X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

করোনার সঙ্গে লড়াইয়ের ওষুধ কিন্তু আপনার হাতে

তানভীর আহমেদ মিশুক
২৫ এপ্রিল ২০২০, ১৭:২৮আপডেট : ০১ মে ২০২০, ১৩:২৩

তানভীর আহমেদ মিশুক সাম্প্রতিক কয়েক মাসে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত শব্দ হলো ‘করোনা’। আমি যদি বলি আপনি বারবার এই শব্দটিকে উচ্চারণ করে একে আরও শক্তিশালী করছেন! আপনি কি বিশ্বাস করবেন? আমরা যা নিয়ে কথা বলি, তা দিয়েই আমাদের পরিস্থিতি স্থির হয়। আমরা যত বেশি এটি সম্পর্কে কথা বলি, এটি আমাদের কম্পন তত্ত্বে সক্রিয় হয়ে ওঠে। সারাদিন বারবার এই ভাইরাসটির কথা চিন্তা করে আমরা কিন্তু একে আরও শক্তিশালী করছি। আমরা প্রতিদিনই পত্রিকায়, টেলিভিশন চ্যানেল, ফেসবুক ও ইউটিউবে করোনাভাইরাস নিয়ে খবর পড়ছি। বাসা, অফিস, ব্রেকফাস্ট, ডিনারের টেবিল থেকে শুরু করে প্রতিটি মুহূর্তেই প্রতিটি জায়গায় এই মহামারি ব্যাধি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।
আমাদের পুরোটা মস্তিষ্কে শুধু করোনার আতঙ্ক ঘুরপাক খাচ্ছে। মস্তিষ্কের ক্যানভাস এখন করোনার দখলে। এমনটা হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। লকডাউনে গৃহবন্দি মানুষ অনেকটাই অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। এর মধ্যে অনেকেই করোনাভাইরাস নিয়ে প্রচণ্ড উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। এই বিষয়টি দেখে একটি ইংরেজি প্রবাদ মনে পড়লো, ‘গারবেজ ইন, গারবেজ আউট’। অর্থাৎ, আমাদের মস্তিষ্কে যদি আবর্জনা ঢোকে, তাহলে আবর্জনাই বের হবে।

প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা এই ভাইরাসকে কেন আমাদের মস্তিষ্কে ঢুকতে দিচ্ছি? করোনাভাইরাস মানুষের দেহে প্রবেশ করলে আইসোলেশনে থাকা, বিশ্রাম নেওয়া ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়াই বর্তমানে প্রধান চিকিৎসা। কারণ এই ভাইরাসের ভ্যাকসিন এখন পর্যন্ত আবিষ্কার হয়নি।

কথায় আছে, বনের বাঘে খায় না, মনের বাঘে খায়। করোনাভাইরাস আমাদের দেহে প্রবেশ করার আগেই মনের মধ্যে প্রবেশ করে ফেলছে। এতে আমরা মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে যাচ্ছি এবং দেহের মধ্যে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছি। ১০ তলা বিল্ডিং থেকে নিচে পড়ে ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে মারা যাওয়া মানুষটার মৃত্যু কখন হয়? ১০ তলা থেকে নিচে পড়ে ছিন্নবিচ্ছিন্ন হওয়ার পরে নাকি ১০ তলা থেকে পড়তে পড়তেই মাঝপথে ভয়ে হার্টস্ট্রোক করে মারা যায়? সমীকরণটা একটু কঠিন।

আমাদের খাওয়া-দাওয়া, ঘুম, আড্ডা সবকিছুর মধ্যে করোনাভাইরাসকে ঢুকতে দেওয়া যাবে না। এই কোয়ারেন্টিন মুহূর্তে আমাদের একমাত্র কর্তব্য করোনাভাইরাসের মহামারিকে জানার মধ্যেই সীমাবদ্ধ না রেখে আলাদা কিছু করা। যারা বই পড়তে পছন্দ করেন, তারা বই পড়ুন। সিনেমা দেখতে ভালো লাগলে সিনেমা দেখুন অথবা গান করার আগ্রহ থাকলে গান করুন। আবার নতুন কোনও বাদ্যযন্ত্র বাজানোও শিখে ফেলতে পারেন। যারা ইংরেজিতে দুর্বল, তারা ইংরেজি শিখতে পারেন। যারা লেখালেখি করতে ভালোবাসেন, তারা এই লম্বা সময়ে দুয়েকটি গল্প কিংবা উপন্যাস লিখে ফেলতে পারেন। স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নবান হলে নিজের রুমেই ব্যায়াম করতে পারেন। এসময় নিজ নিজ ধর্মচর্চা ও স্রষ্টার প্রার্থনা করতে পারেন। এরকম আরও হাজারও কাজ আছে যেগুলো করতে পারেন। মানে আপনার যেটা পছন্দের, সেই কাজটা করবেন এই লম্বা সময়ে। শুধু একটি কাজ করবেন না, সেটি হলো করোনাভাইরাস নিয়ে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা।

এই কোয়ারেন্টিনের লম্বা সময়টা খুবই মূল্যবান। অযথা এই সময়টা নষ্ট হতে দেবেন না। ওপরের কোনও কাজই যদি আপনার করতে মন না চায়, তাহলে একটু অন্য লেভেলের কাজ করুন। পুরোটা জীবনে কী করেছেন, কতটুকু উন্নতি হয়েছে। কোন কাজগুলো করা ভুল হয়েছে, কোন কাজগুলো বেশি করা দরকার ছিল, সেগুলোর হিসাব করুন। করোনার মহামারি শেষ হওয়ার পর জীবনের নতুন অধ্যায় কীভাবে শুরু করবেন? জীবনের লক্ষ্য কী? নিজেকে কোন পর্যায়ে দেখতে চান এবং সেই পর্যায়ে যেতে হলে কী কী করতে হবে? এসব কিছু নিয়ে ভাবুন। চিন্তা করুন। সময় দিন নিজের এবং পরিবারের ভবিষ্যতের জন্য।

সারাদিন করোনাভাইরাস নিয়ে দুশ্চিন্তা করলে দেশ থেকে করোনাভাইরাস চলে যাবে না। একটি কথা মাথায় রাখবেন, দুশ্চিন্তা কখনও কোনও সমাধান দিতে পারে না, শুধু শারীরিক ও মানসিক অস্বস্তি বাড়ায়।

এই সংকটে অনেক মানুষ সমাজের অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। করোনাভাইরাস যদি একটি ভয়াবহ ছোঁয়াচে রোগ না হতো, তাহলে অবশ্য আরও বেশি মানুষ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতো। চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ, স্বেচ্ছাসেবকরা এই মহামারির মধ্যেও নিজের পরিবারকে বাসায় রেখে মানুষদের বাঁচানোর জন্য নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের প্রত্যেকের কথা এবং তাদের পরিবারের কথাটা একটু ভাবুন। তাদের মনের অবস্থাটা একটু ভাবুন। নিজের পরিবারের কথা ভাবুন, নিজের কথা ভাবুন। সৃষ্টিকর্তার কাছে দোয়া করুন।

এই করোনার ভয়াবহতা সময়ের সঙ্গেই এমনিই হারিয়ে যাবে। কিন্তু আপনি যেন সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারেন, সেটা নিয়ে একটু ভাবুন।

আপনি ভয়কে যত শক্তি দেবেন, এটি তত গভীর হবে। আমাদের সবারই কম বেশি অসুখ হয়, কেউ হালকা জ্বরে দুর্বল হয়ে সাত দিন বিছানায় কাত হয়ে পড়ে থাকে, আবার কেউ শরীরে জ্বর নিয়েও গা ঝাড়া দিয়ে বিছানা থেকে লাফ দিয়ে উঠে দৌড়াতে শুরু করে। দুটি মানুষই সমবয়সী এবং স্বাস্থ্যবান। পার্থক্যটা শুধু মানসিক শক্তির। আর তাই এই ভাইরাসটি আমাদের মনে যেন না ঢুকতে পারে এবং সেটা কীভাবে আটকাতে পারি, এই যেন হয় আমাদের ভাবনার মূল বিষয়। আপনার মনোযোগ সরিয়ে নিন এবং এটি আপনার ওপর কোনও শক্তি রাখে না। সময় এসেছে আমরা করোনার কাছ থেকে তার শক্তি কেড়ে নিই।

লেখক: ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বাংলাদেশ ডাক বিভাগের আর্থিক লেনদেন সেবা ‘নগদ’ 

 

/এসএএস/এমএমজে/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
দুর্নীতির মামলায় মেজর মান্নান কারাগারে
দুর্নীতির মামলায় মেজর মান্নান কারাগারে
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আমাদের অবশ্যই জেতা উচিত: সাকিব
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আমাদের অবশ্যই জেতা উচিত: সাকিব
মন্ত্রীর অপেক্ষায় তরমুজ বিক্রিতে দেরি, ক্ষুব্ধ ক্রেতারা
মন্ত্রীর অপেক্ষায় তরমুজ বিক্রিতে দেরি, ক্ষুব্ধ ক্রেতারা
ইসরায়েলে প্রতিশোধমূলক রকেট হামলা হিজবুল্লাহর
ইসরায়েলে প্রতিশোধমূলক রকেট হামলা হিজবুল্লাহর
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ