X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

এ কে আব্দুল মোমেনের ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’

দাউদ হায়দার
২০ আগস্ট ২০২০, ১৪:০৩আপডেট : ২০ আগস্ট ২০২০, ১৫:২২

দাউদ হায়দার মুজিববর্ষ এবং বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাস। শোকের মাস। দুই-ই আনন্দ ও বেদনার। বঙ্গবন্ধু না হলে বাংলাদেশ হয় না। বাঙালির স্বাধীনতা, জাতিসত্তার চেতনা, বৈশ্বিকবোধ দৃঢ়তর হয় না। বঙ্গবন্ধুকে ব্যতিরেকে বাংলাদেশের অস্তিত্ব, জলহাওয়া, সূর্যোদয়-সূর্যাস্তও অসম্পূর্ণ। ঠিক এই বিষয়টিই এ কে আব্দুল মোমেন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষিতে, গাঢ় বিচারবিশ্লেষণে, ইতিহাসের নথি ঘেঁটে, ছোটবড়ো প্রবন্ধে বিস্তারিত করেছেন ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’ গ্রন্থে। চন্দ্রাবতী একাডেমি প্রকাশিত। আগস্ট ২০১৯ সাল। লক্ষণীয় প্রকাশকাল, আগস্ট। ১১৮ পৃষ্ঠার বই। প্রবন্ধ সংখ্যা ১৪, তিন ভাগে বিভক্ত।
যেহেতু মুজিববর্ষ এবং শোকের মাস (বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ৪৫ বছর), মোমেনের বই নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গত, জরুরিও। মোমেনের জন্মও আগস্টে (২৩ আগস্ট ১৯৪৭, সিলেট)। কী করে ভুলবেন আগস্ট?
মোমেন বহুমানিত কৃত্যবিদ্য। মেধাবী ছাত্র। দেশে ও বিদেশে পাঠ, অধ্যয়ন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএ (অনার্স)। এমএ, এলএলবি, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমপিএ, বস্টন নর্থ ইস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএ, পিএইচডিধারী। ডক্টরেট ডিগ্রি। শিক্ষকতা হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে, বস্টনের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে। অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি, শিক্ষা, শিল্পসংস্কৃতি, সমাজ, পারিপার্শ্বিক, মানবচেতনা, মানবিকতা, তাঁর হাড়েমজ্জায়। গবেষণাসূত্রে জেনেছেন আজকের বিশ্বে একটি দেশে গণ্ডিবদ্ধ হওয়া, গণ্ডির চালচিত্রে (বিশেষত রাজনীতি) উদ্ভাভাষণ মূর্খামি। বিশ্ববোধে জাগরণই সার্বিক মুক্তি। দেশ ও বিশ্বকে সঙ্গী করে।

এ কে আব্দুল মোমেন রণাঙ্গনে প্রত্যক্ষ মুক্তিযোদ্ধা কিনা, বলতে অপারগ। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা। না হন যদি, পাকসেনারা কেন ধরবে, অকথ্য নির্যাতন করবে? হত্যা করেনি ঠিকই, হত্যার চেয়েও নির্মমতার সাক্ষী, শরীরে তথা গাগতরে।

বলছিলুম মোমেনের মানবিকতার কথা। গত শতকের নব্বইয়ের শুরুতে অভাবনীয় প্রতিবাদ করেন। প্রতিবাদেই ক্ষান্ত নন। সরাসরি ঝাঁপিয়ে পড়েন। মধ্যপ্রাচ্যে তৃতীয় বিশ্বের কচি ছেলেদের ভুলিয়ে ভালিয়ে অর্থের লোভ দেখিয়ে, অকথ্য অত্যাচার করে উটের জকির কাজ, এই জঘন্য বর্বরতার বিরুদ্ধে তীব্র সোচ্চার। বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ। মার্কিন কংগ্রেসে সিনেটর এবং কংগ্রেসিদের নিয়ে সংগঠন, শুনানি। বিশ্বের নানা দেশের বিশ্বের নানা দেশের কর্মকর্তা, মানবাধিকার সংগঠনের চেতনায় আঘাত। জাতিসংঘেও। বন্ধ হয় আরবদেশে ‘জকি’ কালচার। এই কালচার বন্ধে মোমেন দুনিয়ার নানা মিডিয়ায় শিরোনামে।

মোমেনের কৃতিত্ব আরো। ঐতিহাসিক। বিদেশে নারী পাচার (মূলত ব্যবসা), অমানবিকতারোধে যোদ্ধা। পুরোপুরি সফল নয়, তবে জাতিসংঘের টনক নড়েছে। নাড়িয়েছেন মোমেনই।

এখানেই শেষ নয়, বাংলাদেশ থেকে পাচার বহু নারী পাকিস্তানে, ভারতের বোম্বাইয়ে (এখন মুম্বাই), মধ্যপ্রাচ্যে (বিশেষত কুয়েত-কাতার-সৌদি আরবে), কী ভয়ঙ্কর অত্যাচার ও ব্যবসা, মোমেন সোচ্চার, দেখিয়েছেন পরিসংখ্যানে।

বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ: এ কে আব্দুল মোমেন এই যে মানবিকতা, মূলে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ। চেতনা। বঙ্গবন্ধু এবং তিনি একই কাতারে, মানবিকবোধে। মানবিক সংগ্রামে। মানুষের কল্যাণে, মানুষের স্বাধীনতায়।
অনেকেরই অজানা, হয়তো, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট-পদে ডেমোক্রেটিক দলের ডুকাকিস তীব্র লড়াই করেন, পরাজিত অবশ্য। ডুকাকিসের নির্বাচনি সহযোগী, লেফটেন্যান্টও বলতে পারেন, ছিলেন এ কে আবদুল (নিজে লেখেন ‘আব্দুল’) মোমেন।
মোমেনের ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’ বইয়ে, প্রথম পর্বের প্রথম লেখায় ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ: ১৯৭১-এর স্মৃতিচারণ’ অসম্ভব সংবেদনশীল, লেখাই নয়, শুধু ঐতিহাসিক ঘটনার বিশ্লেষণেও।
এই গ্রন্থের তৃতীয় পর্ব পড়ে ধারণা, মোমেন মজ্জাগত কবি। ‘সাহিত্য ও সংস্কৃতি’ অংশে ছয়টি গ্রন্থ। পয়লা প্রবন্ধ ‘বাংলা নববর্ষঃ দেশজ সংস্কৃতির প্রতীক।’ বাকি প্রবন্ধ রবীন্দ্রনাথ, নজরুল (নজরুলকে নিয়ে তিনটি) এবং লোকসংগীত, মরমি কবিতা কবিতা বিষয়ক। মৌলবাদ প্রসঙ্গেও (সাহিত্যে মৌলবাদিতা)।

এরকম গুঞ্জরণ, হাসন রাজাকে নিয়ে সিলেটিরা অতিরিক্ত কথক, মোমেন একটু কম, বিচার করেছেন হাসন রাজার গানের বিষয়াবলি, সমাজ ও দেশকালের দর্পণে। আজকের দিনের কতটা আত্মিক। আত্মিকতা।

এ কে আব্দুল মোমেনের গদ্য লেখা, বুদ্ধিদীপ্ত। ভাষা সহজ, সরল। চমৎকার পাঠ্য।

মোমেন না সংগ্রামে, অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ, দেশি ও বৈশ্বিকতায় আন্তর্জাতিক, আত্মজীবনী লিখেছেন কিনা, অজানা। পড়িনি। না লিখলে, আশা, লিখবেন। বহু তথ্য, ইতিহাস জানার অপেক্ষায় আছি। দেশ, জাতিও অপেক্ষায়। উপকৃত করবেন আমাদের।

লেখক: কবি ও সাংবাদিক

 

 

/এসএএস/এমএমজে/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
বিএনপির বিরুদ্ধে কোনও রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী
বিএনপির বিরুদ্ধে কোনও রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী
চুয়াডাঙ্গায় মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা, হিট অ্যালার্ট জারি
চুয়াডাঙ্গায় মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা, হিট অ্যালার্ট জারি
জিমি নেই, তারপরও খেলতে নামছে মোহামেডান
জিমি নেই, তারপরও খেলতে নামছে মোহামেডান
বায়ার্নের কোচ হওয়া থেকে এক ধাপ দূরে জিদান
বায়ার্নের কোচ হওয়া থেকে এক ধাপ দূরে জিদান
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ