X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

করোনাকালে ‘সংঘবদ্ধ’ অপরাধের রকমফের ও করণীয়

মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম
০৬ জুন ২০২০, ১৩:৫০আপডেট : ০৬ জুন ২০২০, ১৩:৫৬

মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম করোনা মহামারির কারণে বিশ্বব্যাপী সামাজিক দূরত্ব ও লকডাউন, ত্রাণ বিতরণ, বাজার ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণসহ রোগীদের হাসপাতাল সুবিধা নিশ্চিতকরণের জন্য পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অন্য কাজে ব্যস্ত থাকায় এই ধরনের ঘটনা বেশি ঘটছে। এসব কাজে পুলিশ যুক্ত থাকার কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য পর্যাপ্ত টহল ও নজরদারির অভাবের কারণে বিশ্বের সকল দেশে বিভিন্ন ধরনের সংঘবদ্ধ অপরাধের সুযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। ‘সংঘবদ্ধ অপরাধ’-এর আওতায় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকম কর্মকাণ্ড চলছে। কোথাও ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে, বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক নেতারা এবং সরকারি সংস্থা এই ধরনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। বাংলাদেশেও এই ধরনের অপরাধ নিয়মিত হচ্ছে যার দুয়েকটি ইতোমধ্যে আমরা দেখতে পাচ্ছি। বাংলাদেশের বাইরে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সংগঠিত সংঘবদ্ধ অপরাধের কার্যক্রম নতুনরূপে বাড়ার কারণে পুলিশিং সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক সংগঠন ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো এ নিয়ে সিরিয়াস একাডেমিক কাজ করছে। অনেকেই রিপোর্ট প্রকাশের পাশাপাশি নিয়মিত কমেন্টারি ও মতামত প্রকাশ করছে। এর মধ্যে থেকে আমরা কয়েকটিকে পর্যালোচনা করবো এবং বাংলাদেশে এর বাস্তবতাকে উপস্থাপন করতে চাইবো।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম রয়টার্সও করোনার সময়ে ইতালিতে সংঘবদ্ধ অপরাধের মোড়কে মাফিয়াতন্ত্র কীভাবে কাজ করছে তা বিস্তারিত তুলে ধরছে। সংঘবদ্ধ অপরাধের মাধ্যমে পাশ্চাত্যের বহু দেশেই একধরনের আইনগত ভক্তির সুযোগ তৈরি হচ্ছে। এই সময়ে মানুষ সংঘবদ্ধ অপরাধ সংগঠনগুলোর কাছ থেকে ঋণ সাহায্য থেকে শুরু করে খাবার, সেবা ও ওষুধ  ও মেডিক্যাল সেবা চায়। যেহেতু করোনাকালের নতুন পরিস্থিতির কারণে সরকারগুলো পর্যাপ্ত সাহায্য-সহযোগিতা দিতে পারে না সেহেতু গ্যাং, মাফিয়া এই সংগঠনগুলো সরকারি সাহায্যের বিপরীতে সহযোগিতা করে জনপ্রিয় হওয়ার সুযোগটি নিয়ে থাকে। ইতালিতে লকডাইন, অর্থনৈতিক ব্রেকডাউনের সময়কালে নেপলসে ‘ক্যামোরা ক্ল্যান’ নামে একটি মাফিয়া গোষ্ঠী সরকারি পরিষেবার বাইরে সেখানকার মানুষকে খাদ্য সহযোগিতা করে। শুধু তাই নয়, এই সংগঠনগুলো অনেক ক্ষেত্রে সহজ শর্তে বিপদগ্রস্ত মানুষকে ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবস্থা করে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সংঘবদ্ধ এক্সপার্ট বা বিশেষজ্ঞরা এই মাফিয়া বা গ্যাং দলের কার্যক্রম নিয়ে কাজ করছেন। এসব এক্সপার্টের মূল বক্তব্য হচ্ছে ‘মাফিয়া দলগুলো নিজেরাই হচ্ছে এক ধরনের ভাইরাসের মতো, পরিবর্তিত বাস্তবতা ও প্রেক্ষাপটে উপযোজন করে নেয় এবং তাদের মূল উদ্দেশ্যই থাকে ক্ষমতা, বলপ্রয়োগ ও মুনাফা।’

 সংঘবদ্ধ অপরাধ নিয়ে ৫০০-এর বেশি আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ নিয়ে কাজ করে জেনেভাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান জিআই-টিওসি। এই সংগঠন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে করোনাকালে কীভাবে সংঘবদ্ধ কার্যক্রম চলছে তা নিয়ে ইতোমধ্যে ‘ক্রাইম অ্যান্ড কন্টাজিওন: দ্য ইমপেক্ট অব অ্যা প্যানডেমিক অন অরগানাইজড ক্রাইম’ শিরোনামে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। তাদের রিপোর্ট অনুযায়ী, সুইজারল্যান্ডের মতো শান্তিপূর্ণ দেশেও রাস্তা জীবাণুমুক্তকরণের কাজ করছে এই মাফিয়া সংগঠনগুলো। ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে দিনের বেলায় কাজের সুযোগ না পেলেও রাতের বেলায় মাফিয়া দলগুলো ঠিকই রাস্তার দখল করার চেষ্টা করছে। এই রিপোর্টেই সংঘবদ্ধ অপরাধ গভীরতা ও প্রভাব সম্পর্কে ভবিষ্যদ্‌বাণী করা হচ্ছে যা আমাদের জন্যও অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ। তারা বলছে, ‘যদি সরকারগুলো মহামারির কালে সঠিকভাবে কাজ না করতে পারে, তবে সংঘবদ্ধ অপরাধ সংগঠনগুলো সেই কাজ করবে।’ আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ সংবাদপত্র গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন থেকেও এর সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়। ব্রাজিলের ‘রেড কমান্ড গ্যাং’ সংগঠন বাড়ির বাইরে বের হলেই শাস্তি দেবে বলে ঘোষণা হচ্ছে। এখানে আনুষ্ঠানিক সরকারি পুলিশিং প্রতিষ্ঠানের বাইরে মাফিয়া সংগঠনগুলোই বিকল্প পুলিশিং চালু করেছে।

নিওলিবারালিজমের কারণে যেসব দেশে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভঙ্গুর ও জীবন দায়ী সম্পদ কম সেখানে মাফিয়া সংগঠনগুলো ইমার্জেন্সি মেডিক্যাল হেলথ সার্ভিসগুলোকে নিজের আওতার মধ্যে নিতে চায়। ইতালিসহ পাশ্চাত্যের অনেক দেশেই মহামারির কালে অ্যাম্বুলেন্স সেবা নিয়ন্ত্রণ ও মেডিক্যাল সাপ্লাই চেইন তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বিশেষ করে নকল মাস্ক, পিপিই উৎপাদন এবং ভেজাল ও নকল ওষুধ বিক্রির সঙ্গে গ্যাংদলের সম্পর্ক আছে। এই চক্রের সহযোগিতা ও নিয়ন্ত্রণে বৈধ ওষুধ কোম্পানিগুলোর মাধ্যমেও বাজারে নকল ওষুধ সাপ্লাই দেওয়ার ঘটনা শুনতে পাওয়া যায়। এই যেমন, মেক্সিকোর ‘জালিস্কো’ কোম্পানির এই ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকার খবর পাওয়া গেছে। শুধু তাই নয়, ইরান, ইউক্রেন, আজারবাইজানেও ফেস মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও ত্রুটিপূর্ণ মাস্ক সরবরাহের ঘটনা আলোচিত।

ভুয়া দোকান, ইন্টারনেট সাইট, সামাজিক মাধ্যমে ই-পেজ ও ইমেইলের মাধ্যমে পণ্য বিক্রির সহজ এই প্রতারণা ব্যবসা চালু করা হয়েছে। এর কারণে ইন্টারপোল এশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সংঘটিত ৩১টি ঘটনায় জালিয়াতি জন্য ১৮টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করার পাশাপাশি ৭ লাখ ৩০ হাজার ডালার উদ্ধার করেছে। তাই ইতোমধ্যে ইন্টারপোল এই বিষয়ে সতর্কতা ও নিয়ন্ত্রণের জন্য ১৯৪টি দেশে ‘পার্পল নোটিশ’ জারি করেছে।

প্রশ্ন হচ্ছে, ‘সংঘবদ্ধ অপরাধ’ কি শুধু অন্য দেশে সংগঠিত হচ্ছে? বিশ্বব্যাপী সংগঠিত সংঘবদ্ধ অপরাধের সঙ্গে বাংলাদেশেও অনেক ঘটনার মিল খুঁজে পাওয়া যায়। বাংলাদেশে করোনা প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যেমন মাস্ক, পিপিই, গ্লাভস, ফেস শিল্ডের নকল উৎপাদন ও বিপণন হচ্ছে। এমনকি সরকারি প্রতিষ্ঠান ‘স্বাস্থ্য অধিদফতর’-এর মাধ্যমেই নকল এন-৯৫ মাস্ক ক্রয়ের ঘটনা আমরা জানি। সাধারণ দোকান তো বটেই বড় বড় সুপারশপেও নকল হ্যান্ড-স্যানিটাইজারে সয়লাব হচ্ছে। নকল স্যানিটাইজার ও মাস্কের পাশাপাশি সাধারণ কটন কাপড় ও রেইনকোর্টের উপাদান দিয়ে তৈরিকৃত পিপিই, সাধারণ প্লাস্টিক দিয়ে ফেস শিল্ডের খবর আমরা পত্রিকার পাতা খুললেই দেখতে পাই। এর বাইরেও বাংলাদেশে ব্যাপক আকারে মাদকের বিস্তার, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও ত্রাণ চুরিসহ অন্যান্য অপকর্মের মতো কাজও সংঘবদ্ধ চক্রের মাধ্যমেই সংগঠিত হয়।

সারাদেশে লকডাউন, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জনগণকে বাড়ির অভ্যন্তরে সার্বক্ষণিক ভিত্তিতে অবস্থান করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। এই সময়ে রাস্তাঘাট ফাঁকা থাকার কারণে মাদক ব্যবসায়ী ও মাদক চোরাকারবারিরা বিভিন্নভাবে মাদক চোরাচালান ও বিক্রির কার্যক্রম অবাধে করছে বলে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। করোনা মহামারির সময়ে মাদক চোরাচালান চক্র শুধু বাংলাদেশে কাজ করছে এমন নয় বরং ইতালিসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেও এই মাদক চোরাচালান চক্র কাজ করছে। তারা খাদ্য সহযোগিতা, জনসচেতনতা সৃষ্টিসহ বিভিন্ন কর্মসূচির আড়ালে মাদক বিক্রি ও চোরাচালানের কাজগুলো করে বলে আমরা জানতে পারি। আমাদের দেশের মতো অন্য দেশেও তা হচ্ছে যা রয়টার্স ও গার্ডিয়ানসহ আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের সংবাদে প্রকাশিত হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজের বাইরে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতকরণের নামে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় নিজেরাই আইন হাতে তুলে নিয়ে বিভিন্ন মানুষের ওপর লাঠিচার্জসহ বাঁশ বেঁধে রাস্তাঘাট বন্ধ করে দেওয়ার তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসেছে। টাঙ্গাইল শহরে একজন ওয়ার্ড কমিশনার কর্তৃক সাধারণ মানুষের ওপর লাঠিচার্জের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার হলে তা নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনারও সৃষ্টি হয়। গাজীপুরসহ দেশের অনেক জায়গায় জবরদস্তিমূলক রাস্তাঘাট বন্ধ করে দিয়ে এলাকার বখাটে ছেলেদের বিভিন্ন নেতিবাচক ও বিচ্যুত আচরণের খবর পাওয়া গেছে। এখানে আনুষ্ঠানিক সরকারি পুলিশিংয়ের বাইরে সংঘবদ্ধ দলগুলো বিকল্প পুলিশিং চালু করেছে।

অন্যদিকে, করোনাকালে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্র ডাকাতি শুরু করেছে। দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় ‘সেনাবাহিনীর স্টিকার লাগিয়ে ডাকাতির প্রস্তুতি’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে ২৪ এপ্রিল ২০২০ তারিখে। ঘটনাটি দিনাজপুর জেলায় হয়েছে। মাইক্রোবাসের সামনের গ্লাসে ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কাজে নিয়োজিত, জরুরি খাদ্য সরবরাহের কাজে ব্যবহৃত’ স্টিকার লাগিয়ে চার সদস্যের ডাকাত দল হাঁসুয়া, চাকু, লোহার পাইপসহ বিভিন্ন ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করে ডাকাতির প্রস্তুতি নেয়। ধরা পড়ার আগেও তারা আরও অনেক জায়গায় ডাকাতি করে বলে সংবাদ মারফত জানতে পারি। এই খবরের বাইরেও গত কয়েকদিনের পত্রিকায় শরীয়তপুর, টাঙ্গাইল, শেরপুরসহ বিভিন্ন জায়গায় ডাকাতি হয়। একইভাবে অনেক জায়গায় বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে ডাকাতি হচ্ছে বলে আমরা সংবাদ মাধ্যম হতে জানতে পারি।

প্রশ্ন হতে পারে, করোনার সময়ে কেন এই সংঘবদ্ধ ডাকাত দল নতুনভাবে কাজ করা শুরু করছে। অপরাধবৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে আসলে কোনও একটি অপরাধ সংঘটনের ক্ষেত্রে তিনটি বিষয়ের উপস্থিতি দরকার। মানসিকভাবে প্রস্তুত অপরাধী, প্রয়োজনীয় টার্গেট ও অভিভাবকহীনতা। যেহেতু করোনার কালে রাস্তাঘাটে মানুষ নেই এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অপরাধ কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে টহল ব্যতিরেকে অন্যান্য জরুরি কাজে ব্যস্ত সেহেতু সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র ‘ডাকাত দল’ এই সুযোগকে কাজে লাগাতে চায়। ডাকাত দল অপরাধ সংঘটনের পূর্বে তার অবৈধ নেতিবাচক আচরণের সম্ভাব্যতা যাচাই করে, ধরা পড়ার ঝুঁকি সম্পর্কে তথ্য বিবেচনা ও বিশ্লেষণ করে, নিশ্চিত শাস্তির মাত্রাগত অবস্থা বা দিক সম্পর্কে সজাগ থেকে সে পরিকল্পনা করে। যেহেতু শহর থেকে গ্রামের দূরত্বের কারণে সরাসরি প্রশাসনিক নজরদারি কম এবং তুলনামূলক গ্রামের মানুষ কম শিক্ষিত, অসচেতন, তাই সংঘবদ্ধ ডাকাত দল গ্রামাঞ্চলের মানুষকে টার্গেট করে এই কার্যক্রম চালু রাখে।

আমরা যদি চিন্তা করি কেন মহামারির কালে এ ধরনের সংঘবদ্ধ অপরাধের ব্যাপক ও সর্বমুখী বিস্তার ঘটে? প্রথমত, পৃষ্ঠপোষকতা। দেখুন, বাংলাদেশে নকল মাস্ক, পিপিইসহ অনেক কিছুর সঙ্গে সরকারি আমলা-প্রশাসকগণ যুক্ত থাকার খবর সারাদেশে আলোচিত ঘটনা। একবার চিন্তা করুন নকল মাস্কের জোগানদাতা হলো জামায়াতের প্রতিষ্ঠান। এবং এর সঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে সরকারের বিভিন্ন লেভেলের কর্মকর্তারা যুক্ত থাকেন। কাদের প্রশ্রয়ে এ ধরনের ঘটনা ঘটে? এই বিষয়ের উত্তর পাই অপরাধবৈজ্ঞানিক আলোচনায়। অপরাধবিজ্ঞান বিশেষজ্ঞ ফ্রাঙ্ক হাগান বলেন, জনগণের অর্থে লালিত পালিত রাষ্ট্রীয় কর্মচারীদের সহযোগিতার মাধ্যমেই সংঘবদ্ধ অপরাধ সংগঠিত হয়। বিভিন্ন দেশেই সংঘবদ্ধ অপরাধী দলকে সহযোগিতার জন্য সরকারের দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনৈতিক দল ও অসাধু আমলা-প্রশাসকগণ সহযোগিতা করেন। 

দ্বিতীয়ত, অনুন্নত দেশগুলোতে সংঘবদ্ধ অপরাধের বেড়ে যাওয়ার একটি কারণ হচ্ছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংগঠিত দুর্নীতি। এই দুর্নীতির কারণেই সাধারণ মানুষ সংঘবদ্ধ গ্রুপের প্রতি ইতিবাচক মনোভঙ্গি ধারণ করে। বর্তমান সময়ে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের ত্রাণ চুরির নেতিবাচক ফলাফল ও  প্রভাব এমন যে, এখানে যদি সন্ত্রাসী বাহিনীও ত্রাণ বিতরণ করে তবে তাদের প্রতিও মানুষের আকর্ষণ তৈরি হবে। যেমন ধরুন, বাংলাদেশে লাশ দাফনের কাজে যুক্ত আল মারকাজুলের মতো সংগঠনের প্রতিও মানুষ ইতিবাচক। যদিও তাদের বিরুদ্ধে হিজবুত তাওহিদের মতো জঙ্গিবাদী সংগঠনকে পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ আছে।  এ সম্পর্কে বাংলা ট্রিবিউনে একটি রিপোর্টও হয়েছে। সেই রিপোর্টের জন্য ইতোমধ্যে প্রতিবেদককে হুমকিসহ গালাগালিও করা হয়েছে।

তৃতীয়ত, সংঘবদ্ধ অপরাধীরা দরিদ্র মানুষের ওপর একধরনের ভাবাদর্শিক আধিপত্যবাদ সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়। দরিদ্র দেশগুলোর বস্তি ও ঘেটোগুলোতে সংঘবদ্ধ অপরাধী দলের চূড়ান্ত আধিপত্য থাকে। করোনাকালে খাদ্য সাহায্য দেওয়ার কারণে ইতালিতে বাংলাদেশের মেট্রোপলিটন এরিয়াগুলোতে রাস্তার দুপাশের বস্তি ও কেন্দ্রীভূত বস্তিগুলোতেও সংঘবদ্ধ সংগঠনগুলোও নিশ্চিতভাবেই কাজ করবে। এই সময়ে তারা ব্যক্তিগতভাবে ত্রাণ সহযোগিতার মাধ্যমে মানুষের মনোজগতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং পরবর্তীতে মাদক, অস্ত্র, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন সংঘবদ্ধ অপরাধের কাজগুলো চালিয়ে যাবে।

তাই অবিলম্বে উল্লিখিত সংঘবদ্ধ অপরাধের ধরন-প্রকরণ ও বিস্তার উপলব্ধি করে জনগণকে সচেতন করার কর্মসূচি দরকার। একইসঙ্গে তা নির্মূলে অবিলম্বে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা বন্ধের পাশাপাশি, দুর্নীতির সংস্কৃতি প্রতিরোধ করতে সুনির্দিষ্ট ও বাস্তবমুখী পরিকল্পনা ও নীতি প্রণয়ন প্রয়োজন।

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক ও সাবেক চেয়ারম্যান, ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগ, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সন্তোষ, টাঙ্গাইল।
ইমেইল: [email protected]


/এমএমজে/এসএএস/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
হোয়াইট হাউজের বিড়াল নিয়ে বই প্রকাশ করবেন মার্কিন ফার্স্টলেডি
হোয়াইট হাউজের বিড়াল নিয়ে বই প্রকাশ করবেন মার্কিন ফার্স্টলেডি
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
আশরাফুলের হ্যাটট্রিকে আবাহনীর টানা ৮ জয়
আশরাফুলের হ্যাটট্রিকে আবাহনীর টানা ৮ জয়
ভিকারুননিসায় জালিয়াতি করে আরও ৩৬ ছাত্রী ভর্তির তথ্য ফাঁস
ভিকারুননিসায় জালিয়াতি করে আরও ৩৬ ছাত্রী ভর্তির তথ্য ফাঁস
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ