X
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

খাদ্যশস্য সংগ্রহ নীতিমালা সংস্কারই কৃষকের স্থায়িত্ব প্রণোদনা

জীবনানন্দ জয়ন্ত
০৬ মে ২০২০, ১৫:৫৯আপডেট : ০৬ মে ২০২০, ১৬:১৪

জীবনানন্দ জয়ন্ত কৃষিমন্ত্রীর বরাতে ২৯ এপ্রিল সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে, এবারের বোরো মৌসুমে সরকার ৮ লাখ টন ধান ক্রয় করবে। গত ২২ এপ্রিল খাদ্যমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করেও সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছিল, চলতি মৌসুমে সরকার ৮ লাখ টন ধান ও সাড়ে ১১ লাখ টন চাল সংগ্রহ করবে, যা ২৬ এপ্রিল থেকে শুরু হবে।
৮ লাখ টন ধান সংগ্রহের খবর যদি সত্য হয়, তাহলে এ যাবৎকালে এটিই হবে সরকারিভাবে ধান ক্রয়ের সর্বোচ্চ লক্ষ্যমাত্রা। যদিও আমাদের দাবি কৃষকের উৎপাদিত ধানের সম্পূর্ণটাই সরকারিভাবে সংগ্রহ করতে হবে। ‘খবর যদি সত্য হয়’—এমনটি বলার কারণ হলো, এই লেখাটি যখন লেখা হচ্ছে তখন পর্যন্ত খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সংগ্রহ শাখা থেকে এ সংক্রান্ত কোনও পত্র জারি হয়নি। সাম্প্রতিক জারিকৃত যে দুটি পত্র ওয়েবসাইটে পাওয়া যায়, তার একটি স্মারক নম্বর ১৩.০০.০০০০.০৪৩.৩৫.০০২.২০.১০৬ তারিখ ১৩/০৪/২০২০, যেখানে ২০২০ সালের অভ্যন্তরীণ ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রার উপজেলাওয়ারি বিভাজন এবং অপরটির স্মারক নম্বর ১৩.০০.০০০০.০৪৩.৩৫.০০২.২০.১০৯; তারিখ ২১ এপ্রিল ২০২০, যেখানে অভ্যন্তরীণ বোরো সিদ্ধ চাল সংগ্রহের উপজেলাওয়ারি লক্ষ্যমাত্রার বিভাজন উল্লেখ করে জারিকৃত। পত্র দুটির তথ্য অনুযায়ী ধান ও চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা যথাক্রমে ৬ লাখ এবং ১০ লাখ টন। এমনকি খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ ইউনিটের বোরো ধান/চাল ও গম সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা সংক্রান্ত স্মারক নম্বর ১৩.০০.০০০০.০৬৩.০৬.০০১.১৯৮৩(অংশ-২৭)-৬৪; তারিখ ০২ এপ্রিল ২০২০ নোটিশটি পর্যালোচনায় দেখা যায়, সরকারিভাবে গম, বোরো সিদ্ধ চাল ও বোরো আতপ চাল ও বোরো ধান সংগ্রহের যে লক্ষ্যমাত্রা, সেখানেও বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রা ৬ লাখ টন উল্লেখ আছে।

২ লাখ টন ধান কম না বেশি সংগ্রহ করা হবে—তা এই আলোচনার মূল বিষয় নয়। কৃষকের উৎপাদিত ধানের সম্পূর্ণটাই কৃষকের কাছ থেকে সংগ্রহের মাধ্যমে লাভজনক কৃষির বিকাশসাধনে সরকারি ক্রয় ব্যবস্থাপনায় কী ধরনের সংস্কারের প্রয়োজন, তা চিহ্নিত করাই আলোচনার উদ্দেশ্য।

ক্রয় ব্যবস্থাপনা সংস্কারের ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করার আগে এই কাঠামোর একটি সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা তুলে ধরতে চাই। দেশে অভ্যন্তরীণ খাদ্যশস্য সংগ্রহ নীতিমালার আওতায় সরকার প্রতি শস্য মৌসুমে খাদ্যশস্য সংগ্রহ করে। যেখানে ৩০টি অনুচ্ছেদ ও ৭টি পরিশিষ্টে নীতিগত নির্দেশনা দেওয়া আছে। কিন্তু এই নির্দেশনায় ‘মূল্য নির্ধারণ, সংগ্রহ উৎস, সংগ্রহ কেন্দ্র বা ক্রয় কেন্দ্র, সংগ্রহ পদ্ধতি’-এর বর্ণনাগুলো কৃষি ও কৃষকের চাইতে ব্যবসায়ীকে প্রণোদিত করায় কৃষক লাভবান হতে পারছে না। নীতিমালার পদ্ধতি ও প্রাসঙ্গিক প্রক্রিয়ায় কৃষকের উৎপাদিত ধানের মুনাফা ভোগ করছে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিককর্মী এবং চালকল মালিক সিন্ডিকেট। অর্থাৎ নীতিগত ব্যর্থতায় মূল্য নির্ধারণ, সংগ্রহ ব্যবস্থাপনা এবং বাজারে  ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক কর্মী ও চালকল মালিক সিন্ডিকেটের আধিপত্য শস্য কৃষির মুনাফা প্রণালীর নিয়ন্ত্রক হয়ে দাঁড়িয়েছে!

কৃষক ব্যতীত অন্যরা কৃষিপণ্যের মুনাফা ভোগ করে! বিগত কয়েকটি মৌসুমে ধান উৎপাদন ব্যয়ের সমপরিমাণ মূল্যও কৃষকের না পাওয়া এবং চালের উচ্চ মূল্য থেকেই বিষয়টি প্রমাণিত। কৃষকের বিপরীতে ভোক্তাকে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দাঁড় করানোর প্রক্রিয়ায় কৃষকের লোকসানের বিষয়টি অব্যাহতভাবে উড়িয়ে দিলেও, চলমান মূল্য নির্ধারণ ও সংগ্রহ প্রক্রিয়ার যথার্থতা প্রমাণ করা যায়নি। মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে সবার আগে ‘পণ্য উৎপাদনে কৃষকের ব্যয় কত?’—তা নির্ধারণ করা প্রয়োজন। কিন্তু এই হিসাব কৃষক কিংবা সরকার কারও কাছেই থাকে না। ফলে কৃষকের লাভ-ক্ষতির বর্ণনা সরকারের মর্জিমাফিকই থাকছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ভুক্ত খাদ্য পরিধারণ কমিটি তাদের নিজস্ব প্রক্রিয়ায় খাদ্যশস্যের মূল্য নির্ধারণ করে। কমিটিতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিত্ব থাকলেও তারা কৃষকের ব্যয়ের প্রকৃত পরিসংখ্যানভিত্তিক মূল্য নির্ধারণে ভূমিকা রাখতে পারছে এমনটি বলা যায় না। দেখা গেছে, এই কমিটি পূর্ববর্তী বছরের মূল্যের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে পরবর্তী মৌসুমের ধানের মূল্য নির্ধারণ করে থাকে, যা কখনও বাস্তবসম্মত নয়। মূল্য নির্ধারণ প্রক্রিয়ায় কৃষকের ব্যবহৃত উপকরণ ও আঞ্চলিক ভিন্নতার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হলেও তা কখনই বিবেচনা করা হয়নি। মাটির স্বাস্থ্য তথা উর্বরাশক্তি, অতিরিক্ত সার-কীটনাশকের প্রয়োজনীয়তা, সেচের তারতম্য, কৃষি শ্রমিকের মজুরি, জমির ভাড়া মূল্য, বিনিয়োগ থেকে প্রত্যাশিত মুনাফাসহ আনুষঙ্গিক ব্যয়ে স্থানভেদে ভিন্নতা থাকলেও এই কমিটি সে সবের ধারেকাছে না গিয়েই নিজেদের মনগড়া মূল্য নির্ধারণ করছেন। এবারও যার ব্যতিক্রম ঘটেনি—গত মৌসুমে ধানের কেজি প্রতি নির্ধারিত মূল্য ২৬ টাকা, এবারও বহাল রাখা হয়েছে।

কৃষক গত প্রায় এক দশক ধরে দেশের চাহিদার চাইতে উদ্বৃত্ত ধান উৎপাদন করলেও কোনোবারই লাভজনক মূল্য পায়নি। এমনকি সরকার নির্ধারিত মূল্যেও কৃষকের অভিগম্যতা নেই। বাজার ব্যবস্থাপনা সরকার কিংবা কৃষকের নিয়ন্ত্রণ নেই; চালকল মালিক সিন্ডিকেটই শক্তিমান প্রতিভূ। তাছাড়া সরকার যখন ধানের মূল্য ঘোষণা ও সংগ্রহ ‍শুরু করে, তার আগেই উৎপাদনের একটি বড় অংশ কৃষকের হাতছাড়া হয়ে যায়, যতটুকু কৃষকের হাতে থাকে সেটুকুও বেশিদিন ধরে রাখতে পারে না। কেননা কৃষিতে ব্যক্তি পুঁজির নির্ভরতা ফসল উঠবার সঙ্গে সঙ্গেই সকল ঋণ-ধার-দাদন পরিশোধের বাধ্যবাধকতা তৈরি করে। ফলে কখনও জমিতে থাকা অবস্থায় অথবা মাড়াই করে অন্যের গোলায় ধান তুলে দিতে হয়। এমনও দেখা গেছে মৌসুমের শুরুতেই কৃষক ধানের একটি অংশ বন্ধক রাখার শর্তে চাষ করার সুযোগ পেয়েছে। এ অবস্থায় ধানের মূল্য নির্ধারণ ও সংগ্রহ ব্যবস্থাপনায় সংস্কারসাধন প্রয়োজন।

কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত হলেও শিল্পমুখী ধারাবাহিক মানসিকতায় এই খাত অবহেলিত। সামগ্রিকভাবে অর্থনীতিতে কৃষির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকলেও করোনাকালের অর্থনীতিতে এই খাতের গুরুত্ব আরও বেড়ে গেছে। বিশেষ করে এবারের বোরো ও আসন্ন আমন মৌসুম করোনাকালে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। ইতোমধ্যে কৃষি প্রমাণ করেছে, দেশে বৈদেশিক মুদ্রার বর্তমান সঞ্চিতির পেছনে রয়েছে কৃষির একচ্ছত্র ভূমিকা। শুধুমাত্র খাদ্যশস্য আমদানি ব্যয় না থাকায় এই সঞ্চিতি যেমন বেড়েছে, তেমনি বৈদেশিক ঋণ নির্ভরতা কমিয়েছে। পাশাপাশি সীমিত আকারে হলেও কৃষিপণ্যের রফতানি আয়ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে অবদান রাখছে।

করোনাভাইরাসে সমগ্র বিশ্ব যখন বিপর্যস্ত, যখন আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা-গোষ্ঠী খাদ্য ঘাটতি, দুর্ভিক্ষসহ বিরূপ অর্থনীতির ভবিষ্যদ্বাণী করছে—তখন ব্যক্তি পর্যায়ে খাদ্য সঙ্কট মোকাবিলা করে দুর্ভিক্ষ নিয়ন্ত্রণের জাতীয় সক্ষমতা অর্জন, গ্রামীণ অর্থনীতির চাকায় জাতীয় অর্থনীতি সচল এবং চলমান উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে করোনাকালের কৃষি বিশেষ করে ধানের এই দুই মৌসুম গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। এক্ষেত্রে খাদ্যশস্যের মূল্য নির্ধারণ ও সংগ্রহ ব্যবস্থাপনায় সংস্কার করে কৃষি ও কৃষক কেন্দ্রিক করতে হবে—সরকারকে চাল নয় লাভজনক মূল্য দিয়ে কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ধান সংগ্রহ করতে হবে।

মন্ত্রীদের বক্তব্য অথবা জারিকৃত পত্রানুযায়ী সরকারিভাবে ধান সংগ্রহের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা খুবই কম। ধান সংগ্রহের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা কৃষকের মোট উৎপাদনের কত শতাংশ? অপরদিকে চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা উৎপাদিত ধানের কত শতাংশ? এখানে চালকল মালিক নয়, কৃষককে গুরুত্ব দিয়ে ব্যবস্থাপনা চালু করতে হবে। করোনায় অবতীর্ণ অর্থনীতির নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় পুনঃমূল্য নির্ধারণ এবং সরকারিভাবে কৃষকের সমস্ত ধান ক্রয় ছাড়া বাজার ব্যবস্থাপনায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার আর কোনও বিকল্প নেই।

এবারের মৌসুমে অভ্যন্তরীণ সংগ্রহ শাখার তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, বোরো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২ কোটি ৮৫ লাখ ৫৪ হাজার ২৬৯ টন (যদিও কৃষি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রচারিত কৃষিমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী এই পরিমাণ, ০২ কোটি ০৪ লাখ ৩৬ হাজার টন)। আশা করা যায়, বোরো উৎপাদন এই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। প্রায় ৩ কোটি টন ধান উৎপাদনের বিপরীতে সরকারিভাবে ৮ লাখ টন ধান সংগ্রহ পরিকল্পনার কতটা বিবেচনাপ্রসূত! এই সংগ্রহ বিপর্যস্ত অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে কতটা ভূমিকা রাখতে পারবে? বর্তমান বাজার ব্যবস্থাপনায় অবশিষ্ট ধান কৃষক কোন বাজারে কার নিয়ন্ত্রণে বিক্রি করবে?—এ সকল বিষয় বিবেচনায় নিয়ে এখনই সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তা না হলে চলমান রাজনৈতিক ও চালকল মালিক সিন্ডিকেট প্রবণতায় সরকারি গুদামে কিংবা বাজারে কৃষক সুবিধা করতে পারবে না। এমনকি কৃষি-কৃষক এবং করোনাকালের অর্থনীতির নিঃস্বকরণ প্রক্রিয়াও ঠেকানো যাবে না।

প্রতিযোগিতাপূর্ণ বাজারে কৃষককে ঠেলে দেওয়ার প্রবণতা বন্ধ করতে হবে। নীতিহীন বাজার ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করার সামর্থ্য কৃষকের নেই। ফলে আমাদের বোকা-দরিদ্র কৃষক নিজ ঘরে মজুত করে বাজার থেকে লাভজনক মূল্য আদায় করতে পারবে না। মৌসুম শেষ হওয়ার আগেই উৎপাদিত ধান বিক্রি করে ঋণ-ধার-দাদন পরিশোধ শেষে যখন ভোক্তা হিসেবে বাজারে অবতীর্ণ হবে তখন খাদ্য সঙ্কট-দুর্ভিক্ষ তাকে গ্রাস করবে। কাজেই সরকারের উচিত অবিলম্বে  বিশেষ ব্যবস্থাপনায় হলেও কৃষকের কাছ থেকে তার উৎপাদনের পুরোটাই সরকারিভাবে সংগ্রহ করা। এক্ষেত্রে নীতি-কাঠামো ও প্রক্রিয়াগত সংস্কার প্রয়োজন হলেও স্বল্পমেয়োদে সরকারের নির্বাহী আদেশে একটি অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থাপনা গ্রহণ ও চালু রেখে দীর্ঘমেয়াদে নীতি-কাঠামো-প্রক্রিয়ার সংস্কার করতে পারে।

দীর্ঘমেয়াদে নীতি-কাঠামো-প্রক্রিয়ার সংস্কারে সরকারকে অভ্যন্তরীণ খাদ্যশস্য সংগ্রহ নীতিমালায় যে বিষয়গুলো যুক্ত করতে হবে—

১) মূল্য নির্ধারণ: স্থানভেদে কৃষক পর্যায় থেকে তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে মৌসুমে খাদ্যশস্যের মূল্য নির্ধারণ করা হবে (বিদ্যমান ব্যবস্থাপনায় খাদ্যশস্যের সংগ্রহ মূল্য প্রতি মৌসুমে আলাদাভাবে ঘোষণা করার কথা বলা হয়েছে, যেখানে কোনও প্রক্রিয়াগত নির্দেশনা নেই। এতে খেয়াল-খুশি মতো শস্য মৌসুমে মূল্য ঘোষণা করার সুযোগ থাকছে। ফলে উৎপাদিত পণ্যে কৃষকের মুনাফা নেই, মুনাফা করছে চালকল মালিক সিন্ডিকেট)।

২) সংগ্রহের উৎস: সরকার কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি সংগ্রহ মৌসুমে উৎপাদিত ধান ও গম লাভজনক মূল্য দিয়ে সংগ্রহ করবে এবং সরকারের কাছ থেকে চালকল মালিকরা ধান ক্রয় করবে (বিদ্যমান ব্যবস্থাপনায় চালকল মালিকদের কাছ থেকে চাল সংগ্রহের কথা বলা হয়েছে, যা ধানের বাজারে চালকল মালিকের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত করে কৃষি ও কৃষকের ক্ষতিসাধন করছে)।

৩) সংগ্রহ কেন্দ্র:  কৃষকের উঠোন থেকে সরাসরি ধান সংগ্রহ করা হবে (বিদ্যমান ব্যবস্থাপনায় এলএসডি ও সিএসডি সংগ্রহ কেন্দ্র হিসেবে পরিচালিত হয় এবং ক্রয় মৌসুমে কোনও অস্থায়ী ক্রয়কেন্দ্র খোলার বিধান নেই। ফলে প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষক নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সরাসরি সরকারি ক্রয়কেন্দ্রে ধান সরবরাহ করতে পারে না। একইসঙ্গে এই প্রক্রিয়া ধান সরবরাহের রাজনীতির বিকাশ ঘটায় এবং কৃষকের নামে রাজনৈতিক কর্মীদের লাভবান করে)।

৪) সংগ্রহ পদ্ধতি: সরবরাহকারী কৃষক নির্বাচন প্রথা বাদ দিয়ে, কৃষক নির্বিশেষে তার প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পূর্ণ ধান কৃষকের কাছ থেকে ক্রয় করা হবে। প্রয়োজনে সরকার যতদিন চাইবে ততদিন পর্যন্ত কৃষককে সংরক্ষণ মজুরি প্রদানসাপেক্ষে কৃষকের ঘরে সংরক্ষণ করা যাবে (বিদ্যমান ব্যবস্থাপনায় নির্বাচিত একজন কৃষক সর্বনিম্ন ১২০ কেজি এবং সর্বোচ্চ ৩ টন ধান প্রতিবারে কমপক্ষে ৩ বস্তায় সরকারি ক্রয়কেন্দ্রে সরবরাহ করে, যা স্থানীয় পর্যায়ে ধান সরবরাহের রাজনীতির স্থায়িত্বশীলরূপ দিয়েছে। ফলে কৃষকের নামে রাজনৈতিক কর্মীদের লাভবান করার স্থায়ী ব্যবস্থাপনা গড়ে উঠেছে)।

এছাড়া নীতিমালায় খাদ্যশস্যের বিনির্দেশ প্রথার শেকল থেকে কৃষককে মুক্তি দিতে হবে। কেননা কৃষির বিদ্যমান প্রক্রিয়ায় কৃষক পর্যায়ে এই বিনির্দেশের বিষয়াবলি এমনিতেই নিয়ন্ত্রণে থাকে। সরাসরি সরকারি ক্রয়কেন্দ্রমুখী কৃষককে নিরুৎসাহিত করতে এই বিনির্দেশ প্রথা ব্যবহৃত হচ্ছে।

অবিলম্বে অভ্যন্তরীণ খাদ্যশস্য সংগ্রহ নীতিমালার সংস্কার করে কৃষি-কৃষক-বাংলাদেশকে বাঁচিয়ে রাখার পদক্ষেপ নিতে হবে। মনে রাখতে হবে এই সংস্কারই হবে কৃষকের জন্য স্থায়িত্বশীল প্রণোদনা কর্মসূচি; কৃষকের প্রতি রাষ্ট্রের পুঞ্জীভূত দায় পরিশোধের পথে বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়া।

এই আলোচনার প্রেক্ষিতে কেউ কেউ ‘কৃষকের অ্যাপ’ বিষয়ে অবতারণা করতে পারেন। এক্ষেত্রে বলে রাখছি, সম্প্রতি খাদ্য মন্ত্রণালয় ‘কৃষকের অ্যাপ’-এর মাধ্যমে ধান সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিষয়টি যুগান্তকারী মনে হলেও এর সম্ভাব্যতা, লক্ষ্যমাত্রার পরিমাণ ও কার্যকর প্রক্রিয়ার দিকটি প্রশ্নের ঊর্ধ্বে উঠতে পারেনি। গত ২০ এপ্রিল ২০২০ তারিখের মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সংগ্রহ শাখার জারিকৃত পত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, দেশের মাত্র ২২টি উপজেলায় কৃষকের অ্যাপের মাধ্যমে ধান সংগ্রহ কার্যক্রম পরিচালিত হবে। কিন্তু প্রায় পাঁচশ’ উপজেলার বাংলাদেশের উৎপাদনের কত অংশ এই প্রক্রিয়ায় সংগ্রহ হবে—সেটি যেমন প্রশ্ন, তেমনি বিদ্যমান সংগ্রহ নীতিমালায় কৃষক এই প্রক্রিয়ায় কতটা সুযোগ পাবে—সেটিও বিবেচনায় নিতে হবে। তথ্যানুযায়ী ২২টি উপজেলায় সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৯ হাজার ৭ টন—তাহলে কী দাঁড়ালো? ৮ লাখ টনের প্রায় পুরোটাই তো সেই সনাতন পদ্ধতিতেই সংগ্রহ করা হচ্ছে—তাই তো!

লেখক: অ্যাকটিভিস্ট ও আইনজীবী

/এসএএস/এমএমজে/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
তিন গোলে জেতার আশা করেননি পুলিশের রোমানিয়ান কোচ
তিন গোলে জেতার আশা করেননি পুলিশের রোমানিয়ান কোচ
বেনজীরের সম্পদ নিয়ে দুদকের অনুসন্ধানের অগ্রগতি প্রতিবেদন চাইলেন হাইকোর্ট
বেনজীরের সম্পদ নিয়ে দুদকের অনুসন্ধানের অগ্রগতি প্রতিবেদন চাইলেন হাইকোর্ট
তীব্র গরমে যেসব অসুস্থতার ঝুঁকি বাড়ে
তীব্র গরমে যেসব অসুস্থতার ঝুঁকি বাড়ে
চেয়ারম্যান-ভাইস চেয়ারম্যানসহ ২৬ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত
উপজেলা নির্বাচনচেয়ারম্যান-ভাইস চেয়ারম্যানসহ ২৬ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ