X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

কাশ্মির ও লাদাখে হামলা: দায়ী কে?

গৌতম রায়
২৮ জুন ২০২০, ১৩:২৬আপডেট : ০৯ জুলাই ২০২০, ১১:৪৬

গৌতম রায় নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি দ্বিতীয়বার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর সংসদের প্রথম অধিবেশনেই সংবিধানের ৩৭০ এবং ৩৫-এর এ ধারা অবলুপ্ত করা হয়। কাশ্মির থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয় লাদাখকে। দুটি অংশেরই গণতান্ত্রিক পরিকাঠামোর গঙ্গাযাত্রা ঘটিয়ে কেন্দ্রের ‘বকলমে’ সেখানে বিজেপি রাজ প্রতিষ্ঠিত হয়। কাশ্মির এবং লাদাখ, দুটি অংশেরই মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ, যারা সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ, কার্যত তাদের যাবতীয় নাগরিক অধিকার কেড়ে নিয়ে রাষ্ট্র তাদের বাধ্য করে মনুষ্যেতর জীবনযাপনে। দীর্ঘদিন সেখানকার শীর্ষ রাজনৈতিক নেতৃত্বকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়। অ-বিজেপি জনপ্রতিনিধিদের সংসদের অধিবেশনে অংশ পর্যন্ত নিতে দেওয়া হয় না। অপরপক্ষে জম্মুর হিন্দু পণ্ডিতদের প্রতি বিশেষ রকমের পক্ষপাতিত্ব করে গোটা দেশেই হিন্দু- মুসলমান, উভয়কে উভয়ের বিরুদ্ধে উত্তেজিত করে তোলা হয়।
গোটা কাশ্মির উপত্যকা যখন কেন্দ্রীয় সরকারের আবরণের ভেতর দিয়ে আরএসএস এবং তাদের রাজনৈতিক সংগঠন বিজেপির প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রাধীনে, তখন লাদাখে ভারতীয় ভূখণ্ডের ভেতরে ঢুকে পড়ে চীন কীভাবে আমাদের বীর সেনানীদের হত্যা করে? দেশপ্রেমের নামে উগ্রতাকে প্রতিষ্ঠিত করতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে গরমাগরম কথার মাধ্যমে দেশের মানুষকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে খেপিয়ে তোলা রাজনৈতিক হিন্দুদের রাজনৈতিক কর্মসূচি।

এই কর্মসূচি রূপায়ণে পাকিস্তান আরএসএস-বিজেপির কাছে যতটা সফট টার্গেট, চীন কিন্তু তা নয়। তাহলে বিজেপি কেন্দ্রীয় সরকারের আস্তরণে গোটা কাশ্মির উপত্যকার ওপর নিজেদের কর্তৃত্ব কায়েম করার পর কেন আমাদের দেশের মূল ভূখণ্ডের ভেতর ঢুকে পড়ে চীন আমাদের দেশের বীর সেনানীদের হত্যা করছে? দেশরক্ষায় এবং অবশ্যই বিদেশনীতির ক্ষেত্রে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপির চরম ব্যর্থতায় আজ পর্যন্ত দেশের যে কুড়িটি তাজা প্রাণ অকালে ঝরে গেলো, তার সার্বিক দায় কেন প্রধানমন্ত্রী মোদির হবে না?

ম্যাকমহোন লাইন ঘিরে ব্রিটিশ যে ভূমিকা নিয়েছিল, তেমন কোনও উদ্যোগ কখনও লাদাখ ঘিরে হয়নি। বিজেপি আজ ছয় বছর কেন্দ্রে ক্ষমতায়। অতীতে তাদের নেতা অটল বিহারি বাজপেয়ি সাড়ে ছয় বছর দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। এই দীর্ঘ বারো বছর সময়ে লাদাখ ঘিরে চীন যাতে কখনও কোনও আক্রমণাত্মক ভূমিকা না নিতে পারে, সিনকিয়াং ঘিরে চীনের কর্মকাণ্ড যাতে কখনও ভারতের সার্বভৌমত্বের পক্ষে ক্ষতিকারক না হতে পারে, সে বিষয়ে কেন বিজেপি একটি শব্দও উচ্চারণ করেনি?

আজ ছয় বছর ক্ষমতায় থেকে দেশপ্রেমের নামে মুসলমান বিদ্বেষ ছড়িয়ে আন্তর্জাতিক সীমারেখার প্রশ্নে মোদির সরকার এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি করেছে যে, লাদাখ ভেদ করে চীনের সিনকিয়াং যাওয়ার রাস্তাটি আবার নতুন মাত্রায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে। আজ মোদি সরকারের সার্বিক ব্যর্থতার ফলে সিনকিয়াংয়ের সঙ্গে লাদাখের ভেতর দিয়ে দখল করা জমিতে চীনের তৈরি রাস্তার মাধ্যমে পাক অধিকৃত কাশ্মিরের ভেতর দিয়ে ভারতে নাশকতা চালাবার সুবর্ণ সুযোগ পাকিস্তানের এসে গেছে।

চীনকে কেন্দ্র করে পাকিস্তান যাতে লাদাখকে ব্যবহার করতে পারে। লাদাখের ওই রাস্তার মাধ্যমে  ভারতে হামলা চালাতে পারে। আর সেই হামলাকে ব্যবহার করে পাকিস্তান বিরোধিতার নাম করে বিজেপি করবে। এভাবে খুব সহজেই ভারতের মুসলমানদের ওপর সব ধরনের অত্যাচার চালাতে পারবে সঙ্ঘ-বিজেপি। এই জঘন্য ষড়যন্ত্রের উদ্দেশ্য নিয়েই লাদাখে সব ধরনের ফেডারেল স্ট্রাকচারকে ধ্বংস করেনি তো বিজেপি? এই উদ্দেশ্যেই লাদাখকে কেন্দ্রের বকলমে বিজেপি নিজেদের হাতের মুঠোয় ভরেনি তো? 

চীন কি ফরমোজার ওপরে কোনও আক্রমণের আশঙ্কা করছে? তাই ’৬২ সালে ব্রিটিশের তৈরি ম্যাকমহোন লাইন ঘিরে যে সীমান্ত সংঘর্ষ, সেখানেও লাদাখের ভেতর দিয়ে রাস্তা তৈরি ঘিরে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল। আন্তর্জাতিক স্তরে আমেরিকার সঙ্গে চীনের সম্পর্কের ক্ষিপ্রতায় ফরমোজাকে টোপ হিসেবে দেখিয়ে আমেরিকার যুদ্ধস্পৃহা, ট্রাম্পের আসন্ন ভোট বৈতরণী পেরোতে সেই দেশে দেশপ্রেমের নামে উগ্রতা সৃষ্টিতে লাদাখকে চীনের কর্মকাণ্ড ঘিরে নিশ্চুপ মোদি? একটিও কথা বলছে না, দেশপ্রেমের তুবড়ি ছড়ানো মোহন ভাগবত? আসল লক্ষ্য কি আমেরিকার চীনের বিরুদ্ধে সমরাভিযানকে ত্বরান্বিত করে বন্ধু ট্রাম্পকে আবার হোয়াটস হাউজে ফিরিয়ে আনা?

বিজেপি যতই নেহরু বিরোধী বলে নিজেদের জাহির করুক না কেন, কমিউনিস্ট চীনকে জব্দ করতে নেহরু চীনের অভ্যন্তরীণ সমস্যার সঙ্গে নিজেকে জড়িয়েছিলেন। কাশ্মির যেমন ভারতের একান্ত অভ্যন্তরীণ বিষয়, বাইরের কারও নাক গলানো এই প্রশ্নে যেমন আমরা বরদাস্ত করি না, তেমনিই তিব্বতও চীনের একান্ত অভ্যন্তরীণ বিষয়। মুখে সমাজতন্ত্রী, আবার জোট নিরপেক্ষ , ব্রিটিশ কমনওয়েলথের অন্তর্গত থেকে ও নেহরু আমেরিকাকে খুশি করতে দলাই লামার মতো বৌদ্ধ মৌলবাদীকে ভারতে আশ্রয় দিয়েছিলেন। এই দলাই লামার প্রশ্নে কিন্তু চরম নেহরু বিরোধী আরএসএস-বিজেপি আজ পর্যন্ত একটা শব্দও উচ্চারণ করেনি।

লেখক: ইতিহাসবিদ ও গবেষক

 

 

/এসএএস/এমএমজে/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
শিশুকে পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগে ৪ কিশোর সংশোধনাগারে
শিশুকে পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগে ৪ কিশোর সংশোধনাগারে
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ