X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

রক্তাক্ত পথও শেখ হাসিনাকে দমাতে পারেনি

কবীর চৌধুরী তন্ময়
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৮:০৪আপডেট : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৮:১৬

কবীর চৌধুরী তন্ময় আমরা যারা জেনারেল এরশাদ, খালেদা জিয়া এবং শেখ হাসিনার শাসনামল দেখেছি, নিজস্ব চিন্তা-ভাবনায় বিচার-বিশ্লেষণে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নামের আগে চলে আসে ‘স্বৈরশাসক’, গণতন্ত্রের প্রতীক নূর হোসেনের হত্যাকারী, রাজাকারদের পৃষ্ঠপোষক ও একজন ধর্ম ব্যবসায়িক।
আবার খালেদা জিয়ার রাজনীতি আর চিন্তা-দর্শন নিয়ে আলোচনা করলেই তিনি পাকিস্তানপন্থী রাজনীতির ধারক-বাহক, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতিকারী, শহীদ সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টিকারী, পাঁচ-পাঁচবারের ভুয়া জন্মতারিখের বিরল প্রজাতির মানুষ, জাতীয় শোক দিবসে ওই ভুয়া জন্মদিনে কেক কেটে আনন্দ উল্লাসকারী, শাহবাগে প্রগতির মেধাবী ব্লগার-লেখকদের নাস্তিক বলে চাপাতির কোপে হত্যার ষড়যন্ত্রকারী, আধুনিক সভ্যতার তথ্য-প্রযুক্তি আর তথ্য-প্রমাণের এই সময়ে জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক বলে মিথ্যাচারসহ স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকারদের নিয়ে জোটবদ্ধ হয়ে জিয়াউর রহমানের ‘জয় বাংলা’কে ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ আর ‘বাংলাদেশ বেতার’ থেকে রেডিও পাকিস্তানের আদলে ‘রেডিও বাংলাদেশ’ ধারাবাহিক রাজনীতির তথ্য-উপাত্ত; স্পষ্ট চোখে ভাসে।

বঙ্গবন্ধুর ২৩ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামের চূড়ান্ত বিজয় ‘স্বাধীনতা’, ‘স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ’ আর ২১ বছরের অত্যাচার-নির্যাতন মোকাবিলা করে শেখ হাসিনারও রাজনৈতিক চূড়ান্ত অর্জন-মহান ‘মুক্তিযুদ্ধের মূল স্রোতধারা’ ও ‘অসাম্প্রদায়িক’ ‘গণতান্ত্রিক’ বাংলাদেশ পুনরুদ্ধার, উন্নয়নশীল মর্যাদার বাংলাদেশ বিশ্বের সামনে প্রতিষ্ঠা করা।

১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার মাধ্যমে পটপরিবর্তনের পর ১৯৮১ সালে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশে ফিরে এসে আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে দলীয় প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। এরপর ৩৯ বছর ধরে রাজনৈতিক প্রজ্ঞা আর আপসহীন নেতৃত্বের মাধ্যমে দেশের রাজনীতির মূল স্রোতধারার প্রধান নেতা হিসেবে তিনি নিজেকে শুধু উপমহাদেশেই নয়, বিশ্বনেতৃত্বের একজন হয়ে পড়েন। তার নেতৃত্বের কারণে আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য রাজনৈতিক জোট-দল ১৯৯০ সালে স্বৈরাচারবিরোধী গণআন্দোলনের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে চূড়ান্ত বিজয়ের দ্বার উন্মোচন হয়।

১৯৯৬ সালের ১২ জুন আন্দোলন-সংগ্রাম করে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসেই বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার প্রক্রিয়া শুরু করে। আইনি বাধা অপসারণের জন্য সংবিধান বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে সেই কালো আইন ও কলঙ্কময় অধ্যায় ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ রহিতকরণ বিল’ সপ্তম সংসদে উত্থাপন করে। ওই বছর ১২ নভেম্বর আইনটি সংসদে পাস হয় এবং ১৪ নভেম্বর মহামান্য রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের পর এটি পরিপূর্ণভাবে আইনে পরিণত হয়। ফলে বিশ্বাসঘাতক মোশতাকের মাধ্যমে জারি করা এবং মেজর জিয়াউর রহমানের সময় আইনি বৈধতা পাওয়া ইনডেমনিটি অধ্যাদেশটি বিলুপ্ত বলে গণ্য হয়। আর এভাবেই ওই ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ’ বিলুপ্ত করার মাধ্যমে শুরু করে বাঙালি জাতির কলঙ্ক মোচনের প্রথম কাজ। স্বাধীনতাকামী বাঙালির আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে বাংলাদেশের অশুভ ছায়া যুদ্ধাপরাধী, মানবতাবিরোধী অপরাধী, চিহ্নিত রাজাকারদের বিচারের মাধ্যমে স্বাধীনতার পরবর্তী প্রজন্মকে অভিশাপমুক্ত করেন একমাত্র শেখ হাসিনা।

এদেশের জন্য এদেশের মানুষের জন্য রাজনীতি করেছেন, অত্যাচার-নির্যাতনের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছেন সর্বকালের মহামানব জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আর পাকিস্তানপন্থী, চীনপন্থী, রাশিয়াপন্থী, আমেরিকাপন্থী, ভারতপন্থী, সৌদি আরবপন্থীসহ নানানপন্থী রাজনীতি ও রাজনীতিবিদের মাঝে বঙ্গবন্ধুর পরে একমাত্র শেখ হাসিনাই বাংলাদেশপন্থী রাজনীতি করে বাংলাদেশকে মর্যাদাশীল রাষ্ট্র বানাতে সক্ষম হয়েছেন। বাংলাদেশের মানুষের জন্য রাজনীতি করতে গিয়ে ২৪ বার মৃত্যুর শেষ প্রান্ত থেকে আবারও ফিনিক্স পাখির মতো নিজেকে নতুন করে সৃষ্টি করেছেন, ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। নানা দলের রাজনীতি, রাজনৈতিক দর্শন আর রাজনীতিবিদের মাঝে শেখ হাসিনাই অনন্য। 

ত্রিশ লাখ শহীদ আর দুই লাখেরও বেশি নারী মুক্তিযোদ্ধার সম্ভ্রম বিনাশের মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক-গণতান্ত্রিক বাংলাদেশকে তার সঠিক স্রোতধারায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রতিটি সময়ে সেকেন্ড কিংবা মিনিটে-মিনিটে ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করেছেন। পাকিস্তানি ছায়া সরকার স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকারসহ বিএনপি-জামায়াত ইসলামের চারদলীয় জোট পাকিস্তানি এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পরিকল্পিতভাবে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে পরিচালিত একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় সেদিন স্বয়ং স্রষ্টাই যেন নিজ উদ্যোগে শেখ হাসিনাকে রক্ষা করেছেন আজকের বাংলাদেশের জন্য, স্বাধীনতার পরবর্তী প্রজন্ম-আমাদের জন্য। সেদিন শেখ হাসিনা বেঁচে গেলেও আওয়ামী লীগের ২৪ জন নেতাকর্মী শহীদ হন।

শেখ হাসিনা আমাদের শিখিয়েছেন, সত্য ও ন্যায়ের পথে অবিচল থেকে মাথা উঁচু করে কীভাবে পশ্চিমাদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে সঠিক বিচারের মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের ফাঁসির দড়িতে ঝুলাতে হয়। দেশি-বিদেশি সকল ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে কীভাবে নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস রেখে দেশীয় অর্থায়নে পদ্মা সেতুর দৃশ্যায়ন করতে হয়। দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি কতটুকু দায়িত্ববান হলে নিজ দলের কোনও নেতাকর্মী কিংবা রাষ্ট্রযন্ত্রের কোনও কর্মকর্তা অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত হলে আপসহীনভাবে কীভাবে আইনের আওতায় আনতে হয়—এটি একমাত্র শেখ হাসিনাই আমাদের সামনে উদাহরণ।

বিশ্ব মহামারি করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ নিয়ে আমাদের সকল উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাকে পেছনে ফেলে মানুষের ‘জীবন’ ও ‘জীবিকা’ কীভাবে নিশ্চিত করতে হয়—এটা শেখ হাসিনাই আমাদের সাহস দিয়েছেন। পেটে খেলে পিটে সয়—শ্লোগানকে সামনে রেখে ছাত্রলীগ থেকে আওয়ামী লীগ, এমনকি পুলিশ কর্মকর্তাসহ কৃষকের পেটের ভাতের ব্যবস্থা ফসল ঘরে তুলে দিয়েছে—একমাত্র শেখ হাসিনার বিচক্ষণ নেতৃত্বের কারণে। আর কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে খাদ্য ও অন্যান্য সহায়তার ব্যবস্থা করে ১০ মিলিয়নের বেশি পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে শেখ হাসিনার সরকার। অন্যদিকে ৪ মিলিয়ন শিক্ষার্থীকে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক, শ্রমিক ও দিনমজুরসহ ৫ মিলিয়ন মানুষকে নগদ অর্থ সহায়তা, সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে গ্রাম পর্যায়ের প্রায় ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র হতে বিনামূল্যে ৩০ ধরনের ওষুধ প্রদান-সময় উপযোগী সিদ্ধান্ত শেখ হাসিনার সফল সিদ্ধান্ত। 

শুধু তাই নয়, সরকারি সহায়তার পাশাপাশি তিনি নিজে উদ্যোগী হয়ে তহবিল সংগ্রহ করেছেন। এতিম ও গরিব শিক্ষার্থী, মাদ্রাসা, মসজিদ, মন্দির, স্কুল শিক্ষক, শিল্পী, সাংবাদিকসহ যারা সাধারণভাবে সরকারি সহায়তার আওতাভুক্ত নন, তাদের মধ্যে ২.৫ বিলিয়নের বেশি টাকা সুষ্ঠুভাবে বিতরণও করেছেন। যার ফলে সাধারণ মানুষকে করোনাভাইরাস খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারেনি।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বেগম ফজিলাতুননেছা মুজিবের প্রথম সন্তান শেখ হাসিনা ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তখন কেউ কী ভেবেছে, ৭৩ বছর আগে জন্ম নেওয়া এই হাসু মেয়েটিই হবে বাংলাদেশ ও বাঙালির মর্যাদার প্রতীক। কেউ কী ভেবেছিল, এই হাসু আপাই হবে আমাদের নেত্রী, আমাদের অহংকার, বর্তমান প্রজন্মের সাহসের প্রতীক।

আর তাই ছাত্রলীগ কিংবা আওয়ামী লীগের কোনও নেতাকর্মী, সরকারের নিম্ন থেকে উচ্চপর্যায়ের কোনও কর্মকর্তা, এমপি বা মন্ত্রী দুর্নীতি-অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত হলে আমরা প্রতিবাদ করি। রাষ্ট্রযন্ত্রের পুলিশ কিংবা র‌্যাবের কোনও কর্মকর্তাও অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত হলে আমরা মাঠে আন্দোলন করার সাহস পাই। অনলাইন-পত্রিকাগুলোতে কলাম লিখে সমালোচনা করি। কারণ, এই দেশে বিচারহীনতার অপসংস্কৃতি কালো আইন ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ’ ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছেন শেখ হাসিনা। রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বেড়ে ওঠা স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার-মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের আওতায় এনেছে তাও শেখ হাসিনা।

শুধু তাই নয়, ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের লঘুচাপ আর প্রাকৃতিক সম্পদের বিনিময়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা গ্রহণের মেরুদণ্ডহীন নেতৃত্বের অপসংস্কৃতি (!) শেখ হাসিনার নেতৃত্বের কাছে পরাজয় বরণ করেছে। টাকার কাছে বিক্রি হয়ে পড়া আর ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতি—এই দেশেকে রীতিমতো চেপে বসেছিল। কিন্তু মহামারি করোনাকালেও শেখ হাসিনা বুঝিয়েছেন, রাজনীতি-দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য। আর সে নির্দেশ মতে শুধু ছাত্রলীগ থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই নয়, শেখ হাসিনার ঘোর বিরোধী এমন অনেকেও ওই অপসংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে ছোট ছোট গ্রুপ করে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। আর এই কাজ করতে গিয়ে আওয়ামী লীগের ৫৮টি সাংগঠনিক জেলায় সংগৃহীত তথ্যে দল, সহযোগী ও অঙ্গসংগঠনের মোট ৫২২ জন নেতাকর্মী মৃত্যুবরণ করেছে।

হাসু আপার রাজনৈতিক শিক্ষাগুরু আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পিতার রাজনীতি তার অস্থিমজ্জায়। তার বাবার রাজনৈতিক উত্থান নিজের চোখে তিনি দেখেছেন। কীভাবে শেখ মুজিব তাঁর রাজনীতির গগনপথে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছেন, আত্মবিশ্বাস নিয়ে কীভাবে সবাইকে পেছনে ফেলে একদল বিশ্বস্ত সহযোগীকে নিয়ে এগিয়ে গিয়েছেন—এগুলো দেখে-শিখেই বেড়ে উঠেছেন শেখ হাসিনা। আর ছাত্রলীগের কর্মী থেকে রাজনীতির পাঠ গ্রহণ, স্কুল-কলেজে পড়ার সময় থেকেই নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্যতাও তখন সবার দৃষ্টি কাড়েন। আর বিশ্বস্ত-গ্রহণযোগ্য হয়ে ১৯৬৬ সালে বেগম বদরুন্নেছা কলেজ ছাত্রী সংসদ নির্বাচনে ছাত্র লীগের প্রার্থী হিসেবে বিপুল ভোটে সহ-সভাপতি নির্বাচিতও হন।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ এই পর্যন্ত ৪ মেয়াদে ক্ষমতাসীন হয়েছে। ২০১৮ সালে জাতীয় নির্বাচনে রাজনৈতিক সংলাপে জাতীয় রাজনীতিবিদের সামনে শেখ হাসিনার বিকল্প নাম প্রস্তাবের আহ্বান জানালে উপস্থিত নেতৃবৃন্দ নীরবতার মাধ্যমে ‘শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনা’ই জানিয়ে দেওয়ার মধ্য দিয়ে বিজয়ের পর টানা তৃতীয় মেয়াদের তার নেতৃত্বে সরকার গঠিত হয়েছে। এছাড়া ১৯৮৬ সালের তৃতীয়, ১৯৯১ সালের পঞ্চম এবং ২০০১ সালের অষ্টম সংসদে অর্থাৎ মোট ৩ দফা বিরোধী দলের নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন শেখ হাসিনা।

গণতন্ত্র ও দেশের মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন-সংগ্রামে অসামান্য অবদান রাখার পাশাপাশি রাষ্ট্র পরিচালনায়ও ব্যাপক সাফল্যের পরিচয় দিতে সক্ষম হয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। ১৯৯৬-২০০১ সালে তার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি ও গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি তার সরকারের অন্যতম সাফল্য হিসেবে এখনও বিবেচিত হয়ে আসছে। আর বর্তমানে তার নেতৃত্বাধীন সরকার ২০২১ সালের মধ্যে ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত ও মধ্যম আয়ের আধুনিক ডিজিটাল বাংলাদেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য পূরণে কাজ করে যাচ্ছে।

গণতন্ত্র, শান্তি ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা এবং নারী শিক্ষার বিস্তার, শিশুমৃত্যুর হার হ্রাস ও দারিদ্র্য বিমোচনের সংগ্রামে অসামান্য ভূমিকা রাখার স্বীকৃতি হিসেবে দেশি-বিদেশি বেশ কিছু পুরস্কার ও সম্মানে ভূষিত হয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। এর মধ্যে সাউথ-সাউথ ভিশনারি পুরস্কার-২০১৪, শান্তি বৃক্ষ-২০১৪, জাতিসংঘ পুরস্কার-২০১৩ ও ২০১০, রোটারি শান্তি পুরস্কার-২০১৩, গোভি পুরস্কার-২০১২, সাউথ-সাউথ পুরস্কার-২০১১, ইন্দিরা গান্ধী শান্তি পুরস্কার-২০১০, পার্ল এস. বার্ক পুরস্কার-২০০০, সিইআরইএস মেডাল-১৯৯৯, এম কে গান্ধী পুরস্কার-১৯৯৮, মাদার তেরেসা শান্তি পুরস্কার-১৯৯৮, ইউনেস্কোর ফেলিক্স হোফুয়েট-বোয়েগনি শান্তি পুরস্কার-১৯৯৮ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। এছাড়া পরিবেশ সংরক্ষণে অসামান্য অবদানের জন্য জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক সর্বোচ্চ মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার ‘চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ’ পুরস্কারেও ভূষিত হয়েছেন শেখ হাসিনা। অন্যদিকে বিশ্বের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় শেখ হাসিনাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রিও প্রদান করেন।

বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা ১৯৬৮ সালে বিজ্ঞানী এম ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের এক ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও এক মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ হোসেন। শেখ হাসিনা তার সন্তানদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে দেশ ও মানবতার কল্যাণে নিয়োজিত রেখেছেন।

পাকিস্তানের জেল-জুলুম-নির্যাতন সহ্য করে, বারবার মৃতুর মুখে দাঁড়িয়ে ১৯৭১ সালে অধিকারবঞ্চিত বাঙালিদের যেভাবে স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ঠিক তেমনিভাবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বের যেখানেই মানুষ তার অধিকারবঞ্চিত হয়েছে, যেখানেই শোষণ আর নির্যাতনের শিকার হয়েছে, নিষ্পেষিত হয়েছে মানুষ আর মানবতা; সেখানেই ত্রাণকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে সঠিক দিকনির্দেশনা দিয়ে অবহেলিত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন।

চার দশকেরও বেশি সময়ের পথচলায় জেল-জুলুমের সঙ্গে যার দিকে বারবার বন্দুক তাক করা হয়েছে, যার দিকে বারবার সন্ত্রাসীর বোমা-গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়েছে, যাকে রক্তাক্ত ও কণ্টকাকীর্ণ পথেও দমাতে পারেনি; তিনি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা যিনি অবিরাম ছুটে চলেছেন দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণ সাধনের লক্ষ্য অর্জনে। মুক্তিযুদ্ধের মূল স্রোতধারা’ ও ‘অসাম্প্রদায়িক’ ‘গণতান্ত্রিক’ বাংলাদেশকে পুনরুদ্ধার সংগ্রামের নেতা শেখ হাসিনার শুভ কামনায় শুভ জন্মদিন। 

লেখক : সভাপতি, বাংলাদেশ অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম (বোয়াফ)

 

 

/এসএএস/এমএমজে/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
শিল্পী সমিতির নির্বাচনে মিশা-ডিপজল প্যানেলের বড় চমক
শিল্পী সমিতির নির্বাচনে মিশা-ডিপজল প্যানেলের বড় চমক
ভাগ্নিকে শায়েস্তা করতে নাতিকে হত্যা
ভাগ্নিকে শায়েস্তা করতে নাতিকে হত্যা
৫ বছর বন্ধ সুন্দরবন টেক্সটাইল, সংকটে শ্রমিকরা
৫ বছর বন্ধ সুন্দরবন টেক্সটাইল, সংকটে শ্রমিকরা
বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা গোল্ডকাপের ফাইনাল আজ
বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা গোল্ডকাপের ফাইনাল আজ
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ