। এমন অবস্থার সৃষ্টি হলে তো বিশ্বে প্রলয়ের আলামত দেখা দেবে।

বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন হয়তো করুণাময়ের দয়ায় সহসা কেউ-না-কেউ ভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কারে সক্ষম হবেন। চীনের অনেকে দাবি করছে, তারা নাকি প্রতিষেধক আবিষ্কার করে ফেলেছে। অবশ্য সরকারিভাবে এখনও কিছু বলা হয়নি। জাপানের আবিষ্কৃত ইনফ্লুয়েঞ্জার ওষুধ খেয়ে নাকি চীনের ৪৪৩ জন আক্রান্ত রোগী ভালো হয়েছিল। জাপান ওই ওষুধের সূত্র ধরে করোনার ওষুধ তৈরির চেষ্টা করলে হয়তো সফল হতে পারে। বাংলাদেশেও চলছে অঘোষিত লকডাউ। সেটা ১১ এপ্রিল পর্যন্ত ঘোষণা করা হলেও ১৪ এপ্রিল ২০২০ বাংলা নববর্ষের অনুষ্ঠানের আগে শেষ হচ্ছে না।

আমাদের দিনমজুররা খুবই অনটনে পড়বে। অবশ্য প্রধানমন্ত্রী তাদের সাহায্য প্রদানের কথা বলেছেন। অনেক ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানও এগিয়ে আসছে মানুষের পাশে সাহায্য নিয়ে দাঁড়াতে। আমাদের কিছু জনপ্রতিনিধি আর আমলাদের তো অজুর জন্য পানি দিলে পানি খেয়ে বদনা বিক্রি করে দেওয়ার স্বভাব আছে। তাদের করজোড়ে মিনতি করব, এই দুর্যোগে অন্তত তারা যেন সততা রক্ষা করে চলেন।

লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও কলাম লেখক
[email protected]

 

/এসএএস/এমএমজে/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ